![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পুলকে পুলক আর সাদা দুধ, সাদা ঘর, মেঘের দোসরযে তুমি ঘুমিয়ে আছো, যেন ঘর ছেড়ে উড়ে গেছোআরব সাগর আর যাদু-কাঠি-ঘ্রাণগাগল, পাগল আমি রাত-দিন বসে টানিযাদুর ঝালর
।। বোধনের ডায়েরী - অলৌকিক সুতো ।।
দাদীর কিছু কিছু কাজ আমাকে স্বপ্রণোদিত হয়েই করতে হতো, কেন না সে জন্য দাদী বেশ দরাজ গলায় আর সব নাতী-নাতনীদের মধ্যে দক্ষতা ও নিষ্ঠায় আমাকে সবার উপরে রাখতেন। এই সব কাজগুলোর মধ্যে ছিল পান বানানো, বিশেষ করে সকালে সব কাজ শেষে লাহারি খাবার পর যখন তিনি গোয়ালের গোবর নিয়ে নোন্দা গড়াতে বসতেন, তখন দু’হাত গোবরে লেপ্টে থাকার কারণে চিল্লিয়ে আমাকে ডাকতেন, আর আদুরে গলায় বলতেন, ‘যাও তো ভাই, আমার জন্য একটা পান বানা আনোগাধিন’। আমি এক দৌঁড়ে দাদীর কাঁসার পানের বাটা থেকে ঠিকঠাক পরিমাণে খয়ের, চুন, জর্দা বা আওলাপাতা দিয়ে পান বানিয়ে আনতাম যেমন, তেমনি পানের বোটায় করে চুন আনতেও ভুলতাম না, আর পান এনে দাদীর দু’হাতে গোবর লেপ্টে থাকার কারণে সুন্দর করে মুখে পুরে দিতাম। দাদী সেই পান তৃপ্তি নিয়ে খেতেন, আর চুনের পরিমাণ একটু-আধটু এদিক-ওদিক হলে বলতেন, ‘চুন আনোনি ভাই?’ তখন অন্য হাতে ধরে রাখা চুনসহ পানের বোটাটি এগিয়ে দিলে হাসি মুখে জানাতেন, ‘আমার চেয়ে সুন্দর পান নাকি আর কেউ-ই বানাতে জানে না, এবং আমার হাতের পান ছাড়া তিনি অন্য কারও পান খেয়ে তৃপ্তি পান না’। দাদীর সেই অকাতর প্রশংসাবাণী কর্ণকুহরে প্রবেশ করলে আমিও তৃপ্ত হতাম, এবং বুক ফুলিয়ে ছুট দিতাম বিলের দিকে!
হাত-পা টিপে দেওয়ার বেলাতেও সেই একই প্রশংসাবাণী, কিংবা কাঁসার গ্লাস দিয়ে পায়ের তালু ঘষে দেবার ক্ষেত্রেও। এছাড়া অন্যান্য ছোট-খাটো ফায়-ফরমাশ তো ছিলই। তবে তাকে সহায়তা করা কাজগুলো মধ্যে সবচেয়ে কঠোরতম ছিল সুঁইয়ে সুতো পরিয়ে দেওয়া। লেপ অথবা কাঁথা সেলাই করার মতো বড় বড় সুঁইয়েও দাদী সুতো পরাতে ব্যর্থ হতেন, আর আমি, যে কিনা সোনামুখি সুঁইয়েও প্রথমবারেই সুতো পরাতে পারতাম অব্যর্থভাবে, অবলীলায় সুতো পরিয়ে দাদীর হাতে ধরিয়ে দিলে তিনি সত্যিকার অর্থেই নিশ্চিত হতেন যে, অযোগ্য মানুষটিকে তিনি মিছে-মিছি এত সব প্রশংসার দাবীদার বানাননি। এসবই ছিল দাদীর আত্মতুষ্টি, স্নেহ ও ভালাবাসা, অথচ আমার ক্ষেত্রে তা ছিল সীমাহীন সংশয় ও অনেকটাই তাচ্ছিল্যের ব্যাপার! অন্তত বালকপ্রাণ, যে কিনা সাত-সমুদ্দর, তের নদী পাড়ি দিতে, কিংবা দিগন্ত বিস্তৃত আকাশ ছুঁতেও পারত অনায়াসে, তার কাছে অত বড় ছিদ্রে দাদীর মতো বয়স্ক একজন মানুষের পক্ষে সুতো পরাতে না পারার ব্যাপারটি ছিল নিতান্তই অবজ্ঞার। আহা, ঐশ্বরিক, সরল বালকপ্রাণ, অত উপরের আসমানে ঢিল ছুঁড়েও ভাবতে সক্ষম, খোদাও বুঝি তার চিন্তা-চেতনার সীমানায়!
অনেক দিন দাদীকে দেখি না! মাঝে-মধ্যে যখন জামা-কাপড় সেলাই করতে বসি, তখন খুব মনোযোগ সহকারে সুঁইয়ের ছিদ্রের দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকি, যেন অতটুকু ছিদ্র দিয়ে আমি মানব জীবনের সুবিশাল এক পরিক্রমা অনায়াস দেখতে পাচ্ছি, আর এখনও প্রায় অব্যর্থভাবে সুতো পরাতে পরাতে ভাবি, আর খুব বেশি দেরী নেই দাদী, জলদি আমিও আপনার মতো কাউকে না কাউকে ডেকে বলব, ‘কইরে, কতি গেলি, সুঁইয়ে সুতাডা পরা দেধিন ভাই!’ আমিও হয়ত রোজ সন্ধ্যায় আপনার মতই উদাস দৃষ্ঠিতে সুদীর্ঘ জীবন যাত্রার ক্লান্তিতে ঢুলুঢুলু চোখে হালকা শরীরের দুলুনীতে গাইব-
এ্যালতার গাছে বেলতার বাসা
বইথ্যার গাছে ব্যাল
টুনি পখির হাড় ভাঙিতে
ভাঙিল কুড়্যাল
আরে, ডিংডাং ডিংডাং ডিং…
অরণ্য
২৬.০৯.১৪
ঢাকা, বাংলাদেশ
১৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:২৬
অ রণ্য বলেছেন: ধন্যবাদ জানাচ্ছি
২| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:৪৪
প্রবাসী পাঠক বলেছেন: চমৎকার।
১৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:২৯
অ রণ্য বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৬
কলমের কালি শেষ বলেছেন: সুন্দর লিখনী । পড়ে অনেক ভাল লাগল ।
১৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:৪৭
অ রণ্য বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৫৮
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: চমৎকার স্মৃতিচারণ। পা্নওয়ালা ভাই, একটা পান খেতে চাই।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৩৬
দেওয়ান কামরুল হাসান রথি বলেছেন: অ রণ্য ভাই + + + + +