![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গ্রন্থালোচনাঃ
বই- বিশ্ব সাহিত্য ভাষণ-১ঃ মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি
লেখক- মহিউদ্দিন মোহাম্মদ
ধরণ- জীবনী, দর্শন ও বিশ্ব সাহিত্য
প্রকাশক- জ্ঞানকোষ প্রকাশনী
প্রকাশকাল- ফেব্রুয়ারি ২০২৫
পৃষ্ঠা- ১৫৯
মুদ্রিত মূল্য- ৪০০ টাকা
বইটি পড়ার পূর্বে আমার যে সন্দেহ ছিল তা-ই প্রমাণিত হল। মতবাদ কিংবা ধর্ম এবং অধ্যাত্মবাদ বিষয়ে জারীর তাবারীর অনুবাদ হতে শুরু করে এ পর্যন্ত পুরো পৃথিবীতে যা লেখা হয়েছে সবই এক কথায় অন্ধের হস্তি দর্শন। এ হস্তি দর্শনকে কেন্দ্র করে প্রাচ্য কিংবা পাশ্চাত্যের শিক্ষিতরা ফেঁদে ফেললেন আরেক গন্ডার দর্শনের গালগপ্পো। ফলাফল, মুখরোচক কাহিনী কিংবা আষাড়ে রচনার আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে সত্যদর্শন। এ মুখরোচক কাহিনীর কাতারে নতুন করে প্রবিষ্ট হল জনাব মহিউদ্দিন মোহাম্মদের বিশ্ব সাহিত্য ভাষণ-১ঃ মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি।
বলাবাহুল্য, পঠন আর অনুভব এক জিনিস নয়। ’আম মিষ্টি’ পড়লেই আমের মিষ্টতা কখনো বুঝা যাবে না যতক্ষন না একে ভক্ষণ করা হচ্ছে। তেমনি অনুভব শক্তির অনুপস্থিতিতে হস্তি দর্শনের বই পড়ে রুমি আর তাঁর গুরু শামস তাবরিজির মধ্যে সমকামিতার সন্দেহ পোষণ করা গেলেও (পৃষ্ঠা ৭৪) তাদের হৃদয়ঙ্গম করা যাবে না। নাবালক বাচ্চাদের সমকামিতার গল্প বললে কেউ বিশ্বাস করবে? সুফির সাথে তো সমকাম যায় না। যিনি সুফি তিনি কখনো সমকামি নন। সমকামি কখনো সুফি হতে পারে না। সুফিই চিনে না আবার আসছে রুমিরে চিনাইতে! হস্তি দর্শনের ইতিহাস প্রচার করে শিক্ষিত সমাজের কাছে হয়ত বাহবা পাওয়া যেতে পারে, প্রজ্ঞাবানদের কাছে নয়। সুফিরা যোনিকামি, সমকামি কিংবা ভোগবাদী নয়, তারা কামপ্রবৃত্তিকে প্রেমপ্রবৃত্তিতে রূপান্তর করেন আর ভোগকে উপভোগ দ্বারা নিয়ন্ত্রন করেন। সুফিদের আনাগোনা কমে যাওয়া ও নীরবতায় পৃথিবীতে কামপ্রবৃত্তিবাজদের বাড়বাড়ন্ত হয়েছে, যার ফলে প্রজ্ঞাবান কমে গেছে আর অথর্ব, ভোগবাদী ও কামুকের সংখ্যাধিক্য হয়েছে। রুমির ’মুদি দোকানদার এবং তোতাপাখির’ গল্পটি লেখককে আবারো ভাল করে পাঠ করার পরামর্শ দেয়া যাচ্ছে।
খানকাহ কিংবা খানকি দুটোই ফার্সি শব্দ (খানগাহ, খানগী)। লেখক উল্লেখ করেছেন খানকি নাকি বাংলা শব্দ এবং শব্দটির উৎপত্তি নাকি খানকা থেকে (পৃষ্ঠা ৫৯)! ফার্সি শব্দ খানগাহ অর্থ বৈঠকখানা। এখন কোন বেশ্যাবাজ কিংবা মাগিবাজ যদি বেঠকখানায় খানকি তথা মাগিদের দিয়ে মাগিবাজি করায় তার দায় কেন পীরদের উপর বর্তাবে? বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ছাত্ররাজনীতির মহড়া দেখে কেউ যদি রটিয়ে দেয় যে বিশ্ববিদ্যালয় মানেই হল ছাত্ররাজনীতির আখড়া, হবে? যিনি সুফি/শিক্ষক তিনি কখনো মাগিবাজ হতে পারেন না। মাগিবাজ কখনো সুফি/শিক্ষক হতে পারে না। সুফিরা আসলে কী করে সেটা আগে জানার চেষ্টা করেন। শহরের পরিচিত কোন ডাকাত কিংবা ভন্ড কোট-টাই পরে বই বগলদাবা করলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হয়ে যায় না। শ্রেণীকক্ষে লেকচার দিতে গেলেই তার পান্ডিত্যের প্যান্ট খসে পড়বে। তেমনি কোন খানকিবাজ কিংবা ভন্ড জোব্বা-পাগড়ী পড়লেই সুফি হয়ে যায় না। দরবারে বসে আল্লাহর বাস্তব পরিচয় দিতে গেলেই তার খানকিবাজির লেবাস খুলে যাবে। একসময় পারস্য, বাগদাদ আর ভারতে খানগাহ কেন্দ্রিক দেহতত্ত্বের জ্ঞানচর্চার প্রসার ছিল। ইরানের শিয়ারা আর ইরাকের সুন্নীরা সেগুলো ধ্বংস করে ফেললেও ভারতের মন্দিরগুলোতে এখনো এগুলোর প্রমাণ পাওয়া যায়। মসজিদ-মন্দিরগুলো জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র না হয়ে হয়ে গেছে প্রার্থনা-পূজোর আখড়া। এজন্যই পৃথিবীতে আর প্রজ্ঞাবানরা আসেন না, আসে অন্ধ, শিক্ষিত নিরীশ্বরবাদী আর পূজোরীরা।
মিস্টিসিজম কিংবা ধোঁয়াশাবাদ শব্দগুলো শিক্ষিতদের তৈরী, এর সাথে সুফিদের কোন সম্পর্ক নেই। সুফিদের কোন লিটারেচারও নেই, এটাও ঐ হস্তি দর্শন মার্কা শিক্ষিতদের বানানো। নিজে ধোঁয়াশায় আচ্ছন্ন থেকে জগতের সবকিছুকেই ধোঁয়াশাবাদ তকমা দিয়ে দেবেন এটা কোন প্রজ্ঞাবানের কাজ নয়। বইটির পৃষ্টা ২০ এ লেখক জানাচ্ছেন, ’প্রাচীনকাল থেকে মানুষ আধ্যাত্মিক বোধের কথা বলে আসছে কিন্তু জিনিসটা কী তা কেউ জানাচ্ছে না।’ আর এ অজানা থেকেই কি ধোঁয়াশাবাদ শব্দগুলোর উৎপত্তি? আমি জানি না, জানার চেষ্টাও করলাম না, তাই ওগুলো ধোঁয়াশাবাদ? আন্তর্জাল কিংবা ইন্টারনেট একটি শক্তির নাম। হ্যাঁ, মানবের অত্যুৎকৃষ্ট উদ্ভাবন। আন্তর্জাল কিংবা ইন্টারনেটের তরঙ্গ কি দেখা যায়? আমার মোবাইলে ইন্টারনেটের সংযোগ আছে কি নেই এটি বুঝার উপায় কী? সবাই বুঝে। মোবাইলে ইউটিউব কিংবা অন্যান্য কিছু চললেই বুঝা যাবে ইন্টারনেটের সংযোগ আছে। মোবাইলে সমস্যা থাকলে ইন্টারনেটের তরঙ্গবন্যা বাতাসে ভেসে বেড়ালেও আপনার লাভ নেই। ইউটিউব চলবে না। আগে মোবাইল ঠিক করতে হবে। ইন্টারনেটের সংযোগ কোন ফ্রি বিষয় নয়। আপনাকে এর মূল্য দিতে হবে। আবার এ সংযোগ যেখানে-সেখানে পাওয়াও যাবে না। প্রতিষ্ঠান আছে। আধ্যাত্মিক বোধ একটি শক্তির নাম যা পুরো মহাবিশ্বে বিরাজমান। পেতে হলে দরকার হবে একটি পরিশুদ্ধ ক্বলব তথা অন্তর। আধ্যাত্মিক বোধও কোন ফ্রি বিষয় নয়। এরও মূল্য দিতে হবে। তবে অর্থ নয়, নিখাদ প্রেম। যেখানে-সেখানে এ আধ্যাত্মিক বোধ পাওয়াও যাবে না। সুফিদের দরবার আছে। প্রক্রিয়া আছে। সাধনা ও ত্যাগের বিষয় আছে। পুরো পৃথিবীর সবগুলো বই পড়ে পড়ুয়া রেকর্ড গড়া গেলেও প্রেম, জ্ঞান, প্রজ্ঞা ইত্যাকার কোন উপত্যকা-ই পাড়ি দেয়া যায় না। আধ্যাত্মিক বোধ লিটারেচারের পাতায় পাওয়া যাবে না, পাওয়া যাবে নিজের অন্তরে। কোরআন এমনি এমনি বলেননি,
”নিশ্চয় আমরা জিকির (সংযোগ) নাজিল করি এবং নিশ্চয় আমরাই উহার জন্য সংরক্ষণকারী” (১৫ঃ৯),
”(ঐ) দিন নাই কোন মূল্য ধন-সম্পত্তির এবং সন্তান-সন্ততির, একমাত্র যে আল্লাহর কাছে একটি পরিশুদ্ধ অন্তর নিয়ে উপস্থিত হবে” (২৬ঃ৮৮-৮৯)।
লেখক রুমির মসনবি থেকে ’রাজা ও দাস-বালিকার প্রেম’ নামক একটি গল্পের বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন ’গল্পটি মূলত সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছায় হয় বা আল্লাহর ইচ্ছা না থাকলে মানুষ সফল হতে পারে না-এমন ধর্মীয় বার্তার রি-ইনফোর্সমেন্ট’ (পৃষ্ঠা ৯০)। গল্পটি রুমির হোক বা অন্য কোথাও থেকে ধার করা হোক, সেটি বিষয় নয়, বিষয় হচ্ছে লেখক আমাদের ভুল বার্তা দিচ্ছেন। আধ্যাত্মিক বোধ না থাকলে যা হয় আর কি। অবশ্য আমি লেখকের দোষ দিচ্ছি না। যার যতটুকু জ্ঞান তিনি ততটুকুই পরিমাপ করতে পারবেন। গল্পটির একেকটি চরিত্র আমাদের এ দেহঘড়ির একেকটি ইন্দ্রিয় (আরবীতে লতিফা)। সেখানে ক্বলব (আত্মা) আছে, রুহ (পরমাত্মা) আছে, নফস (প্রবৃত্তি) আছে, দুনিয়া (মায়া) আছে। জাগতিক মোহ হতে কীভাবে প্রবৃত্তিকে আল্লাহমুখী করা যায় সেটাই রূপক আকারে গল্পটিতে বর্ণিত হয়েছে। রূপকের জ্ঞান থাকলে সবাই বুঝতে পারতো যে কোরআন বর্ণিত আবদুহু (খিজির নামটি কোরআনে নেই) কোন বালকের গলা কাটেন নি।
বেদ, কোরআন ইত্যাদি মহাগ্রন্থ কিংবা মহামানবদের লিখিত গ্রন্থগুলো সব দেহতত্ত্বের রূপক বর্ণনার আড়ালে আমাদের সত্যদর্শনের আহ্বান জানায়। সত্যদর্শন কিংবা আত্মদর্শন অর্থই হল সৃষ্টিকর্তার গুণে গুণান্বিত হওয়া। জাগতিক সর্বপ্রকার মোহ হতে নিজেকে সংযমশীল রাখা। বলা সহজ কিন্তু বাস্তবে রূপ দেয়া কঠিন একটি কাজ। যার দৃষ্টান্ত হচ্ছেন সুফিরা। অথর্বরা মহাগ্রন্থ গুলোর ব্যাখ্যাশাস্ত্রের নামে বিভ্রান্তি ও গোঁজামিল পাকিয়ে রেখেছে। আর তাই কোরআন বর্ণিত দেহতত্ত্বের চাঁদ-সূর্য হয়ে গেছে সৌরজগতের চাঁদ-সূর্য। আর ভুলে ভরা এসব ব্যাখ্যাশাস্ত্রের উপর গবেষণা করে কেউ কেউ প্রসব করে আরো জঘন্য গো-আবর্জনা। ’স্যাটানিক ভার্সেস’ হচ্ছে এর অন্যতম একটি উদাহরণ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৩৬
রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম।
ধন্যবাদ।