![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ডায়ালেকটিকস হলো প্রাচীন গ্রিক দার্শনিকদের ব্যবহৃত একটি উপায় যার দ্বারা তাঁরা জ্ঞান পেতেন | গ্রিক দার্শনিকরা এই উপায় দিয়েই তাদের বিভিন্ন তত্ব বলে গেছেন | আমি এই ছোট লেখায় এই জ্ঞান সম্পর্কে আমার অনুভব লিখব |
ডায়ালেকটিকস হলো এমন একটা পদ্ধতি যার দ্বারা জনশ্রুতি থেকে প্রকৃত সত্যে পৌঁছানো যায় | ডায়ালেক্ট হলো জনশ্রুতি বা কোনো বিষয়ে লোকের মুখে যেসব কাহিনী চালু আছে | আর তা থেকে যে যুক্তিপ্রক্রিয়া চলে তার নাম ডায়ালেকটিকস | এই ডায়ালেকটিকস-এর একটা নাম আমি দিচ্ছি : লোকযুক্তি | এই লোকযুক্তি কিভাবে কাজ করে তা বলব |
প্রথমে কোনো বিষয়ে জনশ্রুতি গুলি শোনা হয় | তারপরে সেই জনশ্রুতি গুলি থেকে যুক্তিচালনা করে দেখা হয় কি পরিনাম হচ্ছে | পরিনামগুলির ভালো মন্দ , সাদৃশ্য পার্থক্য বিচার করে প্রকৃত সত্যে পৌঁছানো যায় | সক্রেটিস বলেন যে লোকযুক্তি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোকে পৌঁছে দেয় | তিনি একটা গুহার উদাহরণ দিয়েছিলেন | গুহাবাসী লোকগুলো দেয়ালে শুধু বস্তুর ছায়া দেখত | তাদের মধ্যে থেকে একজন কোনরকমে গুহার বাইরে সূর্যালোকে বেরিয়ে আসে আর বস্তুর আসল চেহারা দেখতে পায় | লোকযুক্তি বা ডায়ালেকটিকস ঠিক এইরকম | এইভাবেই তা মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোকে পৌঁছে দেয় |
লোকযুক্তিতে সমস্তরকম বিরুদ্ধমতের সম্মুখীন হতে হয় | ঐসব বিরুদ্ধমত খন্ডন করতে পারলে তবেই সত্যকে পাওয়া যায় | তা না হলে গুহাবাসী মানুষ যেমন বস্তুর ছায়া দেখত তেমনি সত্যের ছায়া মাত্র দেখা যায় | তাতে সত্যকে পাওয়া যায় না | লোকযুক্তি বিশুদ্ধ বুদ্ধির পথ ধরে সত্যে পৌঁছে দেয় |
বিশুদ্ধ বুদ্ধিটি কি ? ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞান নয় | অর্থাৎ ইন্দ্রিয় থেকে এই জ্ঞান পাওয়া যায় না | তাহলে এটা কি ধরনের জ্ঞান ? এটা হলো ভালো মন্দের জ্ঞান , সাদৃশ্য পার্থক্যের জ্ঞান , লাভ ক্ষতির জ্ঞান ইত্যাদি | এইসব জ্ঞান কখনই ইন্দ্রিয় দিয়ে পাওয়া যায় না | যদি যেত তাহলে এসব বিষয়ে পৃথিবীর সমস্ত মানুষের মতামত একই রকম হত যেমন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয় পাহাড়কে পৃথিবীর তামাম লোক পাহাড় বলে জানে | কিন্তু ভালো-মন্দ, লাভ-ক্ষতি, সাদৃশ্য-পার্থক্য ইত্যাদি বিষয় কেবল মনশ্চক্ষুতে দেখা যায় | যার মন যেরকম নির্মল সে এসব বিষয় তেমনটা বোঝে | তাই পৃথিবীতে এসব বিষয়ে ভিন্নমত দেখতে পাওয়া যায় | সুতরাং এইগুলি কেবল নির্মল মনে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয় | একেই বিশুদ্ধ বুদ্ধি বলে | এর বিপরীত হলো মলিন মন | তাতে ভালোটা খারাপ খারাপটা ভালো :এইরকম বিপরীত জ্ঞান আসে |
আরিস্ততলের টপিকস বইটা লোকযুক্তির উপর লেখা বই | তাতে কিছু অধ্যায়েরই নাম আছে সাদৃশ্য-পার্থক্য, ভালো-মন্দ | অর্থাৎ এইগুলি প্রধান বিষয় |
লোকযুক্তিই জ্ঞানের একমাত্র পথ কেন ? অন্যসব বিজ্ঞানের নয় কেন ? কারণ অন্য বিজ্ঞানগুলি তাদের প্রকল্প বা হাইপোথিসিস যাচাই করে না | কিন্তু লোকযুক্তি করে | অপরীক্ষিত হাইপোথিসিস ভুল পথে নিয়ে যায় |তাই লোকযুক্তিই জ্ঞানের একমাত্র পথ |
অনেক প্রত্যক্ষবাদী দার্শনিকরা বিশুদ্ধ বুদ্ধি বা যুক্তিকে জ্ঞানের পথ বলে মানতে নারাজ | ইংরেজ দার্শনিক লক হলো এমন একজন প্রত্যক্ষবাদী দার্শনিক | কিন্তু এরা ভুল কারণ ইন্দ্রিয়ের নিজস্ব বিষয় আছে এবং এছাড়া আরো কিছু বিষয় আছে যা ইন্দ্রিয় দ্বারা প্রত্যক্ষ করা যায় না যেমন ভালো-মন্দ, লাভ-ক্ষতি, সাদৃশ্য-পার্থক্য ইত্যাদি | এইগুলিই যুক্তি বা বিশুদ্ধ বুদ্ধির বিষয়বস্তু | বুদ্ধিকে অস্বীকার করলে এগুলোকে জানা যায় না |
আমরা নিজেদের সাধ্যমত লোকযুক্তি প্রয়োগ করে থাকি | তারই ফল হয় দৈনন্দিন জীবনে | ভালোভাবে লোকযুক্তি প্রয়োগ করতে গেলে অভ্যাসের প্রয়োজন আছে |
©somewhere in net ltd.