![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আশ্বিনের এক রৌদ্রকরোজ্জ্বল সকালে চলেছি উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ের কোলে ঘুমিয়ে থাকা এক স্বল্পখ্যাত গ্রামের পথে। গ্রামের নাম ‘নওটি’। কেদার–বদ্রী যাওয়ার পথে একে একে অতি পরিচিত সব জনপদ– দেবপ্রয়াগ, কর্ণপ্রয়াগ, রুদ্রপ্রয়াগ প্রভৃতি পেরিয়ে যাই। তেমনই এক জনবহুল জনপদ কর্ণপ্রয়াগ থেকে মাত্র ২৬ কিমি দূরে এক অত্যন্ত নির্জন ছোট্ট পাহাড়ি জনপদ নওটি। হিমালয়ের কোলে অবস্থিত আর পাঁচটা পাহাড়ি গ্রামের মতোই সাদামাঠা একটি গ্রাম। কিন্তু একটি বিশেষত্ব রয়েছে অন্য জায়গায়। এখানে অবস্থিত নন্দাদেবীর মন্দির থেকেই উত্তরাখণ্ডের বিখ্যাত ধর্মীয় যাত্রা নন্দা জোত যাত্রার সূচনা হয়। প্রায় ২৯০ কিমি দীর্ঘ যাত্রাপথ শেষ হয় রূপকুণ্ড, হোমকুণ্ড পেরিয়ে। গাড়োয়াল ও কুমায়ুন হিমালয়ের অসংখ্য ধর্মপ্রাণ ভক্ত মা নন্দাদেবীর এই ডোলিযাত্রায় সামিল হন। প্রতি বারো বৎসর অন্তর এই যাত্রা হয়। ২০১৪ সালে শেষবার এই যাত্রা হয়েছে। কিন্তু যাত্রার এই সময়টুকু বাদ দিলে বাকি সব সময় এই নির্জন পাহাড়ি জনপদ তার রূপের ডালি সাজিয়ে অপেক্ষায় থাকে কৌতূহলী পর্যটকের।
আশ্বিনের সকালে যখন কর্ণপ্রয়াগ থেকে গাড়ি নওটির উদ্দেশে রওনা দিল, তখন যাত্রাপথে পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে হিমালয়ের জানা–অজানা তুষারশৃঙ্গের উঁকি–ঝুঁকি আমাদের নওটি সম্পর্কে আরও কৌতূহলী করে তুলল। অবশেষে নওটি এসে পৌঁছলাম। থাকার জায়গা বলতে গাড়োয়াল মণ্ডল বিকাশ নিগমের বাংলো, চারপাশের পরিবেশ অত্যন্ত মনোরম। সামনেই দুপুরের রোদে ঝলমল করছে হিমালয়ের তুষারশৃঙ্গ। আগেই বলেছি স্বল্পখ্যাত হওয়ার কারণে বাংলোতে পর্যটক বলতে আমরা কজন। দুপুরের আহার করে আমরা চারপাশ ঘুরতে বেরোলাম। খানিক দূরেই মাতা নন্দাদেবীর মন্দির। অত্যন্ত নির্জন পরিবেশ। আমরা মন্দির চত্বরে অনেকক্ষণ বসে রইলাম আর চারপাশের সৌন্দর্য নিরীক্ষণ করছিলাম। সন্ধের আরতি দেখে আবার গেস্ট হাউসে ফিরে এলাম। দ্বাদশীর বিশাল চাঁদের আলো চারপাশের পরিবেশকে আরও মায়াময় করে তুলেছে। আকাশে হাজার তারা ঝিকমিক করছে। রাত্রে দোতলার বারান্দায় বসে দেশি মুরগির ঝাল, গরম রুটি আর স্যালাডের অসামান্য আহার ভোলার নয়। খাবার ঘর থাকলেও, আমরাই একমাত্র পর্যটক হওয়ার কারণে বারান্দাতেই আহার করলাম। দূরে আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে। চারপাশ এত নিস্তব্ধ যে আমাদের কথা প্রতিধ্বনিত হয়ে আমাদেরই কানে বাজছে। বহুদিন পর এরকম নির্জন পরিবেশে রাত কাটানোর অভিজ্ঞতা হল।
যাঁরা বেড়াতে গিয়ে শহরের কোলাহলমুখর পরিবেশ ছেড়ে শান্তিতে, নির্জনে একান্তে দুয়েকটা দিন কাটাতে চান, তাঁদের জন্য নওটি আদর্শ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে খুব বেশি উঁচু না হওয়ার কারণে (মাত্র ৩৬৯ মিটার) অতিরিক্ত ঠান্ডা পড়ে না। তবে প্রচুর গাছপালা থাকায় ঠান্ডা পড়ে না সেটাও নয়। শীতের সময় যাঁরা হরিদ্বারের দিকে বেড়াতে যাবেন বা পাউরি–খিরমু–ল্যান্সডাউনের দিকে যাবেন, তাঁরা অনায়াসে ‘নওটি’–কে আবিষ্কার করতে পারেন। সরকারি বাংলোটি বেশ সাদামাঠা কিন্তু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। অতিরিক্ত আরাম–বিলাসের আশা না করাই ভাল। সাধারণ খাবারেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। তবে পরিবর্তে যা দেখবেন তা অবশ্যই মনকে পরিপূর্ণ করবে।
পরদিন ভোরে আমরা হরিদ্বারের (২১৭ কিমি) উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় তুষার শৃঙ্গরাজির সৌন্দর্যলাভ থেকে বঞ্চিত হলাম। সন্ধেয় হর–কি–পৌরির কোলাহল মুখরিত ঘাটে বসে আগের সন্ধের সেই অসামান্য নির্জনতার জন্য মন কেমন করছিল।
২| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৫:৪২
অরিন্দম চক্রবত্রী বলেছেন: ধনযবাদ
৩| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৬
জুন বলেছেন: শুধুমাত্র মোশন সিকনেসের জন্য পাহাড়ের আকাবাকা পথে যাবার ভয়ে অপরূপ এই স্থানগুলো দেখার তালিকা থেকে বাদ পরে যায় অরিন্দম চক্রবর্তী । নাহলে যতটুকু বিবরন দিয়েছেন তা সত্যি মনমুগ্ধকর ।
আর ইদানীং বেশী নির্জন এলাকাও কেমন যেন ভয় ভয় লাগে , যেমনটি অনুভুত হয়েছিল ভুটানের বিখ্যাত দোচুলা রিসোর্টে।
৪| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২২
সাদা মনের মানুষ বলেছেন: এমনিতেই ঘরে মন বসেনা, আর আপনার এমন পোষ্টগুলো দেখলে তো একেবারে কাবু হয়ে যাই
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৫:২২
প্রথমকথা বলেছেন: খুব ভাল লাগল আপনার ভ্রমন কাহিনী। শুভ কামনা।