নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বাঙালী পরে আগে আমি ভারতীয়

অরিন্দম চক্রবত্রী

কলকাতায় থাকি

অরিন্দম চক্রবত্রী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপার বিস্ময় উত্তরে

১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৯



উত্তরে নামটা শুনলেই মনে বিভ্রান্তি জাগতে পারে। অনেকের মনে হতে পারে উত্তরে মানে ‘‌নর্থ’‌ বলা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। উত্তরে হল পশ্চিম সিকিমে অবস্থিত চমৎকার একটি সফর স্থান। মাঝে মাঝে বৃষ্টি আসে ঝমঝমিয়ে, কখনও বা মেঘে ঢেকে যায় চারদিক। আবার কিছুক্ষণের মধ্যে ঝিলিক দেয় মিঠে রোদ। এভাবেই লুকোচুরি খেলতে থাকে পর্যটকদের সঙ্গে অপার বিস্ময়ে মোড়া উত্তরে। এখনও পাহাড়ে বর্ষা নামেনি। বসন্ত সবে মাত্র শেষ হয়েছে। তবু তার রেশ রয়ে গেছে। বিভিন্ন প্রজাতির বিচিত্র ফুল, ৫০০ প্রজাতির চেনা–‌অচেনা পাখির গানে মুখরিত হয় আকাশ–‌বাতাস। সিঙ্গলিলা শ্রেণীর উত্তর ঢালে ৭,৬০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ‌উত্তরে স্নিগ্ধতা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত। উত্তরে বারসে রডোডেনড্রন স্যাংচুয়ারির অন্যতম গেটওয়ে হিসেবেও পরিচিত, যেখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপূর্ব রূপ দেখা যায়। অল্প কিছু ঘরবাড়ি নিয়ে অসম্ভব শান্ত ও নির্জন এই গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই। মুগ্ধ হবেন স্থানীয় মানুষের আন্তরিকতায়। শহরের কোলাহল ও দূষণ ছেড়ে দূর নির্জনে নিশ্চিন্তে কয়েকটা দিন কাটিয়ে রিফ্রেশ হওয়ার জন্য উত্তরে–‌র কোনও বিকল্প নেই। কিন্তু সাধারণ পর্যটকদের কাছে উত্তরে আজও ব্রাত্য। সম্ভবত দীর্ঘ ও কষ্টকর জার্নি এর জন্য দায়ী। তাই তাঁদের দৃষ্টি এখনও এদিকে সেভাবে পড়েনি। মূলত যাঁরা সান্দাকফু বা ফালুট ট্রেক করতে আসেন, তাঁরা চেওয়া ভঞ্জন, ফোকটে দারা, কালিঝড় হয়ে ফালুট পৌঁছন। সেক্ষেত্রে উত্তরে–‌র ওপর দিয়েও তাঁরা যেতে পারেন। কেউ কেউ এখানে রাত্রিবাস করেন। থাকার জন্য এখানে বেশ কিছু বেসরকারি লজ আছে। দিনরাতের খাবারও এখানে মিলবে। মিলবে এখানকার বিখ্যাত ওয়াই ওয়াই ন্যুডলস। পেলিং থেকে উত্তরে যেতে লাগে দেড় ঘণ্টা। গ্যাংটক থেকে উত্তরের দূরত্ব ১৪৭ কিলোমিটার, যা যেতে লাগে ৫ ঘণ্টা। আর ১৬৫ কিলোমিটার দূরত্ব বাগডোগরা এয়ারপোর্ট থেকে ভায়া জোরথাং ও মাল্লি। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে শিলিগুড়ি হয়ে শেয়ার জিপে করে জোরথাং আসা যায়। সময় লাগে ৩ ঘণ্টা। সেখান থেকে আবার শেয়ার জিপ ধরে উত্তরে পৌঁছনো যায়। সময় লাগে আড়াই ঘণ্টা। দার্জিলিং ও কালিম্পং থেকে ৩ ঘণ্টার দূরত্ব। উত্তরে–‌কে ‘‌ভার্জিন অ্যান্ড হিডেন প্যারাডাইস অন আর্থ’‌ বলা হয়। পথে পড়বে মাল্লি, জোরথাং, সোরেং, কালুক, জেনটামের মতো অংসখ্য পাহাড়ি গ্রাম। বিকেল ৪.‌‌৩০টে নাগাদ উত্তরে পৌঁছে যাবেন। সে ‌দিনটা বিশ্রাম নিয়ে, পরের দিন ব্রেকফাস্ট সেরে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ুন। পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখুন গ্রামখানি। বেড়িয়ে আসুন কাগু মনাস্ট্রি, লিঙ্গে ভিলেজ, মেনবুস ওয়াটার ফলস, হিলারি পার্ক। গাড়ি নিয়ে পেলিং, কালুক, রিংচেংপং, সিংসোর ব্রিজ ঘুরে আসতে পারেন। আর হাতে অতিরিক্ত তিন দিন সময় নিয়ে এলে ট্রেক করতে যেতে পারেন ফোকটে দারা, চেওয়া ভঞ্জন অথবা সিঙ্গালিলা রেঞ্জ। সে ক্ষেত্রে কেউ যদি আপনার সঙ্গী হয়, তা হলে পথের ক্লান্তি ভুলে যাবেন। নেপালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য দেখতে চাইলে লিঙ্গে ভিলেজে চলে যান। পাহাড়ের ওপরে লিম্বু উপজাতিদের ৫–‌৬টা পরিবার নিয়ে এই গ্রামটি গড়ে উঠেছে। এখানকার কাঠের তৈরি বাড়িগুলির কারুকার্য দেখলে সত্যি অবাক হতে হয়। চাইলে এখানে এক রাত থেকেও যেতে পারেন। এখানকার মানুষেরা সুনিবিড় মমতায় আপন করে নেয় পরদেশিয়াকে। আর যদি কোথাও যেতে মন না চায়, তা হলে মেঘ–‌বৃষ্টি–‌রোদের লুকোচুরি দেখতে দেখতে উত্তরে বসেই কাটিয়ে দিন ৩–‌৪ দিন। পরিচয় করুন স্থানীয় মানুষের সঙ্গে। তাদের সারল্য, সহযোগিতা আর আন্তরিকতা আপনাকে বিস্মিত করবে। আর নির্জন অরণ্য–‌ঘেরা ছবির মতো শান্ত ছোট এই পাহাড়ি গ্রামখানির লুকনো সৌন্দর্য‌সুধা আপনার মনে নেশার ঘোর লাগাবেই।‌‌
সব ছবি: কথা পাল

চেকলিস্ট
কী করে যাবেন:‌ হাওড়া, শিয়ালদা বা কলকাতা থেকে ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি হয়ে কিংবা বাসে শিলিগুড়ি পৌঁছে, সেখান থেকে শেয়ার জিপে জোরথাং। তার পর সেখান থেকে আবার শেয়ার জিপ নিয়ে পৌঁছে যান উত্তরে। বাগডোগরা এয়ারপোর্ট থেকে ভায়া জোরথাং হয়েও সরাসরি উত্তরে পৌঁছতে পারেন।
কখন যাবেন:‌ সারা বছরই উত্তরে খুব মনোরম, তাই যে কোনও সময়ই যেতে পারেন। তবে ১৪০ প্রজাতির বিচিত্র রঙের রডোডেনড্রনের অপূর্ব শোভা দেখতে চাইলে মার্চ–‌এপ্রিলে আসতে হবে। আর অক্টোবর–‌নভেম্বর মাসে চমৎকার আবহাওয়া পাবেন।
কোথায় থাকবেন:‌ থাকার জন্য হোম স্টে ছাড়াও অসংখ্য বেসরকারি হোটেল এবং লজ আছে। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য তিন ধরনের চমৎকার হোম স্টে মিলবে। দিন ও রাতের খাবারও মিলবে সব জায়গায়। এখানে হোটেল বেশ সস্তা। থাকা–‌খাওয়া নিয়ে প্রতিদিন মাথা পিছু ৭৫০ টাকা। হোম স্টে-র জন্য যোগাযোগ করুন:‌ পূর্ণা সুব্বা +‌৯১–‌৯৭৩৩০৯৫৫২৭, অবিনাশ সুব্বা +‌৯১–‌৯৭৩৩১৪৬৬৯ এবং গাইডের জন্য যোগাযোগ করা যায় জন-এর সঙ্গে— +‌৯১–‌৭৪৩২০২১৬১১‌।
ট্যুর প্ল্যান:‌ ৭ দিনের ছুটিই যথেষ্ট। কলকাতা থেকে উত্তরে যেতে ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা সময় লাগবে। ফিরতেও তাই। ৪–‌৫ দিন উত্তরেতে থাকুন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশুন, তার পর বিশ্রাম নিয়ে রিফ্রেশ হয়ে ফিরে আসুন নিজের কর্মজগতে।
‌‌‌

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৫

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: বাংলাদেশীদের তো সম্ভবত ওখানে প্রবেশ নিষেধ

২| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৬

কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: আর কিছু ছবি দিলে ভাল হতো। ধন্যবাদ।

৩| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৪

অরিন্দম চক্রবত্রী বলেছেন: কোলকাতা থেকে permit সংগ্রহ করুন

৪| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:৪৭

রমিত বলেছেন: আর কিছু ছবি দিতেন। তাহলে সৌন্দর্য্য আরো উপভোগ করতে পারতাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.