![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার এই লেখায় আমি মুঘল যুগে ভারতের ইতিহাস লেখার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি | এই গবেষণাটি তিনটি ভাগে বিভক্ত : ১] রাজনীতি ২] অর্থনীতি ৩] সমাজ ৪] শিক্ষা ৫] বিচার ব্যবস্থা | আশাকরি পুরো মুঘল যুগের কিছুই বাদ পড়ল না | যদি কিছু বাদ পড়ে , পাঠক যদি সেই অংশটার উল্লেখ করেন , এডিট করে শুধরে দেব | গোটা প্রবন্ধে কিছু ক্লু মেটেরিয়াল আছে যেগুলিকে বোল্ড ইটালিক চিহ্ন দিয়েছি | এইগুলি আরো তথ্য জানায় | যথাসময়ে আমি দেখাব |
ইস্কুলের ইতিহাস বই কেন ভুল ?
কিন্তু ইস্কুলের ইতিহাস বইয়ের যেটা সর্বপ্রধান দোষ সেটা হলো কেবল মোঘল বাদশাদের কার্যকলাপ দিয়ে পুরো মোঘল যুগের মূল্যায়ন করা | মুঘল বাদশারা হিমশৈলের চূড়া মাত্র | আমাদের ইস্কুলের জ্ঞানটি হলো ওই হিমশৈলের চূড়ার মত | হিমশৈলের মধ্যভাগ হলো সামন্তরাজারা আর নিম্নভাগ হলো প্রজারা | সে সম্পর্কে আমরা খুবই কম জানি | সুতরাং হিমশৈলের চূড়া দিয়ে যেমন পুরো হিমশৈলের মূল্যায়ন হয় না তেমনি কেবল মুঘল বাদশাদের কার্যকলাপ দিয়ে মুঘল যুগের মূল্যায়ন হবে না | ইস্কুলের বই আমাদের এইরকমই ঘোলাটে,অস্বচ্ছ, উপর উপর জ্ঞান (?) দিয়ে থাকে মুঘল যুগ সম্বন্ধে |
মুঘল যুগের এইরকম ঘোলাটে জ্ঞান (?) দিয়ে আমরা কিছুতেই ব্যাখ্যা করতে পারি না কেন ব্রিটিশ আমলে হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে এত দাঙ্গা হয়েছিল , কেন হিন্দু মুসলমানদের সম্পর্ক এত তিক্ত ছিল , কেন তারা দুটি পৃথক জাতির মত বাস করত , কেন ও কিভাবে হিন্দু সমাজে এত কুপ্রথা এলো, এবং সর্বপরি কেনই বা দেশভাগ হলো | আমরা আনাড়ির মত ব্যাখ্যা দিয়ে থাকি | আমরা দেশভাগের আর হিন্দু মুসলমানের তিক্ত সম্পর্কের দায় বৃটিশের ঘাড়ে, সামাজিক কুপ্রথার দায় নিজেদের ঘাড়ে চাপাই | কিন্তু ভুলে যাই যে দেশভাগ আর হিন্দু মুসলমান ভাগ ব্রিটিশরা করলে কেনই তারা তাদের প্রশাসনে হিন্দু মুসলমান উভয়কেই জায়গা দিয়েছিল, কেনই বা দু দুইটা বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ সেনাতে হিন্দু ও মুসলিম দুজনেরই জায়গা ছিল | কেন তারা রবীন্দ্রনাথ ও সৈয়দ আমির আলী কে নাইট উপাধি দিয়েছিল | দেশভাগ করেই বা বৃটিশের কি লাভ হয়েছিল যখন তারা ভারত ছেড়ে চলেই গেল | এইভাবে আমাদের ব্যাখ্যা এক্সটার্নাল কনসিস্টেনসি হারায় | আশেপাশের ঘটনার সাথে খাপ খায় না | কিভাবে আমদের মধ্যে কুপ্রথার আবির্ভাব হয়েছিল তার ব্যাখ্যা আমরা দিতে গিয়ে সমস্ত দোষ শাস্ত্রকার ও ব্রাহ্মনদের ঘাড়ে চাপাই | প্রয়োজনে শাস্ত্রের অপব্যাখ্যাও করি | সবই একটা মিথ্যাকে ঢাকতে আরো রাশি রাশি মিথ্যা কথা বলা | সবই ইস্কুলের ইতিহাসের খেলা |
সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ইস্কুলের ইতিহাস নির্জলা মিথ্যার বেসাতি | এইভাবে নতুন প্রজন্মকে সত্য থেকে বঞ্চিত করে রাশি রাশি নির্জলা মিথ্যা কথা গেলানো হয় | এই কাজ ডান বাম নির্বিশেষে সব দলই করে | বাম আমলে আমরা মুসলিমদের চরিত্রের খারাপ দিক না জেনে তাদের ভালো বলে বুঝি | সেটা মিথ্যে | ডান আমলে মুসলিমদের খারাপ দিক জেনে তাদেরকে খারাপ বুঝি | সেটাও মিথ্যে | ভোট ব্যাঙ্কের জন্য সবাই তত্পর কিনা |
ক] মুঘল আমলের রাজনীতি
এই বিষয়ে আমরা ইস্কুলের পাঠ্য বইতে কিছু পড়েছি | সেগুলি সত্যি | কিন্তু যে বিষয়ে পাঠ্য বই নীরব , সেই বিষয়গুলিতে আলোকপাত করবার জন্যই ইটা আমার লেখা | মুঘল শাসকদের আমরা তিনভাগে ভাগ করতে পারি : ক] বাদশা খ] সামন্ত প্রভু গ] ইজারাদার | কোতোয়াল সামন্ত প্রভুর বশীভূত আর ইজারাদারের সাহায্যকারী | এদের মধ্যে ইস্কুলের ইতিহাস বাদশাদের কথা লেখে কিন্তু সামন্ত প্রভুদের আর ইজারাদারদের বিষয়ে নীরব থাকে | আমি এই লিখাতে বাদশাদের ব্যাপারে কম বলব আর ওপর দুই শ্রেনীর কথা বেশি বলব | যাতে করে ইতিহাসে ব্যালান্স থাকে |
ক] বাদশা
মুঘল আমলে বাদশারা ছিল একদিকে স্বেচ্ছাচারী , অন্যদিকে বদান্য | আকবর, জাহাঙ্গীর, সাজাহান , ঔরঙ্গজেব সব্বাই এইরকম ছিলেন | এদের ব্যাপারে ইস্কুলের পাঠ্যবইতে অনেক বেশি লেখা আছে | হিন্দুওয়ালারা ঔরঙ্গজেবের স্বেচ্ছাচারিতা দেখিয়ে প্রমান করতে চায় মুসলিমরা খুব খারাপ | সেকুলাররা আকবরের ঔদার্য দেখিয়ে প্রমান করতে চায় মুসলিমরা খুব ভালো | দুটোই মিথ্যা |
মুঘল বাদশারা যেটুকু বদান্যতা দেখিয়েছেন , তা প্রায় সবটাই সাম্রাজ্য বিস্তারের সুবিধার জন্য | হিন্দুপ্রীতি তাদের ছিল না | তারা হিন্দুদের জায়গা দিয়েছিলেন তাদের সুবিধার জন্য | হিন্দুদের ভালবাসার জন্য নয় | যে অত্যাচার করেছেন সেটাও রাজনৈতিক কারণে | যে কটা মন্দির ধ্বংস করেছেন, সেগুলিও নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দার জন্য | ধর্মের জন্য নয় |
তবে বাদশা আর প্রজার মধ্যে অসীম দুরত্ব বিদ্যমান ছিল | কেউই কাউকে চিনতো না |দুইজনের মাঝখানে চিনের প্রাচীরের মত দন্ডায়মান ছিল সামন্ত প্রভুরা যাদের বেলায় ইতিহাস নীরব |
খ] সামন্ত প্রভু
সামন্ত প্রভুরা ছিল বাদশার নির্ভরস্থল | সামন্ত প্রভুরা জায়গীরদার আর মনসবদার এই দুই ভাগে বিভক্ত | সব মনসবদার জায়গীরদার ছিল কিন্তু সব জায়গীরদার মনসবদার ছিল না | জায়গিরদারি প্রথা হলো জমির রাজস্ব আদায়ের অধিকার আর মনসবদার হচ্ছে সৈন্যবাহিনীর অধিকার | আগে দুই প্রথার সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেয়া উচিত |
a] মনসবদারি প্রথা
মুঘল সম্রাট সামরিক শক্তির জন্য মনসবদের উপর নির্ভরশীল ছিল । ‘মনসব’ কথাটির অর্থ হল পদ । কোন নির্দিষ্ট পদ বা মনসবের অধিকারকে বলা হত মনসবদার । মনসবদাররা মূলত সামরিক দায়দায়িত্ব পালন করলেও সামরিক ও বেসামরিক উভয় দায়িত্বই তাদের পালন করতে হত । মনসবদারদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সেনাবাহিনী গঠন করতে হত এবং ১০ থেকে ১০,০০০ সৈনিকের ভিত্তিতে তাদের পদমর্যাদা ঠিক করা হত । অর্থাৎ , একজন মনসবদারের অধীনে যত সৈন্য ও ঘোড়া থাকত, সেই সংখ্যা অনুযায়ী তাকে তত হাজারি মনসব দার বলা হত । সাধারণত দশ হাজার মনসবদারি পদ কেবলমাত্র রাজ পরিবারের কোন সন্তান অথবা সম্রাটের বিশেষ অনুগ্রহ প্রাপ্ত ব্যক্তিকেই প্রদান করা হত । জমির উপর তাদের অবশ্য কোন চিরস্থায়ী অধিকার বা মালিকানা থাকত না এবং চাকরির শর্ত অনুযায়ী তারা এক জায়গির থেকে অন্য জায়গিরে বদলি হত । এই মনসবদারদের আমির বলা হত | অনেক আমিরদের ওমরাহ বলা হত |
a.১] জাট আর সাবার :
জাট হলো মনসবদারের অধীনে কতজন পদাতিক সৈন্য আছে তার চিহ্ন | সাবার হলো অশ্বারোহী সৈন্যের সংখ্যা | আকবর এই প্রথা চালু করেছিলেন |
মনসবদারি ব্যবস্থায় জাতপাত প্রথা ছিল |
সুধী পাঠক বাকিটা ইস্কুলের ইতিহাস বই থেকে পড়ে নেবেন |
b] জায়গিরদারি ব্যবস্থা
এই ব্যবস্থায় মোগল বাদশারা সামন্ত প্রভুদের জমি বিতরণ করতেন | ওই সামন্ত প্রভুদের জায়গীরদার বলা হত | এদের আরো উপাধি ছিল : রাজা, নবাব, চৌধুরী, রাও, জাইলদার, ঠাকুর, সর্দার, মানকারী, ভুমিচর ইত্যাদি |নবাব সিরাজ উদ দৌলা একজন সামন্ত প্রভু ছিলেন | রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় একজন সামন্ত প্রভু ছিলেন | প্রিয় পাঠক এখন কি একটু চেনা চেনা লাগছে কি বলতে যাচ্ছি |সুধী পাঠক বাকিটা ইস্কুলের ইতিহাস বই থেকে পড়ে নেবেন |
আমি আলোচনার সুবিধার জন্য এই দুই শ্রেণীকে একত্রে সামন্ত প্রভু বলছি | ধর্মের ভিত্তিতে এদের উপাধিও বিভক্ত ছিল | হিন্দু সামন্তরা ছিল রাজা, চৌধুরী, রাও, ঠাকুর, সর্দার, মানকারী, ভুমচর ইত্যাদি | আর মুসলিম সামন্তরা ছিল নবাব, আমির, ওমরাহ ইত্যাদি | এদের জায়গীর থেকে রাজস্ব আদায় করতে হত আর সৈন্যবাহিনী পুষতে হত যা যুদ্ধে সম্রাটকে সাহায্য করত | জাতপাতের নিয়ম এই সামন্ত প্রথায় ছিল এবং ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন ছিল | উপাধির পার্থক্যে তা পরিস্কার আশা করি | মুসলিমরাই সাধারনত বড় সামন্ত প্রভু হত | হিন্দুরা ছোটখাট সামন্ত প্রভু হত |
অনেক পাঠক হয়ত বলবেন যে হিন্দু সামন্ত প্রভুদের মুঘল দরবারে স্থান ছিল | তাদেরকে সবিনয়ে বলি যে দরবারে স্থান পেলেই পদমর্যাদা বেশি হয়ে যায় না | চক চক করলেই যেমন সোনা হয় না |
জমির উপর চিরস্থায়ী অধিকার না থাকায় প্রজাদের প্রতি এদের কোনো মমতা ছিল না | বংশানুক্রমে ভোগ না করতে পারার কারণে জায়গীরের প্রতি কোনরকম টান অনুভব করত না | এরা ভোগ বিলাসে সমস্ত সম্পত্তি উড়িয়ে দিত যাতে করে মরার পর দিল্লির সুলতানদের কাছে খুব কমই সম্পত্তি যেতে পারে | এদের এই ভোগ বিলাসের খরচ আর রাজস্ব আদায়ের জন্য এরা প্রজাদের উপর অশেষ অত্যাচার চালাত | মুসলমান সামন্তরা হিন্দু প্রজাদের উপর আর হিন্দু সামন্তরা মুসলিম প্রজাদের উপর অত্যাচার চালাত | এই ঘটনার অনেক প্রমান পাওয়া যায় |
বিভুতিভুষণের মহেশ গল্পে গফুর মিঁয়াকে ভিটে ছাড়া করে হিন্দু সামন্ত প্রভু বা জমিদার | তার গরু মারা যায় | মুসলিম সামন্ত প্রভুরাও হিন্দু প্রজাদের উপর অত্যাচার করত | তাদের পূজাপাঠ করতে দিত না | তাদেরকে ধর্মান্তরিত করত | মুসলিম সামন্তদের আমলে ভারতে ভয়ানক মড়ক লাগত | নবাব সিরাজ উদ দৌলা এই বঙ্গের হিন্দু নারীদের উপরে অনেক অত্যাচার করেছিল | তাকে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব বলা হয় | নবাবরা কোনো কালেই স্বাধীন ছিল না | তারা মুঘল শাসনের অংশমাত্র ছিল | সিরাজকে গ্লোরিফাই করে মুসলিম ভোট বহুত পাওয়া যায় বটে কিন্তু এই বঙ্গের হিন্দুদের ওপরে তার অত্যাচারের খতিয়ান কমানো যায় না | গঙ্গার ঘাটে চান করতে যাওয়া হিন্দুনারীদের তুলে নিয়ে যাবার কিস্যা মুছে যায় না | তীর্থযাত্রীদের নৌকা উল্টে দেবার ঘটনাও মুছে যায় না | তার মদ্যপ স্বভাব ঠিক করা যায় না |
মুসলিম সামন্ত প্রভুরা এমনকি হিন্দু সামন্ত প্রভুদেরও ছেড়ে দিত না | রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের লেখা চিঠি থেকে তা স্পষ্ট জানা যায় | প্রকৃতপক্ষে হিন্দু রাজারা মুঘলদের সামন্ত প্রভু ছিল | কোনো স্বাধীন রাজা ছিল না | সামন্ত ব্যবস্থায় হিন্দুদের স্থান ছিল নিচে আর মুসলিমদের স্থান ছিল উঁচুতে |এইসব কথা ইস্কুলের ইতিহাস বইতে লিখা থাকে না | যেসব হিন্দুদের মুঘলরা রেখেছিল , তারা কারা আর তাদের সাথে কি ব্যবহার করা হত তা সুকৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয় |মুসলিম নবাব আর হিন্দু রাজাদের পরস্পরের সম্পত্তি আক্রমন করাটা খুবই স্বাভাবিক হয়ে গেছিল | উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে হিন্দু সামন্ত মারাঠা সর্দার ভাস্কর পন্ডিত মুসলিম সামন্ত নবাব আলিবর্দির হাতে নিগৃহিত হয়েছিল | হিন্দু সামন্ত রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় বাংলার মুসলিম সামন্ত নবাব আলিবর্দির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলেন | এই ষড়যন্ত্রে তার সাথী ছিল বর্ধমানের রাজা তিলকচাঁদ আর নাটোরের রানী ভবানী | এরা আরেক হিন্দু সামন্তপ্রভু মারাঠা সর্দার ভাস্কর পন্ডিতকে বাংলায় ডেকে এনেছিলেন | এইভাবে হিন্দু ও মুসলিম সামন্ত প্রভুরা একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেন |
এই যুদ্ধে প্রজারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হত | ওই যে বলে না রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় আর উলুখাগড়ার প্রাণ যায় | তাই হত মুঘল আমলে | ভাস্কর পন্ডিত এই বঙ্গের হিন্দু সামন্ত প্রভুদের আমন্ত্রণে এসে গ্রামকে গ্রাম লুট করে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারাঠাদের বীরত্বের নজির স্থাপন করেছিলেন | এর মধ্যে হিন্দু মুসলিম দুরকম প্রজাই মারা গেছিল | দু রকম নারীই ধর্ষিতা হয়েছিল | ক্ষতি এত বেশি হয়েছিল যে এখনো বাংলার মেয়েরা গান গায় : “খোকা ঘুমোলো পাড়া জুরলো, বর্গী এলো দেশে” |
এর ফলে হিন্দু ও মুসলিম উভয়েই উভয়ের শত্রু হয়ে গিয়েছিল | দুজনেই দুটো আলাদা জাতির মত বাস করছিল | আরো অনেক শত্রুতার গল্প ইতিহাসে পাওয়া যাবে |
হিন্দু সামন্ত রাজারাও একে অপরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতেন | শোভা সিং আর সঙ্গম রায় কাপুর দুজনেই হিন্দু জমিদার |শোভা সিং সঙ্গমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ যাত্রা করলেন | এইরকম ভাবে হিন্দু হিন্দুর শত্রু , হিন্দু মুসলমান পরস্পর শত্রু , মুসলমান মুসমানের শত্রু হয়ে উঠলো | এই ভাবে গোটা মুঘল যুগটা হলো পারস্পরিক শত্রুতার যুগ | হিন্দুদের মধ্যে এত বর্ণ আর জাতপাতের ভেদ এই পারস্পরিক শত্রুতার ফলেই তৈরী হয়েছে | বেদে তো চার জাতি ছিল | সেই চার জাতি থেকে অসংখ্য জাতি হিন্দুদের মধ্যে এই মুঘল আমলেই তৈরী হয়েছিল পারস্পরিক শত্রুতার মধ্য দিয়ে | আরো অনেক শত্রুতার গল্প ইতিহাসে পাওয়া যাবে |
টিপু সুলতানের কথাটা একটু বলতে হয় | টিপু সুলতান একজন মুসলিম সামন্তপ্রভু ছিলেন | তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে নিজের রাজ্য বাঁচাবার জন্য লড়েছিলেন বলে তাকে দেশপ্রেমী বলে বামাতিরা | কিন্তু হিন্দুদের উপর কিরূপ অত্যাচার তিনি করেছিলেন , বিশেষ করে কুর্গদের ওপর, তার সুলুকসন্ধান এখন পাওয়া যাচ্ছে | এইসব চাপা দেয়া ছিল | দিয়েছিল বামাতি ঐতিহাসিকরা | তাহলে কিরকম নির্জলা মিথ্যা বামাতিরা বলে তার একটা পরিচয় পাওয়া গেল |
গ] ইজারাদার
সামন্ত প্রভুরাই ইজারাদারী প্রথা চালু করেন | এতে এক একটা গ্রাম ইজারা নিয়ে রাজস্ব আদায়কারীরা গ্রামবাসীদের উপর খুব অত্যাচার করত | এরা অত্যাচারের দিক থেকে সামন্ত প্রভুর চেয়েও বেশি ছিল | প্রজারা নিরন্ন থাকত | গ্রামে দুর্ভিক্ষ হত | এই সবই হিন্দুদের মুসলমানদের শত্রু বানিয়েছিল |
খ] মুঘল যুগের অর্থনীতি
অর্থনীতির মূল স্তম্ভ হলো রাজস্ব ব্যবস্থা | এই রাজস্ব আদায়্কারিরাই হলেন সামন্ত প্রভু , যাদের কথা একটু আগে বলেছি | এই সামন্ত প্রভুরা রাজস্ব আদায়ের জন্য প্রজাদের উপর যত্পরোনাস্তি অত্যাচার করত | হিন্দুরা অতিরিক্ত জিজিয়া কর দিত | এর ফলে হিন্দুরা মুসলিমদের চেয়ে হত্দরিদ্রই ছিল | এছাড়া মুসলিম সামন্তরা হিন্দু প্রজাদের লুটপাট করত | নবাব সিরাজ উদ দৌলা এই বঙ্গের হিন্দু নারীদের উপরে অনেক অত্যাচার করেছিল | তাকে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব বলা হয় | নবাবরা কোনো কালেই স্বাধীন ছিল না | তারা মুঘল শাসনের অংশমাত্র ছিল | সিরাজকে গ্লোরিফাই করে মুসলিম ভোট বহুত পাওয়া যায় বটে কিন্তু এই বঙ্গের হিন্দুদের ওপরে তার অত্যাচারের খতিয়ান কমানো যায় না | গঙ্গার ঘাটে চান করতে যাওয়া হিন্দুনারীদের তুলে নিয়ে যাবার কিস্যা মুছে যায় না | তীর্থযাত্রীদের নৌকা উল্টে দেবার ঘটনাও মুছে যায় না | তার মদ্যপ স্বভাব ঠিক করা যায় না |
হিন্দুদের মন্দিরগুলি শুধু যে ব্রাহ্মনদের আয়ের উত্স ছিল তাই নয় অনেক ফুলবিক্রেতা বা পুজাসামগ্রী বিক্রেতাদেরও আয়ের উত্স ছিল | আজকের যে কোনো একটা মন্দির দেখুন | মন্দিরের আশেপাশে প্রচুর দোকান দেখতে পাবেন | পুজোর নৈবেদ্য ও সামগ্রী সেইসব দোকানে পাওয়া যায় | মুঘল আমলেও মন্দিরের একই মডেল ছিল | একটা মন্দির ধ্বংস হওয়া মানে অজস্র লোকের রুজিরুটি নষ্ট হওয়া | আর মুঘল আমলে রাজনৈতিক কারণেই হোক বা ধর্মীয় কারণেই হোক মন্দির ভাঙ্গাটা অত্যন্ত সাধারণ ব্যাপার ছিল | কিছু মন্দির বাদশারা ভেঙ্গেছিল , কিছু সামন্তরা ভেঙ্গেছিল | সম্পূর্ণ ডিটেলস পাওয়া যাচ্ছে না তবে অনুমান | কথায় বলে না বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দর | যদি মুঘল বাদশারা মন্দির ভাঙ্গতে পারে তবে মুসলিম সামন্তপ্রভুরা কেন পারবে না ? এইভাবে হিন্দুদের অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করে রাখত মুসলমানরা | এর ফলেও হিন্দু মুসলমানে শত্রুতা,ঘৃনা ইত্যাদি তৈরী হয়েছিল |
আজকের একটা মুসলিম দেশের মধ্যে হিন্দুদের সঙ্গে যা হয় তাই মুঘল আমলে ভারতে হিন্দুদের সঙ্গে হত |
কাশির বাবা বিশ্বনাথের মন্দির মুঘলরা ভেঙ্গেছিল | এর ফল সুদূরপ্রসারী , অনেক গভীর ও ব্যাপক | আপাতত আমি এর অর্থনৈতিক ফল আলোচনা করছি | ওই মন্দিরটি হিন্দুদের কাছে খুবই পবিত্র মন্দির | অজস্র ভক্তের আনাগোনা হয় , মৃত্যুর শেষকাজও হিন্দুরা ওখানেই করে | অজস্র লোকের রুটি রুজি জড়িয়ে আছে ওই মন্দিরের সাথে | ওটা ভাঙ্গা মানে অজস্র লোকের পেটে লাথ মারা | মুসলিমরা ঠিক তাইই করেছিল | এইভাবে মুঘল আমলে হিন্দুরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ছিল |
এছাড়া নদীর শাহ, মামুদ গজনি ইত্যাদি বাইরের লুটেরাদের কথা ছেড়েই দিলাম | এরা যে শুধু মন্দির ধ্বংসই করেনি মন্দিরের সোনাদানাও লুট করেছে | অজস্র হিন্দুদের দাস বানিয়ে বাইরে নিজের দেশে নিয়ে গেছে | এর ফলেও হিন্দুরা অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পরেছে |
তাছাড়া ধর্মের অবমাননার অজুহাতে হিন্দুদের জমি আজও মুসলিমরা দখল করে , মুঘল আমলেও নিশ্চয় করত | জমি চলে যাওয়াও অর্থনৈতিক বিপর্যয় |
এছাড়া সামন্তপ্রভুদের পরস্পরের লড়াইতে অর্থব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হত |
এককথায় মুঘল আমলের অর্থনীতি ছিল হিন্দুদের রক্তে মুসলিমদের পকেটভারী করার অর্থনীতি |
গ] মুঘল যুগের সমাজ
মূলত দুই ভাগে বিভক্ত সমাজ : হিন্দু আর মুসলিম | দুই দলই একে অপরের সাথে লড়াই করত | একথা আগেই বলেছি | মুসলিমদের ক্রমাগত হিন্দু মন্দির ভাঙ্গা, ধর্মান্তরিত করা আর হিন্দু নারী অপহরণ করা হিন্দুদের মুসলিমদের বিরুদ্ধে এককাট্টা করেছিল | সমস্ত হিন্দু সমাজ মুসলিমদের ঘৃনা করত কিন্তু ভয়ও করত | সামনা সামনি কিছু বলতে পারত না ঠিকই | হিন্দু আর মুসলমানের মধ্যে ছোঁয়া ছুই –জল অচল ইত্যাদি সামাজিক ছুতমার্গ মুসলমানদের প্রতি হিন্দুদের অসীম ঘৃণার পরিচয় | হিন্দুদের নিজেদের মধ্যেকার জাতপাত ব্যবস্থা তাদের নিজেদের মধ্যেকার শত্রুতার প্রমান | এককথায় মুঘল আমলে সবাই সবার শত্রু ছিল |
মুসলমানরা হিন্দু সমাজে বহু কুপ্রথার জন্ম দিয়েছিল | উদাহরণস্বরূপ সতী প্রথা | সতী প্রথা শাস্ত্রে বাধ্যতামূলক ছিল না | দশরথের মৃত্যুর পর তার চার রানী সতী হন নি | কৌরবদের মৃত্যুর পর তাদের স্ত্রীরা সতী হন নি | কৃষ্ণের ১৬ হাজার স্ত্রী তার মৃত্যুর পর সতী হন নি | অর্জুনের স্ত্রী নাগ কন্যা উলুপি আরেকজনের বিধবা ছিলেন | তিনিও সতী হন নি | পান্ডুর মৃত্যুর পর কুন্তি সতী হন নি | আবার ধৃতরাষ্ট্রের মৃত্যুর পর গান্ধারী স্বামীর সঙ্গেই পুড়ে মরে সতী হয়েছিলেন | সুতরাং সতী প্রথা বাধ্যতামূলক ছিল না, ইটা পছন্দের বা চয়েসের ব্যাপার ছিল | সেই সতী প্রথা কিভাবে এবং কেন বাধ্যতামূলক হলো ? বিধবা নারীদের মুসলিমরা তুলে নিয়ে যেত | তাদেরকে বাঁচাতে দুরকম ব্যবস্থা ছিল : সতী করে পুড়িয়ে মারা অথবা মাথা মুড়িয়ে কাশিতে পাঠিয়ে দেয়া | অবশ্য এই মতও চালু আছে যে মহিলাদের সম্পত্তি হাতাতে তাদের পুড়িয়ে মারত সমাজ | কিন্তু হিন্দু আইনে ওই সময় মহিলাদের কোনো সম্পত্তির অধিকার ছিল না | অতি সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট মহিলাদের সম্পত্তির অধিকার স্বীকার করে নিয়েছে | কাজেই সম্পত্তির লোভে পুড়িয়ে মারার গল্প ধোপে টেকে না |
বৈধব্যও বাধ্যতামূলক ছিল না শাস্ত্রে | দশরথের চার রানী, কুন্তি, কৃষ্ণের ১৬ হাজার স্ত্রী, -এনারা কেউই বিধবার জীবন যাপন করেন নি | শান্তনু মহারাজের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী সত্যবতী না তো বিধবা ছিলেন , না সতী ছিলেন | এ থেকে এটাই কি বোঝা যায় না যে বৈধব্যের বিধান বাধ্যতামূলক নয় ? শাস্ত্রে এমনকি স্ত্রীর স্বামীকে পরিত্যাগের উদাহরণ অব্দি আছে : সীতা রামকে পরিত্যাগ করেছিলেন | তাহলে কেন বৈধব্য বাধ্যতামূলক ছিল মধ্যযুগের হিন্দু সমাজে ? উত্তর মুসলমানের ভয়ে | তারা যুবতী অরক্ষিতা মেয়ে দেখলেই তুলে নিয়ে যেত | আজকে পাকিস্তান বা তালিবানশাসিত আফগানিস্তানে পুরুষ রক্ষক ছাড়া মেয়েরা কখনো বাইরে বেরোতে পারে না | মুঘল আমলেও পারত না | হিন্দু মেয়েরা বেরোতে চেষ্টা করলে তাদের কপালে কি জুটত আশা করি আর বলতে হবে না |
আরো একটা কুপ্রথা যা মুসলমানের ভয়ে সৃষ্টি হয়েছিল তা হলো বাল্য বিবাহ | শাস্ত্রে কোথাও এর কোনো নজির নেই | শাস্ত্রে মেয়েদের বিবাহের বয়স বলা হয় নি | ৮-৯ বছরে মেয়েদের বিয়ের কোনো গল্পই শাস্ত্রে কোথাও নেই | তাহলে আমাদের সমাজে কিকরে চালু হলো ? উত্তর মুসলমানের ভয়ে | কুমারী মেয়ে কোন বাড়িতে আছে তা খোঁজার জন্য বাড়ি বাড়ি চর পাঠাত মুসলিমরা | যুবতী কুমারী মেয়ে দেখলেই তুলে নিয়ে যেত | এ থেকে বাঁচার একটাই উপায় : যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে দাও | যত অল্পবয়সে সম্ভব বিয়ে দাও | এইভাবেই বাল্য বিবাহ নামক কুপ্রথার শুরু | এই কুপ্রথাগুলিকে জায়েজ করার জন্য শাস্ত্রের টিকা তস্য টিকার অপব্যাখ্যা করা হত | সবটাই সেই সময় মুসলমানদের হাত থেকে বাঁচার জন্য |
ব্রিটিশ আমলে এইসব কুপ্রথার মৃত্যু ঘটে | এটাই যুগের হাওয়া ছিল এবং খুবই ন্যায্য ছিল | শাস্ত্রে বিধবা বিবাহের নজির খুব আছে | অর্জুন যে উলুপিকে বিয়ে করেছিলেন তিনি বিধবা ছিলেন | কৃষ্ণ নরকাসুরের স্ত্রীদেরকে বিয়ে করেছিলেন নরকাসুরের মৃত্যুর পর | শাস্ত্রে প্রাক বিবাহ যৌনতারও উদাহরণ আছে , কর্ণ হলো সূর্য আর কুন্তির বিয়ে ছাড়া যৌনতার ফল | ব্যাসদেব নিজেও পরাশর আর মত্সগন্ধার বিয়ে ছাড়া যৌনতার ফল | হিন্দু সমাজ তাদের শুধু গ্রহণই করে নি মাথায় তুলে রেখেছে | হিন্দু শাস্ত্র খুবই উদার, যদি ঠিকঠাক বুঝা যায় তাহলে | শুধু মুসলমানদের ভয়েই তার অপব্যাখ্যা করে সংকীর্ণ করে রাখা হয়েছিল |
মুসলমানরা হিন্দুদেরকে বেশ্যাগমন মর্যাদাকর বলে শিখিয়েছিল | বাইজিদের দরজায় হিন্দুদেরও দেখা যেত | মুসলমানরা মদ খাওয়াটাকে গ্লোরিফাই করেছে | শাস্ত্র এর দুটোকেই নিষেধ করেছে | এইভাবে মুঘল আমলে হিন্দুদের চারিত্রিক ও সামাজিক অবনতি ঘটেছে , ঘটিয়েছে মুসলিমরা |
বামপন্থীরা এইসব কুপ্রথার জন্য আমাদের ব্রাহ্মন সম্প্রদায়কেই দায়ী করেছে | ওরা এটা দেখল না যে কেন হটাত ব্রাহ্মনেরা এমন সব বিধান দিতে গেল ? ওরা শেখালো যে ব্রাহ্মনেরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য আমাদের এইসব কুপ্রথা শিখিয়েছে | কিন্তু কি সেই স্বার্থ ছিল ? তার কোনো উত্তর বামুদের কাছে নেই |যদি বল সম্পত্তির অধিকার তাহলে বলি কার সম্পত্তির অধিকার ? ব্রাহ্মণের স্ত্রীর না অন্য কারো স্ত্রীর ? এইগুলি কি ইতিহাসের বিকৃতি নয় ? বিজেপি ইতিহাসের গৈরিকিকরণ করলে গেল গেল রব ওঠে | বলা হয় ইতিহাসের বিকৃতি হলো | তা এইসব বামপন্হী ওপরচালাকি গুলি ইতিহাসের বিকৃতি নয় ? নির্জলা মিথ্যা নয় ? মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কের জন্য দেশের সর্বনাশ করার এটাও একটা উদাহরণ |
অনেক বামাতি এখুনি মনুসংহিতা, পরাশর সংহিতা ইত্যাদি সংহিতা দেখিয়ে প্রমান করার চেষ্টা করবেন যে এসব শাস্ত্রে ব্রাহ্মনেরা করেছে | কিন্তু হিন্দু ধর্মের শাস্ত্রের হায়ারার্কি আছে | বেদ সবার উপর , সংহিতা মাঝে আর পুরান নিচে | বেদের মধ্যে মহাভারত ও রামাযনও পড়ে | বেদ ব্যাস মহাভারত রচনা করে তাতে বহু ধর্ম কথা এবং ধর্মের রহস্য যা মহাপুরুষেরা বলেছেন এবং করেছেন তাই লিপিবদ্ধ করেছেন | এটা সংহিতা ও পুরাণের চেয়ে অনেকগুনে শ্রেষ্ঠ | সুতরাং প্রমান হিসেবে এই মহাভারত ও বেদ, পুরাণ আর সংহিতার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী |
মুসলমান আমলেই মেয়েরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয় | কেন ? মুসলিম ধর্ম অনুযায়ী মেয়েরা শুধুই উন্মুক্ত শস্যক্ষেত্র , তারা শুধুই বাচ্চা বিওবে, আর পুরুষের হাতে মার খাবে | কোরানে এটাই বলা আছে | এই একবিংশ শতকে মুসলিমরা সেকথা গর্বের সাথে বলতে পারে , নারীশিক্ষার জিগির তুলে মালালা ইউসুফজাই গুলি খেতে পারে, তাহলে মুঘল আমলে নারী শিক্ষার কি হাল ছিল তা সুধী পাঠক আশা করি খুব বুঝতে পারছেন | হিন্দু নারীরাও বাদ যায় নি | তাই নারী শিক্ষাও বন্ধ হয়ে গেল | আমাদের বেদে পন্ডিতা, উপাধ্যায়া ইত্যাদি শব্দ আসলে নারী অধ্যাপিকাদের বুঝাত | নারীরা শুধু শিখত নয়, অধ্যাপনাও করত | বাত্সায়নের কামসুত্রে বলা হয়েছে যে নারীরাও শিক্ষাগ্রহণ করবে নারী শিক্ষিকার কাছ থেকে | এটাও বেদের যুগের নারী শিক্ষার অস্তিত্বের প্রমান | আরো প্রমান আছে | শঙ্করাচার্য কামশাস্ত্র এক রাজার মহিষীর কাছে শিখেছিলেন | এছাড়া গার্গী মৈত্রেয়িদের কথা তো বাদই দিলাম | বেদের যুগে নারীরা যুদ্ধও করত | শ্রীকৃষ্ণের সাথে চিত্রাঙ্গদাও যুদ্ধে গিয়েছিলেন |এ থেকে বুঝা যায় যে নারীরা যুদ্ধবিদ্যাও শিক্ষা করতেন | যোগবাশিষ্ঠ রামায়নে আমরা দেখি রাজা শিখিধ্বজ পত্নী চুড়ালার কাছে মোক্ষ শাস্ত্র শিখছেন | আবার রাজমহিষী লীলা সরস্বতীর কাছে মোক্ষ শাস্ত্র শিখছেন | মোক্ষ শাস্ত্র সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ শাস্ত্র বৈদিক সাহিত্যে | সেগুলিও মেয়েরা শিখতে পারত | মহাভারতে সুলভা বলে এক পরিব্রাজিকার নাম পাওয়া যায় যিনি রাজর্ষি জনককে তর্কযুদ্ধে পরাজিত করেন | তর্কের বিষয় ছিল মোক্ষ শাস্ত্র | এ থেকে বুঝা যায় যে বৈদিক যুগে মেয়েরা পরিব্রাজিকাও হতে পারত , অর্থাৎ সন্ন্যাসে মেয়েদের অধিকার ছিল |
অনেক বামাতি হয়ত বলবেন যে ওসব বৈদিক যুগে ছিল | মধ্যযুগে ব্রাহ্মনেরা অন্যরকম ছিল তাই তারা এইসব বিধান দিয়েছে | আমিও তাই বিশ্বাস করতাম যদি না নারায়ণ সান্যালের লেখা উপন্যাস রূপমঞ্জরী পড়তাম | এই বইয়ের বিষয়বস্তু হলো মুঘল যুগের বিদুষী নারী | মুঘল আমলে অন্তত তিনজন নারী অধ্যাপিকার কথা পাওয়া যায় : হটি বিদ্যালঙ্কার (১৭৪৩-১৮১০) , হটু বিদ্যালঙ্কার (১৭৭৫-১৮৭৫) আর দ্রবময়ী (১৮৩৭-?) | এদের সম্বন্ধে নারাযনবাবু জানতে পারেন বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের প্রকাশিত ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়ের লেখা বই চতুস্পাঠির যুগে বিদুষী মহিলা থেকে |এই তিনজন মধ্যযুগীয় ব্রাহ্মন কন্যা ছিলেন | এদের মধ্যযুগীয় ব্রাহ্মন পিতা এদেরকে বেদে শিক্ষিত করেছিলেন | হটি বিদ্যালঙ্কারকে বিদ্যালঙ্কার উপাধি স্বয়ং কাশির পণ্ডিতসমাজ দিয়েছিলেন | এরা ব্যতিক্রম ছিল | সুতরাং বামপন্থীরা যে কথায় কথায় স্ত্রীশিক্ষার জন্য মধ্যযুগীয় ব্রাহ্মনদের দোষারোপ করেন , এই বাস্তব উদাহরণ দেখে কি মনে হয় যে ওই দোষারোপে কিছু মাত্র জোর আছে ? কেন মধ্যযুগীয় ব্রাহ্মনরা স্রীশিক্ষায় অগ্রসর হননি ? কার ভয়ে ? আশাকরি সুধী পাঠক বুঝতে পারবেন |
অনেকে হয়ত বলবেন সুলতানা রাজিয়ার কথা, নুরজাহানের কথা | এরা সবাই মুসলিমসমাজের ব্যতিক্রম | কোনো নিয়ম নয় | নুরজাহান বিবাহিত ছিলেন | তিনি সিংহাসনের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকতেন | সামনে তাঁর স্বামী |
তাহলে পাঠক ইটা তো দেখলেন কিভাবে মুঘল যুগে মুসলমানরা হিন্দু সমাজের অধঃপতন ঘটিয়েছিল |
ঘ] মুঘল যুগের শিক্ষা
এইটা না বললে এই গবেষণা অসম্পূর্ণ থেকে যায় | অবশ্য তার মানে এই নয় যে ইটা এলেই সম্পূর্ণ হয়ে যাবে | কিন্তু কোনো যুগের শিক্ষা সম্বন্ধে না বললে যুগটা সম্বন্ধে পুরোপুরি জানা যায় না | মুঘল যুগে শিক্ষা বলতে ছিল কোরান-হাদিস-শরিয়া আর ভাষা হিসেবে ছিল আরবি-ফার্সি-উর্দু | আর কোনো মাদ্রাসায় কিছু পড়ানো হত না | সুফি সাহিত্য খুব কম পড়ানো হত | আর রাজভাষা ছিল ওই আরবি-ফার্সি-উর্দু | অর্থাৎ রাজদরবারে কলকে পেতে হলে সংস্কৃত নয় , আরবি-ফার্সি-উর্দু পড়তে হবে | এইভাবে সংস্কৃত সাহিত্য আস্তে আস্তে একেবারে শেষ হয়ে গেল | যখন সংস্কৃতের শিক্ষার কোনো ফল হত না , তখন কম সে কম ছেলে সংস্কৃত শিখত | চতুস্পাঠিগুলি মূলত হিন্দু সামন্ত প্রভুদের বদান্যতায় চলত | কিন্তু রাজভাষা সংস্কৃত ছিল না | খোদ শিবাজীর দরবারে রাজভাষা উর্দু ছিল | অন্যে পরে কা কথা | ধীরে ধীরে সংস্কৃত জানা পন্ডিতেরা একধরনের রাজার চাটুকারে পরিনত হলো | চাটুকারিতা না করলে যে দরবারে ঠাই হবে না | সংস্কৃতর তো আর দরকার নেই |
সুতরাং কত সংস্কৃতে লেখা বিদ্যা যে নষ্ট হয়ে গেছে তার ইয়ত্তা নেই | আমরা যে আমাদের পুথিগুলি ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পাই তার মূল কারণ হলো ওই বিদ্যার অপ্রয়জনিয়তা | মানুষের যেটা ভীষণ দরকার মানুষ সেটাই অধিক যত্ন করে | আর যার দরকার নেই তাকে অবহেলা অনাদর করে | মুঘল আমলে হিন্দুরা বাধ্য হয়ে পেটের দায়ে হিন্দু শাস্ত্রের অবহেলা শুরু করে | এর সঙ্গে যদি যুক্ত হয় মৌলবিদের বৌদ্ধিক অত্যাচার , তাহলে চিত্রটা সম্পূর্ণ হয় | কত মৌলবিদের অত্যাচারে কত চতুস্পাঠি বন্ধ হয়ে গিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই | ব্রিটিশ আমলে যেটুকু শাস্ত্র ছিল আমি বাজি রেখে বলতে পারি মুঘল যুগের আগে তার চেয়ে অনেক বেশি শাস্ত্র ছিল | যেমন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের জায়গায় উনানি বা হেকিমি শাস্ত্র , সংস্কৃত কাব্যের জায়গায় উর্দু শায়রী, ভারত নাট্যমের জায়গায় বাইজি নাচ, সংস্কৃত সঙ্গীতের জায়গায় উর্দু গজল ইত্যাদির অনুপ্রবেশ ধীরে ধীরে হিন্দু সাহিত্যের ও শাস্ত্রের বহু ক্ষতি করেছিল | মুঘল যুগে সারা ভারতে শরিয়া আইন ছিল | শুধু সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদটা হিন্দু আইন দ্বারা মেটানো হত হিন্দুদের ক্ষেত্রে | আর হিন্দু মুসলমানে বিবাদ হলে শরিয়া চলত হিন্দুদের বঞ্চিত করার জন্য |
আজ অনেক শাস্ত্রের নাম পাওয়া যায় কিন্তু শাস্ত্রগ্রন্থ পাওয়া যায় না | সেইসব গ্রন্থ মুসলমান কর্তৃক কালের গহ্বরে হারিয়ে গেছে |
অনেকে বলতে পারেন আকবরের নবরত্ন সভায় হিন্দু সংস্কৃতির স্থান ছিল | তাদের সবিনয়ে বলি আকবরের রাজত্বকাল যথেষ্ট বড় ছিল না | তাঁর নবরত্ন সভা তাঁর মৃত্যুর সাথে সাথেই শেষ হয়েছিল |
উম] বিচারব্যবস্থা
মুঘল আমলে বিচার কাজিরা করত | বিচার কতটা নিরপেক্ষ ও ন্যায্য ছিল ? প্রশ্নটা করা প্রাসঙ্গিক | উত্তরটা হলো কাজীরা বেদম ঘুষ খেত | ঘুষ খেয়ে দুর্বল পক্ষকে শাস্তি দিত | কাজীরা হিন্দু বন্দিদের সঙ্গে ভালমত দুর্ব্যবহার করত | বন্দী থাকা অবস্থায় গোমাংস খেতে দিত | অনাহারে বন্দিটি বাধ্য হত গোমাংস খেতে | আর তার ধর্ম চলে যেত | তখন তাকে মুসলিম করা হত | আর কোনো গতিও তো ছিল না | খ্রিষ্ট ধর্ম সেই সময় আসে নি | কাজীরা শুধু তাকেই মেনে চলত যে বেদম ঘুষ দিতে পারত | কাজেই বিচারটি কেমন ছিল তা আশা করি বুঝা গেছে | আজকের কোনো মুসলিম দেশে হিন্দুদের প্রতি বিচার যেমন হয় ঠিক তেমনি মুঘল আমলেও হত |
এই গবেষনার সীমাবদ্ধতা
এই গবেষণায় আমি সমস্ত কেস দিতে পারলাম না | বিশেষ করে সামন্ত প্রভুদের অত্যাচার আর পারস্পরিক লড়াইয়ের বহু ঐতিহাসিক কেস আছে যা আমি স্থানাভাবে দিতে পারলাম না | হিন্দু সমাজের অধঃপতনের হয়ত আরো নজির আছে ,সব স্থানাভাবে দেয়া গেল না | সুধী পাঠক পরে ইতিহাস খুলে দেখে নিতে পারেন |
উপসংহার
উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে যে কিভাবে মুসলমানরা হিন্দুদের সবকিছু শেষ করে দিয়েছিল | ব্রিটিশ আমলে যে আধমরা হিন্দু জাতিকে দেখা গেছে সে একদিনে আধমরা হয় নি | বহু দিন ধরে ধরে একটু একটু করে মুসলিমরা হিন্দু জাতিকে আধমরা করেছে |
এরফলে যখন মেকলে সাহেব বলেন যে এক আলমারি ইউরোপিয়ান বই সমস্ত হিন্দু শাস্ত্রের চেয়ে ভালো , তখন আমরা সেই দাবিটাকে পুরোপুরি উড়িয়ে দিতে পারি না | হিন্দুদের রাজ্য, অর্থ, চরিত্র, সমাজ, শিক্ষা সবই যখন মুসলমানে খেয়ে ফেলল তখন হিন্দুদের মনে কেন মুসলমানদের প্রতি ঘৃনা হবে না | হিন্দুদের মনে যে নিদারুন মুসলিমবিদ্বেস তা একদিনে অমনি অমনি হয়নি | ইটা বহুদিনের তিল তিল করে বঞ্চনার ফল | ব্রিটিশ আমলে সেই জন্যই হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা হত | হিন্দু মহাসভা শুধু মুসলমানদের হাত থেকে হিন্দুদের রক্ষা করার জন্যই বানানো হয়েছিল | সেই রাগই চরম রূপ পেল দেশভাগের মধ্য দিয়ে | একজন হিন্দুও দেশভাগের বিরোধিতা করেনি | তারা মনেপ্রাণে চেয়েছিল যে মুসলিমমুক্ত একটা দেশ | অবশেষে তাদের সেই স্বপ্ন পূর্ণ হলো |
আরেক দিক দিয়ে দেখলে বৃটিশরাই কিন্তু মুসলিমদের হাতে আধমরা , নাকে অক্সিজেনের নল গুঁজে শয্যাশায়ী হিন্দু জাতিকে বাঁচাবার জন্য এসেছিল | অথচ তাকেই আমরা ভুল বুঝলাম | মুসলিমদের যাবতীয় অত্যাচারের দায় অংশত বৃটিশের ঘাড়ে আর অংশত হিন্দু ব্রাহ্মনদের ঘাড়ে চাপানো হলো | ইটা আমাদের ভাবের ঘরে চুরি ছাড়া আবার কি ? ভন্ডামি ছাড়া কি ?
আমাদের আত্মসমালোচনা করা প্রয়োজন | দেখা দরকার যে আমাদের দুঃখ দুর্দশার আসল কারণ কি ? সেটা না দেখে আমরা অন্ধের মত ভুল করছি | যে মুসলিমরা আমাদের সমস্ত দুর্দশার মূলে আছে তাকে আমরা ভাই বলছি আর যে ইংরেজরা আমাদের আবার মানুষের মত বাঁচতে দিল তাকে আমরা শত্রু জ্ঞান করছি | ফলটি কিন্তু ভয়ঙ্কর হয়েছে | গোটা বাংলা জামাতে ইসলামীর ঘাঁটি হয়েছে | ভারতের উত্তর পশ্চিম অংশটি পাকিস্তানিতে ভরে গেছে | এত যে সহজে ভারতে সন্ত্রাসবাদী হামলা হয় সেটা কি শুধুই ইত্তেফাক ? আমার মনে হয় না | এর পিছনে আছে আমাদের ঢিলেমি | আমাদের অন্ধতা | আমরা হিন্দুস্তানে যতটা ভালো আছি , কোনো বিদেশী মুলুকে তা সে মুসলিম হোক কি খ্রিস্টান হোক, ততটা ভালো থাকব না | সুতরাং মুসলিমদের ভাই বলার আগে আমাদের দেখা উচিত যে তারা আমাদের কি চোখে দেখে |
তথ্যসূত্র
১] নারায়ণ সান্যালের লেখা রূপমঞ্জরী
২] মুসলিম দেশগুলিতে হিন্দুদের অবস্থা
৩] ইতিহাস বই
৪] আমার কমন সেন্স
১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:০০
সত্যান্বেসী বলেছেন: আমার উদ্দেশ্যটা হলো সত্যি কথা বলা |
আর আপনারা দাদা বাংলা বাজারের ইতিহাস নয় আপনারা বামপন্থী কমিউনিস্ট ইতিহাস পড়েন যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবে মুসলিম ঘেঁষা | কলেজ স্ট্রিটের ইতিহাস পড়লে আপনার জ্ঞান আরো পরিস্কার হত |
২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৮
ফ্রাঞ্জ কাফকা বলেছেন: "মহেশ" গল্পটা শরৎচন্দ্রের লেখা। সংশোধন করে নেবেন।
১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:০১
সত্যান্বেসী বলেছেন: ভুল সংশোধনের জন্য ধন্যবাদ |
৩| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩৩
প্রবালরক বলেছেন: পূর্নেন্দু পত্রীর পরিশ্রমী অনুসন্ধানমুলক "পুরানো কলকাতার কথাচিত্র" বই সিরাজউদ্দৌলা সন্বন্ধে আপনার বিবৃত ধারনার উল্টো কথা বলে।
১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:০৪
সত্যান্বেসী বলেছেন: কথাটা হলো কে ঠিক ? নারায়ণ সান্যাল ঠিক না পূর্ণেন্দু পত্রী ঠিক ? একটা কথা তো দাদা মেনে নেবেন বর্তমানে মুসলিমরা তাদের দেশে হিন্দুদের সাথে যা করে ঠিক তাই মুঘল আমলে করত | কারণ মুঘল ভারত তো মুসলিম দেশ ছিল | তাই বর্তমানের মুসলিম দেশে হিন্দুদের অবস্থা যা ছিল ঠিক তাই মুঘল ভারতেও ছিল | এটা মানতে আপত্তি কোথায় ?
৪| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২৪
আখেনাটেন বলেছেন: তথ্যসূত্র আর আপনার কমন সেন্সের এই অতি ব্যবহার দেখলে মুঘল আমলের হিন্দু সামন্ত প্রভুরাও, বিশেষ করে মানসিংহ ও তার দলবল নিজে শ্মশান থেকে উঠে এসে থাপড়াতো। ভাগ্য ভালো উনারা ব্লগ পড়ে না।
১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:১২
সত্যান্বেসী বলেছেন: মুঘল আমলের হিন্দু সামন্তপ্রভুরা অত্যন্ত দুর্বল ছিল মুসলিম সামন্তপ্রভুদের তুলনায় | বামপন্থী ঐতিহাসিকরা এবং মতলববাজরা শুধু হিন্দু সামন্তপ্রভুদের দেখিয়ে প্রমান করতে চায় যে মুঘলরা কতটা হিন্দুপ্রেমি ছিল | তারা এটা দেখায় না যে হিন্দু সামন্তদের রাজনৈতিক ক্ষমতা কতটা ছিল মুসলিমদের তুলনায় , মুসলিম শাসকেরা হিন্দু সামন্তপ্রভুদের কি চোখে দেখত, তারা হিন্দু সামন্তদের ভালবাসত না তলোয়ার দিয়ে কাটত ইত্যাদি |
রাজা কৃষ্ণচন্দ্র আর অন্যান্য হিন্দু সামন্তপ্রভুরা কেন মারাঠা সর্দারদের বাংলায় দেকে এনেছিল মুসলিম নবাব আলিবর্দির বিরুদ্ধে যদি মুঘল আমলে হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতি থাকবেই ? শরত্চন্দ্র মহেশ গল্পে কেন হিন্দু জমিদার কর্তৃক মুসলিম প্রজার শোষণ দেখিয়েছেন যদি হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতি থাকবেই ?
এইগুলি দরকারী প্রশ্ন যার উত্তর ঐতিহাসিকদের দেয়া উচিত |
৫| ২১ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৫৮
প্রবক্তা বলেছেন: '' বর্তমানের মুসলিম দেশে হিন্দুদের অবস্থা যা ছিল ঠিক তাই মুঘল ভারতেও ছিল | এটা মানতে আপত্তি কোথায় ?''
সঠিক কথা আমার মনেহয়
৬| ২১ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১:৫৭
কামালপা বলেছেন: আপনার সাম্প্রদায়িক ইতিহাস আপনি ধুয়ে পানি খান। হিন্দুরা সতীদাহের নামে মেয়েদের পুড়িয়ে মারত, পিপাসার্তকে পানি পর্যন্ত খেতে দিত না পানির পাত্র ছুঁয়ে দিলে জাত যাবে বলে, চতুষ্পঠীতে পড়ানো হত ঘোড়ার ডিম। সংস্কৃত ভাষা শিখে কি হবে? ওই ভাষা নিচু জাতের শোনা ছিল নিষিদ্ধ। মুসলিম শাসকদের বদান্যতায় রামায়ণ বাংলা অনুবাদ হয়েছে। আপনাদের নিজেদের মধ্যে একশ একটা কুপ্রথা আর দোষ দেবেন মুসলমানদের, মশকরা আর কি।
৭| ২১ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ২:০৩
কামালপা বলেছেন: "রাজা কৃষ্ণচন্দ্র আর অন্যান্য হিন্দু সামন্তপ্রভুরা কেন মারাঠা সর্দারদের বাংলায় দেকে এনেছিল মুসলিম নবাব আলিবর্দির বিরুদ্ধে যদি মুঘল আমলে হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতি থাকবেই ?"
মারাঠা বর্গীরা ছিল লুটপাটকারী, ভয়াবহ ডাকাত। হিন্দুরা ডাকাতদের ডেকে এনেছিল।
৮| ২১ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ২:১২
কামালপা বলেছেন: "সুতরাং সতী প্রথা বাধ্যতামূলক ছিল না, ইটা পছন্দের বা চয়েসের ব্যাপার ছিল । "
ইচ্ছা করে যে সমাজে নারীরা আগুনে পুড়ে মরতে চায়, সে সমাজ কতবড় নারীবিরোধী অসভ্য সমাজ ছিল তা বোঝাই যায়। আপনি উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপাচ্ছেন?
৯| ২১ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ২:২২
এ আর ১৫ বলেছেন: Spelling of School. .... স্কুল, ( ইস্কুল চাপাই নবাবগঞ্জের মানুষের উচ্চারন, আপনি কি চাপায়ের মানুষ? ) । সঠিক বানান স্কুল। ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫৫
কল্লোল পথিক বলেছেন: চটি ইতিহাস! যাকে বলে।
তা দাদা আপনার উদ্দেশ্যটা কি?
সাম্প্রদায়িক সেন্টিমেন্ট সুড়সুড়ি দিতে চানতো?
মনে রাখবেন আমরা আর আপনাদের কলেজস্ট্রীটের
ইতিহাস পড়ি না আমরা আমাদের বাংলা বাজারের ইতিহাস পড়ি।