![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গত কয়দিন ধরে ইংলিশ এক্সেন্ট নিয়ে গবেষণা করছি। আজকের জগতে আবার গবেষণা বা পড়াশোনা খুব কঠিন কিছুনা। শুয়ে বসে যে কোন একটা বিষয়ে ২০-৩০ টা ইয়ুটিউব ডকুমেন্টারি বা ভিডিও দেখে ফেললেই বেশ খানিকটা এনলাইটেনমেন্ট পাওয়া যায়। যেই ব্যাপারটা নিয়ে আমার খটকা, সেটা হলো 'বাংলাদেশি ইংলিশ' বলে কোন প্রতিষ্ঠিত ইংলিশ এক্সেন্ট আমরা বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। কিন্তু কেন? আমাদের দেশে উঠতে-বসতে ইংরেজি ব্যবহার হয়, ইংরেজি ভাষায় শিক্ষা প্রদান করা হয়, ইংরেজিকে বাংলাদেশের ২য় ভাষা দাবী করলেও কোন ভুল করবো বলেও আমার মনে হয়না। যেহেতু আমরা বেশ ইউনিক ওয়েতে ইংলিশ বলি এবং সেটা অবশ্যই ব্রিটিশ বা আমেরিকান ইংলিশ থেকে ভিন্ন; সেহেতু 'বাংলাদেশি ইংলিশ' নামক একটা এক্সেন্ট কাগজে কলমে কিংবা ব্লগ-ভ্লগে প্রতিষ্ঠিত করার কোন উদ্যোগ কখনো নেয়া হয়নি কেন?
আমরা বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিল খুলে সাধারন মানুষকে লুটে খাচ্ছি। আরো অনেক প্রতিষ্ঠানেই স্পোকেন ইংলিশ নামে কোর্স চালু আছে। সেখানে ইংরেজির জড়তা কাটানোর পাশাপাশি মানুষের মুখে একটা এক্সেন্ট পুশ করার চেষ্টাও করা হয়। অবধারিতভাবেই সেটা ব্রিটিশ ইংলিশ হবে, এটা ধারনা করে নিতে খুব একটা কষ্ট হয়না। কিন্তু ব্যাপারটা যখন স্পোকেন... তখন প্রমিত একটা এক্সেন্টকে মানুষের ভাষা বানানোর চেষ্টা-চরিত্র করাই আমার কাছে অপরাধ বলে মনে হয়। আমরা যখন বাংলা বলি, কখনোই টেলিভিশনের খবর পাঠকের মত বাংলা বলি না। তাহলে কেন ইংলিশ বলার সময় পাঠক কিংবা ধারাভাষ্যকারদের মত কথা বলবো?
সত্য কথা হলো, খোদ ইংল্যান্ডেই এক এক অঞ্চলে এক এক রকম ইংলিশ বলা হয়। লন্ডনের ককনি এক্সেন্ট থেকে সাউদার্ন পশ ইংলিশ হয়তো আলাদা করা খুব একটা সোজা না,কিন্তু স্কটিশ বা আইরিশ ইংলিশকে ব্রিটিশ এক্সেন্ট থেকে আলাদা করা খুব সোজা। এক্সন্টের পরিবর্তন দূরত্বের সমানুপাতিক এটা আমরা সবাই জানি। রাজশাহীর বাংলার সাথে সিলেটের বাংলার পার্থক্যের কথা চিন্তা করলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। অর্থাৎ একটা দেশেই মানুষ খুব ভিন্নভাবে কথা বলবে এটা ভাবতে আমাদের কোন আসুবিধা হয়না। ব্রিটিশ ইংলিশের সবচেয়ে কাছের ইংলিশ বলে যেই দেশের মানুষজন সেটা হলো অস্ট্রেলিয়া। কারন অস্ট্রেলিয়াতে ইংলিশ ভাষা নিয়ে গিয়েছিল শুধুমাত্র ইস্টার্ন ইংল্যান্ডের লোকজন। নর্থ আমেরিকান ইংলিশ ব্রিটিশ ইংলিশ থেকে অনেক ভিন্ন হবার কারন হলো আমেরিকায় শুধু ব্রিটিশরাই যায়নি, অনেক আইরিশ এবং ফ্রেঞ্চও আমেরিকান ইংলিশকে প্রতিষ্টিত করতে সাহায্য করেছে। শুধু তাই নয়, তারা নতুন বিশ্ব গড়ার সময়ই শুদ্ধ ইংরেজি (আমেরিকানদের মতে) ডেভেলপ করার জন্য রীতিমতো গ্রামার নিয়ে উঠে পড়ে লেগেছিল।
ইংলিশ স্পিকিং বিশ্ব নিয়ে কথা বলে আসলে তেমন লাভ নেই। কারন ইংলিশ ১ম ভাষা নয় এমন দেশের সংখ্যা মিলিতভাবে ইংলিশ ১ম ভাষা এমন দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এমনকি খোদ চায়নার মানুষের সংখ্যা পুরো ইংলিশ স্পিকিং ওয়ার্ল্ডের চেয়ে বড়। অর্থাৎ ম্যান্ডারিন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভাষা। আমি যেহতু 'বাংলাদেশি ইংলিশ' প্রতিষ্ঠার পক্ষে কথা বলছি, সেহেতু আমার রেফারেন্স পয়েন্টগুলো আনছি, ফ্রেঞ্চ/জার্মান ইংলিশ কিংবা রাশান/এরাবিক ইংলিশ থেকে। ইংল্যান্ডে আশার পর অনেক পোলিশ এবং টার্কিশ লোকের সাথে আমার কথা হয়েছে। তাদের কথাবার্তায় নিজ নিজ আঞ্চলিকতা সুস্পষ্ট এবং তারা যখন ইংল্যান্ডের মত দেশে ইংলিশ ভাষাকে রপ্ত করার জন্য টিউশন নেয়, ব্রিটিশরা কখনোই তাদের উপর নিজেদের এক্সেন্ট চাপিয়ে দেয়না। প্রত্যেক দেশের ইংরেজি আসলে নিজেদের প্রথম ভাষার স্বরবর্ণ দ্বারা প্রভাবিত। তাই আমরা যখন ইংরেজি বলবো, আমাদের ভাষার প্রভাব তাতে থাকবেই। পাঠ্যপুস্তক অনুযায়ী ইংরেজী ভাওয়েল পাচটি, কিন্তু ফনেটিক্যালি ইংরেজি ভাওয়েল বারোটি এবং এই বাকি সাতটি ভাওয়েল আমাদের বাংলা বর্ণমালায় নেই। যেমন আমাদের বাংলায় 'এ' আছে কিন্তু 'এ্য' কিংবা 'এ্যহ' অথবা 'এ্যই' বলে কোন স্বরবর্ণ নেই, তাই আমরা যখন পড়ি Race, আমরা বলি 'রেস', 'রেইস' কেন বলবো?
পশ্চিমা বিশ্বে টিনেজদের মধ্যে এক্সেন্ট চ্যালেঞ্জ নামে একটা মজার খেলা আছে। ইউটিউব করলেই খেলাটা সম্পর্কে একটা ধারনা পাবেন। এখানে একজন নিউ জার্সি অথবা ক্যালিফোর্নিয়ান এক্সেন্টে একটা বাক্য বলবে অন্যজনকে সেই এলাকার নাম বলতে হবে। ব্রিটিশ সহপাঠিদের সাথে এই খেলাটা যেকোন আমেরিকান খেলতে মজা পাবে। আর চায়নিজ কিংবা এরাবিয়ান কাউকে পেলে তো কথাই নেই! গতকালকে ইয়ুটিউবে দেখছিলাম, এক ইয়র্কশায়ারবাসি মেয়ে ''হাউ টু মেইক এন ইন্ডিয়ান এক্সেন্ট'' নামে একটা ভিভিও আপ্লোড করেছে। ইন্ডিয়ান প্রবাসীরা যেই এক্সেন্টে কথা বলে, সেটা সারা বিশ্বে ইন্ডিয়ান ইংলিশ নামে স্টাব্লিশড(রাসেল পিটার্স দ্রষ্টব্য) অথচ MTV'র ভিজে কিংবা NDTV'র কোন খবরে ভারতীয়দের সেই এক্সেন্টে কথা বলতে আপনি দেখবেন না। জেনারেশন গ্যপের কারনে এমনটা হতে পারে। কিন্তু প্রবাসী বাংলাদেশিরা (বেংগলি ব্রিটিশ বা আমেরিকান নয়) বাংলাদেশের বাংলাদেশিদের মতই ইংলিশ বলে, সুতরাং আমাদের ইংলিশ নিয়ে মিসকন্সেপশনের সুযোগ এখনো বেশ কম।
বাংলাদেশের মানুষের মুখে প্রচলিত ইংলিশের রকমফের অবশ্যই আছে। ঢাকা শহরে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়া ছেলে-মেয়েদের ইংলিশ এক্সেন্ট গ্রামের হাই-স্কুলে পড়া ছেলে-মেয়েদের ইংরেজি থেকে অবশ্যই উন্নত(!) কিন্তু সেটাকে স্ট্যান্ডার্ড বলে চালিয়ে দেয়াও অনুচিত। ইংল্যান্ড-আমেরিকার একেবারে কাছে বসে থাকা ফ্রান্স কিংবা কিউবার লোকজনের ইংলিশই যদি নেটিভদের মত না হতে পারে, সাত-আট হাজার মাইল দূরে বসে থাকা বাংলাদেশিরা ব্রিটিশ ইংলিশ বলবে, এটা আশা করা ঠিক না। আমাদের আজকের বাংলাদেশের এক্সেন্টিক ইংলিশ হলিউডের ইংলিশ দ্বারা যথেষ্ট প্রভাবিত। কর্পোরেট বাংলাদেশ বলেন আর ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলময় বাংলাদেশ বলেন, সবখানেই ইংলিশ আসলে ব্রিটিশ আর আমেরিকান ইংলিশের মিশ্রন! কারন আমাদের কাছে আসা লিসেনিং সোর্সগুলো এক এক সময়ে এক এক জায়গা থেকে এসেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তরুন সমাজের জন্য মুভি অথবা টিভি শো দেখে আমেরিকান ইংলিশ এক্সেন্ট রপ্ত করা সহজ (বেডার, মোবল ফোন, এলুমিনাম)। কিন্তু আপনি শত চেষ্টা করেও যেকোন একটা এক্সেন্টে থাকতে পারবেন না। নিজের অজান্তেই কিছু ব্রিটিশ শব্দও বলবেন কারণ আমাদের স্কুল ব্যবস্থায় বেশিরভাগ শিক্ষকই ব্রিটিশ ফনেটিক ল্যাংগুয়েজে শিক্ষিত। মোদ্দাকথা, আমাদের দেশের এলিট ইংলিশ স্পীকিং সোসাইটির এক্সেন্টই জগা-খিচুরীময়।
তো এতই যখন সমস্যা, সেটা বাদ দিয়ে দিলেই কি ভাল না? এমনিতেই তো আমাদের দেশে সমস্যার অন্তঃ নেই। ইংলিশে যদি উন্নতি করতেই হয়, এক্সেন্টের উপর জোর কমিয়ে ফ্লুয়েন্সিতে জোর দেয়া উচিৎ। ভারতের অলিতে-গলিতে পোলাপানের ইংলিশের যে ফ্লুয়েন্সি, তা দেখলে মাঝে মাঝে টাশকি খেতে হয়! ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশের ভিন্ন ভিন্ন ভাষা শেখার থেকে শুধু ইংরেজি দিয়ে সারা দেশ ঘুরে বেড়ানো ভারতীয়দের নতুন স্কিল নয়! আমাদের ইংলিশ আমাদের আমাদের মতোই হোক না...! দুনিয়ার কোথাও কেউ হাসবেনা। আমরা দেশি মিডিয়াকে আরো একটু শক্তিশালী করতে পারলেই 'বাংলাদেশি ইংলিশ'কে বিশ্বের যেকোন স্থানে নিয়ে যেতে পারবো যদি আমরা বিবিসি আর ভয়েস অফ আমেরিকাকে নকল না করতে চাই!
বিঃদ্রঃ আমি কোন ভাষাবিদ নই। ইংরেজি বা বাংলা লিংগুইস্টিক্সেও আমার বিশেষ কোন দখল নাই। আমার দাবী যদি সায়েন্টিফিক না হয়, তাহলে যেকোন এক্সপার্ট ক্রিটিক আমার ভুল-ভ্রান্তির অবসান করতে পারেন। মোস্ট ওয়েলকাম!
©somewhere in net ltd.