নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যের সন্ধানে ....

সত্যান্বেসী

কলকাতা হাই কোর্টের উকিল

সত্যান্বেসী › বিস্তারিত পোস্টঃ

যুগপুরুষ osho : ভগবান শ্রী রজনীশ : একটি বিশ্লেষণ

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:১১


এই লেখাটা আমার এক অতিপ্রিয় ব্যক্তিকে নিয়ে | লেখাটা লেখার খুব প্রয়োজন মনে করলাম কারণ রজনিশের নামটা আজ এক কলঙ্কিত নাম | বহু লোক নানা স্বার্থে তার নাম কলঙ্কিত করেছিল | আমি তার ব্যাপারে কিছু জানি তাই সেটা শেয়ার করার চেষ্টা করছি | যেসব পাঠকেরা রজনিশের সেক্স গুরু চরিত্রের ব্যাপারে নিঃসন্দেহ তারা দয়া করে এই লেখা পড়বেন না | এটা শুধু সেইসব মুক্তমনা পাঠকদের জন্য যারা প্রকৃত সত্য জানতে চান |

রজনিশের জীবনের এইদিক সম্বন্ধে আমি দুটি বই থেকে জানতে পারি : মা প্রেম শুন্যর লেখা মাই ডায়মন্ড ডেস উইথ osho আর মা আনন্দ শীলা ( ওনার ব্যক্তিগত সচিব)র লেখা ডোন্ট জাস্ট কিল হিম | দুইজনেই ওনার শিষ্যা ছিলেন খুব ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ ছিল রজনিশের সঙ্গে |এই লেখায় ঐসব বইগুলি থেকে পাওয়া তথ্যই ব্যবহার করব |

সেক্স গুরু কলঙ্ক

এটাই রজনিশের বিশ্বব্যাপী পরিচয় আমেরিকার কল্যানে | রজনীশ আমেরিকার সমস্ত ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছিলেন | আমেরিকার এইসব ঈশ্বররা হলেন যথাক্রমে: অর্থ, খ্যাতি, নাম,যশ, বিলাস, বৈভব এবং যিশু খ্রিষ্ট | অদ্ভুত ব্যাপার যিশু এই সমস্ত ঈশ্বরদের সাথেই বাস করছেন যাদের তিনি নিজে ঘৃনা করেছেন | রজনীশই প্রথম আমেরিকাকে তথা বিশ্বকে ভাবতে শেখালেন যে সুখী হতে চাইলে এইসব বিলাসের কোনো প্রয়োজন নেই | এসব ছাড়াই সুখী হওয়া যায় |ওনার মতে সুখী হতে গেলে ধ্যানই প্রয়োজন আর কিছুই নয় | রজনিশের ৯৯ টা রোলস রয়েস গাড়ি তার শিষ্যদের সম্পত্তি ছিল যারা আসলে প্রভূত ধনী ছিল | রজনীশ নিজে কোনদিন এইসব বিলাসদ্রব্য নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবেননি | উনি এইসব বিলাসদ্রব্যকে খেলার সামগ্রী বলে মনে করতেন | এইখানেই আমেরিকার সাথে রজনিশের বিবাদ | এই বিবাদ পরে আরো গম্ভীর রূপ নেয় যখন তিনি খ্রিষ্টধর্মের ভন্ডামির স্বরূপ উন্মোচন করেন | এইসব কারণে আমেরিকা ভীষণ চটেছিল রজনিশের প্রতি | ওনাকে নিয়ে কুত্সা ও রটনা শুরু হতে থাকে, অনার একটা বই ছিল : সম্ভোগ থেকে সমাধি বলে যেখানে উনি সেক্স-এর সাথে ধ্যানের সাদৃশ্য নিয়ে আলোচনা করেছিলেন | ওই একটিমাত্র বইতে উনি সেক্স নিয়ে কথা বলেছিলেন | আর বাকি অজস্র বই ছিল তাতে উনি সেক্স নিয়ে কিছুই বলেননি | মার্কিন প্রচারমাধ্যম ওই একটি বইয়ের কদর্থ করে ওনার বিরুদ্ধে নিন্দা আর সমালোচনার ঝড় তোলে | ওনার সেক্স গুরু নামই হয়ে যায় | ইউরোপিয়ান প্রচারমাধ্যমও একই ধুয়ো তোলে |

আমি নিজে রজনিশের সবকটি বই দেখেছি | কিছু আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহে আছে | ওই একটিমাত্র বহু আলোচিত বই ছাড়া বাকিগুলির বিষয় হলো জেন্, বৌদ্ধ ধর্ম, তাও ধর্ম, সুফিবাদ, খ্রিস্ট ধর্ম, ইহুদি ধর্ম, ওনার মেডিটেশন ইত্যাদি | অর্থাৎ সেক্স ছাড়া সবকিছুই |

এইভাবে রজনিশের কুত্সা গাওয়ার পরে আমেরিকা রজনিশকে গ্রেপ্তার করে | যেসব ধারা তাঁর বিরুদ্ধে দেয়া হয় তার প্রায় সবকটাই ভুল প্রমাণিত হয় আদালতে | কিন্তু আমেরিকার মজা হলো রাষ্ট্র কখনো একটামাত্র লোকের কাছে পরাজিত হতে পারে না : এই ধারণা ওখানকার আইনব্যবস্থার মধ্যে আছে | এই ধারণার বলে ওনাকে আমেরিকা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয় | মার্কিন দোসর ইউরোপ রজনিশকে প্রত্যাখ্যান করে | ইউরোপের প্রায় প্রতিটা দেশ রজনিশকে ঢুকতে দেয় নি | সব্বাই আমেরিকার পা চাটা কুত্তা | ভারতে রজনীশ আশ্রয় নেন | ভারতের টুকে পাস মিডিয়া রজনিশের বিরুদ্ধে আমেরিকার দাবিগুলির সত্যতা বিন্দুমাত্র যাচাই না করে, রজনিশের শিষ্যাদের ইন্টারভিউ না নিয়ে রজনিশের বিরুদ্ধে সেক্স গুরু কলঙ্ক চালু রাখে |

আমি মনে করি রজনীশ সেক্স গুরু ছিলেন না | ওনার সমস্ত বই পড়ে , মেডিটেশন করে আর বক্তৃতা শুনে আমার মনে হলো উনি সেক্স গুরু ছিলেন না | উনি ওনার এক শিষ্যা বিবেকের সাথে শুয়েছিলেন ও সেই শিষ্যা পরে আত্মহত্যা করে | তো সেটা ব্যক্তিগত ব্যাপার | অনেকে রজনিশের থেকে বহু উপকার পেয়েছিলেন | বহু ইউরোপিয়ান আর আমেরিকান শিষ্য ছিল ওনার যারা ওনার কাছ থেকে উপকৃত হয়েছিলেন | এই অধম লেখকও উপকৃত মানুষদের মধ্যে পড়ে | কি ধরনের উপকার জগত পেয়েছিল ওনার কাছ থেকে সেটা পরে বলছি |

রজনিশের দান :

রজনিশের মতে মন হচ্ছে মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু | মনই মানুষকে ভোগায় | মন কি ? রজনিশের মতে মন হচ্ছে বাসনা, কামনা, দুরূহ প্রহেলিকা, অতীত আর ভবিষ্যতের চিন্তা | আমি ছোট করে মন বলতে বাসনা কামনা বলছি | এই বাসনা আর কামনা হলো সর্বদা অন্যের মত হতে চেষ্টা করার ইচ্ছা | এর থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে নিজের মধ্যে ডুব দেয়া | নিজের মধ্যে যে মণিমুক্তা আছে তা খোঁজা | এই মন বা বাসনা কামনার কারণ হচ্ছে সামাজিক শিক্ষা | রজনীশ তাই তার ভক্তদেরকে সামাজিক শিক্ষার বাইরে নিজের বিচারবুদ্ধি দিয়ে চলতে বলেছেন | এই বাসনা আর কামনা মুক্ত অবস্থাই হলো নির্বাণ |

সমাজ সর্বদা মানুষকে এক ছাঁচে ঢালার চেষ্টা করছে | সে সর্বদা তার দৃষ্টিভঙ্গি , নিয়মনীতি জোর করে মানুষের উপর চাপিয়ে দিতে চায় | রজনীশ বলেন যে এই ধরনের জবরদস্তির ফল ভালো হয় না | এর থেকে মুক্তি পাওয়াই হলো নির্বাণ |

এই নির্বাণ পেতে হলে ধ্যান করতে হয় | রজনিশের মতে ধ্যান হলো কিছু সময় জগত আর সমাজ সংসারকে ভুলে থাকার কলা | যাতে করে আমরা জগত আর সমাজকে ভুলে নিজের মত থাকতে পারি তারই নাম হলো ধ্যান | তা যে কোনো কিছুই হতে পারে | যে কোনো সামান্য কাজই ধ্যান হতে পারে | রজনীশ পুঁথিগত শিক্ষার বিরোধিতা করেছিলেন | তিনি জীবনে কখনই কারো কাছ থেকে কিছু শেখেননি | তিনি যা কিছু নিজে অনুভব করেছেন তাই বলেছেন | তিনি যা কিছু করেছেন সবই নিজের ভেতর থেকে এসেছে | বাইরে থেকে নয় |

সংক্ষেপে এই হলো রজনিশের অবদান |

লেখকের মন্তব্য

রজনীশ ভুল না ঠিক এ বিচারের দায়িত্ব পাঠককেই দিলাম | আমি আমার মত ব্যক্ত করছি | আমার মতে রজনীশ ঠিক কারণ সমাজের সংস্কার বা শিক্ষা সবই পুরাতন | তা যুগের সাথে সবসময় পরিবর্তিত হয় না | এই জন্যই নতুনকে গ্রহণ করতে সমাজের এত অসুবিধা হয় | পৃথিবীজুড়ে বহু সামাজিক বৈষম্য আর বঞ্চনার এটাই কারণ | সমকামীদের সমাজ থেকে বিতাড়ন এবং নারী অধিকার হরণ ইত্যাদি যুগের সঙ্গে সমাজের তাল মিলাতে না পারারই উদাহরণ | রজনীশ আমাদের বর্তমানে বাঁচতে শিখিয়েছেন | অতীত আর ভবিষ্যতকে ভুলতে শিখিয়েছেন | এটাই প্রয়োজন | অতীতকে আঁকড়ে ধরে থাকলে মানুষ হয় মনোরোগী হয় নয়তবা সামাজিক অশান্তির শিকার হয় | ভবিষ্যতের চিন্তায় মানুষ দীর্ণ হয় কারণ ভবিষ্যত কেউ দেখেনি | এতে মানুষের জীবন নরক সমান হয়ে যায় | সুতরাং অতীত আর ভবিষ্যত ভুলে কেবল বর্তমানে বাঁচাটাই বুদ্ধিমানের কাজ |

রজনিশের মেডিটেশন গুলি মানুষের স্ট্রেস হরণ করার এক আশ্চর্য উপায় | ডায়নামিক, কুন্দলিনি, নটরাজ ইত্যাদি হলো রজনিশের মেডিটেশন | এইগুলি ব্যবহার করলে টেনসন দূর হয় | মানুষ ভালো থাকে |

পুনায় এই মহামানবের জীবনাবসান হয় |

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২৮

কল্লোল পথিক বলেছেন: সহমত ।মিডিয়া আমেরিকা ইউরোপের হাতে
তারা যখন যাকে ইচ্ছা নায়ক অথবা খলনায়ক বানাতে পারে।

২| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০৩

ম.র.নি বলেছেন: ভগবানকে আমেরিকা তাড়িয়ে দেয়,ইউরোপ ঢুকতে দেয় না! শিষ্যা আত্মহত্যা করলো কেন? ভগবানের পার্ফম্যান্স ভালোহয় নাই?

৩| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:২২

প্রণব দেবনাথ বলেছেন: রজনিশ সমন্ধে খুব ভাল জানিনা। তবে একটা কথা ঠিক আপনি তার কাছ থেকে উপকার পেয়েছেন সেই জন্যই আপনার তাকে ভাল মনে হয়েছে কিন্তু যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের কাছে তিনি খারাপ হবেন এটাই স্বাভাবিক।তবে তেনার শিষ্যা কেন আত্মহত্যা করল সেটা কিন্তু বললেন না।অনেকেই নিজের অপকর্ম ঢাকতে যেখানে যেটা জনপ্রিয় তার আশ্রয় নেয়। যাই হোক আপনি আপনার অভিমত বললেন, বিপরীত অভিমত না পেলে একজন কে মূল্যায়ন করা সহজ হয়না।

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৪

সত্যান্বেসী বলেছেন: ওনার শিষ্যা ওনার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে গিয়ে ব্যর্থ হয় এবং আত্মহত্যা করে | এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার |

৪| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৮

নতুন বলেছেন: এই সব ক্যাল্টিক লিডাররা অবশ্যই ক্যারিসমাটিক হয়.... নতুবা এতো মানুষ তার অনুসরন করে না।

আমি ছোট করে মন বলতে বাসনা কামনা বলছি | এই বাসনা আর কামনা হলো সর্বদা অন্যের মত হতে চেষ্টা করার ইচ্ছা | এর থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে নিজের মধ্যে ডুব দেয়া | নিজের মধ্যে যে মণিমুক্তা আছে তা খোঁজা | এই মন বা বাসনা কামনার কারণ হচ্ছে সামাজিক শিক্ষা | রজনীশ তাই তার ভক্তদেরকে সামাজিক শিক্ষার বাইরে নিজের বিচারবুদ্ধি দিয়ে চলতে বলেছেন | এই বাসনা আর কামনা মুক্ত অবস্থাই হলো নির্বাণ |

উনি এই কামনা থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে মুক্তমনে শারীরিক সম্পকের কথা বলেছেন যাতে মনের থেকে কামনা তৃপ্তহয় তখন অন্য কাজে মন দেওয়া যাবে।

এই রকমের অনেক গুরু ছিলো যারা নতুন চিন্তা নিয়ে এসেছিলেন... এমন কিছু গুরু আবার তাদের অনুসারী সহ আত্নহত্যাও করেছিলো।

৫| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:১৮

শ্রাবণধারা বলেছেন: রজনীশ সম্পর্কে তেমন জানা ছিল না । আপনার পোস্ট পড়ে কিছুটা জানা হলো। তবে তার বক্তব্যে ঠিক নতুন কিছু পেলাম না । আপনার বাড়ির কাছেই এর চেয়ে অনেক বড় সাধু আছেন - তাকে নিয়ে বিশ্লেষণ করতে পারেন । হ্যা, আমি রামকৃষ্ণ পরমহংসের কথা বলছি ।

মন সম্পর্কে আপনার/ রজনীশের ধারণাটা মোটামুটি পছন্দ হয়েছে । ধ্যানের একটা পর্যায়ে আমার মনে হয়েছে মন হলো "ছায়া" - শরীর আর আত্মার প্রক্ষেপ.....।

৬| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:২৯

মুহাম্মদ তৌকির হোসেন বলেছেন: আমি এই পোস্টটাতে নিরপেক্ষতা পেলাম না। আপনি উপকৃত হয়েছেন কিংবা আপনার তাকে ভালো লেগেছে সেজন্যে স্বভাবতই তার পক্ষে এখানে যুক্তি উঠেছে। কিন্তু মুদ্রার ওপিঠটা দেখানোটা আরো শ্রেয় হতো।

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৬

সত্যান্বেসী বলেছেন: কে অপকৃত হয়েছে সেটা তো আমি অনেক খুঁজেও পেলাম না | ওনার শিষ্য-শিষ্যারা যা ওনার সম্পর্কে লিখেছেন তাতে তো খারাপ কিছু দেখলাম না |

৭| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৮

সত্যান্বেসী বলেছেন: রজনিশের নিন্দাবাদ অর্থাৎ মুদ্রার ওপিঠ হলো একমাত্র সেক্স গুরু কলঙ্ক যা আমেরিকা লাগিয়েছিল | সেটা ছাড়া আর কোনো কলঙ্ক তো পেলাম না |

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.