নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যের সন্ধানে ....

সত্যান্বেসী

কলকাতা হাই কোর্টের উকিল

সত্যান্বেসী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুফি অধিবিদ্যা: ইশরাকি দর্শন

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩৪


এইটা ইরানের প্রসিদ্ধ দর্শন | এইটি আসলে এক সুফি দর্শন | শিহাব আল দিন ইয়াহিয়া সুরাবর্দি সর্বপ্রথম ইশরাকি দর্শন চালু করেন | তিনি হিকমত আল ইশরাক বলে বই লেখেন | নেটে ওই বই আরবি ভাষায় পাওয়া যায় | অধম লিখক আরবি জানে না, তাই ওই বই পড়তে পারে নি | আমি এই দর্শনের খবর স্যার সৈয়দ আমির আলীর বই দা স্পিরিট অফ ইসলাম-এ পাই | তাই কিঞ্চিত গবেষণা করার লোভ সামলাতে পারলাম না | তারই ফল এই লেখা |

ইশরাক শব্দের অর্থ হলো আলোকপ্রাপ্তি (illumination)| এই দর্শনের জনক সুরাবর্দিকে শেখ আল ইশরাক বা আলোকপ্রাপ্তির শিক্ষক বলা হয় | প্রথমে এই দর্শনের প্রচারক সুরাবর্দির জীবনবৃত্তান্ত সংক্ষেপে দেখব |

সুরাবর্দির শিক্ষাজীবন

সুরাবর্দি উত্তর পশ্চিম ইরানে জন্মেছিলেন | তাঁর অনেক জীবনকাহিনী আছে তার মধ্যে তার মধ্যে শামস আল দিন শাহারাজুরি তাঁকে শেখ আল ইশরাক বলেছেন | তিনি আরো বলেছেন যে সুরাবর্দি সুফিদের সাথে ছিলেন এবং তাদের থেকে অনেক উপকার পেয়েছেন |
সুরাবর্দি ইরানের মারাঘা এবং ইস্পাহান থেকে শিক্ষা লাভ করেন | তিনি আরিস্ততলের দর্শন ভালো করেই শিখেছিলেন কারণ ঐসব জায়গায় সেটাই প্রধান শিক্ষা ছিল | ইস্পাহানে তিনি জাহির আল ফারিসির কাছে শিক্ষালাভ করেন | সেখানে তিনি ইবন সালাহান আল সবই-এর লেখা যুক্তিবিদ্যার উপর এক বিখ্যাত বই পড়েন| তারপর সুরাবর্দি আনাতোলিয়া যান ও সেখানে কয়েক বছর থাকেন | তিনি মার্দিনে তিনি ফখর আল দিন আল মার্দিনির কাছে শিক্ষা লাভ করেন | এই আল মর্দিনী এক আরিস্ততলীয় সুফি ছিলেন |
সুরাবর্দির তপস্যার জীবন

সুরাবর্দি নিজেও সুফি হন | শাহারাজুরি তার কঠোর তপস্যা আর আধ্যাত্মিক শক্তির কথা বলেছেন | তিনি সপ্তাহে একবার খেতেন, জগতের পরোয়া করতেন না , কোনো ভোগ বিলাসে রুচি ছিল না | তিনি ছেঁড়া খোঁড়া কাপড় পরতেন | সর্বদা প্রার্থনা করতেন | নিশ্চুপ থাকটেন | আর সামা গান শুনতেন |

তখন সুরাবর্দি সেলজুক তুর্কি শাসকদের অধীন রুম নগরীতে থাকতেন | তিনি কঠোর তপস্যা করতেন | একাকী থাকতেন | ধ্যান করতেন | এভাবেই তিনি একদিন সাধকদের শেষ পর্যায়ে চলে এলেন | কখনো সুফিদের মত , কখনো বা সাধারণ মানুষের মত পোশাক পরতেন | তিনি নিরব থাকতেন | বাইরের দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ উদাস থাকতেন | এই সময় তিনি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিলেন | তিনি তার এক ছোট বই আর্সলান নাম এক শাসকের নাম উত্সর্গ করেছিলেন |
তারপর সুরাবর্দি সিরিয়ার আলেপ্পতে চলে এলেন | এখানে তিনি শাসকের শিক্ষক রূপে নিযুক্ত হলেন | কিন্তু স্থানীয় উলেমাদের বিরাগভাজন হওয়ায় তার মৃত্যুদন্ড হয় | মোটামুটি এটাই সুরাবর্দির জীবন |

সুরাবর্দির লেখা বই

সুরাবর্দি অনেক বই লিখেছেন সেগুলির মধ্যে কিছু সম্পর্ক বিদ্যমান | সুরাবর্দির বৈগুলিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় : প্রথম ভাগের বইগুলি হলো : আলোর শরীর (হায়াকিল আল নুর ), উজ্জ্বলতার বই (পারতু নামা ), ইমাদকে উত্সর্গ করা ট্যাবলেট | দ্বিতীয় ভাগের বইগুলি হলো ; খবর দেয়া (intimation), দি আপোসাইত (আরবিটা জানি না), আর দীর্ঘ বই ‘পথ আর স্বর্গ”(আল মাশারি ওয়া আল মুতারাহাত ) | এই বইগুলি অপ্রত্যক্ষ ভাবে ইশরাকি দর্শন সম্পর্কে বলে | এগুলি হলো সাপোর্টিভ বই | মূল বই হলো ইশরাকের জ্ঞান (হিকমত আল ইশরাক)| এটি প্রত্যক্ষ ভাবে ইশরাকের জ্ঞান প্রচার করে | বলা বাহুল্য সবকটা বই আরবীতে লেখা |
পথ ও স্বর্গ নামক বইটার শুরুতে সুরাবর্দি বলেছেন যে , দর্শনচর্চার সূচনা হয় বাইরের জগত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ভেতরের জগতের দিকে তাকানোর সঙ্গে সঙ্গে, তার মধ্যভাগ হলো স্বর্গীয় আলোকের (আল আনোয়ার আল ইলাহিয়া ) দর্শন আর শেষ ধাপ বলে কিছু নেই | শেষ ধাপ হলো অসীম | ইটা আরিস্ততলের দর্শনের ঠিক উল্টোটা | এ থেকেই বুঝা যায় যে সুরাবর্দির ইশরাকি দর্শনের আরিস্ততলের দর্শন থেকে আসে নি |

পথ ও স্বর্গ বইতে সুরাবর্দি আরো দাবি করেন যে তাঁর দর্শন প্রাচীন পারসিক খুসরাবানি সাধুদের দ্বারা প্রভাবিত | আরো অন্যান্য প্রভাবও আছে | সুরাবর্দি ইবন সিনাকে প্রাচ্যবাদী দার্শনিক বলে মানতে চাননি |

ইশরাকি দর্শনটি কি ?

ইশরাক শব্দের অর্থ আলোকপ্রাপ্তি | ইশরাকি দর্শন হলো সেই দর্শন যা দিয়ে আলোক পাওয়া যায় | এই আলোক স্বর্গীয় তথা ঐশ্বরিক আলো | এটা মানুষের ভেতরেই থাকে | সুরাবর্দি এই দর্শনের কথাই বলেছেন |
সুরাবর্দির মতে ইশরাকি দর্শন এর আগেও অনেক জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছে | প্রাচীন মুনি ঋষিরা ইশরাকি দর্শন অভ্যাস করতেন | ইশরাকি দর্শনের বিভিন্ন পর্যায় আছে |

প্রথম পর্যায়ে বাইরের দুনিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়া হয় ভেতরের আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার জন্য | এই পর্যায়ে ৪০ দিন অজ্ঞাতবাসে যেতে হয় আর মাংস খাওয়া বারণ থাকে | এই পর্যায়কে বলে সজ্ঞার জাগরণ ঐশ্বরিক আলোয় যা সব মানুষের ভিতরে থাকে (This renunciate activity is depicted as awakening intuitive abilities, a process facilitated via the "light of God" (al-bariq al-ilahi) which dwells in every human.)

এইবার দ্বিতীয় পর্যায় | এই পর্যায়ে এক দিব্য জ্যোতির (divine light" (al-nur al-ilahi)) দর্শন হয় | এই স্তরে কিছু বিদ্ধংসী আলোর (apocalyptic lights) আবির্ভাব হয় যা এক সত্য জ্ঞানের সহায়তা করে |

তৃতীয় পর্যায়ে অসীম জ্ঞানের অধিকারী হওয়া যায় | এই অসীম জ্ঞানকে আলোকিত জ্ঞানও ((al-ilm al-ishraqi) ) বলা হয় |

চতুর্থ পর্যায়ে সেই সমস্ত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করা হয় |

সুরাবর্দি আরো দাবি করেন যে তাঁর দর্শন ইবন সিনার দর্শনের চেয়ে অনেক কার্যকর ভাবে প্রকৃতির রহস্য উদঘাটন করে | তাঁর দর্শন আরো অনেক বিষয় যেমন সত্য স্বপ্ন, ব্যক্তিগত দর্শন (personal revealation), সজ্ঞা মূলক জ্ঞান (intuitive knowledge), দেহ বহির্ভূত আত্মার অভিজ্ঞতা (out of body experience ) এবং আরো অনেক অদ্ভত ব্যাপার ব্যাখ্যা করা যায় | এক কথায় ইশরাকি দর্শন আরো বাস্তববাদী জ্ঞান দেয় |

ইশরাকি দর্শনের উত্স কি ?

এই দর্শনের উত্স খুঁজতে গিয়ে অনেকে প্লাতো-অ্যারিস্টট্ল-এমাম গাজ্জালির দর্শনের নাম করেন কারণ তাঁরাও আলোর কথা বলেছেন | কিন্তু কুকুরের চারটে পা আছে , বাঘের চারটে পা আছে অতএব কুকুর বাঘের উত্স এমন কথা বলা যায় না | ওই দর্শনগুলি আলোর কথা বলে , ইশরাকি দর্শনও আলোর কথা বলে অতএব ওই দর্শনগুলি ইশরাকি দর্শনের উত্স এমন কথা বলা যায় না | দুইটা আলো এক নয় |
সুরাবর্দি এই দর্শনের উত্স সম্বন্ধে বলেছেন যে তাঁর হিকমত আল ইশরাক পড়ার একটা নিজস্ব পদ্ধতি আছে | ইটা কোনো গ্রিক দার্শনিকের গ্রন্থ নয় | সেই পদ্ধতিটা কি ? সমস্ত বইটা যুক্তি তর্ক দিয়ে লিখা হয় নি | লিখা হয়েছে আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়ায় পাওয়া প্রত্যক্ষ জ্ঞান দিয়ে | সেই জন্য এই বই তার্কিকরা বা নাস্তিকরা নষ্ট করতে পারবে না | এই দর্শনে যে আলো আর অন্ধকারের কথা বলা আছে তা নাস্তিক দার্শনিক ও তার্কিকদের বলা আলো আঁধার নয় |

অর্থাৎ এই দর্শন বুঝতে গেলে আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বুঝতে হবে | যুক্তি তর্ক দিয়ে বুঝা যাবে না | ঠিক হিন্দু ধর্মের যোগের মতো | সুরাবর্দি বলেছেন যে হিকমত আল ইশরাক বুঝতে গেলে ৪০ দিন উপবাস করতে হবে | তবেই বুঝা যাবে |

ইশরাকের জ্ঞান কেমন ভাবে পাওয়া যায়

এর মূল কথা হলো যে যদি কিছু জানতে হয় তাহলে সেটার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা হওয়া উচিত | অর্থাৎ প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই সবকিছু জানা যায় | এই অভিজ্ঞতা পেতে গেলে চারটি ধাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয় | ধাপগুলি আগেই বলেছি | ইশরাকি দর্শন তর্ক দিয়ে নয় , প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝা যায় | আর সেই অভিজ্ঞতা আসে আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়ার চর্চার মাধ্যমে | সুরাবর্দি নিজে বহু কঠোর তপস্যা করেছিলেন |

ইশরাক কি

ইশরাক বা আলো কি ? সুরাবর্দি এই ব্যাপারেও অনেক কিছু বলেছেন | সুরাবর্দির মতে এই ইশরাকি দর্শনের মূলতত্ব হলো আলোর বিজ্ঞান | এই আলো একটাই : আলোর আলো | অন্য সমস্ত আলো এই মূল আলো থেকে দূরত্বের ফলে সৃষ্ট হয়েছে | এর ফলে আলোর বহু স্তরের সৃষ্টি হয়েছে | এই আলো মূলত দুই বড় ভাগে বিভক্ত : ১] আলোর মধ্যে আলো আর ২] অন্যের মধ্যে আলো | দ্বিতীয় আলোটাই সমস্ত কিছু আলোকিত করেছে | সুরাবর্দির মতে আলো নিজে আছে আর জগতের সবকিছুকে প্রকাশিত করেছে |

এই আলোর বিভিন্ন স্তর আছে | সুরাবর্দি বিভিন্ন টার্ম ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন স্তর বোঝাতে যেমন : স্বতঃসিদ্ধ আলো ,পবিত্র আলো , প্রয়োজনীয় সত্তা, শুদ্ধ আলো ইত্যাদি | শেষে আমরা এটুকু বলতে পারি যে শুদ্ধ আলো হলো আল্লা স্বয়ং আর অন্য সমস্ত পদার্থ যা এই আল্লা থেকে এসেছে তা হলো অন্য আলোগুলির উত্স | সুরাবর্দির মতে এই আলোর অনেক স্তর আছে | সবচেয়ে কম আলোর স্তরটি হলো অন্ধকার | ইটা সুরাবর্দির মতে আত্মাহীন দেহ | সুরাবর্দি একে ইস্ফান্দার মুড্ বলেছেন | সুরাবর্দির মতে শুদ্ধ আলো ছাড়া আর সবকিছুই আলো আঁধারের মিশ্রণে তৈরী | সবচেয়ে অন্ধকার অংশটিকে ইষ্ঠ্মুসেস বা বার্জাখ বলেছেন | আত্মার প্রকৃতি হলো যে ইটা খালি শুদ্ধ আলোয় ফিরে যেতে চায় বা অন্যভাবে বললে আল্লার সঙ্গে একাত্ম হতে চায় |

সার আর অস্তিত্ব

সারবস্তু কি ? আল্লা | অস্তিত্ব কি ? জগত | ইবন সিনার দর্শন সারবস্তু আর অস্তিত্বের মধ্যে ভেদ করেছিলেন | আরিস্ততলের দর্শন অনুযায়ী ইবন সিনা সারবস্তুকে অস্তিত্বের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলতেন | সুরাবর্দি এই সার আর অস্তিত্বের মধ্যেকার পার্থক্যকে অস্বীকার করেন | সার আর অস্তিত্ব আলাদা নয় একই বস্তু | আরিস্ততলের দর্শন এদেরকে আলাদা করেছে | সুরাবর্দির মতে সার আর অস্তিত্বের পার্থক্য আসলে মানসিক ব্যাপার |

সারবস্তু যে আলোর অধিকারী , বিভিন্ন বস্তুও সেই আলোরই অধিকারী তবে আলোর তীব্রতার তারতম্যে অস্তিত্বকে সারবস্তু থেকে পৃথক বলে মনে হয় | অন্য কথায় বলতে গেলে আল্লা যে আলোর অধিকারী , মানুষও সেই একই আলোর অধিকারী তবে আল্লাতে আলোর পূর্ণ বিকাশ কিন্তু মানুষে আলোর অত বিকাশ হয় নি | তাই মানুষকে আল্লা থেকে আলাদা দেখায় | কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মানুষ আর আল্লা একই বস্তু | ওহাদাতুল ওজুদ দর্শনের তাশকিক বা স্তরবিন্যাসের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে |

আল্লা আর মানুষের সম্পর্ক : ইশরাকি দর্শনের আলোকে

ইশরাকি দর্শনের মতে আল্লা হচ্ছে আলোর আলো | সর্বশ্রেষ্ঠ আলো | মানুষের দুইটা অংশ আছে : শরীর আর আত্মা | শরীর হলো অন্ধকার | আত্মা হলো পবিত্র বস্তু | এই আত্মার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো এই আল্লার কাছে ফিরে যাওয়া | মানুষের আত্মা হলো আল্লার আলোকের অংশমাত্র | তার একমাত্র উদ্দেশ্য হবে ওই বিশুদ্ধ আলোকে ফিরে যাওয়া | শরীরের ধংসের সাথে সাথে আত্মা আল্লার আলোকে মিশে যাবে এটাই ইশরাকি দর্শন | কিভাবে ইটা সম্ভব তা সুরাবর্দি নিজের বুস্তান আল কুলুব গ্রন্থে লিখেছেন | অধম লেখক গ্রন্থটিও পাননি, আরবিও জানেন না | সুতরাং বলতে পারলাম না | এটাই এই লেখার একটি ত্রুটি |

রুমি এবং ইশরাকি দর্শন

ইরানি সাধুদের মধ্যে নাজম আল দীন কুবরা সুরাবর্দির দর্শন নিয়েছিলেন | রুমি কুব্রার কাছ থেকে এই দর্শন নিয়েছিলেন | রুমি সুরাবর্দির সৃষ্টিতত্ব বা বলা ভালো কিভাবে মূল আলো থেকে বাকি সমস্ত আলো এলো : এই তত্ব গ্রহণ করেছিলেন | তাঁর কবিতা আজ জমাদি মুরজাম ( আমি এক খনিজ পদার্থের মত জড় ) এই সৃষ্টিতত্ব প্রয়োগের এক উদাহরণ | গোটা কবিতাতে উনি সৃষ্টিতত্ব আর আলো আঁধারের খেলা দেখিয়েছেন | তিনি এই স্তরের নিচে থেকে উপরে উঠেছিলেন | উনি দেখিয়েছেন যে উনি নিজে ওই মহান আলোর একটা অংশ | উনি আল্লার অসীম শক্তি দ্বারা আল্লা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটা জড় পদার্থের মত জীবনহীন হয়ে আছেন | এখন উনি আল্লার প্রতি প্রেমের দ্বারা ওই জড়তা কাটিয়ে আবার আল্লার কাছে ফিরে যাবেন | প্রথম দুই পঙতিতে যে আমি শব্দটি আছে তা মানুষ অর্থে ব্যবহৃত হয় নি | বরং জড়পদার্থ অর্থে বা ছায়ার ছায়া অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে |

জড়জগতে মৃত্যু তাই এক নতুন জগতে জন্ম | ওই জগত সম্বন্ধে আমরা কিছুই জানি না | যতই সৃষ্টির উর্ধে ওঠা যায় ততই ছায়া কমে যায় আর আলোর ভাগ বেড়ে যায় | শেষমেষ সর্বোচ্চ স্তরে পৌছে আলোকেই ঢেকে দেবার মত ক্ষমতা আসে | এই হলো তাত্ত্বিক দিক | এবার সেই তত্বকে প্রয়োগের বেলায় আসুন আজ জমাদি মুরজাম কবিতাটা দেখি :

আমি খনিজ হিসেবে মরলাম আর উদ্ভিদ হলাম
আমি উদ্ভিদ হিসেবে মরলাম আর পশুস্তরে উন্নীত হলাম
আমি পশু হিসেবে মরলাম আর এখন আমি মানুষ
কেন আমি ভীত হব ? কখন আমি মরে কম হলাম ?
তবু আরেকবার আমি মরলাম আর দেবদূত হয়ে জন্মালাম
কিন্তু দেবদুতেরও উর্ধে আমাকে উঠতে হবে
আল্লা ছাড়া সমস্ত কিছুই নষ্ট হয়ে যায় |
যখন আমি আমার দেবদূত সত্তাকে ত্যাগ করব
কোনো মন ধারণা করতে পারবে না আমি কি হব ?
আমার আর কোনো অস্তিত্বই থাকবে না | কারণ আমার শারীরিক ভাবেই
কোনো অস্তিত্ব নেই | তাঁর কাছেই আমাদের ফিরতে হবে |

কবিতাটা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে রুমি কি বলতে চেয়েছেন | খনিজ পদার্থ হলো জড়ো পদার্থ | এতে আলোর প্রকাশ ভীষণ কম, এটা ছায়ার ছায়া | কবি এখন এই অবস্থায় আছেন | সেখান থেকে তিনি গাছ হলেন | তাতে আলোর ভাগ বেশি খনিজের চেয়ে | তারপরে গাছ থেকে মানুষ হলেন | তাতে আলোর ভাগ আরো বেশি | মানুষ থেকে দেবদূত হলেন | এতে আলোর ভাগ মানুষের চেয়ে বেশি | ছায়ার ভাগ উত্তরোত্তর কমে যাচ্ছে | কবি সৃষ্টির দুনিয়ায় ক্রমশ উর্ধ্বগামী হচ্ছেন | এখান থেকে তিনি পুরোপুরি আল্লায় মিশে যাবেন | তিনি আলোয় মিশে যাবেন | এই যে সৃষ্টির রাজ্য , এটাকে কাহার বা আল্লার শক্তি বলে | ইটা অনেকটা হিন্দুদের পুনর্জন্ম তত্বকে মনে করিয়ে দেয় | তবে এই উর্ধ্বগমনের একটা শর্ত আছে | তা হলো আল্লাকে ভালবাসা | তবেই ইটা সম্ভব |

উপসংহার

এই লেখা থেকে বুঝা যায় যে সুফি কবিদের কবিতা অনুবাদের আগে সুফি দর্শন সম্বন্ধে জানা উচিত | তা না হলে কবিতাগুলি হয় দুর্বোধ্য ঠেকতে পারে নয়তো ভুল অনুবাদ হতে পারে | সুরাবর্দির এই দর্শন ওহাদাতুল ওজুদের সাথে মিল খায় | ইবনে তুফাইল এই দর্শনের অনুসারী ছিলেন | এই লেখার একটাই ত্রুটি হলো মূল আরবি বইগুলির অভাব | সেই বইগুলিতে যে ভাব আছে তা হুবহু দেয়া গেল না | তবু যতটুকু অধম লিখকের দ্বারা হয়েছে , লিখক করেছেন | আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে |

তথ্যসূত্র

ইশরাকি ফিলোসফি এন্ড রুমি, লেখক ডক্টর ইরাজ বাশিরি একাডেমী অফ সাইন্স অফ তাজিকিস্তান

ফিলোসফিকাল সুফিজম, লেখক মুহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ , স্কুল অফ ইসলামিক স্টাডিস ঢাকা বাংলাদেশ

উইকিপিডিয়া

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪৬

গ্রিন জোন বলেছেন: সুফি তত্ত্ব বলে যা আছে কিংবা বিশ্বাস করা হয় সবই ভ্রান্ত। এরা ইসলাম আল্লাহ ও মুসলমানের শত্র। এদের কারণেই ইসলাম ও কুরআনকে মিথ হিসেবে প্রচার করেছে বিদ্বেষীরা। অথচ ইসলামে মিথ বলতে কিছুই নেই। সবই বাস্তব।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:০৭

সত্যান্বেসী বলেছেন: সুফি তত্ব বলে যা প্রচার করা হয় তা ভ্রান্ত কেন ? কোথায় কি ভুল আছে সুফি তত্বে পরিস্কার করে খোলসা করে বলুন | এদের কারণে কিরকম মিথ বলে ইসলামকে প্রচার করা হয় ?

আমার কিন্তু সুফি দর্শনকে মিথ বলে মনে হয় না | কারণ আল্লা যদি জান্নাত নামক স্থানে আবদ্ধ থাকেন , তাহলে তিনি সীমাবদ্ধ হয়ে গেলেন | সীমাবদ্ধ বস্তুর শক্তিও সীমাবদ্ধ , এবং তার উত্পত্তি ও বিনাশ আছে | অর্থাত সীমাবদ্ধ আল্লা চিরন্তন নন | তাহলে আল্লাকে কে তৈরী করলো এইরকম প্রশ্ন ওঠে | এই ভুল ধারনাকে সংশোধন করে সুফিরা বলেছে আল্লা সর্বব্যাপী | সমস্ত কিছুর মধ্যেই আছেন | এই সর্বব্যাপী আল্লা আকাশের মতই অসীম হয়ে যান এবং তার শক্তিও অসীম হয়ে যায় | তিনি চিরন্তনও হয়ে যান কারণ আকাশের যেমন বিনাশ হয় না তেমনি আকাশের ন্যায় সর্বব্যাপী আল্লারও বিনাশ নেই | অতএব সুফি মতই ঠিক | মিথ নয় |



২| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪৮

অন্ধবিন্দু বলেছেন:
শুধু সুফিদের কবিদের নয়, অনুবাদের আগে বিষয়বস্তু/বক্তব্যের দর্শন ও প্রবণতা সম্বন্ধে জানা উচিত। তাতে করে ইউনি-লেটরাল হবার সম্ভাবনা কম থাকে। আর ইশরাকি দর্শন নিয়ে কী বলবো... আমার বিরূদ্ধমত আছে। তাই চুপ থাকলেম।

বেশ কাছাকাছি ধারণা তুলেছেন। নট ব্যাড।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:০৯

সত্যান্বেসী বলেছেন: চুপ না থেকে মুখ খোলেন | আপনার বিরুদ্ধমত জানবার অপেক্ষায় থাকলাম | অনুগ্রহ করে জানান |

৩| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:০৮

মো. এনামুল হক বলেছেন: কোন বই কি অনুবাদ হয়েছে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.