নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শব্দ শ্রমিক! কেবলই গেঁথে যাই শব্দের মালা।

অরণ্য মিজান

শব্দ শ্রমিক! কেবলই গেঁথে যাই শব্দের মালা।

অরণ্য মিজান › বিস্তারিত পোস্টঃ

এসএমই ধোকায় এন্টারপ্রেনর!

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪৮

সাম্প্রতিক কালে 'এসএমই' শব্দটি আকাশে বাতাসে সর্বত্রই ভাসে। দাতা, ত্রাতা, সরকার, রাজনীতিবীদ, সূশীল সমাজ,আমজনতা সবাই ঐক্যমত যে এসএমই খাতের উন্নয়ন ছাড়া আমাদের মুক্তি নাই, সঙ্গত কারণেই এই মুক্তির লক্ষ্যে প্রচেষ্টারও কোন কমতি নাই, মাঝে মাঝেই এখানে সেখানে সাফল্যের হাঁসিরও ঝংকার শোনা যায়!
ভালই তো!!
ভাল না!?
এসএমই এবং এন্টারপ্রেনর শব্দ দুটি বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত। বিশ্বব্যাপী এসএমই শব্দটি ব্যবহৃত হয় রিপোর্টিং এর উদ্দেশ্যে লগ্নী পুঁজি ও নিয়োজিত মানব সম্পদের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে। ঐতিহ্য গত ভাবে ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতাদের বোঝাতে এন্টারপ্রেনর শব্দটি ব্যবহৃত হলেও সাম্প্রতিক কালে শব্দটি নতুন অর্থে নতুন মাত্রায় ব্যবহৃত হয়। এন্টাপ্রেনর বলতে বোঝান হয় বিশেষ করে সেই সব ব্যক্তিকে যারা ঝুঁকি নিয়ে অথবা নিজস্ব মেধায় ঝুঁকি প্রশমিত করে সমস্যাকে লাভ জনক আর্থিক সম্ভাবনায় অথবা বর্তমান সমাধানকে সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে আরও সহজ বা উপকারী সমাধানে রূপান্তর করে অথবা প্রথাগত কোন কাজকেই স্বাধীন ভাবে জীবন ধারণের মাধ্যমে পরিণত করে। সাম্প্রতিক দশক গুলোতে এই এন্টারপ্রেনরদের ভূমিকা ও সাফল্য এতটাই জোরালো যে অনেকেই বলে থাকেন বর্তমান অর্থনীতির চালক ও নিয়ন্ত্রক এই এন্টারপ্রেনরগন। এই বোধোদয় থেকে বেশীর ভাগ দেশই তাদের আর্থিক ও অর্থনৈতিক নীতি কাঠামোসহ উন্নয়ন অবকাঠামো এন্টারপ্রেনর বান্ধব হিসেবে ঢেলে সাজাচ্ছে, বিশেষ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বিকাশমান 'মিডল ক্লাস' এর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নয়নে এন্টারপ্রেনর উন্নয়ন এখন বহুল পরীক্ষিত ও সফল নীতি হলেও অজ্ঞাত জাদুর ঘোরে আমরা এখনও উল্টো পথে হাঁটছি। যদিও অর্থ গত ভাবে এসএমই ও এন্টারপ্রেনর শব্দ দুটির ভিন্ন অর্থ এবং ভিন্ন বিষয়ে ব্যবহৃত হলেও অজ্ঞাত কারণে বাংলাদেশে শব্দ দুটি প্রায় ক্ষেত্রেই পাশাপাশি ব্যবহার করা হয়। সবচেয়ে দু:খজনক বিষয় আমাদের নীতি কাঠামোতে এই শব্দ দুটি ব্যবহৃত হয় অর্থহীন ভাবে অথবা কুমতলবে। প্রায়ই এন্টারপ্রেনর উন্নয়নের নামে মাঝে মাঝে এসএমই খাত এর নানা তথ্য উপাত্তের খিচুড়ি বিলানো হয় যার সাথে এন্টারপ্রেনরদের কোন সম্পর্ক নেই। বাংলা সত্যি হল বাংলাদেশে এন্টারপ্রেনরদের জন্য এখন পর্যন্ত কোন প্রকার ব্যাংকিং বা আর্থিকসহ কোন প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক সেবার কোনই সুযোগ নেই।
আমাদের নীতি অবকাঠামোতে এন্টারপ্রেনর উন্নয়ন আর এসএমই উন্নয়ন একই অর্থে ব্যবহৃত হয়! বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই নীতিমালা অনুযায়ী এই খাতে ঋণ প্রাপ্তির যোগ্য, "Real entrepreneurs who are directly involved in SME sector". আর যে সমস্ত ব্যাংক এসএমই খাতে ঋণ দেয় তাদের নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী এই খাতে ঋণ প্রাপ্তির নূ্যনতম যোগ্যতা হল কম পক্ষে ১/২ বছর লাভ জনক ভাবে ব্যবসা পরিচালনার অভিজ্ঞতা! এই নিয়মে আর যাই হোক কোন এন্টারপ্রেনর ঋণ পাওয়ার কথা নয় বাস্তবে কেউ পায়ও না। তত্ত্ব অনুযায়ী ৮০% এর বেশী এন্টারপ্রেনর প্রথম বছর পার করতে পারে না, খুব অল্পই দ্বিতীয় বছর পার করে, আর ক্ষুদ্র অংশই লাভ জনক অবস্থায় পৌছায়। নানা বন্ধুর পথ পারি দিয়ে অসীম সাহসী ও সৌভাগ্যবান এন্টারপ্রেনর যখন লাভের মুখ দেখে তখনই এই লাভে ভাগ বসাতে টিয়া হিসেবে ব্যাংক মহাজন হাজির হয় এসএমই উন্নয়নের নামে। প্রকৃত পক্ষে এসএমই খাতে ব্যাংক গুলির ঋণ দেবার কারণ কম ঝুঁকিতে উচ্চ সূদ আয়ের লোভ, এখানে নীতি বা মূল্যবোধের বালাই নাই।

দাতাগোষ্ঠী থেকে শুরু করে সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক, মহাজন ব্যাংক, নানা নামের নানা ঢং এর আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সবারই নজর এখন এসএমই এর দিকে। কিন্তু সব এসএমই এর দিকে নয়, শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠিত ও লাভজনকভাবে পরিচালিত এসএমই এর দিকে। যারা অনেক বন্ধুর পথ পারি দিয়ে এখন একটা সুবিধাজনক অবস্থায় এসেছে তাদের লাভে ভাগ বসানোর জন্যই এতো আয়োজন। বাংলাদেশের এসএমই খাতের উন্নয়নের জন্য দাতা ও বন্ধুরা মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প হাতে নিয়েছে যেমন, এডিবি ১২৬.৬৭ মিলিয়ন ডলার, প্রকল্প নং-৩৬২০০, আগস্ট ২০০৯। প্রকল্পের মেয়াদ অক্টোবর ২০০৯ হতে সেপ্টেম্বর ২০১২ । এই প্রকল্পে এডিবি ৭৬ মিলিয়ন ডলার দেবে ৮ বছরের গ্রেস পিরিয়ড সহ ৪০ বছরে পরিশোধযোগ্য ঋণ হিসাবে। যার সূদের হার গ্রেস পিরিয়ডে ১% এবং অবশিষ্ট সময়ের জন্য ১.৫% । স্বল্প সুদের কারণে দৃশ্যত এটি একটি মহৎ উদ্যোগ মনে হলেও এর আসল মোজেজা অন্য জায়গায়। কারণ এই ঋণ ডলারে পরিশোধ করতে হবে। আর অতীত অভীজ্ঞতানুযায়ী টাকার অবমূল্যায়নের ধারাবাহিকতায় আগামী ৪০ বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান বর্তমানের অর্ধেকেরও নীচে নেমে আসবে। বর্তমান বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থার কারণেই তা অনিবার্য। ফলে গৃহীত অর্থের বহুগুণ বেশী পরিশোধ করতে হবে ভবিষ্যতে। শুধু কি তাই! এই ঋণের সাথে বিনামূল্যে আরও আছে হাজারো শর্তের বেড়াজাল। এই ঋণ বা বিনিয়োগের আসল লক্ষ্য মুনাফা কামানো নয়, শর্ত দেবার ক্ষমতা অর্জন। পুঁজি’র সুবিধা মত সবকিছু সংস্কার, বদল করার শর্ত। সবধরনের পুঁজি যাতে নির্বিঘ্নে কারবার করতে পারে তার ব্যবস্থা করার ক্ষমতা অর্জন। বিশ্বব্যাংকের সূত্রে এডিবি’র হিসাব মতে ২০০৬ সালে দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারী এন্টার প্রাইজ এর সংখ্যা ছিল মোট ৬.৮ মিলিয়ন (সে হিসাবে ২০১৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০মিলিয়নের উপরে এবং লাভজনক ও নিশ্চিত বিনিয়োগের সুযোগও আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে), তাদের মধ্যে কমপক্ষে ১ মিলিয়ন সফল উদ্যোক্তা আছে যাদের কাছে নিশ্চিন্তে ৩৯৫.৯৭ বিলিয়ন টাকা বিনিয়োগ করা যায়! নতুন এসএমই প্রতিষ্ঠা বা কোন রকমে টিকে থাকাদের উন্নয়নের কোন ব্যবস্থা এই প্রকল্পে নেই। কারণ প্রকল্পটির উদ্দেশ্যই ঋণের এই বিস্তৃত নতুন বাজারে পুঁজি’র মুনাফা নিশ্চিত করা, এসএমই খাতের উন্নয়ন নয়। সব ধরণের পুঁজি যাতে নিরাপদে স্ব স্ব কারবার করতে পারে তার পরিবেশ তৈরি করাই দাতাগোষ্ঠীর কাজ। সেই পুঁজির বিকাশ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকার প্রচ্ছন্নভাবে সহায়কের ভূমিকা পালন করছে । বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই ঋণ নীতিমালা অনুযায়ী যেসব উদ্যোক্তাদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা ও সামর্থ্য আছে কেবল তারাই এই ঋণ পাওয়ার যোগ্য। তেলীর মাথায় তেল নয়, এ যেন পুঁটিমাছ দিয়ে বোয়াল ধরা আর কি!
যে ঋণের ঝুঁকি যত বেশী সে ঋণের সূদ তত বেশী আর সহায়ক জামানত বিহীন ঋণের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি সম্পূর্ন ব্যক্তি কেন্দ্রিক। প্রথা ও তত্ত্ব গত ভাবে এসএমই ঋণ জামানত বিহীন তাই এর উচ্চ ঝুঁকির কারণে সূদের হার উচ্চ হবে কিন্তু ঝুঁকির মাত্রার ভিন্নতা অনুযায়ী প্রত্যেক ঋণের সূদের হারেও ভিন্নতা থাকার কথা। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে তত্ত্ব অকার্যকর। বাস্তবে এখানে তথাকথিত সহায়ক জামানত যুক্ত কর্পোরেট ঋণের ঝুঁকির চেয়ে এসএমই ঋণের ঝুঁকি অনেক কম হলেও নানা তত্ত্বের গোলক ধাঁধায় এসএমই ঋণের সূদ আয় বৃহৎ ঋণের দ্বিগুনেরও বেশী, আরও অদ্ভূত ভাবে একই খাতের সকল ঋণের সূদের হার ব্যক্তি নির্বিশেষে একই যা ঋণের ঝুঁকি তত্ত্বের মৌলিক পরিপন্থী। অর্থ লগ্নী প্রতিষ্ঠানের জন্য এই খাত এখন সবচেয়ে লাভ জনক ও সম্ভাবনাময় হওয়ায় সবাই নানা বাহারী নামে ঝাঁপিয়ে পরেছে এসএমই খাতের ত্রাতা হিসাবে, আসলে ধান্দা সবার নিজের নিজের আর তার প্রমান ব্যাংক গুলির স্থিতি পত্রেই আছে।
নতুন এসএমই স্থাপন সব সময়ই ঝুঁকি পূর্ণ ও এর সাফল্য ব্যাক্তি কেন্দ্রীক, এর কোন প্রমিথ ও নৈর্বাক্তিক মাপ কাঠি নাই যা দিয়ে এর ভবিষ্যত Calculate করা যাবে, বড় জোর Speculate করা যায় । কিন্তু নীতিগত ভাবে বাংক Calculative, Speculative নয় কারণ ব্যাংকের অর্থ জনগণের, কোন ঝুঁকি পূর্ণ খাতেই ব্যাংকের বিনিয়োগ করা উচিৎ নয়। এসএমইতে অর্থায়নের জন্য ব্যাংক যেমন উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান নয় তেমনি এসএমই এর জন্যও এটা লাভজনক তহবিলের উৎস নয়। তারপরেও এই ব্যাবস্থা বহাল থাকায় উচ্চ সূদ ব্যায় জনীত কারণে সামষ্টিক অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব ফেলে। নতুন এসএমই তৈরিতে অর্থায়নের জন্য দরকার ভেঞ্চার ক্যাপিটাল যা ছাড়া আসলে এন্টারপ্রেনর সৃষ্টি অসম্ভব। সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের কোন ব্যাংকই এন্টারপ্রেনরদের ঋণ দেয় না, ঋণ দেয় প্রতিষ্ঠিত ও সচ্ছল ব্যবসায়ীদের!

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:১৭

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: সব জায়গাতেই ধোঁকা দেওয়ার ভাইরাসটা ঢুকে যাচ্ছে। বুঝতে পারছিনা আতঙ্কিত হব, নাকি আনন্দিত হব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.