![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তুমি একটু কেবল বসতে দিও কাছে।
ক'দিন আগে বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্সে সৌমিত্র-স্বাতীলেখা'র বেলাশেষে দেখলাম।
ছবিটা এখন বেলাশেষের দম্পতিদেরও বেশ ভাবাচ্ছে-। সত্যিই তো, কবে আমরা শেষ হাত ধরে হেঁটেছিলাম? ভালবেসে শেষ কবে চুমু দিয়েছিলাম। শেষ কবে জন্মদিনে বলেছি- ‘ভালবাসি? দুজনের একাকী মুহূর্তে কি সত্যি আসে -ভালোবাসার টুকিটাকি, খুনশুটি?
আমি চিরকাল প্রেমের পূজারি হয়েও বিয়ে করি একদম ভালোমানুষ’টি সেজে। মধ্যপ্রাচ্যের চাকরীর সুবাদে ছুটিতে শেষ মুহূর্তে ‘সাজানো বিয়ে’র পরপরই চলে যেতে হয় একাই। গায়ে হলুদের গন্ধ না মিলাতেই ফের প্লেনে,মনে তখন কেবল ভাসছিল বিয়ের আসরে ‘কলিম শরাফী’র গাওয়া,–‘তুমি একটু কেবল বসতে দিও কাছে ।’ আমি তখন আরব সাগরের তিরিশ হাজার ফুট উপরে। কাটার মত বিঁধছিল গায়ের কোট,গলার টাই। ভাবছিলাম , ফেলে এলাম যে দিনগুলো,তেমনটি আর পাব কি কোনদিন।
এরপর দীর্ঘ প্রতীক্ষা । তখনও ঘর নেই। সাহায্যের হাত এগিয়ে দিলেন প্রকৌশলী সহকর্মীরা । লিবিয়ানদের পরিত্যক্ত বাড়িগুলোরই একটায় সাবলেট । একটাই ঘর,তারও ছাদে আবার বৃষ্টিতে ঘরে জল পড়ত -ঘরের মধ্যে ঘর বানিয়ে হারমনিয়মে-‘তুমি একটু কেবল বসতে দিও কাছে ।
তবে তিনমাসের মধ্যেই বিরহের দিন শেষ। সেই পোড়ো বাড়িই হলো আমাদের বাসরঘর-আবার বসারও ঘর সেটাই। প্রবাসীরা আসে নিত্য নতুন টিপস দেয় ঘরকন্নার। এমনিতে ইসলামি দেশ-বাইরেও খুব একটা করার কিছু নেই। অফিসেও কাজকর্ম তেমন নেই,বিখ্যাত আরব আলস্যের সাথে মিলিয়ে আমরাও অলসতা উপভোগ করছি । ফলে অফিস টাইমে চা খেতে হলেও অকারণ বাসায় চলে আসা । অন্য সময়েও পাশেই থাকি, পাশেই বসি। অফুরন্ত অবসর,অঢেল সময় হাতে । ফলে অজানা অচেনা অদেখার বাকী যেন থাকলো না কিছুরই-
এরই মধ্যে একদিন সন্ধ্যেবেলা বাসায় কেবল আমরা দু’জন। বাইরে কোথাও যাবার নেই-পুরানো প্রাচীন বাড়ীটা অনেকটা আমাদের দেশের গ্রামের বাড়ীর মতই ।মধ্যিখানে উঠান, চারপাশে ঘর। ছাদের উঠবার সিড়ি নেই,একটা ভাঙা মই ছিল। হঠাৎ ওই বললো-‘চল ছাদে উঠি ।’
ওর উচ্ছ্বাসে বাঁধা দিলাম না । কিন্তু মনে মনে ভাবছিলাম মইটা যদিও টেকে, ফুটো ছাদটা কি ভেঙেই যায় নাকি। নানা কসরতে শেষপর্যন্ত কোনমতে ছাদে ওঠা গেল। ওহো ! কি সুন্দর নয়নাভিরাম দৃশ্য,মনোহর পরিবেশ । আধো অন্ধকার, উপরে স্বচ্ছ নীলাকাশ তারায় ভরা ,ভুমধ্যসাগর থেকে ভেসে আসা সুবাতাস। মরুর আবহাওয়ায় দিনে প্রচন্ড গরম হলেও সন্ধ্যের পর থেকেই ঠান্ডা মৃদুমন্দ বাতাস। আর নির্জন পরিবেশে মাত্র আমরা দু’জন। কিন্তু কি হলো, কত আর কথা, কতই বা গল্প । একসময় কিছুক্ষনের মধ্যেই যেন সব শেষ। তারপর চুপচাপ। নীরবতা ভেঙ্গে সেই এবার বললো-
‘একটা গান শোনাও না।'
তখন যে কি হলো- মনে ছিল কত ঝড় বৃষ্টির মধ্যেও গেয়েছি একা, ওকেই মনে মনে শুনিয়ে । কিন্তু এখন যখন সামনে- কোত্থেকে জুটলো রাজ্যের সঙ্কোচ। গান শোনাতে গেলেই এমন মনে হয় । মনে আসছে না। -‘তুমি একটু কেবল বসতে দিও কাছে ?’ কিন্তু এটা কেমন করে গাই। গানের কথার সাথে সিচ্যুয়সন তো মিলছে না । কেন না ওর কাছেই তো বসে আছি- বসার জন্য তো এমন আকুল করে বলার দরকার নেই। আছিই তো পাশাপাশি । চাইলে শুধু বসতে কেন- শোবারও বাঁধা নেই । বলার অপেক্ষাও করতে হবে না । যে সবসময়ই আমার কাছে বসে, যাকে চাইলেই পাই তাকে কি করে বলি-‘ তুমি একটু কেবল বসতে দিও কাছে ?’ মিথ্যে কি করে বলি-‘শুধু ক্ষনেক তরে বসতে দিও কাছে হাতে আমার যা কিছু কাজ আছে সে সব আমি সাঙ্গ করবো পরে ?'
তাই কিছুটা উদাসীন হয়েই যেন বললাম-
‘আরে আবার গান কেন। এটা সিনেমা নাকি।'
আমি বুঝতে পারলাম অপ্রত্যাশিত আমার কথায় সে একটু থতমত খেল যেন।তারপর আর কিছু বলেনি। কোন মেয়ের কথা কোন পুরুষ যখন শোনে না,মেয়েরা তখন তার দেবীত্ব ছেড়ে সাধারণ হয়ে যায় । সুনীলের কথা । আমার দেবীকে সেদিনের জন্য আমি হারিয়েছিলাম আমারই অর্বাচীনতায় । অন্ধকার হয়ে গেছে তখন ওর মুখটা দেখিনি, তাই বুঝিনি কোন্ অন্ধকার সেখানে ঘনিয়ে।
দু’একটা অন্য গান ও চেষ্টা করতে পারতাম। কিন্তু তখন আমার এও মনে হয়েছিল- সবই তো হয় বিরহের, নয় বুকের কথা মুখে না বলতে না পারার ভীরুতা বা হারানোর ব্যকুলতা। কিন্তু তখন তো আমাদের মধ্যে এর কোনটাই মিলছিল না। তখন তো শুধুই মিলনের কাল। গান তো হয় বিরহের কালে বা প্রেমে পড়ার কালে- সেটা হয়ে গেলে তখন কি হয় ? বিয়ে করা বউ’র কি সাথে প্রেম করা যায় না , না করতে হয় ?
এটাই হচ্ছে কথা । যা আছে তাকে কি করে চাইতে হয়? হয়, অবশ্যই হয়,কিন্তু সেটা তাকে নতুন করে চাওয়া। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়-‘তোমায় নতুন করে পাব বলে হারাই ক্ষণে ক্ষণে-ওগো আমার ভালোবাসার ধন’। ‘বেলাশেষে’ যেন সেকথাই অন্য অনেক কিছুর সাথে নতুন করে বললো । কোন কিছুই স্বতঃসিদ্ধ নয় , তা ধরে নিও না । এইযে বসে আছো ,না চাইতেই পেয়ে যাচ্ছ- সেকি এমনি রবে। কিন্তু কিসের মুল্যে-সেই ভালবাসা?
নিয়ম বা অভ্যেস -কিন্তু ভালবাসাও তো সেটাও । তবু দৈনন্দিনতাকেও ভালবেসে কাছে টেনে নিতে হয়-তার কিছু মূল্যও দিতে হয়। এমনি এমনি আসে না। নইলে সেটাও হারিয়ে যাবে, যায় ।
আসলে রবিঠাকুরই তো সমস্যাটা করে গেছেন। সেই যে বললেন-‘স্ত্রীরা হচ্ছে ঘড়ায় তোলা জল ,-যে তৃষ্ণা মেটাবে, আর প্রেমিকারা হচ্ছে দীঘি,যেখানে সাঁতার কাটা যায়- তৃষ্ণার জল মেলে না।‘ একদম মিথ্যে একদম মিথ্যে।বুদ্ধদেব বললেন , বালখিল্যতা । তবু সেটাই তো জনপ্রিয়- (শেষের কবিতা)
বিয়ে কি একটা সই/চুক্তি মাত্র। কিন্তু প্রতিদিনের ঘরকন্নায় তা একঘেয়ে, ভালবাসাহীন হয়ে যায় ? গেলে কি করতে হয়- শান্তিনিকেতনে হাত ধরাধরি করে হাঁটা ? হয়তো তাই,অথবা না,জানিনা । নিছক অভ্যাসও ভালবাসায় পরিণত হয়,বোঝা যায় যখন সেটা চলে যায়। সেটা যারা জানে সেই জানে –কখনও রূপবদল হয় কেবল। ভাষা বদলে যায় তখন। কখনও দৈনন্দিনতার ঝগড়াই হয় ভালবাসার কবিতা । আমার তো এমন হয় যে একদিন ঝগড়া নাহলে মনে হয় বুঝি সামনে বিরাট সুনামি। আর শুরু হয়ে গেলে কলহের স্বর কখন যেন মধুর সুর হয়ে আপনা আপনিই আবহ সঙ্গীতের মত বাজতে থাকে---
'এ জীবনে যত ব্যথা পেয়েছি
সবই তো দিয়েছ তুমি ভুলায়ে,
মুছায়ে দিয়েছ আঁখিজল,
কোমল পরশ তব বুলায়ে।'
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:১৮
শায়মা বলেছেন: আমার তো এমন হয় যে একদিন ঝগড়া নাহলে মনে হয় বুঝি সামনে বিরাট সুনামি। আর শুরু হয়ে গেলে কলহের স্বর কখন যেন মধুর সুর হয়ে আপনা আপনিই আবহ সঙ্গীতের মত বাজতে থাকে---

'এ জীবনে যত ব্যথা পেয়েছি
সবই তো দিয়েছ তুমি ভুলায়ে,
মুছায়ে দিয়েছ আঁখিজল,
কোমল পরশ তব বুলায়ে।'
হা হা পুরো লেখাই মন দিয়ে পড়েছি ভাইয়া। তবে শেষে এসে না হেসে পারলাম না!