নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে আমিঃ https://web.facebook.com/gmhonair

আঁধারের আর্তনাদ

একাকী যে হেটেছিল পথ... সেইতো আমি

আঁধারের আর্তনাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রথম ভালবাসা

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৬

কলেজে আসার সময় দেখলাম মেয়েটাকে । এখন ক্লাসে । বুঝলাম, আমাদের সাথেই পড়ে । আজই প্রথম দেখলাম । নতুন এসছে হয়তো । বেশ মায়াবী ওর মুখটা । প্রথম দেখায় যে কেউ প্রেমে পড়বে । আমিও পড়লাম । তাই ঠিক করেই নিলাম, যেভাবেই হোক কথা বলব ওর সাথে । শেষ ক্লাসের ঘন্টা পড়ার সাথে সাথেই সবাই বাড়ীর পথে পা বাড়াল । এত ছেলে মেয়ের ভিড়ে, কিভাবে বলব, কি বলব ভাবতে ভাবতে কখন যে বেড়িয়ে গেল.. বুঝতেই পারিনি । অপলক দৃষ্টিতে শুধু চেয়ে ছিলাম ওর চোখের দিকে । ঢুলুঢুলু চোখে শুধু একবার দেখেছিল আমায় । বলা হল না । জানা হল না তার পরিচয় । মন খারাপ করে চলে গেলাম । বাসায় গিয়ে, গোসল করেই ঘুমিয়ে পড়লাম । স্বপ্নে একটা মেয়েকে দেখলাম । মুখটা আবছা আবছা । ঠিক চেনা যাচ্ছেনা । তবুও আমি জানি, সে কে...



আজ বৃহঃস্পতিবার ।

কলেজ আসলাম । “অর্ধেক ক্লাস হবে” এটা ভেবেই মনটা খারাপ হয়ে গেল । যে আমি কলেজে না আসার কারণে বাবার ঠ্যাংগানি খেয়েছি বহুবার । আর সেই আমি কিনা এখন প্রতিদিন কলেজে !!! নিজেরই কেমন জানি অবিশ্বাস হচ্ছে । অনেক বদলেছি । সারাদিন আয়নার সামনে ঘুরঘুর করি । পরিপাটি হয়ে থাকি সবসময় । কবিতা লিখতে ভাললাগে । একটা মেয়ে কি করে এত বদলে দিল আমায় ! যতবাই ভাবি, ততবারই অবাক হই ।

এখন বুঝতে পারি, “ভালবাসার জন্য অনন্তকাল দরকার নেই, একটা মুহুর্তই যথেষ্ট” । বানীটা হুমায়ুন স্যারের । প্রিয় লেখক আমার । কে জানে, মেয়েটারও হয়ত প্রিয় । আবার নাও হতে পারে । সবার মন তো আর এক রকম না... ।।



“মেয়েটা কে রে ?”

ক্লাস চলাকালে জানতে চাইলাম বন্ধূর কাছে । সেও ঠিকঠাক ভাবে বলতে পারলোনা কিছু । শুধু বলল, “নতুন এসেছে”

মাথা গরম হয়ে গেল ।

আমার একটা প্রবলেম আছে । মাথা গরম হলে হুশ থাকে না । তাই একটু চেঁচিয়েই বললাম, “আরে, ব্যাটা নতুন আসছে.. তা তো জানি । মাইয়ার নামটা তো ক” বলা শেষে বুঝলাম, ক্লাস চলছে । সাথে সাথে চুপ মেরে মাথা নিচু করলাম কেউ দেখার আগেই । কিন্তু কোন লাভ হল না । স্যারের ডাকে সাড়া দিয়ে গেলাম স্যারের কাছে । মাহবুব স্যার । আমাদের কলেজের সবচে ভয়ানক । পাগলাটে চেহারা । একবার এক ছাত্র পড়া পারেনি বলে একটা ভাঙ্গা ব্রেঞ্চের পা দিয়ে পিটিয়েছিল । আরেকবার তো ডাস্টার ঢিল মেরে মাথাই ফাটিয়ে দিয়েছিল । তার এ বিদঘুটে স্বভাবের কারণে তাকে অনেক উপাধিতে ভুষিত করা হয়েছে । কেউ ডাকে “মাহবুব পাগলা” বলে । কেউ “বিষু” । কেউবা, “ডাকু” বলে । কলেজের স্যারেরাও তাকে এসব বলে । তবে, আড়ালে । সামনে বলেনা কেউ ।



“কই আসিস না ক্যান, নবাবজাদা?”

বুকে সাহস নিয়ে দাঁড়ালাম । একটু ভয় ভয় করছিল । তবুও সেটা আড়াল করে এগিয়ে গেলাম বীর পুরষের মত । মনে মনে ভাবলাম, কি আর করবে ? মারবে কয়েকটা । সয়ে নেব । কোন চিন্তা নাই । কত মাইর সহ্য করলাম মায়ের পেট থেকে বের হবার পর !! এ আর এমন কি ?!! যাবার সাথে সাথেই মাহবুব পাগলা বলল, “কান ধরে স্টেজে দাড়িয়ে থাক”



এটা শাস্তি ?! নিজেরই হাসি পাচ্ছে !! একটা ক্লোজআপ হাসি দিয়ে স্টেজে দাঁড়ালাম । কিন্তু আজ খুব লজ্ঝা করছে আমার । কেন ? সেই মেয়েটা দেখছে, আর মিটিমিটি হাসছে । এ কোন শাস্তি দিল স্যার আমায় !? এর চেয়ে ৫০ টা বেতের বারি দিলেও কষ্ট কম হত । তখন হয়তো শরীরে লাগত । কিন্তু এখন লাগছে, বুকে । বুকের ভিতরে ।

লজ্জায় মাথা তুলে তাকাতে পারছিনা । ক্লাস শেষ হবার এখনও বহু দেরী । তাই মাথা নিচু করেই স্যারের কাছে গিয়ে বললাম, “ আর এমন ভুল হবেনা স্যার” । তারপর আচমকা হাতে বেত নিয়ে মারা শুরু করলেন আমাকে । আমি শূধু চোখ বন্ধ করে আছি । মারা শেষ ! তবুও চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে স্যার দাঁত খিচিয়ে বললেন, “যা এবার, নাকি আরও খেতে মন চাইছে?” । কিছু না বলে চলে এলাম নিজের জায়গায় । খুব ব্যাথা করছে এখন । তখন আচমকা মার খাওয়ায় টের পাইনি । চোখ বন্ধ করে মেয়েটার কথা মনে করার চেষ্টা করছি । ব্যাথা অনেকটা কমে গেছে ।

“রক্ত!!!! ” বন্ধুর চিল্লানিতে চোখ খুললাম । আশেপাশের সবাই তাকিয়ে আছে । হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি সাদা শার্টটায় রক্ত লেগে আছে । দেখেই হাসি দিলাম একটা । তারপর মেয়েটার দিকে তাকালাম । দেখি সেও আমায় দেখছে । অবাক হয়েছে সে । দৃষ্টিতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ।

একপলক চেয়ে থেকে আবার মাথা নামিয়ে নিলাম । মাথাটা ধরেছে । জ্বর আসবে হয়ত । ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কখন যেন । স্যার দেখেও কিছু বলেনি । বন্ধুরা সামলিয়ে নিয়েছে স্যারকে ।



ছুটির ঘন্টা পড়ল ।

সবাই চলে যাচ্ছে । আমি বারান্দায় এসে দাড়ালাম । দেহে যেন প্রাণ ফিরে পেলাম । বদ্ধ ঘরে দম বন্ধ হয়ে আসছিল । বারান্দার গ্রিলটা দু’হাতে ধরে দাড়িয়ে আছি ।



কেউ একজন বলল “আমি তন্দ্রা”

দেখি সেই মেয়েটা । কি বলব ভাবছিলাম...

আবার বলল ও, “হাতে খুব ব্যাথা পেয়েছেন । তাইনা ?”

“আরে না । একদম ঠিক আছি ।”

“বন্ধু হবেন?” বলেই মিষ্টি একটা হাসি দিল মেয়েটা ।

আর তার একটা হাসিতেই আমার হৃদয়টা যেন ফালাফালা হয়ে গেল । মেয়েদের সবচে বড় অস্ত্র হল, চোখের জল আর হাসি । এ দুটো দিয়ে এরা সব করতে পারে । জীবন দিতে পারে । জীবন নিতেও পারে ।



আমিও একটা হাড় কাপানো হাসি দিয়ে বললাম, “অবশ্যই ।”

“ধন্যবাদ”

হঠাত ধন্যবাদ শুনে চমকে উঠলাম ।

“কিসের জন্য?”

“জানিনা তো. হি হি হি হি..”

আবার বুকটা ফালাফালা হয়ে গেল ।



তারপর আর থেমে থাকতে হয়নি । সেই থেকে আমরা অনেক ভাল বন্ধু । সময়ের সাথে কেছে এসেছি আরও ।



‘’’’’’’’’’’



আজ তন্দ্রার জন্মদিন ।

এতদিনেও এক প্রোপজ করা হয়ে ওঠেনি । আজকেই প্রোপজ করব । হয় এসপার নয়তো ওসপার । যা হবার হবে । অবশ্য ট্রাই যে করিনি, তা বলা যাবেনা । বুকে সাহস নিয়ে যখনই ওর সামনে গিয়েছি, তখনই ফুসসসসস.... হাওয়া বেরিয়ে যেত । মনের কথাটা বলা হয়নি কখনও । তাই আজ নতুন ট্রিক্স কাজে লাগাব । সব কথা কাগজে লিখে দিব । ট্রিক্সটা দিয়েছে পাড়ার বড় ভাই, আমাদের সবার প্রিয়; ডালিম ভাই । প্রেম বিষয়ে সবাই তার কাছেই টিপস নিতে যায় । যদিও সে কোনদিন প্রেম করেনি । তবুও তার বুদ্ধিতে চললে নাকি রিলেশন মাস্ট হবেই । তাই ভরসা করেই কাগজে লিখে ফেললাম ।



“তন্দ্রা আমায় তোমার BF বানাবে?”



এটুকু লিখতেই কত পৃষ্ঠা যে নষ্ট করেছি !! জানা নেই....



,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,



কেক কাটা শেষ । উইশ করলাম । বিনিময়ে পেলাম “ধন্যবাদ” । কিন্তু তারপরেও মন ভরল না । কেমন যেন অস্বস্থি লাগছে । ঘরে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে । ছাদে আসলাম । প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেব বলে । নাহ্ সেটা হচ্ছে কোথায় ? মাথাটা বনবন করে ঘুরছে আমার । একটুও স্বস্থি পাচ্ছিনা । ফোন করলাম ওকে । জরুরী কথা আছে বলে ডেকে নিলাম ছাদে ।

দাড়িয়ে আছি রেলিং ধরে ।

“বলেন স্যার, কি জরুরী কথা ?”

ঘুরে দেখলাম ও এসছে । আকাশী কালারের একটা শাড়ী পড়েছে । নীল বললে ভুল হবে । তারপর নজর দিলাম ওর চোখের দিকে । আজ জোছনা । আকাশের চাঁদটাকে দেখতে পাচ্ছি ওর চোখে । মনে হচ্ছে ওর চোখ থেকেই জোছনা ঝরছে । জোছনার আলোতে জ্বলজ্বল করছে ওর চোখ দুটো । সেই আলোতে জ্বলে যাচ্ছে আমার চোখদুটোও । আর তাকাতে না পেরে বললাম,

“তন্দ্রা”

“হ্যা বলো..”

“কিছুনা” বলেই একটা কাগজ ধরিয়ে দিলাম হাতে ।



তারপর দেখি ও প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে । চোখে চোখেই ওর প্রশ্নটা বুঝতে পেরে বললাম, “পড়ে দেখো”

আমি চোখ বন্ধ করলাম ।

তারপর শুনলাম ও বলছে, “এটা সম্ভব না”

জানতে চাইলাম কারণটা ।

ও আমার সহ্য ক্ষমতা জানতে চাইলে বললাম, “অসীম”

“আমি বিবাহিত । আমার হাজবেন্ড ইউএসএ তে থাকে । ইন্টার পরীক্ষা শেষেই নিয়ে যাবে আমাকে । ” বলে মাথা নিচু করে নিল ও ।



আর কিছু না বলে, হো হো করে হেসে দিলাম । বললাম, “আরে পাগল BF মানে Best Friend .. Boy Friend না । খুব ভয় পাইয়ে দিয়েছি, তাইনা ?”

ওর মুখেও হাসি ফুটে উঠল ।

ও কিছু বলার আগেই বললাম, “আজ যাই । খুব জরুরী একটা কাজ আছে”



বলেই বেরিয়ে পড়লাম । হাটছি । রাস্তা ধরে । দিনের আলো কমে গিয়ে রাত নেমেছে । চোখজোড়া ভিজে যাচ্ছে । হয়ত, আমার চোখেও জোছনা দেখা যাচ্ছে । কিন্তু এ জোছনা কাউকে দেখাতে নেই । লুকিয়ে রাখতে হয় হাসির আড়ালে ।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:০০

বনলতা মুনিয়া বলেছেন: কিচ্ছু বলার নেই....

শেষটা বিষাদময়, তবুও অসাধারন

২| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:০৪

নিয়ামুল ইসলাম বলেছেন: :( :(

৩| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:০৪

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: গল্পটা ভালোই লেগেছে!

৪| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:১৭

মশিকুর বলেছেন:
পুরো গল্পটাই অসাধারণ হয়েছে :) কম বয়সে এরকম কনফিউশন, সঙ্কোচ, ভয় থাকেই... পরে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যায়।

শুভকামনা।।

৫| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:২৬

আঁধারের আর্তনাদ বলেছেন: Tnx.. New writer to... Tai kmn jno lagse nijer kasei. :p doa korben, jno future e aro valo korte pari. @all..

৬| ০১ লা মে, ২০১৪ ভোর ৫:০১

আজাইরা পঁ্যাচাল বলেছেন: ভালো লেগেছে।

৭| ০১ লা মে, ২০১৪ সকাল ৭:১৭

আঁধারের আর্তনাদ বলেছেন: Tnx

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.