নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যের সন্ধানে ....

সত্যান্বেসী

কলকাতা হাই কোর্টের উকিল

সত্যান্বেসী › বিস্তারিত পোস্টঃ

শামস ই তাব্রিজি ৩ অনুবাদ ও ব্যাখ্যা

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৮

শামস ই তাব্রিজি ৩

মৌলানা জালালুদ্দিন রুমি

অনুবাদ ও অর্থ


আমার একজন প্রেমিকা ও বন্ধু চাই
তুমি সমস্ত বন্ধুত্বের উর্ধ্বে বিরাজ কর
আর আমি শক্তিহীন থাকি |

তুমি নোয়া এবং তার জাহাজ
তুমিই আলো তুমিই আঁধার
আমি পর্দার পিছনে থাকি |

তুমি প্রেম এবং তুমিই ক্রোধ
তুমি পাখি এবং তুমিই খাঁচা
আমি ওড়ার পথ হারিয়ে ফেলেছি |

তুমিই মদিরা এবং পেয়ালা
তুমিই বিন্দু এবং সিন্ধু
আমি শুধু ভেসে চলি |


আমি বলি হে জগতের আত্মা
আমার হতাশা বাঁধ মানছে না |
“আমি তোমারই সার” সমস্ত বিবাদের উর্ধ্বে
আমাকে সোনার চেয়েও মূল্যবান জ্ঞান কর |


তুমি টোপ এবং তুমিই ফাঁদ
তুমি পথ আর তুমিই মানচিত্র
আমি শুধু খুজতেই থাকছি |


তুমিই বিষ আর তুমিই অমৃত
তুমিই পরাজয় আর তুমিই পরাজিত
তলোয়ার হাতে আমি দাড়িয়ে আছি


তুমিই কাঠ আর তুমিই করাত
তুমিই কাঁচা অন্ন আর তুমিই পাকা অন্ন
আমি শুধু পাত্রে রয়েছি |


তুমিই সূর্য এবং তুমিই কুয়াশা
তুমি জল এবং তুমিই জলপাত্র
আর আমি তৃষ্ণার্ত থেকে গেলাম |
১০
শামস-এর সুগন্ধ হলো
তাব্রিজের আনন্দ এবং গর্ব
আর আমি হলাম গন্ধবিক্রয়্কারী|

এই কবিতাটায় একটা জিনিস লক্ষ্য করার মত | আমি আর তুমির ব্যবহার এবং প্রতিটি ভাগের শেষ দুলাইনের মধ্যে সম্পর্ক | প্রথম লাইনটি কিন্তু সম্পর্কহীন হয়ে রয়েছে |

প্রথম ভাগে কবি বলেছেন যে তার এক প্রেমিকার দরকার | এখানে বলা উচিত যে রুমি একজন সুফি সাধক ছিলেন | তার কোনো রক্তমাংসের প্রেমিকা ছিল না | তাহলে এখানে প্রেমিকা শব্দে আল্লাকে বুঝতে হবে | সুফিদের কোনো রক্তমাংসের প্রেমিকা থাকে না | একমাত্র আল্লাই তাদের প্রেমিকা |
সেই প্রেমিকা অর্থাত আল্লা সমস্ত বন্ধুত্বের উর্ধ্বে অবস্থান করেন | অর্থাত তিনি হলেন শ্রেষ্ঠ বন্ধু | কবির তার মত বন্ধু হবার শক্তি নেই |

দ্বিতীয় ভাগে বলেছেন যে আল্লাই হলেন নোয়া এবং তার জাহাজ | আল্লাই হলেন আলো এবং আঁধার | অর্থাত আল্লাই রক্ষাকর্তা এবং রক্ষার উপায় | আল্লা পরস্পর বিরোধী গুনের অধিকারী | কবি এই সত্যিকে দেখতে পারছেন না কারণ তিনি পর্দার আড়ালে আছেন | পর্দাটি কি ? কাপড়ের পর্দা নয় | কারণ তার সাথে আল্লার জাতের কোনো সম্বন্ধ নেই | পর্দাটি হলো মনের কলুষতার পর্দা | এই কলুষতার জন্যই আল্লার জাতটিকে কবি দেখতে পারছেন না |

তৃতীয় ভাগে তিনি বলেছেন আল্লাই প্রেম এবং ক্রোধ | পাখি এবং খাঁচা | এর অর্থ হলো আল্লাই বন্দী এবং কারাগার | কবি ওড়ার পথ হারিয়ে ফেলেছেন | কবি কারাগার থেকে মুক্তির পথই হারিয়ে ফেলেছেন | তার মন এত কলুষিত যে বন্দিটি কে এবং তার কারাগারটি কি তাই তিনি বুঝতে পারেননি | তাই মুক্তির পথ হারিয়ে ফেলেছেন |

চতুর্থ ভাগে কবি বলেছেন যে আল্লাই মদিরা এবং পেয়ালা | অর্থাত আল্লাই আধার এবং আধেয় | আল্লাই বিন্দু এবং সিন্ধু | আল্লা ক্ষুদ্র এবং বৃহত | কবি শুধু ভেসে চলেন | হয়ত বা পেয়ালার মদিরাতে অথবা সমুদ্রে | তিনি আল্লাতেই আছেন |

পঞ্চম ভাগে কবি বলেছেন যে তিনি এখনো জগতের আত্মা তথা আল্লার দেখা পান নি | তাই তিনি যারপরনাই হতাশ | তিনি বলেছেন যে তিনি আল্লারই সার | তিনি সোনার চেয়েও মূল্যবান | এখানে অদ্বৈত ভাবটি প্রকাশ পেয়েছে | আগের ভাগের সাথে এটার মিল আছে |

ষষ্ঠ ভাগে কবি বলেছেন , আল্লাই টোপ এবং ফাঁদ | দুটো আলাদা জিনিস নয় | আল্লাই পথ আর আল্লাই মানচিত্র | মনের কলুষতার দরুন কবি তা জানেন না | তিনি খুজছেন আল্লাকে | কিন্তু যে পথ ধরে খুজছেন এবং যে মানচিত্র ওই পথের দিশা দিচ্ছে তাই যে আল্লা , এটা উনি বুঝতে পারছেন না | তিনি মনে করছেন পথের শেষে আল্লাকে পাবেন | কিন্তু তা ভুল ধারণা |

সপ্তম ভাগে কবি বলেছেন যে আল্লাই বিষ এবং অমৃত | তার মানে অমৃত আর বিষ পৃথক নয় | অনেকে বলেন যে আল্লা হলো অমৃত আর শয়তান হলো বিষ | কিন্তু রুমি এমনটা বলেন না | তার কাছে দুটি সমান | তিনি আরো বলেছেন যে আল্লাই হলো পরাজয় এবং পরাজিত ব্যক্তি | তলোয়ার হাতে তিনি দাড়িয়ে আছেন কারণ তিনি জয়ী | এখানে একটু বলার দরকার আছে : যে কোনো যুদ্ধের উদ্দেশ্য হলো জাগতিক ভোগসুখ পাওয়া | এখানে যারা পরাজিত হয় অর্থাত জাগতিক ভোগসুখ লাভে বঞ্চিত হয় , শুধু তারাই একমাত্র আল্লাকে পায় | তাই আল্লা হলো পরাজয় আর পরাজিত | কবি জীবনযুদ্ধে জয়ী হয়ে তলোয়ার হাতে দাড়িয়ে আছেন | আল্লাকে তিনি পান নি | নিগলিতার্থ : আল্লাকে পেতে গেলে জাগতিক ভোগসুখ ছাড়তে হবে |

অষ্টম ভাগে তিনি বলেছেন আল্লাই কাঠ এবং আল্লাই করাত | অর্থাত ধ্বংস যে করছে আর যে হচ্ছে দুজনেই আল্লা | আল্লাই কাঁচা অন্ন এবং পক্কান্ন | কবি শুধু পাত্রেই থেকে গেলেন | অর্থাত কবি আল্লার খুব কাছে আছেন :যতটা কাছে অন্ন এবং পাত্র থাকে | কিন্তু তিনি আল্লাকে পাচ্ছেন না |
নবম ভাগে কবি বলেছেন যে আল্লাই সূর্য আর আল্লাই কুয়াশা | এটা সেই আলো আর আঁধারের মত ব্যাপার | আল্লাই জল এবং জলপাত্র | কবি রয়েছেন তৃষ্ণার্ত | কারণ তিনি আল্লার দেখা পান নি |

দশম ভাগে কবি বলেছেন যে শামসের সুগন্ধ হলো তাব্রিজের গর্ব ও আনন্দ | কবি হলেন গন্ধবিক্রেতা | শামস হলো সূর্য | তব্রিজ একটা জায়গার নাম | শামস ই তব্রিজ-এর মানে হলো তাব্রিজের সূর্য | এটা তাব্রিজের আকাশের সূর্য নয় কারণ সেই সূর্যের কোনো সুগন্ধ নেই যা সেখানকার লোকেদের আনন্দ দিতে পারে | এখানে তাব্রিজের সূর্য হলো এক ব্যক্তি , খুব সম্ভব কবি রুমি |কারণ এখানে সূর্যের সুগন্ধ আছে আর কবি নিজেকে গন্ধবিক্রেতা বলেছেন |কবির সুগন্ধ হলো কবিতা | সেই কবিতা তাব্রিজের গর্ব ও আনন্দ | অর্থাত তাব্রিজবাসীরা কবির কবিতাকে উপভোগ করে এবং আনন্দ করে | গন্ধবিক্রেতা কখনো নিজের গন্ধের সুবাসে গর্ব আর আনন্দ উপভোগ করে না | সে তার লাভ ক্ষতির হিসাব করতেই ব্যস্ত | তার বিক্রিত গন্ধের আনন্দ অন্যে নেয়| কিন্তু কবি এই আনন্দের ভাগিদার নন কারণ তিনি তার বৈষয়িক চিন্তা নিয়ে ব্যস্ত | নিগলিতার্থ : বৈষয়িক চিন্তায় মগ্ন ব্যক্তি কখনো আনন্দ উপভোগ করতে পারে না |

গোটা কবিতাটায় কবির একটাই বক্তব্য হলো : তিনি আল্লাকে পাননি | তিনি আল্লার খুব কাছে থেকেও আল্লাকে পাননি কারণ জাগতিক কামনা বাসনায় মন তার কলুষিত | এছাড়া আল্লাকে তিনি পরস্পর বিরোধী বস্তুসমূহের মধ্যে ফেলেছেন যেমন আলো-আঁধার, বিষ-অমৃত, করাত-কাঠ , সূর্য-কুয়াশা, প্রেম-ক্রোধ ইত্যাদি | আবার কখনো আল্লাকে আধার-আধেয় সম্বন্ধেও ফেলেছেন যেমন মদিরা-পেয়ালা, জল-জলপাত্র, অন্ন-পাত্র, টোপ-ফাঁদ, নোয়া-জাহাজ ইত্যাদি | এ থেকে বোঝা যায় যে কবির চোখে যাবতীয় বস্তুই আল্লা | বৈষয়িক দৃষ্টিতে বস্তুসমূহের মধ্যে বিরোধ থাকতে পারে, বস্তুসমূহের মধ্যে আধার-আধেয় সম্বন্ধ হতে পারে , কিন্তু সুফিদের চোখে পরমার্থত সমস্ত বস্তুই আল্লা |সেই আল্লাকে পেতে হলে জাগতিক ভোগসুখ ছাড়তে হয় | জাগতিক সংগ্রামে পরাজয় ঘটলেই আল্লাকে পাওয়া যায় |কবি তাই নিসংশয়ে বলেছেন:

তুমিই পরাজয় আর তুমিই পরাজিত
তলোয়ার হাতে আমি দাড়িয়ে আছি

সমুদয় প্রাণী আল্লার সার | এমনকি কবি নিজেও জগদাত্মা আল্লার সার | সেইরূপ বাণীই কবি শুনেছেন:

“আমি তোমারই সার” সমস্ত বিবাদের উর্ধ্বে
আমাকে সোনার চেয়েও মূল্যবান জ্ঞান কর |

সুফিদের এইসব মতের সাথে হিন্দু অদ্বৈত বাদের মিল দেখতে পাওয়া যায় | হিন্দু মোক্ষশাস্ত্র বলে সকল পদার্থই ব্রম্ভ, আমি ব্রম্ভ ইত্যাদি | তাবলে এটা মনে করবেননা যে সুফিরা হিন্দুদের কাছ থেকে এটা শিখেছে | জ্ঞান সবার মধ্যেই সমানভাবে উদিত হয় এবং যারা খোঁজে তারাই পায় | তা সে হিন্দুই হোক কি মুসলিম হোক | এরকম কোনো প্রমান পাওয়া যায় নি যে সুফিরা হিন্দুদের থেকে এইসব শিখেছে |

এই কবিতাটা মূল ফার্সি থেকে বাংলায় অনুবাদ নয় | ইংরাজি থেকে বাংলায় অনুবাদ | আগের ভাগগুলিও তাই ছিল |


মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪৩

আজমান আন্দালিব বলেছেন: আল্লাহ্ ই ভালো জানেন।

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৩৮

সত্যান্বেসী বলেছেন: আল্লাই কেন ভালো জানবেন। আপনার কিছু জানা উচিত । আল্লার দেখা পেতে গেলে যে প্রচেষ্টা প্রয়োজন সেটুকু আপনার ভালমত করা উচিত। সেই ব্যাপারে আপনিই ভালো জানেন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.