নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশের এক মাধ্যম মাত্র

হোমো সেপিয়েন্স অর্ক

আমি ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার জলজ্যান্ত এক পুরুষ।স্বাভাবিক মানবসন্তানের ন্যয় দুইটা হাত,দুইটা পা,দুইটা চোখ আর একটা চেহারা বিদ্যমান।

হোমো সেপিয়েন্স অর্ক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশে ক্রিকেট

২৩ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৩:৩৩

ভারতীয় উপমহাদেশে ধর্ম নিয়ে রাজনীতির প্রচলন অনেক পুরনো। ধর্ম যেহেতু প্রতিটা মানূষই ধারন করেন তাই এখানকার সুচতুর রাজনীতিবীদদের প্রধান টার্গেট এটা। আর ধর্মের পর উপমহাদেশের মানুষের কাছে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ক্রিকেট। তাহলে তারা ক্রিকেটকে কিভাবে রাজনীতিমুক্ত রাখেন, বলেন?

প্রথমে আসি জনপ্রিয়তার ব্যাপারে। অতিরিক্ত কোন কিছুই ভাল না। চিন্তা করেন তো সবাই যদি অতিরিক্ত ধন-সম্পদের মালিক হয়,তাহলে গরীব হবে কে? আর ধণীই বা কিভাবে বুঝবে বড় হবার স্বার্থকতা কোথায় এবং গরীবের ভিতরেও তো ধনী হবার বাসনা জাগবে না। তাই সমস্যাটা হছে ক্রিকেট এখানে অতিরিক্ত জনপ্রিয়তা পেয়ে গেছে।

একটা উদাহরন দেই। আমি তখন খুব ছোট। বোনের তিরস্কার,বাবা-মার বকা শুনেও বাংলাদেশের খেলা থাকলেই লেখাপড়া রেখে টিভির সামনে বসতাম আর খেলা শেষ করে তারপরে উঠতাম। সেটা হোক টেষ্ট কিংবা ওডিআই,কাউকে রিমোট ধরতে দিতাম না। টিভির রুমেও কেউ আসত না। খেলা শেষে জিজ্ঞেস করত কত রানে হারল,কি লাভ হল এই খেলা দেখে? তখন লাভ ক্ষতির হিসেব কষতাম না,তাকিয়ে দেখতাম রফিক-মাশরাফির বোলিং,গোল্লা-আফতাব-বাশারদের ব্যাটিং। আর সেখান থেকেই উঠে আসতে দেখেছি তামিম-রাজ্জাকদের। জাস্টিন কেম্প এর ক্যাচ হার্শাল গিবস এর দুপায়ের মাঝ দিয়ে তালুবন্দি করতে দেখেছি আজকের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে। ভাবুন তো আজকের দিনে সাকিবের মাথার উপর যদি গিবসের মত কোন সাউথ আফ্রিকান পা উঠিয়ে দিত তাহলে আপনারা তাকে সহ তার চৌদ্দগুষ্ঠির কি অবস্থাটাই না করতেন! এখন বাংলাদেশের খেলা থাকলে আর টিভির রুমে একা থাকি না। চারিদিকে থাকে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ। আর আমার ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ দুলাভাই সাকিবের অফফর্মের সময়ে পাশে বসে বিশ্লেষন করেন ‘টাকা বেশি হয়ে গেছে তো তাই খেলায় ডেডিকেশান নাই এখন’। উল্লেখ্য যে উনি কিন্তু ক্রিকেট বলতে শুধু চার-ছয় আর উইকেটটাই বুঝেন! আর আপনারা গাভাস্কারের কথা শুনে ম্যাশের ক্যাপ্টেন্সি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন অতিরিক্ত জনপ্রিয়তার প্রভাব।

আর রাজনীতি! তা তো স্পষ্ট। কিন্তু এটা ঠিক যে আশি শতাংশ মানুষের কাছে স্পষ্ট না। কারন আমরা যে হুযুগে বাঙ্গালি। উপমহাদেশে অন্য ধর্মাবলম্বীদের থেকে হিন্দু আর মুসলিমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই আমাদের রাজনীতিবীদেরা অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে তাদের ভারত(হিন্দুস্তান) পাকিস্তান(মুসলিম রাষ্ট্র) দুই দলে বিভক্ত করে দিয়েছেন। আর যারা বিভক্ত করেছেন তাদের একদল হচ্ছেন পাকি চেলা, যাদের বর্বরতা আমরা একাত্তরে দেখেছি। এদের কাছে নৈতিকতার থেকেও ‘মুসলিম-মুসলিম ভাই-ভাই’ বাক্যটি সবকিছুর ওপরে। আর আরেকদলের ভারতপ্রিতীর কথা আর নাই বললাম। কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্য যে আমার বাসার সামনের বিল্ডিং(যারা হিন্দু ভাড়া দেয় না) এর দোতলায় কয়েকজন যুবক গত বাংলাদেশ ভারত এশিয়া কাপ ফাইনালে ভারতের প্রতিটা ছয়-চার আর উইকেটে রিতীমত নৃত্যসহ বাজি ফুটিয়েছিলেন। আর ভারত পাকিস্তান ম্যাচে তো এরা সকলে রাজনৈতিক গুরুদের অনুসরন করে দুভাগে ভাগ হয়ে যান, হোক সেটা মিরপুর আর কোলকাতা। কিন্তু কষ্ট লাগে যখন দেখি মিরপুরে এমনটা হচ্ছে। আরে ভাই তোরা তোদের শত্রুদের ব্রিটিশ বলে গালি দিতে পারস কিন্তু লর্ডসের ব্রিটিশ পাবলিক দের ন্যয় ক্রিকেটের জয় হোক এই নীতিতে একটা ভাল শটের জন্য হাততালি না দিয়ে আফ্রিদি আর কোহলির জন্য গলা ফাটাস। হায়রে বাংগালি!

আর এই বাঙ্গালিদের রিতী নির্ধারক! খুব হতাশ হয়েছি আপনার দূরদর্শিতার অভাব দেখে। জানি আপনার ক্ষোভ আছে পাকিদের প্রতি, আর এটাও জানি আপনি একজন ক্রিকেট পাগল মানুষ। কিন্তু আপনি কেন ভুলে যা্ন ওরা তো শুধু আপনার একার শত্রু না, পুরো বাঙ্গালি জাতির শত্রু। আর আপনার বিপক্ষের শক্তি যারা কিনা আপনার ঘরের খাবার খেয়ে ওদের দোসর হয়েছিল বারবার, তাদের বীজ তো এখোনো রয়ে গেছে এ বাংলায়। তাই গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন থাকা অবস্থায় ওদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে এসে কেন ওদের আপনার ওপর লেলিয়ে দিচ্ছেন? আপনার ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা প্রকাশের অন্যতম উপায় ছিল পাক-বাংলা ম্যাচে না গিয়ে ফাইনালে মাঠে যাওয়া। তাহলে সাপও মরত আর লাঠিও ভাঙ্গত না। আর একটা কথা,আপনার ভারতের প্রতি ভালবাসাও একটু দৃষ্টিকটু লাগে। হ্যাঁ এটা ঠিক ওরা ৭১ এ আমাদের সাহায্য না করলে আজ আমি আপনি থাকতাম না,কিন্তু ওদের এর পিছে স্বার্থ ছিল যা এখোনো উশুল করছে ওরা আর ছিল বঙ্গবন্ধুর সাহচর্য লাভের আশা। দেখেন আপনার এই সামান্য অদুরদর্শিতার কারনে ওরা কতটা সফল হয়েছে। ওরা এই চক্রান্ত অনেক আগের থেকেই করছিল,আপনার হুযুগে বাংগালীদের নাচিয়ে মিডিয়াকে সাথে নিয়ে সুধীর নাটক,বশির নাটক,ট্রল নাটক অনেক পরিকল্পনা ছিল ওদের। দেখেন তো এই ক্রিকেটকে ইস্যু করেই ভারতীয়দের সাথে আমাদের কতটা বৈরী সম্পর্কের সৃষ্টি করে দিয়েছে,যার ফল হয়ত দেখতে পেয়েছেন ইডেনে পাক-বাংলাদেশ ম্যাচে আরেক বাঙ্গালীরা পাকিদের বেশি সমর্থন দিয়েছে। আর ট্রল নাটক সাজিয়ে সর্বশেষ বলি করল নির্দোষ তাসকিন কে। ওরা কিন্ত দুই বাংলায় দ্বন্দ সৃষ্টিতে শতভাগ সফল। তাই আশা করব সময় থাকতে সচেতন হবেন আপনি।

বর্তমানে ক্রিকেট দেখে না এমন মানুষ হয়ত এক শতাংশও খুঁজে পাওয়া যাবে না এই বাংলায়। তাই তাদের প্রতি অনুরোধ আমার দুলাভাইয়ের ন্যয় না বুঝে নাক টা একটু কম গলাইয়েন প্লিজ। সাকিব-তামিম-ম্যাশরা মাঠে আপনার আমার থেকে হাজারগুন ভাল খেলে,খেলতে চায় এবং ভাল বুঝেও। তাই আপনি বেশি বুঝে ওদের ক্যারিয়ারটা শেষ করে দিয়েন না। হ্যাঁ বকেন,কিন্তু ওদের শুনিয়ে বকার কি দরকার আর বকতে বকতে ওদের বাপ মা আর বউ-বোনদেরই বা কেন টেনে আনেন। আর ভাই ম্যাশের তুলনা ম্যাশ নিজেই। এতোটা হু্যুগে হলে কিভাবে হয়। এই ম্যাশের জন্য আজ আপনি এই বাংলাদেশকে পেয়েছেন,নয়ত আগের সেই সৈয়দ রাসেল-রাজ্জাকদের যুগেই আপনাকে পড়ে থাকতে হত। গাভাস্কারের ন্যয় হিংসুটে প্রতিপক্ষরা তো আমাদের উন্নতিকে মেনে নিতে পারে না,তাই বলে আপনাকে লেলিয়ে দিল বলে আপনিও চটে গেলেন। একবার ভেবে দেখেন ম্যাশের সাথে টিমের সবার সম্পর্ক কেমন! এবার গাভাস্কার আর আপনাকে একটা প্রশ্ন করি- আপনার নির্দোষ ভাইকে কেউ যদি খুনী বলে ফাঁসি দিয়ে দেয়,আপনি কি তাহলে তার পরের ম্যাচটা খেলতে পারতেন? তাই এশিয়া কাপে টাইগারদের একটা টি-শার্টের উদ্ধৃতাংশের স্মরন করেই বলছি-ধৈর্য্য ধরেন, “Best is yet to come!”

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.