নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জড়তার কাব্য শুনি, ক্লীব লিঙ্গ বলিয়া কিছু নাই

অ রণ্য

পুলকে পুলক আর সাদা দুধ, সাদা ঘর, মেঘের দোসরযে তুমি ঘুমিয়ে আছো, যেন ঘর ছেড়ে উড়ে গেছোআরব সাগর আর যাদু-কাঠি-ঘ্রাণগাগল, পাগল আমি রাত-দিন বসে টানিযাদুর ঝালর

অ রণ্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

4 Months 3 Weeks and 2 Days 2007- Cristian Mungiu

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:০৪

সম্ভবত এটাই আমার দেখা প্রথম রোমানিয়ান সিনেমা,এবং বলতে দ্বিধা নেই, ১৮৯৮ সাল থেকে শুরু সুদীর্ঘ এই পরিক্রমায় রোমানিয়ান সিনেমা ততটা বিকশিত কখনোই হতে পারেনি, এমন কী বিশ্ব-সিনেমার নজর কাড়তেও সক্ষম হয়নি সেভাবে, যতটা পেরেছে গত এক যুগে, এবং আধুনিক রোমানিয়ান সিনেমার বিকাশমান এই নতুন ধারাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে গেলে, গত এক যুগের পরিক্রমাকে অবশ্যই আমলে নিতে হবে সর্বাগ্রে। আর এই নতুন ধারার রেশ ধরেই গত এক যুগে বিশ্ব-সিনেমায় যুক্ত হয় বেশ কিছু অসাধারণ চলচ্চিত্র, আর আমরা পেয়ে গেছি ক্রিস্টি পিউ, ক্রিস্টিয়ান মুনগিউ, রাদু মুনতেয়ান, ফ্লোরিন সারবান ও ক্রিস্টিয়ান নেমেসকু-র মতো মেধাবী পরিচালকদের,যারা আধুনিক রোমানিয়ান তথা বিশ্ব-সিনেমাকে উপহার দিয়েছেন ‘দ্য ডেথ অব মি. লাজারেসকু -২০০৫’, ‘দ্য পেপার উইল বি ব্লু-২০০৬’,’ফোর মানথস থ্রি উইকস এ্যান্ড টু ডেইজ-২০০৭’, ‘টুইস ডে আফটার ক্রিস্টমাস-২০১০’, বিওন্ড দ্য হিলস-২০১২'ইত্যাদির মতো চমৎকার চলচ্চিত্র। আর সবগুলোর মধ্যে আলোচ্য চলচ্চিত্রটিই এর মধ্যে বিশ্বজুড়ে বহুল আলোচনা ও কমছে কম ৩৫টি আর্জাতিক পুরস্কার ও আরও ২৫টি নমিনেশনসহ বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে বিশ্ব-সিনেমার। মূলতঃ, এই চলচ্চিত্রটির জন্যই সর্বপ্রথম কোনো রোমানিয়ান পরিচালক কানস ফিল্ম ফেস্টিভালে গোল্ডেন পাল্ম পুরস্কার জেতেন।



২০০৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ১১৩ মিনিটের এই সিনেমাটি ঠিক বিনোদনমূলক কোনো প্রয়াস নয়, বরং ধূসর বাতাবরণ, স্বল্প আলো, চরিত্রের বিমর্ষ অভিব্যক্তি, স্নায়বিক উত্তেজনা আর পরিস্থিতির ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ ও বর্ণনার তীক্ষ্ণ শিল্প-বোধ পরিচালক ক্রিস্টিয়ান মুনগিউকে যেন মুন্সিয়ানার এক ধাপ উপরে তুলে এনেছে। সিনেমাটি দেখর সময় বারবার আমার অন্য দুটো সিমেনার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল, ক্রিস্তোফ কিয়োলস্কির ‘এ শর্ট ফিল্ম এ্যাবাউট কিলিং’ ও রোমান পোলানস্কির ‌’নাইফ ইন দ্য ওয়াটার’। দুটো সিনেমারই বাতাবরণ ছিল ধূসর,দারুণ নিঃসঙ্গ অভিব্যক্তি এবং কয়েক জন শিল্পী দ্বারা অভিনিত। আলোচ্য সিনেমাটিতেও আমরা কেবল দু’জন নারী ও একজন পুরুষ চরিত্রসহ মোট তিনজন শিল্পীকে মূখ্য চরিত্রে দেখতে পাই, যার মধ্যে কেবল একটি চরিত্রই পুরো সিনেমা জুড়ে দর্শক তথা ক্যামেরাকে নিজের দিকে কেন্দ্রিভূত করে রাখে, এবং তার শক্তিশালী ও সাবলীল অভিনয় মুগ্ধ করে রাখে। আনামারিয়া মারিনকা নামের এই অভিনেত্রীর কাহিনীর শেষে মধ্যরাতের নির্জন শহরে চরম উৎকন্ঠা আর ভয় জড়িত উদ্বেগের যে অভিনয় আমাদের উপহার দিয়েছেন, যারা এরই মধ্যে সিনেমাটি দেখেছেন তারা এ বিষয়ে অবশ্যই সহমত পোষণ করবেন যে, খুব সহজাত অভিনয় প্রতিভা না থাকলে এমন চমৎকার অভিনয় করা সম্ভব নয়। আর পরিচালকের কথা না হয় আপাতত বাদ-ই রাখলাম,কেন না চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য তিনি কেবল বহুবার লেখেন-ই নি, বরং শুটিং চলাকালেও বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন, যার প্রমাণ পাওয়া যায় সম্পূর্ণ ছবি জুড়ে, এব অভিনয় শিল্পীদের দারুন অভিনয় ও সংলাপে।



চলচ্চিত্রটির কাহিনী ১৯৮৭ সালের রোমানিয়ান প্রেক্ষাপটের প্রতি দারুণ এক চপেটাঘাতের মতো, যেখানে একাধারে তৎকালীন শাসন ব্যবস্থার ইঙ্গিতপূর্ণ চিত্রসহ, সামাজিক বাস্তবতা এবং তরুণ প্রজন্মের অবস্থান ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরা হয়েছে, যা আরও অধিক বর্ণনাময় ও সুষ্পষ্ট হয়ে উঠেছে অটিলিয়ার প্রেমিকের মায়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অন্যান্য বয়স্ক অতিথিদের খাবার টেবিলে নিজেদের মধ্যেকার সু-উচ্চ কথপকথনে,কিংবা প্রেমিকের সাথে অটিলিয়ার শীতল বাক-বিতন্ডায়, যা কিনা খুব সুনির্দিষ্টভাবেই সমসাময়িক রোমানিয়ান প্রেক্ষাপট বয়ান করে। সিনেমাটির কাহিনী তেমন বিস্তৃত কিছু নয়। অটিলিয়া ও গাবিতা নামের দুই বান্ধবী কলেজ হোস্টেলে একই রুমে থাকে, এবং হোস্টেলে মেয়েদের দৈনন্দিন জীবন-যাপনের খন্ড চিত্র দিয়েই সিনেমার কাহিনী শুরু হয়। এক সময় জানা যায় গাবিতা গর্ববতী আর অটিলিয়া বান্ধবীকে এই অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করার জন্য গর্ভপাতে সহায়তা করে। যেহেতু গর্ভপাত তৎকালীন রোমানিয়ায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ,এবং নির্দিষ্ট সময় পর তা ঘটানো অধিক কঠোর শাস্তিযোগ্য, সেহেতু গাবিতা তার গর্ভধারণের সময় লুকায়, এবং পুরো প্রক্রিয়াটি গোপনে স্বল্প খরচে সম্পন্ন করার জন্য এক বন্ধুর পরামর্শে বেবে নামের এক হাতুড়ে ডাক্তারকে ঠিক করে। দু’বান্ধবী কোনো ভাবে সামান্য অর্থ যোগাড় করতে সক্ষম হয়, এবং দূর্ভাগ্যবশতঃ যে হোটেলে গর্ভপাত ঘটানোর জন্য উঠার কথা ছিল, সেখানে উঠতে ব্যর্থ হয়ে বেশি ভাড়ায় অন্য একটি হোটেলে রুম ভাড়া নেয়। গাবিতার অনুরোধে অটিলিয়া যায় ডাক্তারকে আনতে, ফলে ডাক্তার বেবে তার বিরক্তি প্রকাশ করে, এবং হোটেলে এসে অল্প অর্থসহ নানাবিধ অভিযোগ ও গর্ভকাল চার মাস পেরিয়ে যাবার অজুহাতে তাদের সাহায্য করতে অসম্মতি জানায়, এবং শেষ পর্যন্ত দু'বান্ধবীর অসহায় পরিস্থিতির সুযোগে তাদের সাথে শারীরীক সম্পর্কের বিনিময়ে গর্ভপাত ঘটাতে রাজী হয়।



হয়ত এখানেই সিনেমাটি সম্পর্কে বলা হয়ে যায়, কিন্তু আরও কয়েকটি কথা না বললেই নয়। এই চলচ্চিত্রটি আমার ব্যক্তিগত পছন্দের তালিকায় রয়ে যাবে অনেকদিন, কেন না শুরু থেকে শেষ অব্দি এর পরতে পরতে পেয়েছি মুন্সিয়ানার ছাপ। যদিও কিছু কিছু দৃশ্যায়নে ক্যামেরার অনাকাঙ্খিত কম্পন অস্বস্তি তৈরী করেছে, তারপরও যে বিশেষ দুটি কারণে চলচ্চিত্রটি আমাকে মুগ্ধ রাখবে বহুদিন, তা এর সমগ্র কাহিনী জুড়ে আলোর বিশেষ ব্যবহার ও সামান্য একটি চিত্রনাট্যকে অনবদ্যতার পর্যায়ে তুলে নিয়ে আসা, যেখানে সিনেমাটি কেবল ড্রামা জেনরির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং হরর কিংবা থ্রিলার জেনরির দাবীও মিটিয়েছে ষোল আনা। এমন নয় যে এর চেয়ে ভাল চিত্রনাট্য, অভিনয় শৈলী দেখিনি, কিন্তু গর্ভপাতের পর টয়লেটে তোয়ালের মধ্যে নির্জিব পড়ে থাকা মানুষ্য আকারের রক্তাক্ত মাংস পিন্ডটির দিকে অটিলার বিমূঢ় চেয়ে থাকা, এবং তা থেকে চুড়ান্তভাবে মুক্তি পেতে ব্যাগের মধ্যে নিয়ে প্রায় নয় মিনিট ধরে ম্যধরাতের নির্জন পথে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটে বেড়ানো, এবং শেষ পর্যন্ত কোনো এক বাড়ির উপর তলা হতে ময়লা নিষ্কাশনের লাইনে ফেলে দেয়ার পর্যন্ত যে অভিনয় শৈলী, এবং অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি থেকে মুক্তির পর অন্ধকারে ছায়ার শরীর হতে একনাগাড়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের সশব্দ বেরিয়ে আসা, তা একদিকে যেমন আমাদের বিমূঢ়, রুদ্ধশ্বাস ও শংকীত করে তোলে, তেমনি সিনেমাটি শেষ হয়ে যাবার পরও অটিলিয়ার সেই চরম উৎকন্ঠা আর শ্বাস-প্রশ্বাসের তুমুল শব্দ অনুরণনসহ ভারী করে তোলে চারপাশের বাতাবরণ।



ধন্যবাদ ক্রিস্টিয়ান মুনগিউ-কে এমন একটি অসাধারণ চলচ্চিত্র আমাদের উপহার দেবার জন্য, আর সেই সাথে সাধুবাদ জানাই আনামারিয়া মারিনকাকে, যিনি একাই পুরো চলচ্চিত্র জুড়ে বিচরণ করেছেন তার অভিনয় শৈলীর সাবললীতা ও দক্ষতা সহকারে।







অরণ্য

ঢাকা, বাংলাদেশ

৩১.০১.২০১৩

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:২২

সীমানা ছাড়িয়ে বলেছেন: চমৎকার পোস্ট। ভাল লাগল।

২| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৭:৩৮

ফ্রাস্ট্রেটেড বলেছেন: একটি অসাধারণ সিনেমা... আমি কিছুই না বুঝে দেখা শুরু কর্সিলাম ঘুমানোর আগ দিয়া... কি নিয়া হোটেল ভাড়া, সিরিয়াসনেস তেমন বুঝি নাই... গর্ভপাতের দিকে ঘটনা যাওয়ার সাথে সাথেই ঘুম হারাম।

আসলেই অসাধারণ সিনেমা...

পোস্টে ভাললাগা। পাব্লিকে কেন জানি এই সিনেমার দিকে নাফ তাকাইয়া ২১ নাম্বার টেবিলের দিকে লাগসে। /:) /:) /:)

৩| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৫৯

ৎঁৎঁৎঁ বলেছেন: কয়েকদিন আগে মুভিটা দেখলাম, প্রথমবার এক বসাথে দেখা হয়নি, পড়ে যখন দেখলাম তখন এক কথায় মুগ্ধ হলাম। আপনার অসাধারন রিভিউটা পড়ে যেন আবার ছবিটা দেখার মজা পেলাম।

পোস্ট দারুণ হইসে, ++++

৪| ০৩ রা মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:০৩

দারাশিকো বলেছেন: সিনেমাটা স্তব্ধ করে দেয়ার মত। ছোট্ট একটা ঘটনা খুব নিরুত্তাপ ভঙ্গিতে বর্ণনা করার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু সেই সিনেমা একদম গভীরে পৌছে যায়।

সম্ভবত এটাই আমার দেখা প্রথম রোমানিয়ান সিনেমা। স্টোরি টেলিং এবং অভিনয় দুটোই চমৎকার লেগেছে। আর আপনার রিভিউ-ও। বিশেষ করে, আপনার শব্দচয়ন দারুন।

ভালো থাকুন অ রণ্য :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.