![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
‘...সেই তো রানী, সেই তো রাজা/সেই তো একই ঢাল তলোয়ার/ সেই তো একই রাজার কুমার/ পক্ষিরাজে...’- (মেঘবালিকার জন্য রূপকথা— জয় গোস্বামী)
রাজা, রানী, রাজপুত্র কারও সঙ্গেই দেখা হয়নি কিন্তু নিরিবিলি এই সবুজ শহরটায় এসে পড়ার পর থেকে কেবলই মনে হচ্ছে এ বুঝি বা রূপকথারই দেশ। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা ওক, পাইন, দেওদার গাছগুলোর মাথায় সবুজ পাতার চাঁদোয়া। কখনও সখনও ভেসে আসছে হুইসলিং থ্রাসদের গান। নিরাসক্ত ভঙ্গিতে গাছের পাতা চিবিয়ে চলেছে এক পাল হনুমান। এ গাছ থেকে সে গাছে কাঠবিড়ালিদের অনাবশ্যক দৌড়োদৌড়ি।
প্রায় ৭৫০০ ফুট উচ্চতার ল্যান্ডোর নামের গাড়োয়ালের এই মায়াবী শহরটাতে ট্যুরিস্টদের তেমন আনাগোনা নেই। কয়েকটা মিশনারি স্কুল, হাসপাতাল, সেনাবাহিনীর ও সরকারি কিছু দপ্তর ছাড়া আবাসিক বাড়ির সংখ্যাও হাতেগোনা। নতুন বাড়ি তৈরি করাও সম্ভব নয়। সেনাবাহিনীর কড়া নিয়ম। লাল ঢালু ছাদ আর টানা বারান্দাওলা ব্রিটিশ কটেজের ধাঁচে তৈরি পুরনো বাংলোগুলোই আজও টিকে আছে তাদের একফালি সাজানো বাগান সমেত।
১৮২৫ সালে তৈরি ‘MULLINGER’ নামের বাড়িটাই ল্যান্ডোরের প্রাচীনতম বাড়ি। তৈরি করেছিলেন ফ্রেডরিক ইয়ং নামে দেরাদুনে কর্মরত এক আইরিশ সেনা অফিসার। শিকারের খোঁজে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎই এসে পড়েন এ অঞ্চলে। প্রথম দেখাতেই প্রেম। তাঁর হাত ধরেই এরপরে অন্য ইউরোপিয়ানদের আসা যাওয়া শুরু এবং ল্যান্ডোরকেই স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে বেছে নেওয়া। সম্ভবত হোমল্যান্ড থেকে দূরে থাকার দুঃখ ভুলতেই। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও এখানকার আবহাওয়ারও অবশ্য একটা বড় ভূমিকা আছে এ ব্যাপারে। চরম গ্রীষ্মেও ল্যান্ডোরের তাপমাত্রা কখনও ৩০ ডিগ্রি ছাড়ায় না। শীতও পড়ে বেশ ভালই। কখনও-সখনও তুষারপাতও হয়।
পরবর্তীকালেও অবশ্য অনেকেই ভালবেসে ফেলেছেন এ শহরটাকে। ইংরেজি ভাষার মায়াবী লেখক রাসকিন বন্ড সাহেব তো এখানেই কাটিয়ে দিলেন জীবনের বেশিটা সময়। ‘আইভি কটেজ’ নামের বাড়িটায়। নিঃসঙ্গতা মাঝে মাঝে পীড়া দিলেও শান্ত, সবুজঘেরা এই পাহাড়ি উপত্যকাটা ছেড়ে অন্য কোথাও থাকার কথা ভাবতেই পারেন না। অভিনেতা ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়, এন ডি টিভি-খ্যাত প্রণয় রায়–রাধিকা রায়েদেরও নিজস্ব বাংলো রয়েছে ল্যান্ডোরে।
অভিনেতা টম অল্টার ও তাঁর ভাই স্টিফেন অল্টারের ল্যান্ডোরে তিন পুরুষের বাস। লেখক দম্পতি হিউ ও কলিন গান্টজিয়ার, ‘ফুটলুজ অফ হিমালয়াজ’–এর লেখক বিল এইটকেন ছাড়াও নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিখ্যাত আরও অনেক লোকজনও আপন করে নিয়েছেন ল্যান্ডোরকে। শচীন তেন্ডুলকার নাকি প্রায়ই ছুটি কাটাতে চলে আসেন ল্যান্ডোরে, বন্ধু সঞ্জয় নারাংয়ের বাড়িতে।
১৮২৭ সাল নাগাদ অসুস্থ ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মির সেনাদের সুস্থ করে তোলার জন্য ল্যান্ডোরে গড়ে তোলা হয়েছিল একটা স্যানাটোরিয়াম। ব্রিটিশ আমলে প্রাচ্য ভাষাশিক্ষার জন্য তৈরি ল্যান্ডোর ল্যাঙ্গোয়েজ স্কুল আজও সমান জনপ্রিয়। দূর দূরান্তের ছাত্রছাত্রীরা এখানে আসেন হিন্দি, উর্দু, গাড়োয়ালি ও অন্যান্য ভারতীয় ভাষা শিখতে। বেশ কয়েকটা উঁচুমানের স্কুলও আছে ল্যান্ডোরে। যদিও উডস্টক স্কুল–এরই বেশি সুনাম।
এখানকার সেন্ট পল্স গির্জা অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার নীরব সাক্ষী। ১৮৫৯ সালের ১৩ অক্টোবর তারিখে এখানেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন উইলিয়াম ক্রিস্টোফার ও মেরি জেন করবেট। এই দম্পতির অষ্টম সন্তানকে তো আজ গোটা দুনিয়া একডাকে চেনে। জিম করবেট।
ভারতীয় সেনাবাহিনী ছাড়াও ল্যান্ডোরকে দিবারাত্রি পাহারা দিচ্ছে প্রায় ২০০ কিমি বিস্তৃত গাড়োয়াল হিমালয়। স্বর্গারোহিণী, বন্দরপুচ্ছ, গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী ছাড়াও আরও নানা শৃঙ্গ দাঁড়িয়ে আছে ল্যান্ডোরের উত্তর জুড়ে।
কাছাকাছির জঙ্গল থেকে লেপার্ডরা মাঝেমধ্যে হানা দেয় ল্যান্ডোর লাগোয়া গ্রামগুলোতে। বার্কিং ডিয়ার, গোরাল, শ্লথ বিয়ার, হলুদ গলার মোটাসোটা ল্যাজওয়ালা মার্টিন জাতীয় নানা প্রাণীর দেখা মিলবে এ অঞ্চলে। দেখতে পেতে পারেন উড়ুক্কু কাঠবিড়ালিদেরও।
ল্যান্ডোর পাখিপ্রেমিকদের স্বর্গ। সাড়ে তিনশোরও বেশি পাখির দেখা পাওয়া যায় ল্যান্ডোরে। সুদূর সাইবেরিয়া, মধ্য এশিয়া বা তিব্বত থেকে উড়ে আসা পরিযায়ী পাখিদেরও প্রিয় গন্তব্য ল্যান্ডোর।
একদিন ঘুরে আসুন কাছের ‘পরি টিব্বা’ থেকে। ওক, ফার, পাইন, রডোড্রেনডন গাছেদের যেন মেলা বসেছে এই পাহাড়ি টিলায়। আছে বেশ কয়েকটা ঝর্নাও। কারও কারও কাছে আবার এ টিলার নাম উইচ হিল। নানা আধিভৌতিক গল্পকথাও শুনতে পাবেন এ টিলাকে ঘিরে, একটু কান পাতলেই।
চার দুকান এলাকাটা ল্যান্ডোরের প্রাণকেন্দ্র। কাছেই সিস্টার্স বাজার। আজও ল্যান্ডোর স্যানাটোরিয়ামে কর্মরত আন্তরিক ও নিরলস নার্সদের স্মৃতি বহন করছে। ল্যান্ডোরে এলে ১০০ বছরেরও বেশি পুরনো প্রকাশের গ্রসারির দোকানে যেতে ভুলবেন না। এ দোকানের কটেজ চিজ, জ্যাম, মার্মালেড বা ফ্রুট কেকের স্বাদ অসাধারণ। গান্ধী পরিবার–সহ নানা বিখ্যাত লোকজন রয়েছেন এ দোকানের গ্রাহক তালিকায়।
ব্যাকপ্যাক
হাওড়া থেকে দেরাদুন যাচ্ছে ১৩০০৯ দুন এক্সপ্রেস (প্রতিদিন) এবং ১২৩২৭ উপাসনা এক্সপ্রেস (সোম ও শুক্রবার)। ভাড়া: ২এ–২,৪১০, ৩এ– ১,৬৬০ ও স্লিপার ৬৩০ টাকা। দেরাদুন থেকে সড়কপথে ল্যান্ডোর, দূরত্ব ৩০ কিমি। সময় লাগবে কমবেশি দেড় ঘণ্টা। দিল্লি হয়ে বিমানেও যাওয়া যায়। দিল্লি থেকে দেরাদুনের কাছে জলি গ্রান্ট বিমানবন্দরে পৌঁছতে সময় লাগে মাত্র ৪০ মিনিট।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৫:০০
বিজন রয় বলেছেন: দারুন!!
ছাবটিও।