নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছায়া নয়, আলো ...

আরমান আরজু

সত্য ও অসীমের পথে

আরমান আরজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

কবি আল মাহমুদ’র "পথের কথা"

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:২০

কবি আল মাহমুদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই লেখাটি শুরু করছি।

”তাহলে অদৃশ্য মানো, অদৃষ্টেই মেলে দাও পাখা
মানো যে নিয়ন্তা তিনি, তার হাতে জয়-পরাজয়।”
(শতাব্দীর শেষ রশ্মি, কাব্যগ্রন্থ- দ্বিতীয় ভাঙন)

জানা যায় সাহিত্যিক জীবনের প্রারম্ভিকায় কবি আল মাহমুদ বাম ঘরানার ছিলেন যাদের নীতি হল অদৃশ্যে অবিশ্বাস। ২০০০ সালে ’দ্বিতীয় ভাঙন’ কাব্যগ্রন্থ দিয়ে কবি আমাদের বুঝাতে চেষ্টা করলেন যে তিনি এখন অদৃশ্যে বিশ্বাসী (!)। আমি জানি না অদৃশ্যে কীভাবে বিশ্বাস করা যায়। কবি যদি ’ইসলাম’ ধর্মের মূল বিষয়কে অদৃশ্যে বিশ্বাস বলে প্রচার করতে চান তবে আমার মতে এটি তাঁর চরম সীমাবদ্ধতা। আপনি যদি কবিতার মাধ্যমে সত্যের প্রচার করতে চান কোন অসুবিধা নেই তবে আগে দেখতে হবে আপনার ভেতর সত্য আছে কিনা। কবি কাজী নজরুল ইসলামের ’ঈশ্বর’ কবিতার অংশটুকু পড়ুন-

”সৃষ্টি রয়েছে তোমা পানে চেয়ে তুমি আছো চোখ বুঁজে,
স্রষ্টারে খোঁজো- আপনারে তুমি আপনি ফিরিছ খুঁজে!
ইচ্ছা-অন্ধ! আঁখি খোলো, দেখো দর্পণে নিজ-কায়া,
দেখিবে, তোমারি সব অবয়বে পড়েছে তাঁহার ছায়া।”

পংক্তিগুলো পড়লেই বুঝা যায় যিনি লিখেছেন তিনি সত্য বুঝেই লিখেছেন। সীমাবদ্ধতার দেয়ালে বন্দি থাকলে ’মানো যে নিয়ন্তা তিনি, তার হাতে জয়-পরাজয়’ নামক পংক্তিগুলো ব্যতীত আর কী-ই বা আশা করা যায়।

”আমার শুভানুধ্যায়ীরা বলেন, তোমার সব ঠিক আছে। এমনকি কবিতাও।
কিন্তু অসুবিধে হচ্ছে তোমার পথ নিয়ে। তোমার পথটাই অস্পষ্ট।
.......
আমার পথ এখন মাটি থেকে আকাশের দিকে মোড় নিয়েছে।
ঐ তো মেঘ, বৃষ্টি ও বিদ্যুৎচমকের মহড়া দেখছি। দেখছি ধূসর নিষ্প্রাণ
চন্দ্রমন্ডল। দুনিয়ার চেয়ে দিগুণ পরিধির সব গ্রহ নক্ষত্র। দেখছি
পরম নিশ্চিত শূন্যতার ধারণার ভেতর জ্বলে ওঠা এক রশ্মির আভাস।
সব ভরভর্তি, সব নিশ্চিত ও নিয়ন্ত্রিত। এইতো পথ
অস্পষ্টতা কোথায়? কেউ আমাকে দেখিয়ে দিন।”
(পথের কথা, কাব্যগ্রন্থ- নদীর ভিতরে নদী)

দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে বাধ্য হচ্ছি কবি এখনো অস্পষ্টতার চোরাবালিতেই আটকে আছেন। মাটি, আকাশ-এর মতো রূপক শব্দগুলো ব্যবহার করে কবি নিজেই প্রমাণ করে দিয়েছেন যে তাঁর পথটা এখনো অস্পষ্ট। আকাশে মেঘ, বৃষ্টি ও বিদ্যুৎচমক কিংবা ’শূন্যতার ধারণার ভেতর জ্বলে ওঠা এক রশ্মি’ সবাই দেখতে পায়। একজন কালজয়ী কবিও যদি আর দশটা মানুষের মতো দেখেন তবে হতাশা ছাড়া আমাদের আর কিছু থাকে না।

”বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি
চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি
ভূলোক দ্যুলোক গোলোক ভেদিয়া,
খোদার আসন ’আরশ’ ছেদিয়া
উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব-বিধাত্রীর!”
(বিদ্রোহী, কাজী নজরুল ইসলাম)

কবি কাজী নজরুল ইসলাম উপরোক্ত পংক্তিগুলোর ভেতর নিজের গন্তব্যের কথাই লিখেছেন মননশীলতার ছাপ রেখে আর আল মাহমুদ তার পথের কথা লিখেছেন গ্রাম্য মানুষদের সরলতার মতো করে। কবিতায় সরলতা থাকবে তাই বলে স্বকীয়তাকে বিসর্জন দিয়ে নয়।

কবি কবিতা লিখবেন কিন্তু স্কন্ধে তার সাইনবোর্ড ঝুলবে কেন? কেন তিনি সুবিধাবাদীদের কাতারে থাকবেন? পুরো বিশ্বের কবি-সাহিত্যিকদের দিকে দেখুন, হয় সুবিধাবাদী নয়তো সাইনবোর্ডধারী (ব্যতীক্রমও আছে)। অসামান্য প্রতিভা, অসাধারণ মেধার কবি আল মাহমুদ ইচ্ছে করলে নিজেকে প্রশ্নোর্ধ্ব স্থানে নিয়ে যেতে পারতেন। নদীর ভিতরে নদী কবিতায় তিনি কিন্তু জ্বলে উঠেছিলেন-

”নদীর ভিতরে যেন উষ্ণ এক নদী স্নান করে।
তিতাসের স্বচ্ছজলে প্রক্ষালনে নেমেছে তিতাসই।
নিজের শাপলা লয়ে খেলে নদী নদীর ভিতরে
ঠাট্টা বা বিদ্রুপ নেই, নেই শ্যেনচক্ষু, নেই চারণের বাঁশি।
(নদীর ভিতরে নদী, কাব্যগ্রন্থ- নদীর ভিতরে নদী)

লোক লোকান্তর, কালের কলস, সোনালি কাবিন এর মতো কাব্যগ্রন্থ বাংলা সাহিত্য হয়ত আর পাবে না। কিন্তু মননশীলতার যে জায়গাটুকু ছিল সেটাও যে কলুষিত হয়ে গেল এর দায়ভার কার? কবির না পারিপার্শ্বিকতার?

”হৃদয়ের ধর্ম নিয়ে কোন কবি করে না কসুর।”
(সোনালি কাবিন)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:০১

রাজীব নুর বলেছেন: একটা মানুষ ভিন্নমতের বলে তার মৃত্যুতে কষ্ট হবে না, এটা কেমন কথা? মৃত্যু কিন্তু সবকিছুর
ঊর্ধ্বে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.