নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ওবায়দুল্লাহ্‌ আরিফ

ওবায়দুল্লাহ্‌ আরিফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্যাম্পাসের দিনগুলি

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:১৩

[১]
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, আল হাদিস এ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, শহীদ জিয়াউর রহমান হল এবং শ্রদ্ধেয় ওস্তাদগণ আমার জীবনোদ্যানের সুবাসিত কিছু পুষ্পের নাম।
বাগানে গাছের ডাল থেকে পুষ্প ঝরে যায়, জানি; ঝরে যাওয়া পুষ্প শুকিয়ে যায় তাও জানি। বসন্ত চলে যায়, তবুও বাগানের মালি চায়, ঝরে যাওয়া পুষ্প যেনো শুকিয়ে না যায়। কিন্তু হায়! সৃষ্টিকর্তার শাশ্বত বিধান, মালিকে কাঁদিয়ে পুষ্প যে একদিন ঝরবেই। আমার জীবনোদ্যান থেকে তেমনিই আজ আমাকে অশ্রুসিক্ত করে পুষ্পগুলো ঝরে গেলো।

সহস্র স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় নামক জ্ঞান সৃষ্টির মহাসমূদ্রে। স্যারদের মহামূল্যবান উপদেশগুলো লিখে রাখতাম পরম যত্নে। ডায়েরীর পাতাগুলো উল্টালেই আজ জীবনটাও অতীতে ফিরে যায়। সেই শ্রেণীকক্ষ! সেই প্রিয় মুখগুলো! সেই প্রিয় ওস্তাদগণ!

সবচেয়ে বেশী মনে পড়ে শ্রদ্ধাভাজন সেই ওস্তাদকে, ছোট থেকেই যার সান্নিধ্য পাবার শখ ছিলো, মাদ্রাসার হুজুররাও আমাদেরকে যার মতো হবার উপদেশ দিতেন, আন্তর্জাতিক লেখক, গবেষক, দ্বীন প্রচারক ও মিডিয়া ব্যাক্তিত মরহুম প্রফেসর ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ্ জাহাঙ্গীর রহঃ স্যারকে। সৌভাগ্য যে, আমরা তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছিলাম। মুখোমুখি বসতে পেরেছিলাম, সরাসরি প্রশ্নোত্তরে অংশ নিতে পেরেছিলাম। কিন্তু হায়! এমন ভাগ্য আর কখনো কারো হবে না। ওয়াহেদ, ইছনানে, ছালাছাহ্ ক্রমে হাজিরা নিতেন স্যার। একটু ভালো করলেই “তাইয়্যেব” বলে নিজের সন্তুষ্টি জানাতেন। স্যরের এই মামুলি উচ্চারণও যে আমাদের কত্ত্ব সুখ দিতো, তা হয়ত স্যার নিজেও জানতেন না! ক্লাস শেষে স্যরের “কে কে বোঝোনি?” কিংবা “পড়ার বাহিরে কারো কি কিছু জানার আছে?” শব্দগুলো আজও বারবার চোখে ভাসে, কানে বাজে, কষ্ট দেয়।
হে গাফুরুর রাহিম, জান্নাতুল ফেরদাউসের উচ্চ স্তরে স্যারকে আসীন করুন। (আমিন)

মনে পড়ল, প্রফেসর ড. মুজ্জাম্মিল আলী স্যারকে। কতইনা চমৎকার ও সাবলিল ভাষায় “সিরাতুন্নাবী সাঃ” পড়াতেন। ডায়েরীর অধিকাংশ পাতা স্যারের লেখাতেই পূর্ণ। কষ্টে ভাসে বুক, শেষ ক্ষণে স্যারকে আর দেখতে পাইনি।
আল্লাহ্ শাফী, অসুস্থ স্যারকে শিফায়ে কামেলা আজেলাহ্ দান করুন।

মনে পড়ে, ঐ তো সেদিন! প্রফেসর ড. সেকেন্দার আলী স্যার প্রথম দারসে বুঝালেন, অন্যায় ও পাপাচার পরিত্যাগ করতে না পারলে দ্বীনের জ্ঞানার্জন সম্ভব নয়। ঈমাম শাফেয়ী রহঃ এর বক্তব্যের উদ্দৃতি দিলেন...
شكوت إلي وكيع عن سوء حفظي – فأرشدني إلي ترك المعاصي ’’
فإن العلم لنور من إله – و نور الله لايعطي لعاصي

ড. আশরাফুল আলম স্যার, সেদিনই তো বুঝালেন; যোগ্যতা কাকে বলে? বললেন, “ তোমরা যখন পড়া-লেখা শেষ করে বাড়ীতে ফিরে যাবে তখন কাঁধে ক্রমে ক্রমে বোঝা চাপিয়ে দেয়া হবে। ১(তুমি)+২(বাবা-মা)+২(সন্তান)+ আত্নীয়-স্বজন ও অন্যরা। এমন কঠিন মুহূর্তে কেবল একটি বিষয়েই তোমাদের সাহায্য করতে পারে তা হলো, “ যোগ্যতা”। বাবা হাত দিয়ে ঠ্যাক দেবার কারণে যেমন, ছোট্টবাচ্চার কাঁধে ভারী কাঠালটিও সহ্য হয়, পড়ে যায় না। তেমনি, যোগ্যতা থাকলে তুমিও শত চাপেও পিছলে পড়বে না।”
ডায়েরীর কথাগুলোতে এতো পরিমাণের আবেগ ও ভালোলাগা জড়িয়ে আছে যে, কখনো কখনো ডায়েরীটা বুকে জড়িয়ে চুপচাপ বসে থাকি, অতীতে ফিরে যাই, অজান্তেই অশ্রুসিক্ত হয় হৃদয়, আবারও ফিরে পেতে ইচ্ছে করে সে স্বর্ণক্ষণগুলোকে (!)

ড. মুজাহিদুর রহমান স্যারকে কেউ ভুলতে পারবে না! সবচেয়ে আমোদ-প্রমোদ ও মজাদ্বার স্যার। আবেগও প্রচূর। মাঝে মাঝে ক্লাসেই কেঁদে দিতেন স্যার। আগ্রহ নিয়ে ক্লাস করতে আসতো সবাই। কারণ, স্যার সর্বদাই লোভনীয় করে “কিতাবুন নিকাহ্” পড়াতেন। অনেকেই তাই মাঝে মধ্যে হাই উঠিয়ে বলতো, “ হায়! ক্লাসে তবুও একটু-আধটু বিয়ের কথা হয়, বাড়ীতে তো এতোটুকুও হয় না।” হা-হা-হা।

স্যারদের সাথে সখ্যতা গড়ার বেশ সখ ছিলো আমার। আলহামদুলিল্লাহ্! আমার সৌভাগ্যও হয়েছিলো। শুরুতেই প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ অলি উল্লাহ্ স্যারের বন্ধুত্ব আচরণ আমাকে মুগ্ধ করেছিলো। মাঝে মাঝেই স্যারের বাসায় যেতাম, পাশাপাশি সোফায় মুখোমুখি বসে গল্প করতাম। বাসাতে গেলেই আপা মোহনীয় চা/কফি, ছোলা সিদ্ধ, মুড়ি মাখা, সুস্বাদু পিঠা, পায়েশ, নুডুলস, কোর্মা পোলাও ইত্যাদি ইত্যাদি খাওয়াতেন। কখনো কখনো নিজেই ফ্রিজ খুলে খাবার বের করতাম, এমনকি আচারের পাত্র সহ রুমে নিয়ে আসতাম। খুব ভালোবাসতেন স্যার আমাদের। পিতা যেমন সন্তানদের ভালোবাসতেন।

তেমনি প্রফেসর ড. মুস্তাফিজুর রহমান স্যার। ক্যাম্পাসে সবচেয়ে বেশী পথ চলেছি, প্রিয় এই স্যারের সাথে। একসাথে চলতে গিয়ে স্যারকে “বন্ধু” ভেবেছি কখনো কখনো। খেলার মাঠে আড্ডা, একপাত্রে মুড়ি পার্টি, সন্ধ্যা বেলায় হাটতে যাওয়া, গেস্টরুমে আলোচনা, বাসায় আপ্যায়ন, সমুদ্রতটে গানের আসর’সহ অনেক হয়েছে মেলামেশা।

ড. আ হ ম নুরুল ইসলাম স্যার। অনেক স্বচ্ছ মনের মানুষ। ক্যাম্পাস জীবন শেষ করেও প্রিয় এই স্যরের সাথে ফোনে কথা বলে অনেক সমস্যারই সমাধান করেছি। শত ব্যাস্ততাতেও কল রিসিভ করতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। স্যারের বাসাতে নিয়ে কবুতর গোস্ত দিয়েও আপ্যায়ন করেছিলেন আমাকে ও নবীনকে।

শেষ সময়ের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়েছিলাম প্রাণপ্রিয় ড. সৈয়দ মাকসুদুর রহমান স্যারের উপরে। স্যার আমাদের গুরুত্ব ও অধিকারগুলো বুঝাতেন। উপকারী পরামর্শ দিতেন, জীবন ও জীবিকা নিয়ে। পরবর্তী জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পাথেয় পেয়েছি স্যারের নিকট থেকে। ভালো থাকুন স্যার। জীবনের বাঁকে যেনো বারবার দেখা হয়।

খুব মনে পড়বে শ্রদ্ধেয় প্রফেসর ড. মোঃ ইকবাল হোসাইন স্যারকেও। বিশেষ করে সেই পরীক্ষার দিনের স্মৃতি বারবার মনে পড়ে। সেদিন প্রচন্ড জ্বর আমার । পাশের বন্ধুটিও বুঝতে পারেনি। কিন্তু স্যার ঠিকই বুঝেছেন। কাছে এসে কপালে, গলায়, বুকে দয়ালু হাতের পরশে; হৃদয়ে অনুভব করেছিলেন আমার কষ্ট। মাথায় হাত বুলিয়ে দরদমাখা সান্তনা দিয়েছিলেন। মনে হচ্ছিল স্বয়ং আমার বাবা আমার পাশে দাড়িয়ে। একজন ছা্ত্রের আর কি পাওয়ার থাকে? আল্লাহ্ স্যারকে উত্তম প্রতিদান দিন।

ড. আবু তুরাব কেরামত আলী স্যারের যে বিষয়টা আমাদের খুব মনে পড়বে, শুরুতেই ক্লাস হাজিরা করতেন স্যার । কারো হাজিরা বাদ পড়লে একটা টান দিয়ে বলতেন, “ আমি কিন্তু সাহু সিজদাহ্ দিইইই না।” বিষয়টা নিয়ে আমরা বেশ মজা করতাম।
ড. আখতার হোসাইন স্যারকেও খুব মনে পড়বে। মনে পড়বে স্যারের “ওবি” নামটি বলে ডাক দেয়াটাও।

ব্যাক্তিগত সখ্যতা না থাকলেও, বিভাগ ও বিভাগের বাহিরেরও অনেক জ্ঞানদাত্রী ওস্তাদগনের নিকট হতে জ্ঞানার্জনের সৌভাগ্য হয়েছিলো আমার। নিজেকে সমৃদ্ধ করার সুযোগ পেয়েছিলাম।

গায়েবের পর্দা থেকে যিনি কলকাঠি নাড়েন, প্রিয় স্যারগণ সেই রবেরই অমূল্য দান। সময় দিয়ে, উপদেশ দিয়ে, প্রেম ও প্রার্থনা দিয়ে এবং “প্রাপ্য ত্যাগ করে” আমাদের চলার পথকে মসৃণ করতে চেয়েছেন সর্বদা। স্যাররা, আমাদের উজ্জল আগামীর স্বপ্ন দেখিয়েছেন, উদ্দিপ্ত নব চেতনায় বাঁচতে শিখিয়েছেন, জীবন সফরের পথেয় যুগিয়েছেন, দূর মানযিলের পথ দেখিয়েছেন। বেঁচে থাকুন যুগ যুগ। আলো ছড়ান ধারিত্রী মাঝে।

হে রাব্বাল আ’লামিন! আমি তোমার শোকরগুজার। তুমি আমার প্রিয় স্যারদের আপন করে নাও, যেমন করে তারা আমাদের আপন করে নিয়েছেন। (আমিন)

[২]
ক্যাম্পাস ও বিভাগের বড়ভাইগণের নিকটেও আমরা চিরকৃতজ্ঞ। ক্যাম্পাস জীবনের সূচনাকালে যখন আমরা অবুঝ শিশু, সেই কঠিন মুহূর্তে হাত ধরে চলতে শিখিয়েছেন। শিখিয়েছেন, কিভাবে ক্যাম্পাসে চলতে হবে, কোন স্যার কেমন, কোন কোর্স কেমন করে লিখতে-পড়তে হবে। অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে অর্জন করেছেন, শিক্ষাগুরুরও মর্যাদা। মাদ্রাসার বদ্ধ জীবন ছেড়ে উম্মুক্ত ক্যাম্পাস জীবনের পাপ-পঙ্কিলতা হতে মুক্ত রাখতে সর্বদা চোখে চোখ রেখেছেন। অন্যায় হয়ে গেলেও পরম যত্নে বুঝিয়েছেন, করেছেন স্নেহসিক্ত শাসনও। অসুস্থ হলে সেবা-শুশ্রুষাও করেছেন। আদর্শ মানুষ হতে শিখিয়েছেন। বাবা-মা, ভাই-বোন ছেড়ে আসার যে ক্ষতটা হৃদয়ে দাগ কেটেছিলো, তার উপর শীতল একটা প্রলেপ পড়েছিলো। এখনও মনে পড়ে সেই প্রিয়মুখগুলি, হাফেজ আতিকুল্লাহ্, মঈন খান, মাসুম বিল্লাহ্, হুমায়ন, লুৎফর রহমান, সাইফুল্লাহ্, আব্দুল বারী, মিসবাহ্, তারেক মাহমুদ, আল মামুন, লবিব, নিয়াজ, মারুফ ভাই প্রমুখ।হৃদয়ে মণিকোঠায় থাকবেন আমৃত।

সেই সাথে, প্রিয় অনুজরা, তোমাদের ভালোবাসাকেও মিস করি প্রচূর। প্রিয় হাসান ইয়াহইয়া, ফাহাদ আমিন, লেখক গল্পকার প্রাবন্ধিক অনুবাদক, সালেহ ফুয়াদ, সাব্বির জাদিস সহ নাম ভুলে যাওয়া সকলকেই।


[৩]
ক্যাম্পাস জীবনে যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, সেই বন্ধুত্বের কোনো তুলনা চলে না। বন্ধুত্ব মানেই জীবনের সবুজতম সম্পর্ক। তারুণ্যের উচ্ছ্বলতায় গড়ে ওঠা এ সম্পর্ক হৃদয়ের স্বর্ণমহলে চিরযৌবনা হয়ে রয় চিরকাল। একেক বন্ধু ছিলো একেক বৈশিষ্টমণ্ডিত।

প্রিয় বন্ধু “আতিক”, আমার স্কুল ও ক্যাম্পাস উভয় জীবনেরই বন্ধু। আমরা সকলের নিকট জুটি হিাসাবেই বেশী পরিচিত ছিলাম। একই হলে, একই কক্ষে ও একই বেডে ছিলাম আমরা। আমাদের কথা, আজ আর নতুন করে বলতে হবে না।

কলিজার টুকরা বন্ধু “নাজিউর রহমান নবীন”। মজার স্মৃতিগুলো প্রায় সবই এর সাথে। বিকেল হলেই একজন ছাড়া অন্য জনের চলতোই না। ও কাছে থাকলেই সকল দুশ্চিন্তা, ক্লান্তি ও ভয় ভূলে যেতাম। পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ সবদিকেই চষে বেড়িয়েছি একসাথে। চাচার দোকানে বসে আড্ডা, পুকুর পাড়ে বসে নিজেকে ভাবনায় মিশিয়ে দেয়া, ইবি স্নাক্সে কলিজা সিংগাড়া ও ভেজিটেবল রোল খাওয়া, আফজাল মামার দোকানে ডাল-ডিম-রুটিতে রাতের খাবার খাওয়া, সুযোগ পেলেই কুষ্টিয়া শহর, মৌবন, হরিপুর ব্রিজ, স্মৃতিময় গড়াই নদীর রেনউইক বাঁধে হল্লা করে ঘুরতে যাওয়া। আন্তঃবিভাগ, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় খেলা উপভোগ, কখনো কখনো গভীর রাতে হঠাৎ করেই ল্যাম্প পোস্টের উজ্জল আলোয় ক্যাম্পাসের পিচ ঢালা পথে ঘুরতে বেরুনো। ভরদুপুরে ও স্নিগ্ধ বিকেলে শেখপাড়া বাজারে চটপটি, চা, আম কিনে খাওয়া, নন্দীতে রসমালাই খেতে যাওয়া। যেগুলো আজ কেবলই পীড়াদায়ক স্মৃতি! এমনই গভীর সম্পর্ক আমাদের! বাসর রাতে বউকে একান্তে পেয়েও সে আমাকে ভুলেনি, কল দিয়েছে, কথা বলেছে, চরম ভালোবাসার প্রমাণ দিয়েছে। নবীন রে! তোরে মনে পড়লেই; কলিজাটা মৃদু কম্পন করে রে। তোর মতো বন্ধু যেনো জীবনের বাঁকে বাঁকে আবার ফিরে আসে। তামান্না ভাবীকে নিয়ে অনেক ভালো থাকিস, আমাকে ভুলিস না।

হঠাৎ রাগী বন্ধু আব্দুর রহমান ও মিষ্টি ভাবী হোসনেয়ারা, তোদের বিরক্ত করার স্মৃতিগুলোই আজ বেশী মনে পড়ে। সময়ে অসময়ে বাসায় গিয়ে হাজির হতাম। না খেয়ে ফিরতামই না। খুনসুঁটি করতাম একসাথে। সময়বেঁধে দিয়ে নবীন তোকে ক্ষ্যাপাত, তা কি এখন তোর মনে পড়ে? তখন রাগে চোখে পানি আসতো, এখন হয়তো স্মৃতি স্মরিয়ে কাঁদিস। আমি, আতিক, নবীন, আল আমিন মিলে তোর বাড়ীতে যে সফরটি করেছিলাম, সেই স্মৃতিগুলো আজ ব্যথাতুর করে দেয় আমাকে। ভালো থাকিস বন্ধু। দাম্পত্য জীবনটা যেনো সুখময় হয়।
ফাস্টবয় গোল্ড মেডেলিস্ট “আতিকুর রহমান” ভাই। আমাদের সৌভাগ্য আপনাকে সহপাঠী রুপে পেয়েছিলাম। আপনি যেমন মেধাবী তেমনি অহংকার ও হিংসা মুক্ত। আপনার নোট পড়ে পড়ে আমরা স্নাতক-স্নাতোকোত্ত্বর ডিগ্রী অর্জন করেছি। এ কৃতিত্বের অংশীদ্বার আপনিও। আপনার জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হোক ভূবন, সে দোয়াই করি।

অদ্ভূত এক বন্ধু পেয়েছিলাম। নামটি তার “আরিফ বিল্লাহ্, বরিশাল”। আলোচিত-সমালোচিত। ক্যাম্পাসে কি করেনি ও? একেবারে হরফৌন মোল্লা বা সকল কাজের কাজী। গভীর রাতে হলের সব লাইট বন্ধ করে গাদা গাদা পাখি ধরা, বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির ছাদে-বারান্দায়-কক্ষে ঢুকে কবুতর ধরা, মাঝ রাতে হাতে বর্ষা নিয়ে মফিজ লেকে মাছ ধরতে যাওয়া, আবাসিকের মৌচাক কাঁটা, স্যারদের টিভি-ফ্রিজ-ফ্যান-লাইট ঠিক করা, জোব্বা পরে নিমিশেই গাছে ওঠা। ক্যাম্পাসের আম,জাম, আমলখী, বড়াই, লেবু, পেয়ারা, পেঁপে, আমড়া সহ কোনো কিছুই রক্ষা পায়নি ওর হাত থেকে। ও রুমে মধুর ব্যবসাও করতো, নিজেই সুন্দরবন গিয়ে মৌচাক কাঁটতো ও। অবশ্য, রুমে গেলেই আমাকে মধু আপ্যায়নও করতো। শিক্ষা সফরে উল্টাপাল্টা পথ দেখিয়েও বেশ সমালোচিত বন্ধুও বটে। বিভিন্ন পিকনিকের আবশ্যক রাধুনীও সে, বিভিন্ন আইটেমের সুস্বাদু-অস্বাদু রান্না করতে পারতো ও। পরীক্ষার সময় শর্ট সাজেসান্স এর একমাত্র ত্রাতাও সে। আবার প্রশ্ন হাতে পেলে মাথা চুলকানোই ওর স্বভাব, হা-হা-হা। ওর মা “আঞ্জুমান আরা”র নামে বিভিন্ন বইয়ের একটি ব্যাক্তিগত গ্রন্থাগারও আছে ওর। ও হ্যাঁ, অনার্সের পাশাপাশি কুষ্টিয়া হোমিও কলেজ থেকে ডাক্তরীও সমাপ্ত সে। তাই সে আমাদের অনেকেরই গোপন চিকিৎসক। বলায় হয়নি, সে কিন্তু প্রায় বিশটি মামলার বাদী-আসামী-সাক্ষীও। প্রেমিক প্রেমিকাদের বিয়ের পিড়িতে বসাতেও দারুন পারঙ্গম সে। এবার আপনারাই বলুন, “কি নেই ওর মাঝে? ” এমন প্রতিভাকে কি ভুলে থাকা যায়? বন্ধু! তোর বাসায় বেড়াতে গিয়ে পুকুরে গোসল করা ও মামার বাড়ীতে গিয়ে নৌকায় ঘুরে বেড়ানোর কথা, আজ খুব মনে পড়ছে।

আমাদের মাঝে নূর হোসাইন দোস্ত খুব ভালো গান গাইতে পারতো, লালন, মরমী, ভাটিয়ালী, আধুনিক গান সহ সকল ধরণের গান। গ্রীষ্মের রাতের ঊষ্ণ আবহাওয়াতে, ক্রিকেট মাঠ কিংবা টিএসসিসির সিঁড়িতে জটলা বেঁধে গানের আসর জমতো মাঝেমাধ্যেই। নুর গাওয়া শুরু করলে আমরাও বেসুরে গলায় গলা মিলাতাম। কখনো গান, কখনো একসঙ্গে অট্টহাসিতে ফেটে পড়া। আহ! সে স্মৃতি কি ভোলা যায়?

প্রিয় উসামা আহমাদ ভাই। বলা চলে, আমাদের ক্লাসের “আইটেম বয়”। ক্লাস ক্যাপ্টেন হওয়াতে অনেক বিরক্তি সহ্য করতে হয়েছে তাকে। আইটিতে তার দক্ষতা আমাদের অনেক উপকার দিয়েছে। নোয়াখালী ভাষা ব্যাবহারে আড্ডাও জমাতে পারতো বেশ। শেষের দিকে হলে এসে আমাদের মধ্যমণিতে পরিণত হয়েছিলো ও। DSLR এর একমাত্র মালিক হওয়াতে আমাদের স্মৃতির ফ্রেমটা ওর উপরই নির্ভর করতো বেশী। খুব মিস করি ভাই।

বন্ধুদের মধ্যে সবচেয়ে শান্ত, শিষ্ট, ভদ্র ও বিশ্বস্ত ছেলেটার নাম, “নাজমূল হুসাইন।” আমাদের সকল আয়োজনের একক ক্যাশিয়ার সে। প্রেম দূরে থাক্, একটা মেয়ের সাথে কথা পর্যন্ত বলতে না পারার আক্ষেপ করতে করতেই বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করলো সে। মাঝে মাঝে নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলেই নিজেকে মনে করতো না।

প্রিয় আহমাদুল্লাহ্। ধর্ম বিশ্বাস, বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্নীয়-স্বজনদের ত্যাগ করতে পারার সাহসী এক মূর্ত প্রতিক। সেই ছোট্টবলোয় বন্ধুর হাত ধরে হুজুরের বাড়ীতে পালিয়ে গিয়ে ইসলাম গ্রহন, মাদ্রাসায় ভর্তি। কিন্তু একদিন জানতে পারলো, যে হুজুরের হাত ধরে ইসলাম গ্রহন করলাম সেই হুজুরই আমার সাথে প্রতারনা করেছে, আমাকে দিয়ে ব্যবসা করিয়েছে। নিজের মা-বাবাকে ছেড়ে এসে অন্য কাউকে মা-বাবা ডেকেছে। কষ্টকে জয় করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যারদের নিকটে আবেদন করেও বিভাগ-প্রশাসন থেকে সাহ্যয্য না পেয়ে প্রায়ই দুঃখ করতো সে। ভাবতো, নিজ ধর্ম ত্যাগ করে এসে যে ধর্মে দীক্ষিত হলাম সে ধর্মের লোকেরাও সেই ধর্মের মর্মবানী পালন করে না। একে দেখলেই নিজেদের বড়ই অপরাধী অপরাধী লাগতো।

শাহাদাত হোসাইন। এর কাজই ছিলো আমার প্রসংশা করা। আমার পোশাক-পরিচ্ছেদ, কথা-বার্তা, কর্ম-অকর্ম, হাসি-কান্না, সবকিছুতেই আকাশ সম প্রসংশা করতো সে। মনের গোপন গোপন কথাগুলি আমাকে বলতো। এভাবেই সম্পর্কটাতে এক মধুর মায়ার সঞ্চার হয়েছিলো।
সাংবাদিক রাশেদ। আমাদের গর্বের নাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ মাক্বাম পর্যন্ত ওর পরিচিতি, এ নিয়ে বেশ গর্বও করতো সে। কিন্তু, ওর টপ অফ দ্যা নিউজে আসার কারণ, ওর বউ “নিরাশেদ নীরা।” ভাবী আমাদেরও বেশ আপন হওয়াতে আমাদের সাথেও খুনসুঁটি লেগেই থাকতো সর্বদা। বউ মেয়ে নিয়ে সুখী হ দোস্ত।

আল্লামা তাজুল ইসলাম। চিটাগাং এর বাঁশখালী অঞ্চলের মজার মানুষ সে। এই “বাঁশখালী” নামটাই আমাদের দুষ্টমী করার অস্ত্র। এক বান্ধবীকে পছন্দ করে সে সর্বদাই ‘টপ অফ দ্যা টক’এ থাকতো সে। ওর হবু বউয়ের সাথে লুকোচুরি প্রেমও আমাদের আনন্দের রসদ জুগিয়েছে অনেক। দুষ্টমীগুলো ক্ষমা করো বন্ধু।

লাজুক বন্ধু সাহাজুল ইসলাম সাজু। দুষ্ট মিষ্ট আর উপকারী বন্ধু সে। বারবার চেষ্টা করেও তাকে হলে আনতে না পারলেও তার কল্যাণে আমরা কুষ্টিয়া শহর উপভোগ করেছি বেশ। সময়ে অসময়ে ওর মেসে রাত কাটিয়েছি। তুলসী পাতার চা, কফি, কেক, বিস্কিট সহ নানান খাদ্যদ্রব্য মজুদ থাকতো ওর কাছে। খুব বিরক্ত করেছি ওকে। শেষ সময়ে সকল বন্ধুদের নিয়ে আয়োজিত মেস আড্ডাটি আজীবন ম্মরণ থাকবে আমার। অনেক ভালোবাসি বন্ধু, ভালো থেকো।

অভিমানী বন্ধু “আল আমিন।” ঝাকড়া চুলের ছোকরা। ওকে ছাড়া কোনো আড্ডায় জমতো না আমাদের। প্রতিটি আড্ডায় ওর কিছু অভিমানী ভাষা সবসময় আমাদের আড্ডায় আনন্দের বাড়তি রসদ জোগাতো। ওর মেসে মাঝে মাঝেই ব্রয়লার রান্না হতো। বেশ সুস্বাদু ব্রয়লার রান্না করতে পারতো সে। আলিশান চোহারার কারনে ক্যাম্পাসের অলিতে গলিতে ও মেয়েদের কাছে বেশ পরিচিত ক্রিকেটার ও। তোকে বিদায়ের সময় বুকে জড়িয়ে কান্নার দৃশ্যটা আমার আজও চোখে ভাসে। ভুলিস না দোস্ত।

নির্ভেজাল দোস্ত অলীনূর আহমেদ। ধীরেধীরে মনোরম স্বরে কথা বলতো সে। ওর বাবার ইন্তেকালের পর অসময়েই সংসারের দায়িত্বভার কাঁধে নিয়েছে বন্ধু। আল্লাহ্ তোর উত্তম সাহায্যকারী হোন দোস্ত।

লম্বা হাত-পা বিশিষ্ট ঝালকাঠির বন্ধু আনোয়ার হোসেন, ছাত্র বয়সেই খালাতো বোনকে বিয়ে করে আমাদের অনেকেরেই আদর্শ হয়েছে সে। ক্যাম্পাসের অনেক জুটির বিয়েরে পিঁড়িতে বসানোর কারিগরও এ। আল্লাহ্, তোকে আর ভাবীকে সুখে রাখুন।

বন্ধু নূরুল আমিন। আমাদের ক্যাম্পাস জীবনের অসংখ্য স্মৃতির প্রধানে এ। ওর বাসাতে যে সব আড্ডা হয়েছে তা অন্য সকল আড্ডা ও স্মৃতির ঊর্ধে। তোকে নিয়ে অনেক কথার কিছুই বললাম না এখানে। মনে আছে মনেই থাক্। ভাবী অনেক ভালো মানুষ। সুখী হবি ইং শা আল্লাহ্।

অনেকেই যাকে উগাণ্ডী বন্ধু বলে জানি, “ফয়সাল মুস্তাকিম”। দোস্ত, অনেক দুষ্টমী করেছি তোর সাথে। জোর করে খেয়েছি অনেক। তোর বাড়ীতে যাওয়ার স্মৃতি ভুলে যাবো না কখনো। নবীনের বুদ্ধিতে তোর ইয়ার ফোনটা চুরি করেছিলাম, ঐটা আমার ভীষণ দরকার ছিলো তখন, ক্ষমা করিস।

স্মার্টবয় সিলেটী বন্ধু আশরাফুল। ক্যাম্পাস রাজনীতির বর, আমেরিকান জামাই। দোস্ত, তোর বেডহীন, রাঁধুণীহীন মেসে আড্ডার কথা এখনও স্মরণ হয় মাঝে মধ্যেই। তোর নাটকের শুটিং আরো কবে শুরু হবে, খুব জানতে ইচ্ছে করে। আমাকে ভুলিস না।

বিসিএস মনির দোস্ত। আমাদের ঘরোয়া কোচিং এর পরিচালক। দোস্তের একটা সেবা কোনোদিনই ভুলবো না, ক্লাসে স্যার ঢুকলেই একটা ম্যাসেজ দিতি, “স্যার এসেছে/ ক্লাস শুরু হয়েছে।” তোর জন্যেই সকালের ঘুমটা নিশ্চিন্তে পাড়া হতো। রব তোকে উত্তম প্রতিদান দিন।

চাপাইয়্যা বন্ধু “আজিজ মামা”র ভাষা শৈলী ও হট হট কথা আমাদের আড্ডায় উত্তাক্ত অবহ সৃষ্টি করতো। তোর এলাকার ছোট ভাইয়েরা বলতো, “ভাইয়া, আজিজ ভাই আপনাকে খুব ভালোবাসে।” বন্ধু তোকেও অনেক ভালোবাসি রে। বউকে নিয়ে অনেক সুখী হ।

হাসির রাজা রবিউল ইসলাম দোস্ত। লাইক কমেন্ট না করলেও আমার ফেসবুক পোস্টগুলোর বেশ প্রসংশা করতো সর্বদা। দোস্ত, তোর দুষ্টমী হাসির শব্দগুলোকে খুব মনে পড়ে এখনও।

জামালপুরের বন্ধু শফিক। দোস্ত, হলের পাশের রুমে থাকার কারণে তোমাকে একটু বেশী জ্বালিয়েছি, ক্ষমা করো।
তুই মুই বন্ধু খোলোয়ার আব্দুর রহমান, ট্রাস্টি মমিনুর রহমান। হ্যান্ডসাম বয় হাবিব সুমন, তোকে আর আমার ভাবীকে নিয়ে আনন্দে দিন কাটছে নিশ্চয়। আবু সালেহ চেীধুরী, দোস্ত তোর ওলিমার দাওয়াতটা আজও পেলাম না! রাজনীতিবিদ ফিরোজ আল মামুন, ফিটফাট বন্ধু আব্দুল মোমেন কিশোরগঞ্জী, টাংগাইলের জিয়াউর রহমান, কুড়িগ্রামের হাসান, আবু হানিফ, মফিজুল, আবুল হোসেন সহ সকল বন্ধুদের জন্যে অনেক ভালোবাসা। একসাথে চলতে গিয়ে যেসব অন্যায় করেছি তা ক্ষমা করো দোস্ত।

আজ মনে পড়ছে “উসামা খোন্দকার”কেও। জাহাঙ্গীর রহঃ স্যারের একমাত্র ছেলে। নিরহঙ্কারী। খুব মিশতে চাইতাম ওর সাথে। একসাথেই বসার চেষ্টা করতাম। বসতামও। পিছন ব্রেঞ্চএ গল্প হতোও বেশ। কিন্তু আমাদের ছেড়ে উচ্চশিক্ষার জন্যে রিয়াদের এক বিশ্ববিদ্যলয়ে পড়ি জমান সে। সেই থেকেই আর এক সাথে চলা হলো না। খুব মিস করতাম তাকে। আল্লাহ্ তাকে স্যারের উত্তম উত্তরসূরী রুপে কবুল করুন।

ও আমার জানটুস বান্ধবীরা, লবন ছাড়া যেমন রান্না অস্বাদু তেমনি তোরা ছাড়াও ক্যাম্পাস জীবন বৃথা। ভাই-বোনের মতো আপন ছিলাম আমরা। সুখে যেমন সুখী হয়েছি, দুঃখেও হয়েছি দুঃখী। শ্রেণী কক্ষের এক কোনায় বসলেও তোদের অবস্থান আমাদের হৃদয়ে মাঝে। জানিনা, তোদের সাথে আর কখনো দেখা হবে কিনা? রাজকুমারদের পেয়ে হয়ত আমরা বিলীন হয়ে যাবো তোদের মন থেকে। তবে, চিন্তা করিস না, বোর্ধক্যে তোর নাতীদের দিকে তাকালেই আমাকে দেখতে পাবি। উত্তরের হাওয়ায় কান পেতে শুনিস আমার কণ্ঠ শুনতে পাবি। কফি হাউজের সুজাতা যেমন সুখে ছিলো তেমনি তোদের আগাগোড়াও হিরা আর জহরতে মোড়া থাকবে সে আশায় রাখছি আজ। ভালো থিাকিস, খুব ভালো, ভালো রাখিস সকলকেই। মিস করি তোদের, আর তোদের নুডলস রান্নাকে।

[৪]
বড়ই মিস করবো, ক্যাম্পাস ও হলের জীবনটাকে। আসলে, হলে না থাকলে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক স্বাদই পাবে না। সারারাত ধরে কেরাম খেলা, ডাইনিং এ লাইন ধরে প্লেট হাতে তরকারি নেয়ার সিরিয়াল দেয়া, শীতের দিনে ছাদে উঠে সূর্য্য রোদে গোসল করা, টিভিরুমে হল্লা করে খেলা দেখা, রিডিং রুমে পড়তে যাওয়া, এ্যাডমিশনের সময় এ্যাপলিকেন্টদের বিছানা-কম্বল ছেড়ে দিয়ে সারারাত অনিদ্রায় থাকা, সহসা আতঙ্কিত হওয়া, গুলির শব্দ, মিছিলের স্লোগান, সিনিয়র-জুনিয়র খুঁনসুটি, মাঝরাতে টিভি রুমের ফুটবল দর্শকদের চিল্লাচিল্লিতে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া, রুমমেটদের সাথে সকালের ছাদে সানবাথ করতে যাওয়া, হিটার-রাইচকুকারে খিচুড়ী রান্না করা, আমড়া পেড়ে খাওয়া, রাতের বিদ্যুৎ গেলেই সাদ্দাম হলকে “বস্তি” ও জিয়া হলকে “হাসপাতাল” বলে বড় গলায় দুষ্টমীর ঝগড়া করা। পশ্চিম পাড়ায় হাটতে যাওয়া, ছোট আপু, বড় আপু ও বান্ধবীদের নিকট থেকে পায়েশ, নুডুলস ও বিরিয়ানী খাওয়া।

আরো মনে পড়ে প্রিয় রুমমেটদের কথা। যাদের সাথে খুঁনসুটি, দুষ্টুমি ও শাসন লেগেই থাকতো। এসপি মামুন, ডিসি হামিদ, আউটসোর্সিং নাহিদ, হেমা শাওন ভাই, সাগর ভাই ও আবুল বাশার সহ সকলকেই অনেক মিস করি।

ক্যাম্পাসের বিকেলের দৃশ্যটা মনে রাখার মতো। হলের পাশে, রাস্তার ধারে ধারে সামনে বসা রঙ্গ বেরঙ্গের অস্থায়ী খাবার দোকানগুলোকে, পিয়াজু, সিংগাড়া, চপ, মুড়িমাখা, আম, জাম, কাঠাল, তরমুজ, ছোলা সিদ্ধ, গুড়ের খুরমা সহ কত্ত্ব কত্ত্ব মজাদার খাবার! কাউকে দোকানের সামনে খাওয়া দেখলেই সবাই মিলে গিয়ে ওর কাছে খেতাম জোর করে। এর মাঝেই যে কত্ত্ব মজা লুকিয়ে আছে! তা বোঝানোর সাধ্য নেই।

দীর্ঘ সাত বছরের ক্যাম্পাস জীবনে বন্ধুদের সবচেয়ে আপন ও বাস্তব রুপে পেয়েছি, দুটি “শিক্ষা সফরে”। কুয়াকাটার সফরটিতে যা মজা হয়েছে তা জিন্দেগীতেও ভুলবো না। বিশেষ করে, বাসের মধ্যে সকলের ডান্স ও বিশেষ অঙ্গিভঙ্গি ছিলো অবিশ্বাস্য! বন্ধু আবুলের নাচের তো কোনো জুড়িই নেই, এক্কেরে অসাম। দীর্ঘ সাতদিনের শেষ শিক্ষা সফর সত্যিই শিক্ষা হয়ে রয়েছে। যাত্রাপথের ক্লান্তি ছাপিয়ে সমুদ্রতটের আড্ডা ও রাঙ্গামাটির নয়ানাভিরাম দৃশ্য আমাদের সকল কষ্ট-গ্লানি মুছে দিয়েছিলো। মুস্তাফিজ, ইকবাল ও মুজাহিদ স্যারগন ও তাদের দুষ্ট মিষ্ট সন্তানরা আমাদের আনন্দকে অনেকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।

আমাদের ক্যাম্পাসের সবচেয়ে নয়ানাভিরাম দৃশ্য হচ্ছে, জুম্মার দিনের দৃশ্য। হাজারো ছাত্র যখন পাঞ্জাবী টুপি পরে মাসজিদ থেকে এক কাতারে লাইন ধরে বের হয়। সেই দৃশ্য যে কারো হৃদয়েই স্নিগ্ধ পরশ বুলিয়ে দেয়।

[৫]

স্বপ্নিল ক্যাম্পাস জীবনের পরিসমাপ্তী। বিশ্ববিদ্যালয়ের নথিপত্রে যুক্ত হলো আরো কিছু নাম, ধুলোবালির অপেক্ষায়। অনেক টুকরো স্মৃতি ছড়িয়ে রেখেছি ক্লাসরুমে, লাইব্রেরীতে, আম বাগানে, পোয়ারা তলায়, লেকের পাড়ে, পুকুর ঘাটে, খেলার মাঠে, ডায়না চত্ত্বরে, শহীদ মিনারে, স্মৃতি সৌধে, মুক্তবাংলায়, মূল ফটকে, অনুষদ ভবনে, প্রশাসন ভবনে, বাস স্টেশন সহ সর্বত্রই। জমজমাট ছিলো আমার ক্যাম্পাস জীবন। বিভিন্ন রঙ্গে, বিভিন্ন ঢঙ্গে। এই ক্যাম্পাস, এই ১১৪ একর জমিতে আমরা ছিলাম অভিন্ন। আমাদের হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা ছিলো অভিন্ন। আমাদের দিন-রাত, সকাল-সন্ধ্যা, চিন্তা-ভাবনা ও আশা-প্রত্যাশাও ছিলো অভিন্ন। আমি ছিলাম, আমার চারপাশে অনেক মানুষ ছিলো, আপন ছিলো, পর ছিলো, বন্ধু ছিলো, শত্রুও ছিলো, জীবনের কোলাহল ছিলো, যৌবনের উচ্ছলতা ছিলো, আনন্দের কলরব ছিলো।
ধীরে ধীরে ফিক হয়ে গেলো সব রং, শূণ্যতা এসে ভর করলো হৃদয়ে।
হায় রে বাস্তবতা! যাদের সাথে কাটিয়েছি মুহুর্তের পর মুহুর্ত, তাদের হারালাম আজ সময়ের গহ্বরে। এটিই নিয়তি।

ভালো থাকিস তোরা, খুব ভালো। হয়তো এমন করে আর মিলতে পারবো না কোনদিন, আড্ডায় মজতে পারবোনা কখনো, অভিমান করে মুখ ভার করা হবে না আর, মাঠে বসে কেউ আর আমার জন্যে অপেক্ষা করবে না, আমার জানালার সামনে দাড়িয়ে কেউ আর “ওবায়দুল্লাহ্” বলে ডাক দেবে না, ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে চিরকুট চালানো হবে না, গোধূলী বিকেলে দল বেঁধে আর হাটতে বেরুনো হবে না, গভীর রাতে কবুতর কিংবা মাছ ধরতে যাওয়া হবে না আর, সবাই মিলে টিভি রুমে হল্লা করা হবে না, শর্টফ্লিম নিয়েও আর ভাবনা করা হবে না, লাইক-কমেন্ট চেয়ে কল-ম্যা্সেজ দেয়াও হবে না, ক্যাম্পাস প্রাচীর জয় করা হবে না কখনো, ক্যাম্পাসের বাস ধরতে গিয়ে ভৌঁ দৌড় দেয়া হবে না, লালনের মাজারে, রবি ঠাকুরের কুঠিবাড়ীতে গিয়ে আড্ডায় মজা হবে না আর। তৈরী করতে পারবো না নতুন কোনো গ্রহ। নিঃসঙ্গ জীবনের এ বিষন্ন সন্ধ্যায় ভাবছি, আমিও হারিয়ে যাবো এমনি কোন এক আঁধার রাতের কালবৈশাখী ঝড়ে। সময়ের হাত ধরে চলছি অন্য গন্তব্যে, অন্য ঠিকানার সন্ধানে, একদিন সেই ঠিকানাও অতীত হয়ে যাবে।
হয়ত এদিন হারিয়ে যাবে এ লেখা ও লেখকের স্মৃতিও; হয়ত কালো কালির হরফগুলো মুছে যাবে কাগজের পাতা থেকেও; হযত তোমরাও ভুলে যাবে, মাটির নিচে শুয়ে থাকা একজন মানুষের হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, আশা ও নিরাশার কথা।
কিন্তু না! হে আমার বন্ধুগণ, আমরা আবারও মিলিত হবো জান্নাতুল ফেদোউসের আড্ডাখানায় (ইং শা আল্লাহ্) । হুর আর গিলমানদের আপ্যায়িত শরাব পিইয়ে, জান্নাতী শিল্পীদের গানের নৃত্য দেবো আমরা। দেখা হবেই হবে জান্নাতের সিঁড়িতে, বিচ্ছেদের শত কষ্টেও এ আশায় বুক বাঁধি আমি...

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:০১

আরোহী আশা বলেছেন: ব্লগে আপনাকে স্বাগতম.........
আরেকটু ছোট লেখা দিন.......
পড়তে ভালো লাগবে

২| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:০০

ওবায়দুল্লাহ্‌ আরিফ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া। ইন্ শাাাা আল্লাহ্।

৩| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:০৩

হাবিব বলেছেন: ব্লগে আপনাকে স্বাগতম.........

মন্তব্যের উত্তর দিতে ক্রস চিহ্নের পাশে থাকা তির চিহ্নে ক্লিক করুন......
তারপর আপনার সন্তব্য লিখে প্রকাশ করুন

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:২৩

ওবায়দুল্লাহ্‌ আরিফ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই্য়া। জাযাকাললাহ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.