নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে আমিঃ https://web.facebook.com/gmhonair

আঁধারের আর্তনাদ

একাকী যে হেটেছিল পথ... সেইতো আমি

আঁধারের আর্তনাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফিরে আসা

০৬ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১২:১৯

আচমকা একটা দুলুনিতে ঘুমটা ভেংগে গেল পূর্ণের । বিছানায় বসে হাপাতে হাপাতে চারপাশটা ভাল করে দেখে নিল একবার । ঘড়িতে সময় রাত ০২ টা কি তার একটু বেশি । টিক টিক করে ঘড়িটা নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে বারবার । সবকিছু কেমন যেন অদ্ভুত লাগছে ওর কাছে ! থমথমে আবহাওয়া । ভ্যাপসা গরম ।



জনালার কপাট টা বিকট শব্দে বাড়ি খেল হঠাত । তারপর আবার সবকিছু শান্ত । এবার মনে হচ্ছে কে যেন ওকে ডাকছে, ফিসফিসিয়ে । বলছে, “পূর্ণ, এসো.. এসো পূর্ণ.. এসো” । ভয়ে সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে পূর্ণের । সাইড টেবিল থেকে পিরিচ টা সরিয়ে গ্লাসের সবটুকু পানি এক নিশ্বাসে শেষ করে শুয়ে পড়ল ও । ঘুম আসছেনা । কি যেন একটা অজানা ভয় চেপে বসেছে মনে । সবকিছু য়েন গ্রাস করে নিচ্ছে ।



গ্রীষ্মকাল চলছে । গরম পড়েছে একটু । একটু বললে ভুল হবে । এবার রেকর্ডেড গরম পড়েছে । এর মাঝেই কাথা গায়ে জড়িয়ে নিল পূর্ণ । সকালের অপেক্ষা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল ! এক ঘুমে রাত পার ।



পরদিন সকালে না খেয়েই কলেজে চলে গেল পূর্ণ । মা খেতে বললে কোন কথা না বলেই দ্রুত পা চালিয়ে বের হয়ে গেল ।

পিছু ডেকেও কোন লাভ হলনা । মেয়ের অদ্ভুত আচরণ বিচলিত করে দিচ্ছে মিসেস রওশনকে । ঠিকমত না খাওয়া, চুপচাপ থাকা । এসব কিছুই চোখ এড়ায়নি মায়ের চোখে । খিটমিটে স্বভাবের হয়ে যাচ্ছে পূর্ণ । ঠিক করলেন, পূর্ণের বাবাকে জানাবেন সবকিছু । এভাবে আর চলছেনা ।



“পূর্ণটা যেন কেমন হয়ে যাচ্ছে !” মিসেস রওশনের চোখে আতংকের ছাপ স্পষ্ট ।

“হ্যাঁ, আমিও ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছি । কারণটা কি ধরতে পারলে কিছু ?” পূর্ণের বাবা অফিসের কাগজ ঘাটাঘাটি ছেড়ে স্ত্রীর দিকে ঘুরে বসলেন । তাকেও বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে ।

“আমিও কিছু বুঝতে পারছিনা । কি যে হল মেয়েটার ! ওর কলেজ থেকে স্যার ফোন দিয়েছিল”

“কিছু বললেন ?”

“বললেন, পূর্ণ ইদানিং পড়াশুনায় খুব অমনযোগী হয়ে পড়েছে । আরও বললেন ওকে ভাল কোন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে ।”

“হুম”

চোখের চষমাটা হাতে নিয়ে গ্লাসটা মুছতে মুছতে চুপ হয়ে গেলেন পূর্ণের বাবা জসিম সাহেব ।

স্বামীকে চুপ থাকতে দেখে আবার বলতে লাগলেন মিসেস রওশন,

“পূর্ণের বান্ধবীদের কাছে জানতে চাইলাম । কিন্তু ওরা কেউ তেমন কিছু বলল না । এড়িয়ে গেল ব্যাপারটা । হয়ত ওরা কিছু জানে । কিন্তু বলতে চাইছেনা ।”

“আর কিছুদিন দেখো । তারপর ঠিক না হলে, ভাল কোন ডাক্তার দেখিয়ে আনতে হবে ওকে”

বলেই চশমা চোখে লাগিয়ে কিসব কাগজ নিয়ে ঘাটতে লাগলেন পূর্ণের বাবা । মিসেস রওশন ও উঠে রান্নাঘরে গেলেন ।



# # #



ক্লাস চলছে ।

ফিজিক্স ক্লাস নিচ্ছেন আশরাফ স্যার । ভরবেগ নিয়ে কথা বলছেন ।

ক্লাসের একেবারে শেষ ব্রেঞ্চে পূর্ণকে মাথা নিচু করে বসে থাকতে দেখে স্যার পূর্ণকে দাঁড়াতে বললেন ।

“পূর্ণ, এত অমনযোগী কেন তুমি ? আগে তো এমন ছিলে না । আর ফিজিক্স তো তোমার ফেবারিট সাবজেক্ট । আর উইকলি এক্সামে এটাতেই তুমি ফেইল করেছ !”

“জি” বলেই বসে পড়ল পূর্ণ ।

সবাই বেশ অবাক হল পর্ণের এরূপ আচরণে । স্যার বেশ কষ্ট পেলেও কিছু বললেন না ।

এরপর থেকে ওর কাছের বন্ধুরাও ওকে ইগনোর করে । কাছে ঘেষে না কেউ । পূর্ণেরও এ নিয়ে কোন মাথাব্যাথা নেই । কি যেন একটা অদ্ভুত ভয় কাজ করে প্রতিনিয়ত ওর মনে ।



কলেজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় মনে হল কে যেন পিছু ডাকল । পিছু ফিরে কাউকে না দেখে আবার হাটতে লাগল পূর্ণ । এবার মনে হচ্ছে কানের কাছে কে যেন বলছে, “পূর্ণ, এসো.. এসো পূর্ণ.. এসো” । ভর দুপুরেও ভয় করতে লাগল ওর । এক দৌড়ে বাসায় পৌছালো । বুয়া দরজা খুলতেই ব্যাগ সোফায় ছুড়ে দিল ।



ড্রইং রুম গোছাতে গোছাতে মিসেস রওশন মেয়েকে ফ্রেশ হয়ে খেতে বললেন । কিন্তু পিছু ফিরে দেখলেন মেয়ে নেই । দরজা বন্ধ করে দিয়ে দিয়েছে ।



# # #



রাতের খাবার শেষে শুতে চলে গেল পূর্ণ । আজ লাইট টা বন্ধ না করেই শুয়ে পড়ল । তবুও ভয়টা বাড়ছে আস্তে আস্তে ।

চোখ বন্ধ করতেই আবার সেই ডাক ।



“পূর্ণ, এসো.. এসো পূর্ণ.. এসো”



# # #



পরদিন সকালে মিসেস রওশনের চিতকার শুনতে পেয়ে প্রতীবেশীরা ছুটে আসে ।

সবাই দেখে, ফ্যানের সাথে পূর্ণের মৃতদেহ ঝুলছে । সুইসাইড !!!!

মিসেস রওশন বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন । একমাত্র মেয়ের মৃত্যুটা সহ্য করতে পারছেন না কিছুতেই ।



কয়েক সপ্তাহ পর ।

কিছুটা স্বভাবিক হয়েছে পূর্ণের পরিবার । কিন্তু মেয়ের মৃত্যুর কারণটা জানা হয়নি জসিম সাহেব কিংবা মিসেস রওশন এর কারও ।



পূর্ণের সবচে কাছের বন্ধু মৌমির কাছে ব্যাপারটা জানতে চান মিসেস রওশন । প্রথমে বলতে না চাইলেও চাপে পড়েই সব বলে দেয় মৌমি ।

“আন্টি, পূর্ণের সাথে আবির নামের একটা ছেলের সম্পর্ক ছিল । ওদের ২ বছরের সম্পর্ক । কোন কারণ ছাড়াই পূর্ণ ব্রেক আপ করে দেয় রিলেশান টা । এর কিছুদিন পরেই সউসাইড করে আবির । এর পর থেকেই পূর্ণ সব সময় কেমন যেন হয়ে থাকত । কারও সাথে কথা বলত না । আমাকে একদিন বলেছিল আবির নাকি ওকে ডাকছে । কানের কাছে ফিসফিসিয়ে ডাকে । আর বলে,



“পূর্ণ, এসো.. এসো পূর্ণ.. এসো”



ফেসবুকে আমি

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.