![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মহাপঞ্চমী। শোরগোলটিও যে অতএব মহারূপ ধারণ করবে, তাতে আর আশ্চর্য কী! শহরের পথে তাই এখন শুধুই পূজা উদযাপনের উচ্ছ্বাস। দেবীদর্শনের আকুল আকাঙ্ক্ষা।
প্রথার কথা ধরলে অবশ্য দেবী এখনও আবির্ভূতা হননি। মহাষষ্ঠীর সন্ধ্যা যখন আবির্ভূত হবে, তখনই বিল্মমূলে জেগে উঠবেন দেবী দুর্গা। দশপ্রহরণে সজ্জিতা হবেন তিনি। বেজে উঠবে ঢাক-কাঁসর, ধূপে-দীপে আচ্ছন্ন হবে পবিত্র বিল্বমূল।
কিন্তু, সে শুধুই মণ্ডপের মহিমা। কলকাতাকে ঘিরে বাঙালি-অবাঙালি নির্বিশেষে সবার প্রাণে ঢাক বোল তুলেছে চতুর্থী থেকেই। কোথাও সেই ঢাকের বোল যানজটে চড়াম-চড়াম হয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত করে তুলছে, তো কোথাও হাসিমুখের উচ্ছ্বলিত আনন্দে ধরা দিয়েছে ঢ্যাংকুড়াকুড়!
সব মিলিয়ে পঞ্চমী বলে দিচ্ছে আগামী পাঁচটি দিন কীরকম রূপ ধারণ করতে চলেছে। ইতিমধ্যেই এসে গিয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন অংশে যানজটের খবর। রাসবিহারী-গড়িয়াহাট এলাকায় গাড়ি প্রায় থমকে। আরজি কর এলাকাতে খুব ধীরে ধীরে পাড়ি দিচ্ছে গাড়ি। পার্ক সার্কাস, আমির আলি অ্যাভিনিউ, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ- সর্বত্রই এক দশা।
তা বলে কি আনন্দধারা রুদ্ধপ্রায়? কে বলেছে! বছরের সবকটা দিনই তো হুশ করে পথ পেরিয়ে যাওয়া! সেই পথে থাকে না আলোর বাহার, থাকে না মোড়ে মোড়ে দেবীর মুখ দেখার কামনা। ফলে, পুজোর এই বাধাটুকু কাটিয়ে নেওয়া কী এমন বড় ব্যাপার! সেও তো পুজোরই অঙ্গ। শরতের আকাশ-বাতাসে যেমন থমকে আছে পুজোর আমেজ, শহরের পথেও না-হয় তাই খানিক রইল! মন্দ কী! মাও তো সপরিবারে, সায়ুধবাহনে ভক্তের জন্য অপেক্ষা করছেন। যানজটের জন্য তো তাঁরও ভক্তের মুখ দেখতে কিছু দেরি হচ্ছেই! ভক্তই বা তাহলে ওইটুকু অপেক্ষা কেন করতে পারবে না?
রাসবিহারীর ৬৬ পল্লির মণ্ডপে দেবীও তাই প্রহর গুনছেন। প্রহর গুনছে ওই মণ্ডপেই ঠাঁই নেওয়া পুরো শহর কলকাতা। এক ছাদের তলায় সারা শহরের সঙ্কুলান- এটাই তো ৬৬ পল্লির এবারের পুজোর থিম। রঙে স্নান সেরে শিল্পীর হাতের তুলি স্রেফ প্লাইউডকে সম্বল করেই ধরেছে পুজোমণ্ডপে শহরের স্থাপত্যের নির্যাস। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, হাওড়া ব্রিজ, কালাঘাটের মন্দির, পুরনো কলকাতার সাবেকি বাড়ির থাম, চকমিলানো মেঝে, গির্জার সুউচ্চ চূড়া, মসজিদের অভ্রভেদী মিনার- কিচ্ছুটি বাদ যায়নি। এ সবের মাঝেই দর্শনার্থী দর্শনে উদগ্রীব দুর্গা। মণ্ডপে পৌঁছবার আগে তার এক ঝলক দেখে নিন ঠিক নিচের এই ভিডিওয়।
দেবী যে স্বরূপত নানা রূপধারিণী, এই শহরের পুজো-উদ্যোক্তারা সে কথাটি ভোলেননি। তাই একটিমাত্র মণ্ডপে দেবীদর্শনেই সাঙ্গ হয় না এই মহাপুজো উদযাপনের পালা। তাই গন্তব্য হোক এক মণ্ডপ থেকে পরের মণ্ডপ। ইটের এই শহরের বিচিত্র রূপমহিমার সাক্ষী থাকতে পা এগোক বাদামতলা আষাঢ় সংঘের পানে। বসিরহাট থেকে এই মণ্ডপে এসেছে ইট, তা ভেঙে তৈরি হয়েছে ছোট ছোট ঢিল। ইটের প্রাচীর, ইটের খিলান, ইটের পদ্মের মাঝেই এই মণ্ডপে দেবী এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে ঠাঁই নিয়েছেন নবগ্রহেরা। যার জৌলুস মণ্ডপে গিয়ে প্রত্যক্ষ করার আগেই দেখে নিন নিচের ভিডিওয়।
দক্ষিণের এই পূজা পরিক্রমায় তালিকায় থাকুক চেতলা অগ্রণীর পুজোও। প্রতি বছরের মতো এবারেও যা আত্মপ্রকাশ করেছে শিল্পিত থিমের বাহারে। মণ্ডপের আনাচে-কানাচে তাই চোখে পড়ছে দর্শনার্থীর ঢল। হাতে হাত রেখে, মনের ব্যারিকেড গড়ে যার প্রকাশ উচ্ছ্বসিত পূজা-প্রাণে। সেই পুজোরও আগাম ঝলক রইল নিচের ভিডিওয়।
ধীরে ধীরে রাত নামে। পঞ্চমী থেকে তিথি সরে যায় ষষ্ঠীর ঘরে। এগিয়ে আসতে থাকে মায়ের জেগে ওঠার প্রহর। আমরাও কি সেই তানে মন-প্রাণ মিলিয়ে জেগে উঠছি না?
©somewhere in net ltd.