নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বাঙালী পরে আগে আমি ভারতীয়

অরিন্দম চক্রবত্রী

কলকাতায় থাকি

অরিন্দম চক্রবত্রী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাঁকো পেরোতেই ম্যানগ্রোভ অরণ্যে-বকখালি

১৭ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:১৩



বঙ্গোপসাগরের পূর্বপাড়ে পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় সমুদ্র সৈকত বকখালি। বকখালির সমুদ্রতট সোনাঝরা রোদে রূপালি পাতে মুড়ে দেয় প্রকৃতি। এখানকার শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশ সকলের মন জয় করে–‌‌ কর্দমাক্ত এঁটেলমাটি যদিও সমুদ্র স্থানে ব্যাঘাত ঘটায়। বকখালি অঞ্চলটি অনেকগুলি ব–দ্বীপ নিয়ে গঠিত, যার অধিকাংশই সুন্দরবনের অন্তর্গত। বকখালি থেকে ফ্রেজারগঞ্জ পর্যন্ত দীর্ঘ ৭ কিলোমিটার ব্যাপী বিস্তৃত এই সমুদ্রতটে ছুটির দিন ছাড়া খুব ভিড় পাওয়া যায় না।
ট্যাক্সি বা ভাড়াগাড়ি বকখালিতে দুর্লভ, তাই কলকাতা থেকে গাড়ি নিয়ে যাওয়াই ভাল। বকখালির হোটেলগুলিতে ড্রাইভারদের থাকার জন্য অর্থের বিনিময়ে ডর্মেটরি–র ব্যবস্থা আছে। লাল কাঁকড়ার লুকোচুরি দেখতে দেখতে ২ কিমি দূরে নারথনিতলা (‌ফ্রেজারগঞ্জ)‌ বেড়িয়ে নেওয়া যেতে পারে বকখালি থেকে ডানহাতি বিচ ধরে। এখানে একটি ফিশিং হারবার আছে। এখানে একটি সুন্দর রেস্ট হাউসও আছে। উৎসাহী পর্যটকেরা ভটভটি (‌মোটর বোট)–‌তে সমুদ্র বিহারের আনন্দ নিতে পারেন দক্ষিণ–পশ্চিম দিকে অবস্থিত জম্বু দ্বীপে গিয়ে। ১৬ বর্গ কিমি বিস্তৃত এই দ্বীপে গেঁও, গরান, হেঁতাল, ক্যাওড়া ইত্যাদি ম্যানগ্রোভ অরণ্য এবং বন্যশুয়োর, চিতল, শম্বর ইত্যাদির দেখা মেলে। তেমনই মেলে বিভিন্ন সাপের–গোক্ষুরা, শাখামুটি, করাটিয়া, কেউটে, পাইথন। জম্বুদ্বীপ অগণিত লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণস্থল এবং অসংখ্য পরিযায়ী পাখির আবাসভূমি। তরঙ্গ বিক্ষুব্ধ নীরব–নির্জন অনাবিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই জম্বুদ্বীপ। জম্বুদ্বীপ যাওয়ার জন্য বোট রিজার্ভ করারও ব্যবস্থা আছে, সেক্ষেত্রে দরদাম করে নেওয়াটা বাধ্যতামূলক।
বকখালি সফরের সহজ মাধ্যম হল হাতে টানা রিকশা। বকখালি থেকে রিকশায় কিছুক্ষণের পথ হেনরি আইল্যান্ড। এখানকার রাস্তাটি একটি বাঁশের সাঁকো পেরোতেই ম্যানগ্রোভ অরণ্যে মিশে গেছে। সেখানে তৈরি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রচেষ্টায় মৎস্যচাষ প্রকল্প। গোরা, কাকরু, পাম, সাধারণভাবে জন্মানো সুন্দরী গাছ ইত্যাদি ম্যানগ্রোভ ও তাদের শ্বাসমূল এলাকাটিকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে। ঘন ম্যানগ্রোভ জঙ্গলটি বিভিন্ন ছোট ছোট নদী দ্বারা বিভক্ত। এখানে রাজ্য সরকারের ফিশারিজ ডিপার্টমেন্ট-‌এর উদ্যোগে তিনটি গেস্ট হাউস নির্মাণ করা হয়–‌‌ ‘‌ম্যানগ্রোভ’‌, ‘‌সুন্দরী’‌ ও ‘‌বাণী’‌। বাণীর ওপরে একটি ওয়াচ টাওয়ার আছে সেখানে দাঁড়িয়ে পারিপার্শ্বিক মনোরম শোভা উপভোগ্য।
বকখালি বাস স্ট্যান্ডের পিছনে কুমির ও কচ্ছপ প্রকল্প। সেখানে সকালবেলায় কুমিরদের খাবার খেতে দেওয়ার দৃশ্যটি আনন্দ বর্ধক।

কীভাবে যাবেন?‌
বকখালি থেকে কলকাতা (‌১৩০ কিমি)‌, ডায়মন্ডহারবার (‌৮২ কিমি)‌ ও নামখানা (‌২৫ কিমি)‌ দূরবর্তী। জোকা বাস টার্মিনাস থেকে বাস যাচ্ছে বকখালি। রাস্তাটি ডায়মন্ডহারবার, কাকদ্বীপ হয়ে নামখানা পর্যন্ত গিয়েছে। নামখানাতে রয়েছে হাতানিয়া–দোয়ানিয়া নামে ছোট নদী, যেটিকে বিশেষ ফেরিতে বাস বা গাড়ি পার করা হয়। এটি ১০০ মিটারের কম প্রশস্ত, কিন্তু গভীর। কলকাতা ও বাংলাদেশে নৌপরিবহণে এটির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ফেরি ব্যবস্থা চালু থাকে সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত, শুধুমাত্র দুপুর ১২টা থেকে ১টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত বন্ধ থাকে আহারের বিরতির জন্য। গাড়ি বা জিপ পারাপারে ভাড়া লাগে ১৬০ টাকা এবং এর সঙ্গে যুক্ত হয় টোল ৩০ টাকা। বকখালি যাওয়ার বাকি রাস্তাটি বেশ মনোরম। লোকাল বাস যাচ্ছে ৪৫ মিনিটে। ধর্মতলা থেকে রোজ WBSTC–এর বাস ছাড়ে রোজ সকাল ৭টায় ও ৮টায়, যা পৌঁছয় দুপুর ১১.‌‌৩০ টা ও ১২.‌‌৩০ টায়। বাস দুটি ৩০ মিনিট পরই রওনা হয় কলকাতার উদ্দেশে। তবে যাওয়ার পূর্বে সময়সূচি অপরিবর্তিত আছি কি না তা যাচাই করে নেওয়া উচিত হবে। ভাড়া লাগে ৭০ টাকা। এছাড়া লোকাল বাস যাচ্ছে কলকাতা থেকে নামখানা এবং নামখানা থেকে বকখালি।
বকখালির নিকটবর্তী রেল স্টেশন হল নামখানা। লক্ষ্মীকান্তপুর, কাকদ্বীপ হয়ে বহু ট্রেন যাচ্ছে নামখানায়। শিয়ালদা স্টেশন থেকে সকাল ৪টে, ৪.‌৪০-‌এ, ৭.‌৩০টায়, ১০.‌৩০টায় ট্রেন নামখানা যাচ্ছে ৩ ঘণ্টায়, যার ভাড়া ২২ টাকা। সেখান থেকে ভ্যানরিকশায় ৫ টাকার বিনিময়ে পৌঁছনো যাচ্ছে জেটিঘাট। জেটি পার হয়ে বাসে ৩০–৪৫ মিনিটে বকখালি।
কোথায় খাবেন?‌
বাসট্যান্ড থেকে লজের পথে একাধিক হোটেল পাবেন। এ ছাড়া রাস্তার পার্শ্ববর্তী দোকানগুলিতে স্বল্পমূল্যে খাবার পাওয়া যায়। যেহেতু এখানে পর্যটকদের আধিক্য কম, সেজন্য অধিকাংশ হোটেলে কোনও নির্দিষ্ট মেনু হয় না দিনে বা রাতের জন্য। তবে প্রত্যেক হোটেলের নিজস্ব রেস্টুরেন্ট আছে।
কোথায় থাকবেন?‌
বকখালি ও ফ্রেজারগঞ্জে বহু হোটেল আছে থাকার জন্য।
খেয়াল রাখবেন
বকখালিতে মোবাইল ফোনে নেটওয়ার্কে কোনও সমস্যা হয় না। তবে আমি গিয়েছিলাম যখন, এ টি এম‌ ব্যবস্থা তখনও ওখানে চালু হয়নি, তাই সঙ্গে টাকা নিয়ে যাওয়া বাঞ্ছনীয়। মোহময়ী নির্জন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বকখালি এককথায় সপ্তাহান্তে সফরের জন্য আদর্শ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৫

সুমন কর বলেছেন: পরপর ২টি পোস্ট একই ব্লগারের দেখতে ভালো লাগে না !!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.