![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আহা, এমন গাঢ় নীল আকাশ কতকাল দেখিনি! সবুজেও কত বৈচিত্র্যের ছাপ। টিলা থেকে নিচের দিকে তাকালে সবুজ শামিয়ানাকে হাতছানি দেয় দূরের পাহাড়, গায়ে লেপটে যায় মেঘ। এ-মেঘের কেউ দুধ–সাদা, বৃষ্টি হয়ে ভাসাবে বলে কেউ বা জলভরা গাভীর মতো।
আঁকাবাঁকা উঁচুনিচু গভীর জংলাপথে ট্রেন চলেছে। কখনও একপাশে তার ধানখেত। কখনও তার পথ আটকে দাঁড়ায় প্রহরী পাহাড়। আর সে পাহাড়ের পেট ফুঁড়ে টানেল বেয়ে চলে যায় রেলের লাইন। তখন এই আলো, তো এই আঁধার! গুয়াহাটি থেকে চলেছি প্যাসেঞ্জার ট্রেনে। দুলকি চালে। লামডিং পেরোতেই সজাগ থাকি। ছোট–বড় সেতু আর টানেলের পর টানেল পেরিয়ে ট্রেন ছুটেছে। চারদিকে সব সতেজ আর সবুজ প্রাণ। গাছপালাগুলো আমাদের ট্রেনকে যেন ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে। ট্রেন দাঁড়াল নিউ হাফলং স্টেশনে। রূপসী হাফলং-এ আছে বেশ কয়েকটি স্টেশন - নিউ হাফলং, হাফলং হিল, লোয়ার হাফলং। মূল শহরের সঙ্গে সব স্টেশনেরই কয়েক কিমি দূরত্বের সম্পর্ক।
উত্তর কাছাড় পাহাড়ের সদর ২,২৩০ ফুট উচ্চতায় অবিকল ছবির মতো হাফলং শহর। এখানে মূলত কাছাড়ি উপজাতীয় মানুষ বসবাস করেন। অতিথিপরায়ণ এই ভূমিপুত্রেরা কথা বলেন দিমাশি ভাষায়। সে ভাষায় এ জনপদের আসল নাম ‘হাঁফলাঁও’। অর্থ যার ‘উইয়ের ঢিপি’ বা ‘হোয়াইট অ্যান্ট’স হিলক’। আর ‘নীল পাহাড়ে দেশ’ বলে অসমের যে উপনাম, তাও এসেছে হাফলং থেকেই।
প্রকৃতি কথা বলে এখানে। ডিমা হাসাও জেলার এই শৈলশহরে আছে দুর্লভ প্রজাতির কিছু অর্কিড–সহ নানা গাছ, ফুল ও মূল্যবান ভেষজ। নীল ও সবুজের একঘেয়েমি কাটিয়ে দেয় বাহারি রঙের এই নেশা ধরানো অর্কিডের উজ্জ্বল ফুল। অর্কিডের এই ভুবনে দেশ-বিদেশের অর্কিড-প্রেমী ও পর্যটকরা আসেন। উত্তর কাছাড় পার্বত্য পরিষদের মুখ্য কার্যালয়ে যাওয়ার পথে পড়ে হাফলং বোটানিক্যাল গার্ডেন। সেখানে মূল্যবান অর্কিডের পাশাপাশি পাবেন উন্নতমানের শাল, সেগুন, নিম, গামাই-সহ নানা ধরনের গাছ। শহরের আশেপাশে প্রচুর নাশপাতি, আনারাস, কমলা ও খোবানির বাগান।
সুন্দর দুটি লেক আছে হাফলং-এ। তার একটি আবার মধ্যমণি হয়ে শহরের একেবারে হৃৎপিণ্ডে। চমৎকার সে লেকের জলে প্রতিবিম্বিত হয় পাশের সব পাহাড়। বাস স্ট্যান্ড ছাড়িয়ে বেশ খানিকটা গিয়ে লেক পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে চক বা ম্যাল। লেকের জলে বোটিংয়ের ব্যবস্থাও আছে।
হাফলং আদতে হাঁটার জন্য। হাঁটা শুধুই হাঁটা। অসমের এই বর্ণময় পৃথিবীতে এলে মনে হবে কত সুন্দর এই বসুন্ধরা। পারলে লেকের ধারের কোনও হোটেলে উঠুন। ভোরের লেকে নিজের মুখ দেখে রাতের লেককে ‘শুভরাত্রি’ বলুন। আর সারাদিন বুক ভরে টেনে নিন লেকের পাড়ের টাটকা অক্সিজেন।
হাফলং থেকে ৯ কিমি দূরে হাফলং-শিখর জাতিঙ্গা। প্রতিবছর বর্ষার পরে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের কৃষ্ণপক্ষের রাতে যখন বাতাস থাকে কুয়াশাচ্ছন্ন, আকাশ মেঘলা, অথবা বৃষ্টি হয় সামান্য - তখন কী যে হয় জাতিঙ্গা-পাখিদের! সেদিন সব পাখি ঘরে ফেরে না। দুঃখী ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে ‘জীবনের সব লেনদেন’ ফুরিয়ে তারা নাকি আগুনে ঝাঁপ দিয়ে গণআত্মহত্যা করে। সময়টাও বড় অদ্ভুত। সন্ধে ৭টা থেকে রাত ১০টা। অবশ্য জাতিঙ্গার এ-হেন পাখি-রহস্য নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। স্বয়ং সালিম আলি থেকে হালের ডাঃ এস সেনগুপ্তের গবেষণালব্ধ লেখা থেকে নানা তথ্য উঠে এসেছে। যদিও একক ভাবে কোনও সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। জাতিঙ্গা অবশ্যই বেড়াবেন।
কলকাতা থেকে সরাসরি হাফলং যেতে ধরুন ২৫৬৫৭ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস (সোম, বুধ, শনি)। ট্রেনটি সকাল ৬.৩৫ মিনিটে শিয়ালদা ছেড়ে ২য় দিন বেলা ১১.৪০ মিনিটে গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে। এছাড়া গুয়াহাটি গিয়ে সেখান থেকে রাত ১১.৫৫ মিনিটের ৫৫৬১৫ শিলচর প্যাসেঞ্জার ধরে পরদিন সকাল ৮.১৫ মিনিটেও হাফলং পৌঁছনো যায়। হাফলঙে থাকার জন্য আছে সরকার অনুমোদিত কিছু বেসরকারি হোটেল। বিশদে: ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন অফিস, অসম সরকার, অসম হাউস, ৮ রাসেল স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০৭১। ফোন: (০৩৩) ২২২৯-৫০৯৪/ ৯৮৩০০-০৬৩২২। ওয়েবসাইট: http://www.assamtourism.gov.in বা www. assamtourismonline.com।
©somewhere in net ltd.