নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসাদুজ্জামান জুয়েল

আসাদুজ্জামান জুয়েল

রওশনারা বেগম ও আবদুর রশীদ খানের কনিষ্ঠ পুত্র আমি আসাদুজ্জামান জুয়েল। ১৯৭৮ সালের ০৫ জুন শরীয়তপুর জেলার পালং থানা পালং গ্রামের এক সাধারণ মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করি। শিক্ষা জীবন শুরু মায়ের হাতে। তুলাসার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে পালং তুলাসার গুরুদাস সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এস.এস.সি; শরীয়তপুর সরকারী মহাবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচ.এস.সি; জাজিরা ডিগ্রী কলেজে থেকে বাণিজ্য বিভাগ হতে বি.কম পাস করার পর প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন অনুষদ হতে এলএল.বি ও এলএল.এম সম্পন্ন করি। প্রতিটি ক্যাম্পাসেই কেটেছে মধুর দিনগুলো। ২০০৯ সালের ০৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে আইনজীবী হিসাবে তালিকাভূক্ত হয়ে ২৩ ডিসেম্বর ২০০৯ ঢাকা বার এসোসিয়েশনে সদস্যভূক্ত হই। পরবর্তীতে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১০ শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যভূক্ত হয়ে আইন পেশার সাথে যুক্ত আছি। ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতি, শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি ও শরীয়তপুর জেলা ট্যাক্সেস বার এসোসিয়েশনের সদস্য হিসাবে আইন পেশায় নিয়োজিত আছি। সাংবাদিকতা ও লেখালিখি করি মনের টানে। একই সাথে আইন পেশা ও সাংবাদিকতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে নিরন্তন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কর্ম জীবন শুরু লেখালিখির মাধ্যমে। দৈনিক ভোরের কাগজ দিয়ে সাংবাদিকতার শুরু। এর পর দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক কালের কন্ঠ, দৈনিক গণমুক্তি সহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কাজ করেছি। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৬টি। প্রবাসীদের সুখ-দুঃখ নিয়ে লেখা আমার প্রথম উপন্যাস ‘যেমন আছি লন্ডনে’ প্রকাশিত হয় ২০১২ সালের একুশে বই মেলায়। দীর্ঘ বিরতির পরে ২০১৯ এর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় ভ্রমণ কাহিনী ‘কলকাতা ভ্রমণঃ জীবনে প্রথম কিছু’; প্রবন্ধ সংকলন ‘সমকালীন ভাবনা’ ও প্রথম কাব্য গ্রন্থ ‘হৃদয়ের শব্দক্ষরণ’। ২০২০ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় প্রবন্ধ সংকল ‘সমকালীন ভাবনা-২’ ও দ্বিতীয় কাব্য গ্রন্থ ‘তুই থাকিস পরাণের গহীনে’। এছাড়াও বেশ কিছু বই প্রকাশের অপেক্ষায় আছি। লেখালিখি করি বিভিন্ন ব্লগে। আমার ওয়েবসাইটঃ www.asadjewel.com, নিজস্ব ব্লগঃ www.asadjewel.blogspot.com এছাড়া www.somewhereinblog.net এ নিয়মিত লেখালিখি করি। শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসাবে তিনবার ও লাইব্রেরী সম্পাদক হিসাবে দু্ইবার দায়িত্ব পালন করেছি। বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, শরীয়তপুর জেলা ইউনিটের জীবন সদস্য। প্রগতি লেখক সংঘ, শরীয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি হিসাবে দ্বায়িত্বে আছি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি। সোনালী ব্যাংক লিমিটেড শরীয়তপুর, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, কর্মসংস্থান ব্যাংক, আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক শরীয়তপুর এর আইন উপদেষ্টা হিসাবেও কর্মরত আছি। গরীব-দুঃখীদের মামলা পরিচালনার জন্য জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা শরীয়তপুর জেলা শাখার প্যানেল আইনজীবী হিসাবে দুস্থ্যদের আইনগত সহায়তা প্রদান কাজে নিষ্ঠার সাথে জড়িত আছি। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), শরীয়তপুর জেলা শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, শিক্ষানিকেতন কর্ম কেন্দ্রীক পাঠাগার, শরীয়তপুরের কার্যনির্বাহী সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি দীর্ঘদিন। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও অস্ট্রেলিয়ান বার এসোসিয়েশনের উদ্যোগে ইনটেনসিভ ট্রায়েল এডভোকেসী ওয়ার্কশপ, ২০১০ সালে এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টার এর উদ্যোগে হিউম্যান রাইটস এন্ড রুল অফ ‘ল’, ২০০২ ও ২০১০ সালে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট এর উদ্যোগে শিশু ও নারী বিষয়ক রিপোর্টিং কর্মশালা, ১৯৯৯ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর আয়োজিত কম্পিউটার ট্রেড প্রশিক্ষণ, ২০১০ সালে ইউএসএইড-প্রগতি-কালেরকন্ঠ আয়োজিত দুর্নীতি বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরী ও তথ্য অধিকার আইন বিষয়ক প্রশিক্ষণসহ পেশাগত উৎকর্ষ সাধনের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি। লেখালিখি ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে নিজেকে জড়িয়ে সমাজ সংস্কারে একজন কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। আমার অর্ধপ্রাণ কন্যা রওশন আসাদ প্রিয়ন্তী। সহধর্মীনি মুনমুন সুলতানা লুনা পেশায় শিক্ষিকা। দুই বোন রেহানা আক্তার রেখা এবং কহিনুর আক্তার শিখা এবং একমাত্র ভাই মোহাম্মদ রুহুল আমীন খান আজাদ একজন প্রবাসী। যোগাযোগের জন্য আমাকে মেইল করতে পারেনঃ [email protected]

আসাদুজ্জামান জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

আর কত ফেলানীকে ফেলবে বিএসএফ? সীমান্তে সাধারণ মানুষ হত্যা বন্ধ হোক

২৯ শে জুন, ২০২০ রাত ১০:০৪


দুই হাজার বিশ সালের জানুয়ারি মাসে দুই দিনে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ এর গুলিতে পাঁচ জন বাংলাদেশীর প্রাণ গেছে। দুই দিনে পাঁচ জন দেখে আমাদের হয়তো মনে হচ্ছে সংখ্যাটা বেশি হয়ে গেছে। কিন্তু বাস্তবে প্রতি মাসেই কমবেশি সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী সাধারণ মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। বিষয়টা উদ্যেগজনক হলেও উচ্চ পর্যায়ে তেমন কোন গুরুত্ব পায় না। কেন পায় না তা হয়তো আমার মত আম জনতা বুঝতে পারে না বা পারার কথাও নয়। নিশ্চই কোন বিষয় আছে যা আমরা জানতে পারছি না। প্রতিটি হত্যাই একেকটা ঘৃণ্য অপরাধ। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হিসাবে সবাই সমান। কাজে-কর্মে, শিক্ষা-দীক্ষায়, জ্ঞাণ-গরিমায় হয়তো একেক জনের অবস্থান ভিন্ন ভিন্ন। কিন্তু জীবন ধারণের অধিকার সবার একই। এমনটাই জেনে আসছি এতদিন, মানবাধিকারের সংজ্ঞাও তাই বলে। দুই দিনে যে পাঁচ জন মানুষ মারা গেছে তারা গরু ব্যবসায়ী বা চোরা কারবারি। এমনটাই দাবী করেছে বিএসএফ। কিন্তু গরু ব্যবসায়ী বা চোরা কারবারিরাওতো মানুষ। তাদের আটক করে আইনের আওতায় আনাটাই হতো বিবেকবান মানুষের কাজ। আমি গরু ব্যবসায়ী বা চোরা কারবারিদের পক্ষে বলছি না, মানুষের পক্ষে কথা বলছি। একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা বা একজন সাংবাদিক যদি বন্দী হয়, তাকে মুক্ত করার জন্য আন্তর্জাতিক লবিং-গ্রুপিং শুরু হয়ে যায়। কিন্তু সীমান্তে সাধারণ মানুষ মরলে বা আটক হলে কারো কোন ভ্রুক্ষেপ থাকে না। এটা খুবই দুঃখজনক। আমি সীমান্তে হত্যার তীব্র নিন্দা জানাই।

মানব পরিবারের সকল সদস্যের জন্য সার্বজনীন, সহজাত, অহস্তান্তরযোগ্য এবং অলঙ্ঘনীয় অধিকারই হলো মানবাধিকার। মানবাধিকার প্রতিটি মানুষের এক ধরনের অধিকার যেটা তার জন্মগত ও অবিচ্ছেদ্য। মানুষ এ অধিকার ভোগ করবে এবং চর্চা করবে। তবে এ চর্চা অন্যের ক্ষতিসাধন ও প্রশান্তি বিনষ্টের কারণ হতে পারবে না। মানবাধিকার সব জায়গায় এবং সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এ অধিকার একই সাথে সহজাত ও আইনগত অধিকার। স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক আইনের অন্যতম দায়িত্ব হল এসব অধিকার রক্ষণাবেক্ষণ করা। মানবাধিকারের সংজ্ঞা খুঁজলে জানা যায়, মানবাধিকার হচ্ছে কতগুলো সংবিধিবদ্ধ আইন বা নিয়মের সমষ্টি, যা মানব জাতির সদস্যদের আচার আচরণ ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে বুঝায় এবং যা স্থানীয় ও আর্ন্তজাতিক আইন সমষ্টি দ্বারা সুরক্ষিত যা মৌলিক অধিকারের অবিচ্ছেদ্য অংশ বিষয় হিসেবে ধর্তব্য। এতে কোন মানুষ এজন্য সংশ্লিষ্ট অধিকার ভোগ করবে যে, সে জন্মগতভাবে একজন মানুষ। অন্য কথায় বলা যায়, দৈনন্দিন জীবনে চলার জন্য মানুষের যেসকল অধিকার রাষ্ট্রের সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত তাদেরকে মানবাধিকার বলে। জাতিসংঘের Universal Declaration of Human Rights এর ১ম অনুচ্ছেদে লেখা রয়েছে যে, All human beings are born free and equal in dignity and rights. অর্থাৎ ‘জন্মগতভাবে সকল মানুষ স্বাধীন এবং সমান সম্মান ও মর্যাদা অধিকার।’

বছরের শুরুতেই উত্তরাঞ্চলীয় নওগাঁর পোরশা উপজেলার দুয়ারপাল সীমান্তে গোলাগুলিতে তিনজন নিহত হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে বাংলাদেশে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি। এতে আরও তিনজন বাংলাদেশি আহত হয়ে স্থানীয় বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নেয়। ভোরের দিকে ২০/২৫ জন বাংলাদেশি গরু ব্যবসায়ী ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ফিরছিল। এ সময় ভারতীয় সীমান্তে কেদারিপাড়া ক্যাম্পের বিএসএফ জওয়ানরা তাদেরকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। এতে ভারতীয় সীমান্তের ভেতরেই তিন জন নিহত হন। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা সীমান্তে বিএসএফ'এর গুলিতে আরো দুই বাংলাদেশি নিহতের খবরও প্রকাশিত হয় গণমাধ্যমে। তারাও ভোরে ভারত থেকে গরু নিয়ে ফেরার পথে উপজেলার বনচৌকি সীমান্তের কাছে এই গোলাগুলির স্বীকার হন।

সীমান্তে বেসামরিক নাগরিক হত্যার ঘটনা বাংলাদেশের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জ্যামিতিক হারে বারছে সীমান্তে নিরস্ত্র মানুষ হত্যা। গত বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে জানিয়েছিলেন যে, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের হাতে মোট ২৯৪ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। তিনি আরও জানান, ২০১৯ সালে সীমান্তে নিহত হন ৩৫ জন, ২০১৮ সালে ৩ জন, ২০১৭ সালে ১৭ জন, ২০১৬ সালে ২৫ জন, ২০১৫ সালে ৩৮ জন, ২০১৪ সালে ২৪ জন, ২০১৩ সালে ১৮ জন, ২০১২ সালে ২৪ জন, ২০১১ সালে ২৪ জন, ২০১০ সালে ৫৫ জন ও ২০০৯ সালে ৬৬ জন। কিন্তু বিএসএফ-এর হিসেবে এই সংখ্যা আরো কম। বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা আরো বেশি। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসেবে ২০১৯ সালে সীমান্তে ৪৩ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গুলিতে ৩৭ জন এবং নির্যাতনে ৬ জন। আহত হয়েছেন ৪৮ জন। অপহৃত হয়েছেন ৩৪ জন। ২০১৮ সালে নিহত হয়েছেন ১৪ জন। আর ২০১৭ সালে ২৪ জন। সরকারি হিসাব ধরলে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে সীমান্ত হত্যা বেড়েছে ১২ গুণ। আর বেসরকারি হিসাবে তিনগুণের বেশি।

কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলা অনন্তপুর সীমান্তে ১৫ বছর বয়সী ফেলানী খাতুনের বীভৎস হত্যার নবম বার্ষিকী গেল গত ৭ জানুয়ারি ২০২০। ফেলানী হত্যার কথা আমাদের সবারই মনে আছে নিশ্চই। তবুও একটু পূনরাবৃত্তি করি। আমরা যে ইতিহাস ভুলে যাওয়ার জাতি! নয়াদিল্লীতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন ফেলানী খাতুন। ফেলানী সেদিন তার বাবার সঙ্গে বাংলাদেশে ফিরছিল। অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে নিজ ভূমে ফেরার সময়, ফেলানীর পোশাক কাঁটাতারের বেড়ায় আটকে গিয়েছিলো। ভীত-সন্ত্রস্ত-আতঙ্কিত ফেলানী চিৎকার শুরু করে। ভারতের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী (বিএসএফ) সেই চিৎকারের জবাব দেয় তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে। সেখানেই ফেলানী মারা যায়। মধ্যযুগীয় বর্বরদের মতো ফেলানীর প্রাণহীন দেহটি প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে উল্টোভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল কাঁটাতারের বেড়ার উপর। হয়তো অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমকারীদের ভয় দেখাতেই এমনটা করেছিলো বিএসএফ! ভাবতে পারেন, কতটা বর্বর হলে মানুষ এমনটা করতে পারে?

ফেলানী হত্যার শেষ পরিনতি কী হয়েছিলো জানেন কেউ? ফেলানী হত্যার ফলে বাংলাদেশে এবং ভারতেরও কোনো কোনো মহলে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয় ফেলানীর ঝুলন্ত দেহের ছবি। অনেকে বাংলাদেশকে কাঁটাতারের সাথে ঝুলিয়ে রাখার সাথে তুলনা করেছিলো। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ও ন্যায় বিচারের দাবি উঠেছিলো। ফেলানী হত্যার প্রধান আসামি বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ এবং তার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বিএসএফের নিজস্ব আদালত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে নির্দোষ প্রমাণিত হন। রায় পুনর্বিবেচনা করেও একই আদালত সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন। ফেলানীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশও আমলে নেওয়া হয়নি। ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশেই বুঝাযায় কত বড় অমানবিক ও জঘন্য কাজ করেছিলো বিএসএফ।

বিএসএফ বরাবরই এই ধরনের মৃত্যুকে ‘হত্যা’বলতে নারাজ। তাদের ভাষায় এগুলোকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু’বলে আখ্যায়িত করা হয়। ২০১৯ সালের ১২ থেকে ১৫ জুন ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিজিবি ও বিএসএফের মহাপরিচালকের (ডিজি) বৈঠকের পর, বিএসএফের ডিজি জোর দিয়ে বলেছেন যে এ জাতীয় মৃত্যুগুলো 'হত্যা নয়, অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু'! তিনি অবশ্য স্বীকার করেছেন যে ‘দুর্বৃত্তরা হামলা চালালে আত্মরক্ষায়’বিএসএফ সদস্যরা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেন। ২০১৮ সালের এপ্রিলে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করা হয়েছিল। যেখানে সীমান্ত অতিক্রমের ঘটনায় প্রাণঘাতি অস্ত্রের ব্যবহার না করার ব্যাপারে উভয় দেশ একমত হয়। কিন্তু, এক্ষেত্রে স্পষ্টতই এই চুক্তির লঙ্ঘন করা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। ভবিষ্যতেও চুক্তির লঙ্ঘন করবে বিএসএফ এমনটা সহজেই অনুমেয়।

সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যার প্রধান কারণ বিএসএফের অতিরিক্ত বল প্রয়োগ। দুই দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো ঘনবসতিপূর্ণ। উভয় দেশের বহু মানুষ নদী ভাঙনের কারণে খেত-খামার ও জীবিকা হারিয়েছে। তারা আন্তঃসীমান্ত গবাদী পশু চড়িয়ে, কেউবা গবাদি পশু ও পণ্য পাচারের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। অনেক ক্ষেত্রে, চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে অনেককে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয় বা হত্যা করা হয়। পণ্য পাচারের জন্য শিশুদেরও ব্যবহার করা হয়। কারণ, তাদের ধরা পড়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তবে শিশুরাও নিরাপদ নয়, তারাও সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। সীমান্ত হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনাগুলোর মধ্যে শিশু নির্যাতনের ঘটনাও আছে। ২০১৯ সালের ১০ মে সাতক্ষীরার কুশখালী সীমান্তে বিএসএফের হাতে নির্যাতনের শিকার হন কবিরুল ইসলাম। তার মুখ এবং পায়ুপথে পেট্রল দেওয়া হয়েছিলে। এর ১৭ দিন পর ২৭ মে নওগাঁর শাপার সীমান্তে আজিমুদ্দিন নামের এক রাখালের ১০টি আঙুলের নখ দুষ্কৃতিকারীরা তুলে নেয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

ভারতীয় কর্তৃপক্ষের মতে বিএসএফ আত্মরক্ষার জন্য হত্যা করে। কিন্তু, বাস্তবতা তা বলে না। বেশ কয়েক বছর আগে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) ‘ট্রিগার হ্যাপি’নামে একটি প্রতিবেদনে এ ধরনের বেশ কয়েকটি মামলার উল্লেখ করেছে। যাতে বেঁচে যাওয়া এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেছেন যে বিএসএফ তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা না করে বা সতর্ক না করেই নির্বিচারে গুলি চালায়। বিএসএফ দাবি করেছে যে দুর্বৃত্তরা গ্রেপ্তার এড়ানোর চেষ্টা করলে তাদের সদস্যরা গুলি চালায়। তবে কোনো অপরাধের সন্দেহে প্রাণঘাতি অস্ত্রের ব্যবহার ন্যায়সঙ্গত হয় না।

এইচআরডাব্লিউ, অধিকার ও এএসকের প্রতিবেদন এবং সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার যে অপরাধী হিসেবে সীমান্তে হত্যার শিকার ব্যক্তিরা হয় নিরস্ত্র থাকে অথবা তাদের কাছে বড়জোর কাস্তে, লাঠি বা ছুরি থাকে। এমন ব্যক্তিদের মোকাবিলায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী সম্ভবত অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহার করে ফেলছে। অনেক ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীদের পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে পিঠে গুলি করা হয়েছিল। এইচআরডাব্লিউ আরও উল্লেখ করেছে, তদন্ত করা মামলার কোনোটিতেই বিএসএফ প্রমাণ করতে পারেনি যে হত্যার শিকার ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রাণঘাতী অস্ত্র বা বিস্ফোরক পাওয়া গেছে; যার দ্বারা তাদের প্রাণ সংশয় বা গুরুতর আহত হওয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে। সুতরাং, বিএসএফের মেরে ফেলার জন্য গুলি চালানোর দৃষ্টিভঙ্গি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনে মানুষের জীবনের অধিকার লঙ্ঘন করে। যা ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ হত্যার কারনে হত্যাকান্ডে জড়িত বিএসএফ এর সেই সব জওয়ানদের আর যাই বলা যাক না কেন জওয়ান বা সৌনিক বলা যায় না। কোন জওয়ান বা সৌনিক নিরস্ত্র মানুষকে পিছন থেকে গুলি করে না। পিছন থেকে গুলি করে কাপুরুষেরা, জওয়ান বা সৌনিকরা নয়।

সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী কারা? অবশ্যই কৃষক, গরু ব্যবসায়ী, চোর, চোরা কারবারি, সাধারণ মানুষ। এটা কোন নতুন ঘটনা নয়। ভারতের চোরদের সাথে আতাত করেই গরু আনা হয় বাংলাদেশে, ভারতের চোরা কারবারিদের সাথে যোগসাজসেই কারবারটা করা হয়। এই চুরির ভাগ বাটোয়ারা কোথায় কোথায় যায় একটু খোঁজ নিন। ভাগে না বনলেই নিরস্ত্র চোরগুলো হয়ে যায় ভয়ংকর সন্ত্রাসী অনুপ্রবেশকারী। এছাড়া কৃষকরা সীমান্তে কৃষি কাজ করার কালে হাতে থাকে কাস্তে, কোদাল। ভারতীয় বিএসএফ জওয়ানদের কাছে কাস্তে দোকাল যদি হয় অস্ত্র তাহলে আপনারা যা কাধে নিয়ে ঘোরেন অর্থাৎ সীমান্ত পাহারা দেন তাতো পারমানবিক অস্ত্রতুল্য। বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী চোর, চোরা কারবারিদের ধূপ-ধুনো দিয়ে পূজো করতে বলছি না। তাদের আটক করুন, বিচারের মুখোমুখি করুন, প্রচলিত আইনে বিচার করে শাস্তি নিশ্চিত করুন। কেন তাদের প্রাণে মারা হয়? তাদের বিচারের মুখোমুখি করার সৎ সাহস কি বিএসএফের নেই? কি আনন্দ পান সাধারণ মানুষ হত্যা করে? কি লাভ হয় এই হত্যায়? এভাবে কি বেটাগিরি দেখানো যায়? একে কি বেটাগিরি বলে? হাজারো প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে। জবাব মিলে না। আমরা তো সাধারণ মানুষ। সরকারের মনেও কী এমন প্রশ্ন জাগে না? সীমন্ত হত্যা বন্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন। ভারত বড় রাষ্ট্র, বাংলাদেশ ছোট রাষ্ট্র। এখানে বড় ছোটর কিছু নেই। রাষ্ট্রতো রাষ্ট্রই। বরং যদি ভারত মনে করে তারা বড় রাষ্ট্র তবে বড়র বেশি সহনশীলতা থাকতে হয়। কাজে বড় না হলে সেই বড়র কোন মানেই হয় না। সীমান্তে হত্যা বন্ধ হোক। আর একটি প্রাণও যেন নির্যাতন-গুলির আঘাতে না হারায় সেই প্রত্যাশাই করি।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুন, ২০২০ রাত ১১:০৪

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনি কি বর্ডারের পাশে কোন গ্রামের মানুষ?

২| ২৯ শে জুন, ২০২০ রাত ১১:২২

কল্পদ্রুম বলেছেন: আমার মনে হয় সীমান্ত হত্যা বন্ধের জন্য ভারতের সেনাবাহিনীর প্রতি চাপ দেওয়ার চেয়ে আমাদের মানুষ সীমান্তে যেন অবৈধ ভাবে পারাপার না হয় সেইটা নিশ্চিত করা সরকারের পক্ষে বেশি সহজ এবং জরুরি।

৩| ২৯ শে জুন, ২০২০ রাত ১১:৩৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


@কল্পদ্রুম,

বর্ডারের পাশের গ্রামগুলো মানুষ বেশী অশিক্ষিত, সরকার এদের পড়ানোর কোন চেষ্টা করেনি; বর্ডারের লোকদের জন্য কোন আলাদা চাকুরী নেই।

৪| ২৯ শে জুন, ২০২০ রাত ১১:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: দুনিয়ার সব দেশের সীমান্তে হত্যা হয়। এটা শুধু ভারত বাংলাদেশের সীমান্তে না। যুগ যুগ ধরেই হচ্ছে। এই হত্যা বন্ধ করার জন্য জোরালো ভাবে চেষ্টা করতে হবে। হত্যা বন্ধ করা অসম্ভব না।

৫| ২৯ শে জুন, ২০২০ রাত ১১:৫৯

ঊণকৌটী বলেছেন: আমার মতে চাঁদগাজী সাহেব যে মন্তব্য করেছেন সেটাই সর্বোতম প্রচেষ্টা হবে।

৬| ৩০ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:০০

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: @জনাব চাঁদ গাজী,আমার বাড়ী বর্ডারের শেষ সীমায়।বাড়ীর পরে বাংলাদেশে জায়গা আছে দশ হাত।আমি গ্রামে না থাকলেও গ্রামের লোকজনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ আছে।কোন ইনফরমেশন দিয়ে কি সাহায্য করতে পারি।

৭| ৩০ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:১৭

চাঁদগাজী বলেছেন:



@নুরুলইসলা০৬০৪,

বর্ডারের মানুষ ২০ মাইযলের ভেতর কোন ধরণের কলকারখানা আছে? বর্ডারের কাছে কোন কলেজ, ইউনিভার্সিটি আছে?

৮| ৩০ শে জুন, ২০২০ রাত ১:৩০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: মন্ত্রী বলেছে ভারতের সাথে আমাদের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক । আর আমাদের সাথে ভারতে ত্রিপুরার সীমান্ত ।

৯| ৩০ শে জুন, ২০২০ রাত ৩:২৩

অনল চৌধুরী বলেছেন: ভারতের পাকি বা চীনাদের এভাবে মারার সাহস নাই।
নেপাল-ভূটানে লোকদেরও তারা এভাবে মারে না।
যতো আক্রোশ বাংলাদেশীদের উপর।
পাল্টা হামলা না করা পর্যন্ত এই অবস্থার পরিবর্তন হবে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.