![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ধ্বনি কাকে বলে ? এটা হলো গভীর অর্থ | এটাকে কেউ বলে রস, কেউ বলে ভাব, কেউ বলে প্রতিয়মান অর্থ | এটা বাচ্য অর্থ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা | এটা কোনো কাব্য গ্রন্থর সম্পূর্ণ স্ট্রাকচার থেকে পাওয়া যায় | এই লেখায় আমরা বেদের প্রতিয়মান অর্থ অর্থাৎ বেদের ভাব নিয়ে আলোচনা করব | এই আলোচনায় প্রমান হিসেবে হাজির করব মহাপুরুষদের কাজ, তাঁদের বাণী, শাস্ত্রের বিধান ইত্যাদি | তাহলে শুরু করা যাক |
বেদের ভাব :
বেদের ভাব হলো অতি উদার বা আলট্রা লিবারাল | এই অতি উদার ভাব বেদের গোটা সাহিত্যে দেখা যায় | রামায়ন-মহাভারত-গৃহ্যসুত্র আদি সমস্ত কিছুতে বেদের এই অতি উদার ভাবের বহু প্রমান আছে | আমি এই লেখায় ঐসব শাস্ত্র থেকে প্রমান দেখাবো | আর এটাও দেখাবো যে আজকের হিন্দুওয়ালারা কিভাবে বেদের মুখে চুনকালি মাখাচ্ছে |
বেদের মূল :
বেদের মূলে রয়েছে অদ্বৈত ভাব | সবকিছুই ব্রহ্ম | ব্রহ্ম সত্য আর এই পরিদৃশ্যমান জগত মিথ্যা | সুতরাং আমিও ব্রহ্ম বই আর কি ? অহং ব্রহ্মাস্মি : এইটি হলো বেদের মূলভাব | যখন সবকিছুই ব্রহ্ম তখন সবকিছুরই আমার মত হওয়া উচিত | অর্থাৎ আমি সমস্ত কিছু হয়েছি | এই ভাবের নাম হলো সমদর্শন | সবাইকে নিজের মত দেখাই হলো সমদর্শন | একেই বেদে দয়া, ক্ষমা ইত্যাদি শব্দে অভিহিত করা হয়েছে | দয়া ক্ষমা এইসব শব্দগুলোর প্রাকৃত অর্থ বা প্রচলিত অর্থ ধরলে বেদকে ভুল বোঝা হবে কারণ বেদ রচনাকার এইসব শব্দগুলির অর্থ নির্দিষ্ট করে বলে দিয়েছেন | সত্য তাকেই বলে যার দ্বারা হিত হয় | সত্যের প্রচলিত অর্থ হলো অবিকৃত বাক্য | কিন্তু সেটা বেদের শাস্ত্রীয় অর্থ নয় | যে অবিকৃত বাক্যে জনহিত না হয় তা বেদ শাস্ত্রমতে সত্য নয় , মিথ্যা | যদি বিকৃত বাক্যে জনহিত হয় তাহলে সেটা সত্য | নাস্তিক মুক্তমনারা বেদের শব্দের প্রচলিত অর্থ ধরে নিয়ে বেদের বিচার করে বলে বেদকে মূর্খদের শাস্ত্র মনে হয় | যদি বৈদিক শব্দের শাস্ত্রীয় অর্থ ধরে বিচার করা যায় তাহলে বেদকে জনহিতকর বা লোকহিতকর বলে মনে হবে | এটাই প্রকৃত অর্থ |
যাই হোক মূল দিয়ে শুরু করি | বেদের মূলে রয়েছে অদ্বৈত ব্রহ্ম ভাব যা থেকে আসলো সমদর্শন বা সবাইকে নিজের মত দেখার ভাব | বেদ বলে যে বর্ণ আশ্রম নির্বিশেষে সবাইকে নিজের মত দেখতে হবে | এই ভাবের কারণ হলো বর্ণাশ্রম নির্বিশেষে সবকিছুই ব্রহ্ম ও আমার থেকে অভিন্ন | সেই জন্য সবকিছুকেই নিজের মত দেখতে হবে | এই ভাব থেকেই আসে পঞ্চ যজ্ঞ যা সমস্ত বৈদিক মানুষের পালনীয় | তা হলো ব্রহ্ম যজ্ঞ, দেব যজ্ঞ, পিতৃ যজ্ঞ, নৃযজ্ঞ, পশু যজ্ঞ | প্রথমটি হলো পড়াশোনা ও ছাত্রদের দান , দ্বিতীয়টি হলো দেবগনকে অন্নদান, তৃতীয়টি হলো পিতৃ গনকে জল দান (তর্পণ), চতুর্থটি হলো অতিথিসেবা, পঞ্চমটি হলো পশুপাখি ও পতিতদের দান | অর্থাৎ কেউই বাদ গেল না | এইভাবে সমস্ত প্রানিকে নিজের মত দেখে তাদের সেবা করার ভাবই পঞ্চ যজ্ঞ থেকে দেখা যায় | বেদ এতটাই উদার | এই পঞ্চ যজ্ঞের মধ্যে দেব যজ্ঞ পড়ে | তারই ভেদ হলো ইষ্টি যাগ , পশু যাগ, সোম যাগ ইত্যাদি |
মহাপুরুষদের কর্ম ও বাণী
বেদের মূল ভাবের পর আসে মহাপুরুষদের কর্ম ও বাণী | রামায়ন ও মহাভারত এর উত্কৃষ্ট সোর্স | রামায়নে রাম পরের সুখের জন্য আত্মত্যাগ করেছিলেন | কতটা উদারমনা হলে এটা করা যায় ? আবার রাবন আত্মসুখের জন্য গোটা জগতের সবার সাথে যুদ্ধ করেছেন | এটা সংকীর্ণ মনের পরিচয় যা রামের ঠিক উল্টো | বাল্মিকি রামকে প্রশংসা আর রাবনকে নিন্দাবাক্য প্রয়োগ করে এটাই বলতে চেয়েছেন যে রামের মত হওয়াই বাঞ্চনীয | রাবণের মত নয় | রাম নিষাদ রাজ গুহকের পরম মিত্র ছিলেন | নিষাদরা নীচ জাতি | কিন্তু রাম গুহকের মিত্র ছিলেন | আবার এই রাম রাজ্যের হিতের জন্য নীচ জাতির শম্বুককে হত্যা করেছিলেন | না করলে দেবতারা রামরাজ্য ধ্বংস করে ফেলতেন | মুক্তমনারা রামের শম্বুক হত্যার সমালোচনা করেন কিন্তু নিষাদ রাজ গুহকের মিত্রতার কথা এড়িয়ে যান | রাম রাজ্যহিতের জন্য চিরকালের মত শম্বুক হত্যার কলঙ্ক (?) বহন করছেন এটাও তাঁর উদারতারই পরিচয় | এই রাম রাক্ষসদের লঙ্কাবিজয়ের পর নিজের ভাই বলেছিলেন | যে রাবন রামের স্ত্রী সীতাকে হরণ করেছিলেন তার ভাই বিভীষণ রাক্ষস হয়েও রামের পরম মিত্র ছিলেন | এটাও কি উদারতার পরিচয় নয় ? সুতরাং রামের চরিত্রের পরতে পরতে উদারতার নানা নিদর্শন ছড়িয়ে আছে | রামকে পুরানপুরুষ বলে বাল্মিকি পাঠককে রামের মত উদার হতে বলেছেন |
রামাযনেও কিন্তু ঘটনাবলী পূর্বনির্ধারিত ছিল | রাবন আর কুম্ভকর্ণ ছিলেন বৈকুন্ঠলোকের দুই দ্বাররক্ষক | তাদের সনতকুমার অভিশাপ দিয়েছিলেন | তারা তিন জন্ম নীচ অসুরযোনিতে কাটিয়ে আবার বৈকুন্ঠলোকে ফিরবে | এই তিনটি জন্ম হলো হিরণ্যকশিপু আর হিরন্যাক্ষ, রাবন আর কুম্ভকর্ণ, আরেকটা জন্ম আমার মনে পরছে না | এই তিন জন্মেই ওরা প্রবল বিষ্ণু দ্বেষী ছিল | তিন জন্মেই তারা বিষ্ণুর হাতেই মারা গেছিল | এই রকম ব্যবস্থা ছিল | রাবন-কুম্ভকর্নই শেষ জন্ম | সুতরাং মৃত্যুর পরে দুজনেই বৈকুন্ঠলোকে নিজের পদে ফিরেছিলেন এটা বলাই যায় | এ থেকেও বোঝা যায় যে যা দেখা যাচ্ছে এই জগতে সবই প্রকৃত নয়, অলিক| রাবন বহু শাপে শাপিত ছিল | এইসব শাপের কথা রামায়নের উত্তরকান্ডে পাওয়া যায় | এক অপ্সরাকে ধর্ষণ করার জন্য ওই অপ্সরার স্বামী শাপ দিয়েছিল যে রাবন কাউকে ধর্ষণ করতে গেলেই মরবে | এই কারণেই রাবন সীতাকে ধর্ষণ করতে পারে নি | সুতরাং দেখা যায় যে সবই পূর্বনির্ধারিত ঘটনা | সুতরাং রামের কোনো মাহাত্ম্য নেই | রাবণের পাপকার্য ও পরাজয় সবই শাপের কারণে হয়েছিল | বেদবতী রাবনকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে তিনি সপরিবারে ধ্বংস হবেন | সেই শাপেরই ফল রাবণের পতন | রাম নিমিত্ত মাত্র |
অন্যভাবে দেখলে দেখা যায় যে এই শাপগুলিও পূর্বনির্ধারিত ছিল | এগুলি না হলে রাবণের পতন হত না | সবই ওই বৈকুন্ঠলোকের ব্যবস্থা অনুযায়ী কার্য কারণ মাত্র | এভিন্ন কিছু না |
এইবার মহাভারতে আসা যাক | মহাভারতে রামায়নের মতই ভালো মন্দ উভয় চরিত্রই আছে |মহাভারতের কাহিনীকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে এই যে পরিদৃশ্যমান জগত এক স্বপ্ন ছাড়া কিছুই নয় | এই জগতে কোনো একটা স্থির নিয়মই নেই | আমি দেখাচ্ছি কিভাবে তা মহাভারতে দেখানো হয়েছে | মহভারতে অবৈধ সন্তান কর্ণ মহা দাতা, অবৈধ সন্তান বেদব্যাস মহান ঋষি আর শাস্ত্রকার, শুদ্র সন্তান বিদুর মহান নীতিকার, শুদ্র ধর্মব্যাধ মহান শাস্ত্রবেত্তা, ব্রাহ্মনসন্তান অশ্বত্থামা নির্দয় , নীচ শিশুঘাতী , ব্রাহ্মন দ্রোণাচার্য নিজ ক্ষুদ্র স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য একলব্যের অঙ্গুলিছেদন কারী ইত্যাদি | মহাপাপী দুর্যোধন মৃত্যুর পর স্বর্গে বিরাট পূজা পেয়েছিলেন অথচ পুণ্যাত্মা পাণ্ডবেরা নরকদর্শন করেছিলেন | এইসব মহাভারতের শেষে যুধিষ্ঠিরের স্বর্গারোহনের পরে দেখা যায় | গার্হস্থ্যাশ্রমে অবিবাহিত অবস্থায় থাকতে নেই : এই বিধানকে উড়িয়ে দিয়ে ভীষ্ম পিতামহ অবিবাহিত অবস্থায় পূজা পেয়ে এসেছিলেন | তিনিই যুধিষ্ঠিরের গুরু ছিলেন | এককথায় মহাভারত বেদের নিয়মগুলোকে উল্টেপাল্টে দিয়েছিল কিন্তু মূল ভাব একই রকম রেখেছিল | পরিদৃশ্যমান জগতে সবই সম্ভব | কোনো একটা স্থির নিয়ম নেই | যেমন স্বপ্নেও সবই সম্ভব, কোনো স্থির নিয়ম নেই | সুতরাং এই পরিদৃশ্যমান জগত এক স্বপ্ন বই কিছু না |
বেদ আমাদের আরো একটা শিক্ষা দেয় যে জ্ঞানীকে কোনো জাত, কর্ম, বৃত্তি, দৈহিক আকার দিয়ে চেনা যায় না | আমি এর প্রমান দিচ্ছি | মহভারতে অবৈধ সন্তান কর্ণ মহা দাতা, অবৈধ সন্তান বেদব্যাস মহান ঋষি আর শাস্ত্রকার, শুদ্র সন্তান বিদুর মহান নীতিকার, শুদ্র ধর্মব্যাধ মহান শাস্ত্রবেত্তা, ব্রাহ্মনসন্তান অশ্বত্থামা নির্দয় , নীচ শিশুঘাতী , ব্রাহ্মন দ্রোণাচার্য নিজ ক্ষুদ্র স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য একলব্যের অঙ্গুলিছেদন কারী ইত্যাদি | বেদব্যাস তো এত কুরূপ ছিলেন যে অম্বিকা চোখ বন্ধ করে তাঁর সাথে সঙ্গম করেছিলেন আর অম্বালিকা ভয়ে পান্ডুর বর্ণ ধারণ করেছিলেন |কিন্তু তিনি ছিলেন মহান ঋষি আর শাস্ত্রকার | অষ্টাবক্র ছিলেন অতি কুরূপ | তাঁর দেহ ভাঙ্গাচোরা ছিল | কিন্তু তিনি মহান ব্রহ্মজ্ঞানী ছিলেন |
মহাভারতের শুরুতে দেখা যায় যে যেসব অসুরেরা স্বর্গ লাভ করতে পারে নি , তারা পৃথিবীতে জন্মে অতি অত্যাচার শুরু করে | তাদের হত্যা করার জন্য দেবতারা পঞ্চপান্ডবের অবতার নেন | বিষ্ণু কৃষ্ণের অবতার নিয়েছিলেন | রাধা ছিলেন যোগমায়া | যেসব গোপীদের ও গোপিনিদের সাথে কৃষ্ণ লীলা করেছিলেন তারা সবাই যথাক্রমে স্বর্গের দেবতা ও অপ্সরা ছিলেন | কৃষ্ণের ১৬ হাজার স্ত্রীরা প্রত্যেকেই শাপগ্রস্তা অপ্সরা ছিলেন | বিষ্ণু তাদের বর দিয়েছিলেন যে তিনি তাদের স্বামী হবেন | এসবই আসল কাহিনী আরম্ভের আগের ঘটনা | পরে শেষের দিকে কৃষ্ণ এবং তার স্ত্রীরা আত্মহত্যা করে পুনরায় স্বর্গে ফিরে গিয়েছিলেন |অর্থাৎ যা যা মহাভারতে ঘটেছিল সবই পূর্বনির্ধারিত ছিল | এছাড়া এর কোনো অর্থই হয় না | এটা যেন এক বৃহত্তম স্টেজ ড্রামা | অভিনেতা-নেত্রীরা আগে থেকেই স্ক্রিপ্ট জানেন | সব আগে থেকে নির্ধারিত |
মহাভারতের কথায় অনিবার্যভাবে এসে পড়ে গীতার কথা | গীতা নিয়ে আজকাল খুব হই হই করছে হিন্দুওয়ালারা | কিন্তু সেই গীতায় কি লেখা আছে ? গীতায় কৃষ্ণ অর্জুনকে উপদেশ দিয়েছিলেন যে আত্মা মরেও না , মারেও না | যিনি আত্মাকে কর্তা হিসেবে জানেন তিনি ভুল জানেন | গীতার কর্মযোগ কি ? কর্মযোগ হলো “আমি ঈশ্বরের দ্বারা নিয়োজিত হয়ে কর্ম করছি” এই ভাবনা নিয়ে কর্তব্য কর্ম করা | কর্মযোগ হলো নিজের কর্তব্য কর্ম করে ফলের আশা না করা | অকর্তব্য কর্ম করতে বলা হয় নি | কর্তব্য করতে বলা হয়েছে | এছাড়া গীতায় কৃষ্ণ বলেছেন জ্ঞানীর লক্ষণ | জ্ঞানী ব্রাহ্মন, কুকুর, চন্ডালকে সমান জ্ঞান করবেন | অর্থাৎ জাতবর্ণ নিয়ে ভেদাভেদ চলবে না | কৃষ্ণ আরো বলেছেন কিভাবে তাঁকে পাওয়া যায় | তিনি বলেছেন যে বিষ্ণু সর্বভূতে জীবনরুপে, বলবনের দুরাকান্খাহীন বল রূপে বিরাজ করেন | যিনি এইভাবে বিষ্ণুর ধ্যান করেন তিনিই বিষ্ণু তথা কৃষ্ণকে পান | আজ কোন হিন্দুওয়ালা এইসব নিয়ম মানে ?
এর পরে আসে যোগবাশিষ্ঠ রামায়নের কথা | এতে তো সরাসরি বলা হয়েছে ব্রহ্ম সত্য জগত মিথ্যা | বশিষ্ঠদেব রামকে এই উপদেশ দিয়েছেন | এর পরে আসে অদ্ভুত রামায়নের কথা | তাতে রামও হনুমানকে একই উপদেশ দিয়েছেন |
এর পরে ধরুন মহাভারতের শান্তিপর্বের কথা | এখানে ধর্ম বিষয়ে উপদেশ দেয়া হয়েছে | এর মোক্ষ ধর্ম পর্বাধ্যায়ে বলা হয়েছে ধর্মের সাধারণ সংজ্ঞা কি ? যুধিষ্ঠির ধর্মের স্বরূপ জানতে চাইলেন ভীষ্মের কাছে | ভীষ্ম বললেন যে যার দ্বারা জীবের রক্ষা ও সমৃদ্ধি হয় তাই ধর্ম | সৌপ্তিক পর্বে যখন অর্জুন আর যুধিষ্ঠিরের বিবাদ হচ্ছিল তখন কৃষ্ণ ধর্মের এই একই সংজ্ঞা বলেন | এই ছোট্ট কথাটার বিরাট তাত্পর্য আছে | যার দ্বারা জীবের রক্ষা হয় ও সমৃদ্ধি হয় তাই ধর্ম | এখানে ধর্ম নির্ণয় করতে গেলে বিচার করে দেখতে হবে কোনটির দ্বারা জীবের রক্ষা হয় | সেটা নিরপেক্ষ ভাবে না করলে কখনই সঠিক নির্ণয় করা যায় না | শাস্ত্রই শেষ কথা নয় | নিজের চোখ খুলে দেখতে হবে কিসের দ্বারা জীবের রক্ষা ও সমৃদ্ধি হয় | সেটাই ধর্ম | কৃষ্ণ তো সৌপ্তিক পর্বে বলেই ফেললেন যে বেদে সব কথা লেখা নেই | ফলত কোনো গ্রন্থেই সব কথা লেখা থাকে না | তাহলে যারা বেদকে মানে তারা একপ্রকার অন্ধবিশ্বাসী | কারণ তারা এটা দেখছে না যে কিসের দ্বারা জীবের রক্ষা হয় , মঙ্গল হয় | শুধু অন্ধভাবে শাস্ত্রের আচার পালন করে চলেছে | এই প্রসঙ্গে ওই শান্তিপর্বে তুলাধার-জাজলির কাহিনী আছে | মহাত্মা তুলাধার বলেছিলেন যে শাস্ত্রের কথা অন্ধভাবে পালন করা ধর্ম নয় | যার দ্বারা জীবের মঙ্গল হয় তাই ধর্ম | মঙ্গল-অমঙ্গল বিচার করতে হবে | এই বিচার করতে গেলে স্থান-কাল-পাত্র দেখতে হবে | আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে | লোকাচার কখনই ধর্ম নয় | অর্থাৎ সামাজিক আচার ধর্ম নয় যদি না তার দ্বারা জীবের মঙ্গল হয় | অর্থাৎ অমঙ্গলকারী সামাজিক কুপ্রথা কখনই ধর্ম নয় | এইসব মহাভারতে লেখা আছে |
পুরানেও ধর্মের সংজ্ঞা দেয়া আছে | ব্রহ্মান্ড পুরাণে বলা আছে যে যা দ্বারা অভিষ্ট বস্তু লাভ হয় তাই ধর্ম | একই কথা | আমি পুনরাবৃত্তি করলাম না | বেদ এতটাই উদার যে সে মানুষকে ধর্ম নির্ণয়ের অধিকার পর্যন্ত দিয়েছে | আর কোন শাস্ত্র মানুষকে এই অধিকার দিয়েছে ? কোরান ? বাইবেল ? না তোরা-তালমুদ ?
বৈদিক সমাজব্যবস্থা
বেদের অতি উদার ভাব প্রকাশ পায় বৈদিক সমাজের ব্যবহারেও | বৈদিক সমাজে সবরকমের মানুষের আশ্রয় ছিল | চার বর্ণ : ব্রাহ্মন, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শুদ্রের পাশাপাশি ম্লেচ্ছ আর যবনকেও স্থান দেয়া হয়েছে | শাস্ত্রের বিধানের পাশাপাশি লোকাচারকেও অবশ্য পালনীয় বলা হয়েছে | যদিও লোকাচারকে ধর্ম বলা হয় নি |
এই সমাজে বৈধ ও অবৈধ সবরকম সন্তানের স্থান আছে | কর্ণ, বিদুর ও ব্যাসদেব অবৈধ সন্তান হলেও তাদের স্থান আছে | এই সমাজে যোগ্যতার নিরিখে স্থান নির্ণয় হত, বর্ণের ভিত্তিতে নয় | বিদুর শুদ্র ও অবৈধ সন্তান ছিলেন, কিন্তু তাঁর পান্ডিত্যের জন্য তাঁকে মন্ত্রী করা হয়েছিল | কর্ণ অবৈধ ও সুত সন্তান হলেও তাঁর অস্ত্র পারদর্শিতার জন্য দুর্যোধন তাঁকে অঙ্গরাজ্যের রাজা করেন | সুতরাং বলা চলে যে এটি ছিল সত্যিকারের যুক্তিবাদী সমাজব্যবস্থা |
বৈদিক সমাজে এমনকি নাস্তিক চার্বাকদেরও স্থান ছিল | এরা শুধুই ভোগ করত আর পরলোকে বিশ্বাস করত না | তাও বৈদিক সমাজ এদেরকে আশ্রয় দিয়েছিল | এ থেকে বৈদিক সমাজের উদারতা বুঝা যায় |
নারীর প্রতি আচরণ
এই সমাজে নারীদেরও স্থান ছিল যোগ্যতার ভিত্তিতে | যেসব নারীরা শাস্ত্র বিচারে পারদর্শিনী ছিলেন যেমন গার্গী, মৈত্রেয়ী, অপালা, মদালসা ইত্যাদি তাঁদের অধ্যাপনা করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল | যেসব নারীরা শাস্ত্র বুঝতেন না কেবল তাদেরই ঘরের কাজে লাগানো হত | যেসব নারীরা কুটিল ছিলেন কেবল তাদেরই পুরুষদের অধীন করে রাখার বিধান দিয়েছিলেন মনু | এই বিধান নিয়ে বামুরা খালি চেঁচায় | যেসব নারীরা উদার ছিলেন তাঁদের স্বাধীনভাবে বিচরণের অধিকার ছিল যেমন সুলভা | ইনি জাতিতে ক্ষত্রিয়া ও বৃত্তিতে পরিব্রাজিকা ছিলেন | রাজা জনকের সাথে এঁর শাস্ত্র বিচার হয়েছিল | মহাভারতে এর কাহিনী আছে | এ থেকে বুঝা যায় যে নারীদেরও সন্ন্যাস নেবার অধিকার ছিল | শিখিধ্বজ ও চূড়ালার কাহিনীতে (যোগবাশিষ্ঠ রামায়ন)দেখা যায় যে চূড়ালা নারী হয়েও রাজ্য শাসন করেছিলেন শিখিধ্বজের অবর্তমানে | ইনি যোগিনিও ছিলেন | এসবই বৈদিক সমাজের উদারতার পরিচয় |
আজকের হিন্দুওয়ালারা কি করছে
তারা বেদের উদার ভাবের ঠিক উল্টো কাজ করছে বেদের নামে | ধর্মের নামে জাতপাত ও মারামারি-হানাহানি ইত্যাদি তারা বজায় রেখেছে | তারা ধর্মের নামে ধর্মের মুখে এতটাই চুনকালি মাখিয়েছে যে ধর্ম শব্দটাই এখন শিক্ষিত সমাজে পরিত্যাজ্য | এদের কীর্তিকলাপ আর বিস্তারিত বললাম না কারণ সবাই জানে |
উপসংহার
শেষে এটাই বলব যে বেদ অতি উদারভাব আমাদের শিখায় | আজকের হিন্দুওয়ালারা যা করছে তা বেদের ঠিক বিপরীত | এইটা দিয়ে বেদের বিচার করলে বেদকে ভুল বুঝা হবে |
জানতাম এমন একদিন আসবে, যখন ধর্মের নামাবলী গায়ে লোকগুলো /
ধর্মের মুখে চুনকালি মাখাবে, উদার শান্তিপ্রিয় ধর্মকে দেখাবে রাক্ষসেরও অধম করে /
এইসব লোকগুলোকে শেষ করতে কামান বন্দুক লাগে না , লাগে যুক্তির এক কনা সাহসী আগুন /
ওরা পুড়তে পুড়তে শেষ হবে, আর আমরা হাত তুলে চেচাবো হুররে /
আসুন মুতাজিলিদের মত আমরাও বলি, ধর্ম ও যুক্তির সহাবস্থান সম্ভব /
যুক্তিই ধর্মকে প্রকাশ করে , বিশ্বাস নয় /
যুক্তিতে মিলায় ধর্ম, বিশ্বাসে বহুদূর |
২| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৪১
এম.এ.জি তালুকদার বলেছেন: লিংক-“এমএ জি তালুকদার ধর্ম নিয়ে যারা বাড়াবাড়ি করে-----” প্লিজ গড়বেন।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৩৭
এম.এ.জি তালুকদার বলেছেন: জানার মতো বলে সুন্দর করে পড়লাম,মন্তব্য করার জন্য নয়।