নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বাঙালী পরে আগে আমি ভারতীয়

অরিন্দম চক্রবত্রী

কলকাতায় থাকি

অরিন্দম চক্রবত্রী › বিস্তারিত পোস্টঃ

দূরে ধ্যানমগ্ন মৌনী হিমালয়

২৯ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৫:০৭





রাত পেরিয়ে ভোর গড়িয়ে সকাল। এবারে নামতে হবে, নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন। আমাদের গন্তব্য মার্তাম, পশ্চিম সিকিমের এক অচেনা গ্রাম। প্রায় ১,৫০০ মিটার উচ্চতায় সবুজের ঘেরাটোপে নিশিযাপনের নয়া ঠিকানা। স্টেশন থেকে প্রথমে পৌঁছলাম শিলিগুড়ি। ভাগ্য ভাল ছিল, শিলিগুড়ির এস এন টি বাস স্ট্যান্ডের কাছে জোরথাংয়ের শেয়ার ট্যাক্সিতে ঠাঁই মিলে গেল আমাদের। সঙ্গে লটবহর বেশি ছিল না। বেশ গুছিয়ে বসলাম। যাত্রা হল শুরু। এ যেন এক রহস্যমোচন, পরতে পরতে অদেখার আনন্দ। অবিরাম মেঘ–রোদ্দুরের লুকোচুরির মাঝে লাজুক পথ। পাইন আর ওকের জঙ্গল, জঙ্গলের সে অনিঃশেষ বিস্তারে আমাদের মনোবল তুঙ্গে। শিলিগুড়ি থেকে জোরথাং–‌‌ এই পথের দূরত্ব ৮৪ কিমি। জোরথাংয়ে এসে যাত্রা শেষ। গাড়ি থেকে নেমে শেয়ার ট্যাক্সির খোঁজ পেয়েও গেলাম। সঙ্গে পরিবার থাকলে ঝুঁকি না নেওয়াই ভাল। সেক্ষেত্রে শিলিগুড়ি থেকে গাড়ি ভাড়া করে সরাসরি ধুংগে পৌঁছে যাওয়া ভাল। জোরথাং থেকে আরও সামনের দিকে এগোচ্ছি। পথে পড়ল সোরেং, কালুক, বারমিওক জনপদ। বারমিওক থেকে আরও প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথ সামনে উজিয়ে যেতে হবে। বুকে হাত রাখতেই বুঝতে পারলাম হৃদ্‌যন্ত্রের গতি বেড়েছে উত্তেজনায়। শহুরে একঘেয়েমির চেনা ঠিকানা ছেড়ে এ কোথায় এলাম! দূরত্ব সম্পর্ক কাঁটা জানান দিচ্ছে পেরিয়ে এসেছি প্রায় পাঁচ কিমি পাহাড়ি সর্পিল পথ। নজরে এল একটা বড় কালো পাথর। লেখা রয়েছে ‘Dhungay Welcomes You’। ‘ধুংগে’ শব্দটির অর্থ একটি দিকচিহ্ন। এই কালো পাথরটিই হল মার্তাম গ্রামের ল্যান্ডমার্ক। এদিকে ঘড়ির কাঁটা বেশ কয়েকটা ঘর ঘুরে জানান দিচ্ছে, প্রায় পাঁচ ঘণ্টা খরচ হয়ে গেছে সময়ের রাজকোষ থেকে। তবে প্রকৃতির অকৃপণ সৌন্দর্যসুধায় সে পথশ্রম মালুম হয়নি। এবারে বুঝলাম জঠরানল তীব্র হচ্ছে। গাড়ি যেখানে আমাদের নামিয়ে দিল, সেখান থেকে শুরু হয়েছে পাথর বাঁধানো সিঁড়ি। মিনিট দশেক সিঁড়ি ধরে উঠলেই কাঠের তৈরি বেশ বড় বাড়ি। এটিই ধুংগে হোম স্টে, আমাদের দিন যাপনের ঠিকানা। এটি চালান ছেত্রি দম্পতি গণেশ এবং পদ্মা। ওঁদের আতিথেয়তায় মনে হচ্ছিল যেন ওঁদের সঙ্গে আমাদের বহুদিনের পরিচয়। বিকেলের দিকে আকাশ বেশ পরিষ্কার। বারান্দায় বসেই দেখতে পাচ্ছি দূরে হিমালয়ের চূড়া। চলে এল বিকেলের চা। চায়ে চুমুক দিতে দিতে জমে উঠল গল্পের আসর। বসে থাকতে থাকতে মনে হচ্ছিল সবুজের রাজ্যে বসে আছি–‌‌ চারদিকে সবুজের ঘেরাটোপে, মন আপনিই ভাল হয়ে ওঠে। দৈনন্দিন জীবনের ওঠাপড়া, চাওয়া–পাওয়া, মান–অভিমান সব তখন দূরে সরে যায়। সামনে ছোট্ট বাগান। মার্চ–এপ্রিলে অর্কিড ফুলে সেজে ওঠে তখন। তখন আবার আসবার আগাম নেমন্তন্ন করে রাখলেন ছেত্রি দম্পতি। রাত্রে খেতে খেতে পরিকল্পনা হল পরদিন ভোরে বেরোব গ্রামের আশপাশ দেখতে। গণেশকে বলতেই উনি বললেন, ‘ঘাবড়াইয়ে মত্‌, আমিই আপনাকে চারপাশ ঘুরিয়ে আনব।’ পরদিন ভোরবেলা চা খেয়ে বেরিয়ে পড়া গেল গ্রাম দর্শনে। সরল, অনাড়ম্বর গ্রাম্য জীবনের নির্ভেজাল ছবি। নির্মল বাতাসে প্রাণভরে শ্বাস নিই। ঘণ্টা দুয়েক হাঁটাহাঁটির পর ক্ষান্ত দিই, পা বাড়াই আস্তানার দিকে। দুপুরে অলস নিদ্রার পরে বিকেলে চারদিক ঝলমলে। চোখ মেলে দিই সামনের দিকে। সবুজের পরিসীমা হালকা হতেই দূরে ধ্যানমগ্ন মৌনী হিমালয়ের আভাস, হিমেল চূড়ার আকাশছোঁয়ার সে অনিঃশেষ খেলায় অজান্তে সঙ্গী হই আমিও। সন্ধে নামে আবার ভোরের প্রতীক্ষা। ছেড়ে যেতে হবে এ সুখবাসর, দিন গুজরানের সেই নিত্য একঘেয়ে পাঁচালি। তবে কথা দিই আবার আসব, আসতেই হবে আবার মর্ত্যের এই লীলাপ্রাঙ্গণে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৭

সঞ্জয় নিপু বলেছেন: কাহিনী টা কেমন যেন ছাড়া ছাড়া লাগলো ।
একটা যাত্রা শুরু হল কিন্তু শেষ হল কি ?
কোথায় , কিভাবে যাওয়া যায়, থাকা খাওয়া, দেখা ঘোরার আরো তথ্য থাকলে ভাল হতো।
লেখার ভাষা সুন্দর , পরে কি কোন পর্ব আছে নাকি এই ভ্রমণের ?
ধন্যবাদ ।

২| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:০৫

অরিন্দম চক্রবত্রী বলেছেন: না আর পর্ব নেই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.