নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যের সন্ধানে ....

সত্যান্বেসী

কলকাতা হাই কোর্টের উকিল

সত্যান্বেসী › বিস্তারিত পোস্টঃ

শামস ই তাব্রিজি ৪ অনুবাদ ও ব্যাখ্যা

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৪৪

আমার মরুভূমির কোনো শেষ নাই
আমার আত্মা ও হৃদয় একে খন্ড খন্ড করে |
বিশ্বের এখানে কোনো চিত্র নাই
কোন চিত্রে আমি অবতরণ করব ?
পথে যদি তুমি দেখো
কোনো মাথা যা ঢালে গড়িয়ে আসছে
আমাদের গুপ্তকথা ওই মাথার কাছে জিজ্ঞাসা কর
তার উত্তরে তুমি নির্ভর করতে পার |
কে তোমাকে এক উড়ন্ত পাখি বানায় ?
সলোমনের সহচর কিংবা বন্ধু ?
কিভাবে তুমি এক জাগ্রত চোখ হয়ে যাও যে
আমাদের বাগানের গাছের দিকে তাকিয়ে থাকে ?
কিভাবে তুমি এক জোয়ারের ঢেউ হয়ে যাও ?
আর তীরের দিকে মুক্ত আর সোনাদানা পাঠাও ?
স্বর্গের নিচের সপ্ত আকাশে নয়
আমাদের স্থান স্বর্গকেও ছাড়িয়ে যায় |
স্বর্গ আর জগতের পরিবর্তে
আমরা ইশ্বরের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাই |
কিভাবে আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলতে পারি প্রতিটি নিশ্বাসের সঙ্গে
যেখানে আমি আরো বিচলিত ও উত্তেজিত হয়ে পড়ব |
কিভাবে এই কানটা এলো
যা আমার প্রানের বন্ধুর কথা শুনতে পায় ?
কিভাবে শিকারের পাখি আর খেলার পাখি
বিশুদ্ধ পাহাড়ি হাওয়ায় আকাশে ওঠে ?
সপ্তম আকাশের উচ্চতা শনিদেব যেখানে রক্ষা করছেন
আমি কি জানি , আমি কি বলতে পারি
এই গল্পের শেষ নিয়ে আমি প্রতারণা করি না
গল্পটাকে বাদ দাও আর জিজ্ঞাসা কোর না
আমার ভাঙ্গা হাত নিয়ে আমি আর জুড়তে পারব না
তোমাকেই ঈশ্বরের যোগ্য হতে হবে
যদি এটাই আমাদের প্রিয়তমা চায় |

রুমির এই কবিতায় এক মরুভূমির কথা বলা হয়েছে যাকে আত্মা তথা হৃদয় খন্ড খন্ড করতে পারে | এই মরুভূমি কোনো সাধারণ মরুভূমি নয় কারণ আত্মা তাকে খন্ড খন্ড করতে পারে না | মুখ্যার্থ বাধিত | অতএব লক্ষ্যার্থ প্রযোজ্য | আত্মা বা হৃদয় এখানে জ্ঞান | কারণ জ্ঞান আত্মার গুন আর হৃদয় হলো জ্ঞানের স্থান | তাহলে মরুভূমি নিশ্চই অজ্ঞান | মিলটি হলো শুষ্কতা আর প্রতিকুল পরিস্থিতি | মরুভূমি আর অজ্ঞানের এখানেই সাদৃশ্য | আর এই অজ্ঞানের মরুভূমির কোনো শেষ নেই | অর্থাত অজ্ঞানের এত অসীম যে তার কোনো অন্ত কবির দৃষ্টিতে পড়ছে না | আর এই অজ্ঞানকে জ্ঞানের আলোক দিয়ে খন্ডন করতে হবে কবিকে | এই হলো প্রথম দুই স্ট্যানজার মানে |

দ্বিতীয়ত কবি বলেছেন যে জগতের কোনো চিত্রই নাই | অর্থাত জগত মুর্তিবিহীন | কোনো আকার যার নাই সেখানে কবি কিভাবে যাবেন ? কোন আকারে জগতে অবতরণ করবেন ? সেটাই কবি খুঁজে পাচ্ছেন না |

তৃতীয়ত কবি বলেছেন যে যেসব মাথা পাহাড়ের ঢাল বেয়ে গড়াচ্ছে তাদের কাছে সুফিদের রহস্য জানতে চাওয়া উচিত | তাদের উত্তরটাই সঠিক উত্তর | এই কথাটা খুবই তাত্পর্যপূর্ণ | যেসব মাথা ঢাল বেয়ে গড়ায় তারা কি ? অবশ্যই কাটা মাথা বা মৃত মানুষের মাথা | মৃত মানুষের মাথার কাছে সুফিদের রহস্য জানতে চাওয়াটা কি ? মৃতব্যক্তি তো কথা বলতে পারে না | এপ্রসঙ্গে শেখ সাদির একটা গল্প আছে | একবার এক পথচারীকে এক মড়ার খুলি বলেছিল যে সেও এক সময় রাজা ছিল আর তার মাথার ওপরেও মুকুট ছিল | অহংকারে তার পা মাটিতে পরত না | এমনই চলছিল যখন হটাত করে সব শেষ হয়ে গেল | সে মারা গেল | তারপর পোকায় তাকে কেটে ফেলল আর প্রতিটি পা তাকে লাথি মেরে যায় | এই জন্য সেই পথচারী যেন সাবধানে পা ফেলে | এটাই মৃত মানুষের মাথার বলা কথা | যে সবই ক্ষনস্থায়ী | নাম-যশ-রাজত্ব-যৌবন | কোনো কিছুরই অহংকার করা ঠিক নয় | সব কিছুরই পরিনাম হলো পোকায় কাটা-লাথি খাওয়া খুলি | এটাই সুফিদের রহস্য যা মৃত মানুষের মাথা বলতে পারে |

কে তোমাকে এক উড়ন্ত পাখি বানায়, কিভাবে তুমি এক জাগ্রত চোখ হয়ে যাও বা কিভাবে তুমি জোয়ারের ঢেউ হয়ে যাও বা কিভাবে পাখিরা আকাশে ওঠে যেখানে শনিদেব আকাশ রক্ষা করেন : এইসমস্ত প্রশ্নের কোনো উত্তরই কবির কাছে নেই | এইগুলি সবই জাগতিক প্রশ্ন | এর উত্তর সুফিদের কাছে থাকে না কারণ সুফিরা জাগতিক ব্যাপারে মাথা ঘামায় না |

কবি আরো বলেছেন যে সুফিদের স্থান স্বর্গের নিচের সপ্ত আকাশে নয় বরং স্বর্গেরও উপরে | কবির মতে সুফিরা জগত আর স্বর্গ নিয়ে ভাবে না বরং আল্লার সাথে এক হয়ে যেতে চায় | প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে এখানেই মুসলমানদের সাথে সুফিদের পার্থক্য | মুসলমানরা জিহাদ করে স্বর্গে যেতে চায় আর সুফিরা মুরাকাবা করে আল্লার সাথে এক হয়ে যেতে চায় | রুমির এই কবিতায় সুফিদের এই উদ্দেশ্যের প্রমান পাওয়া যায় | আমি সুফিদের নিয়ে আমার আরেকটা লেখাতেও এই কথা বলেছি |
এখানে গল্প হলো জগতের রহস্য | সেটা রুমি জানেন না | তিনি আর এই জগতের গল্প নিয়ে চলতে চান না | তিনি সোজা বলে দিয়েছেন যে যদি কাউকে ঈশ্বরকে পেতে হয় তাহলে তাকে ঈশ্বরের যোগ্য হতে হবে কারণ এটাই আল্লা চান |

এই কবিতায় সুফিদের মুখ্য উদ্দেশ্য আর এই জগতের মায়াজালে সুফিদের না জড়িয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন কবি | সুফিদের উদ্দেশ্য আল্লার সাথে একত্বপ্রাপ্তি | তারা জগত ও স্বর্গ নিয়ে ভাবেন না | তাই জগতের রহস্য নিয়েও মাথা ঘামান না | তারা জানেন জগত ক্ষনস্থায়ী | তাদের চেষ্টা হলো নিজেদের মরুভূমির মত অসীম অজ্ঞানকে জ্ঞান দিয়ে ছিন্নভিন্ন করা | তারা নিজেদের আল্লার যোগ্য করে তুলতে চান | সেটা করার চেষ্টার নামই মুরাকাবা |

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৩৬

মাহিরাহি বলেছেন: 10 best poet of all time

২| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৩৮

মাহিরাহি বলেছেন: একটি বিবেচনায় পৃথিবীর ১০ জন সেরা কবিদের মধ্যে এশিয়া থেকে যিনি স্থান করে নিয়েছেন তার একজন রুমি (র:) এবং অন্যজন লি পো।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:২৫

সত্যান্বেসী বলেছেন: সেই জন্যই তো শামস ই তাব্রিজি এত ভালো লাগে | কিন্তু সুফি বইগুলি ফার্সি থেকে বাংলা অনুবাদ পাওয়া যায় না কেন ?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.