![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এখানটাই বড় বেশি নিস্তরঙ্গ আজকাল। তরঙ্গ শব্দটা এখন কামড়ে ছিড়ে নিয়েছে মানুষের হট্টগোল আর তাদের ইঁদুর বেড়াল খেলায়। ইদানিং এখানে এত বেশি পাখিদের হাটবাজার বসে যে যে কেউ খানিকটা সময় কাটিয়ে গেলে গদগদ হয়ে ভাবতে পারবে পাখিদের অভয়ারণ্যে ভুল করে ঢুকে পড়লাম নাকি রে হে? পাখি বিশারদরা এই দিকে আসবেননা জানা কথা খোলামেলা জায়গা তো চাইরে ভাই, অরণ্য চাই নইলে কাক পক্ষীদের চোটপাট আর দু একটা ভেতো শালিখের ডাক ছাড়া আর কিই বা শোনা যাবে!
এত যে শান্তির কথা বলছি এখানে একবার এসে দেখুননা চুন খসে পরা দেয়ালের হা -মুখে রক্তের দাগ। স্মৃতিভ্রম আনন্দবালকদের নবাগত মুখের ভেতর খুঁজে পাওয়া যাবেনা কোন চিহ্ন কোন কঠিন শিরা! রাখতো সোনা! রাত বিরোতে বেড়াতিস যদি দু একজন শহীদের সাথে দেখা হয়ে যেত ঠিকই,গণ কবর থেকে উঠে আসতে পারত হাজার হাজার বুদ্ধিজীবী কঙ্কাল অথবা ব্যার্থ প্রেমিক প্রেমিকাদের বেওয়ারিশ লাশ! রাত জাগলেই চোখে পরেনা সব ; আঁধার সেতো রাতের শরীর, নীরবতাই রূপ হয়ে ওঠে অডিও ভিজুয়্যাল ইথারের গণমাধ্যম হয়ে হয়ে। মুখররা শুধু হাত ঘড়িতে সূর্যদয়ের অপেক্ষা কাটাতে চায়।
এখানে কাকের সংখাই বেশি এতো বেশি যে অবাক না হয়ে পারা যায় না রোজ রোজ বিকেলের কুড়োমি দেখতে দেখতে উড়ে আসা কাকের সংখ্যা দেখে বুঝে নেয়া যায় কি এক উদ্ববাস্তুর হাহাকার চলছে সমস্ত শহর জুড়ে। সমস্ত টোকাইরা থলের ভেতর শহরময় বয়ে বেড়াচ্ছে আতঙ্কের বীজ । শহরবন্দী আতঙ্কের ভয়ে কেমন গুটিয়ে নেয়া গুহার ভেতর অন্ধকার আছড়ে পরতেই সূর্যটা গিলে ফেলা রাক্ষসটার খোঁজ নিতে নিতে বেড়িয়ে পড়তে হয় কুমারীর অক্ষয় যৌবন পাহারা দিতে আর ভেতরের ছাগলটাকে খুঁটিতে বেধে রেখে দিতে হয় সীমান্তবর্তী ঘাসের কাছাকাছি এতে করে কাকাতঙ্কের অনুসন্ধান অসমাপ্তই থেকে যায় দিন দিন।
এই সব আতঙ্কের কারণ বুড়ো হাবড়া স্কুলের হেডমাষ্টার রমেশ "ছার "। এক ঢিলে একদিন একটা কাক ফেলে দিতেই দাবড়ে উঠেছিলেন "হারামজাদা তোরে কাউয়ায় ঠুকরাই খাইবো! " এই বুড়োর সাথে সেদিন সন্ধায় দেখা হয়ে গেল হঠাৎ।মাথা উঁচু করে কালপুরুষ দেখতে গিয়ে দেখা গেল একে একে স্কাইস্ক্র্যাপারের মত উঠে গ্যাছে নাগরিক দেয়াল আর কালপুরুষ শুয়ে আছে একটা একটা করে মেঝের পাপোশে। আকাশ আর সন্ধাতারাদের খোঁজে মাঠেই এসে পরা হলো ঘন আঁধারের ফাঁদে এক সময়কার হৃদ্যতার ফাটল জোড়াতে জোড়াতে .....কারা যেন আরও ঘন আঁধারে ছুটে গেল, আগুনে পোড়া কিছু শরীর, এক পাটি জুতো দেখে মনে হলো অগ্নিদগ্ধ ট্রেনের ভেতর পাওয়া গিয়েছিল যার অন্য পাটি। থেমে থাকা ট্রাকের ভেতর দগ্ধ ছেলেটি যাকে দেখতে এসেছিল ইশ্বরের প্রতিনিধি দল, এইতো সেই ছেলেটি ই পিতার কোলের ভেতরে অন্ধকারে গলিয়ে গেল খিলখিল করতে করতে। এইমাত্র দেখা সেই মেয়েটি ধ্বংসস্তূপের ভেতরে যার একপায়ের নুপুরটা বেজে উঠল যেন হঠাৎ :সাথে সেই মেয়েটি যাকে অবরোধের সেই দুপুরে ছেনে খাবে বলে গুম করেছিল কারা যেন ....শকুনের মুখওয়ালা শ্মশ্রুময় মানুষেরা সুন্নতি লেবাসে লোবানের গন্ধ ভরপুর রেখে "লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহ..."তলোয়ারে এঁকে "জাল্লাআল্লাহ " জপে নেমেছিল জেহাদ করবে বলে। তাসের আড্ডায় জমে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থমকে যেতে হয়েছিল গ্যালাক্সির ভেতর বারুদের আস্তর মালুম করে।
অনুভব করার আগেই শূণ্যে নেমে গিয়েছিল পকেট, পাঁচ মিনারে চরশের ধুয়ো দেখতে দেখতে আছড়ে পরতে থেমে গিয়েছি সুগন্ধি পাউডারে গন্ধময় শাড়ির উড়ন্ত রঙ্গালাপে বিশিষ্ট জলতরঙ্গের খসখসে উষ্ণতায়.....।
ফস করে সিগারেট জ্বালাতেই খুব শহুরে কোর্তায় টান পড়ল।
"স্যার আপনি?"
"হারামজাদা তোর হাতে কি? "
"আগরবাতি স্যার! "
"আমার সাথে মশকরা করিস?"
হাত থেকে সিগারেট খসে পরতেই দপ করে জ্বলে উঠল ঘাসের বুক। চোখ অনিমেষ দেখে যাচ্ছে সাত আট বছর আগের একটা মৃত মানুষের মুখ। শীর্ণ। বারোটায় বাজার করে স্কুলে ফেরা অবিকল সেই রমেশ্চন্দ্র। একদিন পেট ব্যাথা বলতে বেতের আগায় ঝেড়ে দিয়েছিলেন অদ্ভূত বেদনার মন্ত্র জপ করে।
"প্যাড ব্যাতা প্যাড ব্যাতা খুঁদের নারী, প্যাডব্যাতা গেছে বাওইন বাড়ি ...বাওইনে দিছে খুইচ্চা..প্যাড ব্যাতা গ্যাছে ঘুইচ্চা...."
"আমি তো মরা ভাবতাছোস! ক হেইডাই ভাবতাছোস? মানুষ মরেনা কুনুদিন। স্থান পার অয়। তোরা তো মরা ভাইবাই দ্বায়িত্ব এড়াইবার চাস! "
"এ কথা তো ক্লাসেই কইছেন কতবার ছার "
"মনে রাখছোস? তুই মনে রাখছোস? ক্লাসে আরও কত কি কইছি কি মনে রাখছোস? তুই পড়া না পারলে আমার খুব রাগ হইতো ক্যান জানতে পারছোস? খুব রাগ অইতোনা ক্যান জানি ....রোগের মধ্যে কতবার তোরে স্বপ্নে দেকছি তুই কি জানোস!"
নিচু মাথা তুলতেই আকাশের গায়ে কালপুরুষকে ঠিক দেখতে পেলাম আবছা...
হেডমাষ্টারটা কোথাও নেই ... শুধু হাজারো কাকের অতঙ্কগ্রস্ত ওড়াওড়ি আরও ভয়ংকর হয়ে দেখা দিতে লাগল আকাশ ঢেকে ফেলার আগাম পূর্বাভাসে ......
©somewhere in net ltd.