![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ধর্মবিশ্বাস মানুষের চিরন্তন বৈশিষ্ট্য। মানুষের হাজার হাজার বছরের ইতিহাসের সাথে ওতপ্রোতভাবে ধর্ম জড়িয়ে আছে। মানুষের যেমন দেহ আছে এবং দেহের সজিবতা রক্ষার জন্য খাদ্য গ্রহণ করতে হয়, তেমন আত্মাও আছে, সে আত্মার জন্যও খাবার প্রয়োজন। আত্মার সে চাহিদা পূরণ করে ধর্ম। ধর্মের এই অপরিহার্যতার জন্যই যুগে যুগে শত প্রতিকূলতা, শত প্রতিবন্ধকতার মাঝেও মানুষ ধর্মবিশ্বাস পরিত্যাগ করে নি। স্বার্থের বিষে বিষাক্ত হয়ে ধর্ম যখন বিকৃত হয়েছে, তখনও ধর্মের ওই বিকৃত রূপকেই ধর্মভীরু মানুষ প্রকৃত ধর্ম জ্ঞান করে পালন করে এসেছে, তবু ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় নি। পরবর্তীতে স্রষ্টা তাঁর পক্ষ থেকে নবী, রসুল বা অবতার পাঠিয়ে ধর্মের সেই বিকৃতি শুধরে অর্থাৎ ধর্মকে পুনর্জীবন দান করে সমাজ-সংসারকে শান্তি নামক চিরপ্রত্যাশিত বস্তুর সন্ধান দিয়েছেন। এক কথায় ধর্মের সাথে মানুষের আত্মিক বন্ধন অতি প্রাচীন ও এতটাই প্রতিষ্ঠিত যে, এ বন্ধন কখনও ছিন্ন হবার নয়। ধর্মের বিকৃতি, স্বার্থবাদের উন্মেষ এবং ধর্মের পুনর্জীবন- সৃষ্টির এই মহাচক্রের আবর্তে ঘুরতে ঘুরতে আজ পুনরায় ধর্ম বিকৃত। ধর্মবিশ্বাসী মানুষ পথ হারিয়ে দিশাহারা দিনাতিপাত করছে। আর তাদের ঈমান বা বিশ্বাসকে ভুল পথে ব্যবহার করছে ধর্মব্যবসায়ীরা। কেউ ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারে, কেউ রাজনীতির মাঠে আবার কেউ জঙ্গিবাদের পথে ব্যবহৃত হচ্ছে। ধর্মের কল্যাণকর দিক, মানবতার দিক হারিয়ে সেটা কেবল আদেশ-নিষেধের শৃঙ্খলে পরিণত হয়েছে, এমনকি শোষণ-নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে ধর্ম। এমতাবস্থায় প্রয়োজন হয়ে পড়ে ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা উদ্ভাসিত করা, সেই সাথে প্রয়োজন ধর্মের নামে চলা অধর্মগুলো চিহ্নিত করে ধর্মপ্রাণ মানুষকে সে সম্পর্কে সচেতন করা। মানুষ যদি তার ধর্ম কী, এবাদত কী, জেহাদ কী, মানবজনমের সার্থকতা কী, আল্লাহর চোখে মু’মিন কে বা কারা- এ বিষয়ে প্রকৃত শিক্ষা পায় তাহলেই কেবল ধর্ম অকল্যাণের কারণ না হয়ে সমাজের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। তখন ধর্মবিশ্বাস কারও দুশ্চিন্তার কারণ হবে না, আতঙ্কের কারণ হবে না, হবে সুখ-শান্তির আধার, সকল রোগের মহৌষধ।
কিন্তু অতি দুঃখজনক ঘটনা হলো, একদল মানুষ বিকৃত ধর্মের ধ্বজাধারী ধর্মব্যবসায়ী কূপমণ্ডূকদের অযৌক্তিক সব কর্মকাণ্ড দেখে বর্তমানে খোদ ধর্মের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছেন। রোগের সাথে সাথে যদি রোগীরও মৃত্যু হয় তাহলে তাকে রোগ সারানো বলে না। এই চিন্তাশীল মানুষগুলো কী কারণে সেই ভুলটিই করতে যাচ্ছেন। পৃথিবীতে খুব কম বস্তুই আছে যাকে অকল্যাণকর কাজে ব্যবহার করা যায় না। তাই বলে কি সবকিছুকে ধ্বংস করে ফেলতে হবে? কল্যাণ বা অকল্যাণ বস্তুর ব্যবহারের উপর নির্ভর করে। ভারী ইউরেনিয়াম ব্যবহার করে পারমানবিক বোমা তৈরি করা যায়, আবার বিদ্যুৎও উৎপাদন করা যায়। কেউ পারমানবিক বোমা বানাচ্ছে বলে কি খোদ ইউরেনিয়ামকেই নিষিদ্ধ করা যৌক্তিক? এই চিন্তাশীল মানুষগুলো যদি সমাজ থেকে ধর্মের নাম-গন্ধ মুছে ফেলার ব্যর্থ প্রয়াস না চালিয়ে ধর্মের বিকৃতিগুলো মুছে ফেলার জন্য সচেষ্ট হতেন তাহলেই কেবল তাদের সমস্ত প্রচেষ্টা অর্থবহ ও কার্যকরী হতো।
ধর্ম মুছে ফেলার প্রয়াস প্রথম শুরু হয় ইউরোপে। ইউরোপীয় রাজা ও চার্চের মধ্যে দীর্ঘকালের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ফলে এহেন পরিস্থিতির সূচনা ঘটে। অনেকটা বর্তমান পরিস্থিতি দিয়ে সেটা অনুমান করা যায়। বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী রাষ্ট্রনায়কদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে আছে জনসাধারণের ধর্মবিশ্বাস যা বিভিন্ন সময় উন্মাদনায় রূপ নেয়। ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও থেকে শুরু করে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যা নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারকে প্রায়শই হিমশিম খেতে হয়। তাছাড়া পৃথিবীর অনেক দেশেই রাজনৈতিক দলগুলোর ভোটযুদ্ধে ধর্ম অন্যতম একটি বিবেচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ওদিকে সাম্প্রদায়িকতা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ধর্মীয় বিভক্তি, ফেরকা-মাজহাব এবং সেগুলোর আন্তশত্র“তা তো আছেই। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, রাষ্ট্র যদি কল্যাণকর কিছুও করতে চায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সেখানে বাধার প্রাচীর তুলে দেয় ধর্ম। ফলে দেশে দেশে রাষ্ট্র ও ধর্মের লাগালাগি একটি স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থার ভিন্নমুখী এই যাত্রায় দেখা যায় সমগ্র দেশই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে সাংঘর্ষিক অবস্থানে চলে যায়। মূলত এমন পরিস্থিতিতেই ইউরোপ কয়েক শতাব্দী আগে জীবনযাত্রা থেকে ধর্ম মুছে ফেলার প্রয়াস চালিয়েছিল। কিন্তু পূর্বেই বলা হয়েছে, ধর্মের সাথে মানুষের আত্মার সম্পর্ক এবং এই সম্পর্ক এতটাই দৃঢ় যে তা ছেদ করা অসম্ভব ও অবাস্তব। কার্যক্ষেত্রে ইউরোপ সেটা উপলব্ধি করে। সামগ্রিক জীবন থেকে ধর্ম মুছে ফেলার অকার্যকারিতা বিবেচনা করে তাই ১৫৩৭ সালে ইউরোপের রাষ্ট্রনেতারা ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে কেটে ফেলে ব্যক্তিগত জীবনের ক্ষুদ্র পরিসরে নির্বাসন দেয়। জন্ম হয় ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থার।
এখানেই আমাদের মূল বক্তব্য। এই যে রাষ্ট্রকে ধর্ম থেকে পৃথক করে ধর্মকে ব্যক্তিগত জীবনে নির্বাসন দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়া হলো, ধর্ম আজ ব্যক্তিগত জীবনে সীমাবদ্ধ আছে? নেই। ব্যক্তিগত জীবনে সীমাবদ্ধ না থেকে ধর্ম এক শ্রেণির স্বার্থবাদীদের হাতে চলে গেছে। এরা যাচ্ছেতাই ধর্মের অপব্যবহার করে, মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে ভুল পথে পরিচালিত করে ধর্মপ্রাণ মানুষকে হয় রাজনীতির হাতিয়ার বানাচ্ছে, নয়তো জঙ্গিবাদের পথে চালিত করছে। চূড়ান্তভাবে মানুষের ব্যক্তিগত ধর্মও রাষ্ট্রের জন্য হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। আজকের ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ ও কয়েক শতাব্দী পূর্বের ইউরোপীয় ধর্মাশ্রয়ী সমাজের মধ্যে কার্যত কোনোই তফাৎ নেই। সুতরাং ধর্ম মুছে ফেলার প্রচেষ্টা থেকে সরে দাঁড়িয়ে ইউরোপ রাষ্ট্র থেকে ধর্ম পৃথক করার মাঝে যে সম্ভাবনাটুকু দেখেছিল সেটাও মিথ্যা প্রমাণিত হলো। অথচ আজকের কথিত প্রগতিমনা, বিজ্ঞানমনস্ক, আধুনিক চিন্তাধারার ব্যক্তিত্ব, যারা সমাজ নিয়ে, রাষ্ট্র নিয়ে চিন্তা করেন তারা এ সত্যকে অগ্রাহ্য করে মানুষের ধর্মবিশ্বাস মুছে ফেলার মাঝেই সকল সমাধান দেখতে পাচ্ছেন যা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। তাদের বুঝা উচিত যে, যেখানে ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ ব্যর্থ হচ্ছে, সেখানে ধর্মহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন কেবল স্বপ্নজগতেই সীমাবদ্ধ থাকবে, বাস্তবে কোনো কাজে আসবে না।
ধর্মহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাও এক প্রকার অন্ধত্ব। যারা এ ধরনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন বা সমাজ থেকে ধর্ম মুছে ফেলার মাঝে সমাধান দেখছেন তারা যতই নিজেদের মুক্তমনা দাবি করুক আসলে মুক্তমনা নন। মুক্তমনারা মুক্তমন দিয়ে নিরপেক্ষভাবে বিচার করবেন এবং শত মিথ্যার মাঝে যদি সামান্য সত্যের ছিটেফোঁটাও থাকে অবহেলা না করে সেই সামান্য সত্যকেও নিংড়ে নেবেন- এটাই তো স্বাভাবিক। সত্যকে স্বীকৃতি দিতে তিনি কুণ্ঠিত হবেন না যদিও তা স্ববিরুদ্ধে যায়। তিনি দেখবেন না সত্যটা কে বলল, কেন বলল। কারণ সত্য সত্যই, আমার বিরোধীমতের একজন সত্য বলল বলে ওই সত্যের দাম কমে গেল তেমন নয়। আপনি ব্যক্তিগতভাবে ধর্মে অবিশ্বাসী হতে পারেন কিন্তু ধর্ম বা ধর্মগ্রন্থে যে চিরন্তন সত্য কথাগুলো আলোচিত হয়েছে এবং মানুষকে সেই সত্যের পথে দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে সেই সত্যকে কীভাবে অস্বীকার করতে পারেন? ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে বা স্বার্থ উদ্ধার করা হচ্ছে তা ঠিক, কিন্তু তাই বলে আপনি সম্পূর্ণ ধর্ম তথা চিরায়ত সত্যকেই মুছে ফেলবেন? এটা কি মুক্তমনের পরিচয় ব্যক্ত করে? এটাই তো অন্ধত্ব, যে অন্ধত্বে ডুবে আছে ধর্মব্যবসায়ী কূপমণ্ডূকরাও।
আজকে মুক্তমনা দাবিদাররা চরম উগ্র ধর্মবিদ্বেষিতার পরিচয় প্রদান করছে। ধর্মের গায়ে লেগে থাকা অধর্মগুলোকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু না বানিয়ে তারা সরাসরি ধর্ম, ধর্মগ্রন্থ, ধর্মের অবতারগণ, নবী-রসুলগণ বা মহামানবদেরকে লক্ষ করে অশ্লীল ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করছে। তাদের বহুল সমালোচিত ধর্মগ্রন্থগুলোই মানবইতিহাসের পথ পরিক্রমায় শত শত নয়, হাজার হাজার বছর স্বর্ণযুগ উপহার দিয়েছে; তারা যে মহামানবদের হাজারো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে সেই মহামানবরাই বহু মৃতপ্রায় জাতির মধ্যে শুধু প্রাণের স্পন্দনই জাগান নি, চরম অসভ্য জাতিকে সভ্যতার শিখরে আরোহন করিয়েছেন- এ ইতিহাস হয়তো তারা জানেন না, জানলেও বিদ্বেষবশত স্বীকার করেন না। আসলে সংকীর্ণ ও কূপমণ্ডূক দৃষ্টি দিয়ে মহামানবদের ধারণ করা যায় না। তার জন্য সত্যিকার অর্থেই মুক্তমনা হওয়া প্রয়োজন। আমাদের নামধারী মুক্তমনারা মহামানবদের জীবনীতে ভুল ছাড়া আর কিছুই দেখবেন না এটাই স্বাভাবিক। এরা শত যুক্তি দিয়ে এ কথাটি জোর দিয়ে বোঝাতে চান যে, ‘ধর্মব্যবসা, ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতি, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা ইত্যাদি বড় বড় সমস্যার জন্য ধর্মই দায়ী। ধর্ম না থাকলে এসবের সৃষ্টি হতো না। কাজেই ধর্মকে মুছে ফেল।’ এ থিউরিকেই তারা ইনিয়ে-বিনিয়ে, যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে, ইতিহাস দেখিয়ে, বর্তমান দেখিয়ে, পরিসংখ্যান খাড়া করে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কিন্তু বাস্তবে এর যথার্থতা, কার্যকারিতা বিচার করে দেখেন না। আপনি যত শক্ত যুক্তিই দেখান সূর্যকে চন্দ্র কিংবা চন্দ্রকে সূর্য বলে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। পৃথিবীর শত শত কোটি আস্তিককে প্রাণে মেরে ফেলা যতটা কঠিন তাদেরকে কথিত যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে নাস্তিক বানানো তার চেয়ে বেশি কঠিন। এ বাস্তবতা উপলব্ধি করার সময় এসেছে।
ধর্মের বিরোধিতা করতে গিয়ে কথিত মুক্তমনারা যে অশ্লীল ও অন্যায্য মন্তব্য করছে তা ধর্মপ্রাণ মানুষের হৃদয়ে আঘাত করছে। তারা হয়ে পড়ছে বেপরোয়া। এই ধর্মভীরু মানুষগুলোকে আবার শেখানো হচ্ছে- যারা আল্লাহ, আল্লাহর রসুলকে গালিগালাজ করছে, ধর্ম-ধর্মগ্রন্থের অবমাননা করছে তাদেরকে হত্যা করা ফরজ, ঈমানী দায়িত্ব। নাস্তিক ব্লগারদের হত্যা করলে জান্নাত লাভ হবে। ফলে ধর্মপ্রাণ বা ধর্মান্ধ শ্রেণিটি এখন বেপরোয়াভাবে নাস্তিকদের উপর অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। দিনে-দুপুরে রাস্তা-ঘাটে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করছে। আগে জঙ্গি মানেই মনে করা হতো মাদ্রাসার ছাত্র, শিক্ষক ইত্যাদি। কিন্তু বর্তমানে আমরা দেখছি এ ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ডে যুক্ত হচ্ছে নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের শিক্ষার্থীরও। এমনকি অনেক উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। কারণ পূর্বেই বলা হয়েছে- ধর্মের ভিত সমাজ নামক বৃক্ষের মুকুল থেকে মূলের অগ্রভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত। মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত একটি এতিম কিশোর থেকে শুরু করে শহরের নামী দামি কলেজ-বিশ্ববিদল্যায়ের ইংরেজি মাধ্যমে অধ্যয়নরত উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান- ধর্মীয় চেতনার দিক দিয়ে সকলেই এক, জীবন দেবে কিন্তু প্রাণপ্রিয় আল্লাহ, রসুল বা ধর্মগ্রন্থের অবমাননা মেনে নেবে না।
এমতাবস্থায় রাষ্ট্রনেতা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সকলেই চিন্তিত। একদিকে মুক্তমনা নামধারী ধর্মবিদ্বেষীদের আক্রমণ অন্যদিকে স্বার্থবাদীদের দ্বারা ব্যবহৃত অনুভূতিপ্রবণ ধর্মভীরু মানুষের প্রতিআক্রমণ, রক্তক্ষয়ী সংঘাত, সব মিলিয়ে অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের দিকে যাচ্ছে স্বদেশ। এখন সমাধানের পথ একটাই- সংঘর্ষমুখী এই দুই অন্ধত্বের মধ্যে থেকে প্রকৃত সত্যকে চিহ্নিত করা। সেই কাজেই অবতীর্ণ হয়েছি আমরা। মানুষ না খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে না। বাঁচার জন্য খাবার অপরিহার্য। কিন্তু তাই বলে আমি-আপনি সব খাবার খাই? যে খাবার আপনার উপকারে না এসে ক্ষতি করবে, রোগ-বালাই সৃষ্টি করবে এমনকি জীবননাশের কারণ হবে তেমন খাবার আপনি জেনেবুঝে নিশ্চয়ই খাবেন না। একইভাবে, মানুষ কথা বলবে, লিখবে, স্বীয় মত প্রকাশ করবে- এটা তার জন্মগত স্বাধীনতা। এ স্বাধীনতা কেউ কেড়ে নিতে পারে না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমি যা মুখে আসবে তাই বলব, যা ইচ্ছা হবে তা-ই লিখব। আমাকে অবশ্যই আমার মতের ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে যেন তা অন্যকে আঘাত না করে। শান্তিই যদি সবকিছুর চূড়ান্ত লক্ষ্য হয়ে থাকে তাহলে শান্তি বিনষ্ট হয় এমন কথা কেন বলব? তবে হ্যাঁ, আপনি সমালোচনা করতে পারেন। ইসলাম কারও সমালোচনার অধিকারকে খর্ব করে না। উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ সহকারে যে কেউ যে কোনো বিষয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারেন, কিন্তু তা হতে হবে সকল প্রকার অভদ্রতা ও অশ্লীলতাবর্জিত। গালিগালাজ করা ও সমালোচনা করা এক জিনিস নয়। গালিগালাজ সমাজে অশান্তি ডেকে আনে, কিন্তু সমালোচনা অন্যায়কে প্রতিরোধ করে।
অন্যদিকে ধর্মপ্রাণ মানুষদেরকে বুঝতে হবে, যে ঈমান মানুষের কল্যাণে কাজে আসে না সেই ঈমান কখনোই জান্নাতের কারণ হতে পারবে না। যে পবিত্র মানুষটি তাঁর ৬৩ বছরের জীবনে সর্বদা সত্য ও ন্যায়ের ধারক ছিলেন, যিনি মক্কাবাসীদের লোভনীয় প্রস্তাবের মুখে বলেছিলেন- আমার এক হাতে চাঁদ ও এক হাতে সূর্য এনে দিলেও আমি সত্য প্রচারে পিছপা হব না’ সেই সত্যাশ্রয়ী ও সত্য প্রতিষ্ঠাকারী মানুষটিকে তাঁর জীবদ্দশাতেই কত অকথ্য-অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করা হয়েছে, কবি-জাদুকর-গণক-উন্মাদ ইত্যাদি বলে তিরস্কার করা হয়েছে। মক্কার ১৩ বছরে তিনি কি একজন মুশরিক নেতাকেও গুপ্তহত্যার হুকুম দিয়েছিলেন? তিনি যদি চাইতেন তাঁর প্রতি আনুগত্যশীল আসহারদের কেউ কি আবু জাহেল বা আবু লাহাবের জীবন নিয়ে নিতে পারতেন না? কিন্তু রসুলাল্লাহ ও পথে যান নি, কারণ ওটা ইসলাম (শান্তি) প্রতিষ্ঠার পথ নয়। ওটা সন্ত্রাস, যা ইসলামে নিষিদ্ধ। রসুলাল্লাহ সন্ত্রাস করেন নি, তিনি যুদ্ধ করেছেন। তিনি যখন রাষ্ট্রনায়ক হয়েছেন, প্রতিটি রাষ্ট্রপ্রধান রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য যে যে সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন রসুলাল্লাহ তা নিয়েছেন। রসুলাল্লাহ জানতেন আজ যারা অজ্ঞতাবশত তাঁকে অস্বীকার করছে, গালিগালাজ করছে, নির্যাতন করছে কাল তারাই ইসলামের পরিণতি যে শান্তি ও সুবিচার তা অনুধাবন করে লজ্জা ও অনুশোচনা নিয়ে তাঁর পদচুম্বন করবে। বাস্তবে সেটাই হয়েছিল। মক্কায় থাকতে যারা ছিলেন ইসলামের ঘোর শত্র“, একটা সময় পরে তারাই রসুলাল্লাহর দক্ষিণ হস্তের ভূমিকা পালন করেছেন।
বর্তমানে এই জাতি নিজেরা নিজেরাই রাজনৈতিকভাবে শত-সহস্র দল-উপদল, ধর্মীয়ভাবে ফেরকা-মাজহাব, আধ্যাত্মিকভাবে বিভিন্ন তরিকা ইত্যাদি ভাগে বিভক্ত হয়ে আছে এবং প্রত্যহ নিজেদের মধ্যে দাঙ্গা-হাঙ্গামা চালিয়ে যাচ্ছে। কাজেই যারা সত্যিই ইসলামকে ভালোবাসে, আল্লাহর রসুলকে ভালোবাসে, ধর্মগ্রন্থকে ভালোবাসে তাদের প্রথম কর্তব্য হওয়া উচিত এই জাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করা। তাহলেই প্রকৃত ইসলামের হারিয়ে যাওয়া সোনালি যুগ ফিরে আসবে এবং ধর্মবিদ্বেষীরা তাদের সকল প্রশ্নের চাক্ষুষ জবাব লাভ করবে।
১৪ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:২৪
মোহাম্মদ আসাদ আলী বলেছেন: কে বলেছে সবাই অন্ধ? শিরোনাম পড়ে যা মনে আসে তাই মন্তব্য করার অভ্যাস ছাড়ুন। প্রতিভা যেমন স্বমহীমায় বিকশিত হয়, কেউ রুদ্ধ করতে পারে না, তেমনি মানুষের অজ্ঞতা ও মুর্খতাও ঢেকে রাখা যায় না। আপনার নির্বুদ্ধিতা স্পষ্ট, আমার বিশ্বাস সামুর প্রত্যেক ব্লগার আপনাকে এই গুণেই চেনে। এবার পরিচিতিটা পাল্টান। ভাই, ভালো হতে পয়সা লাগে না, বাসনাই যথেষ্ঠ। ভালো হয়ে যান।
২| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:২১
আলতাব হোসেন বলেছেন: ভাল লাগলো
১৪ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:২৪
মোহাম্মদ আসাদ আলী বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:৪৩
তাসরুজ্জামান বাবু বলেছেন: 'মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত একটি এতিম কিশোর থেকে শুরু করে শহরের নামী দামি কলেজ-বিশ্ববিদল্যায়ের ইংরেজি মাধ্যমে অধ্যয়নরত উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান- ধর্মীয় চেতনার দিক দিয়ে সকলেই এক, জীবন দেবে কিন্তু প্রাণপ্রিয় আল্লাহ, রসুল বা ধর্মগ্রন্থের অবমাননা মেনে নেবে না ।'
হক কথা । সময়ের প্রয়োজনে লিখিত ।
তবে সময়ের প্রয়োজনে দুই একটা বিষফোঁড় মার্কা ইসলামের দুশমনকে কিন্তু সাইজ করা লাগে। হুজুর (সাঃ) কিন্তু মাদানি জীবনে কাব বিন আশরাফ এর মতো ঘোর ইসলামবিদ্বেষী ইহুদীর মাথা চেয়েছিলেন (এবং সাহাবিরা এনেও দিয়েছিলেন । এরকম আরো কিছু গুপ্তহত্যার নজির আছে ইসলামে । । ইসলামে মুরতাদের শাস্তি কিন্তু নির্ঘাত মৃত্যুদন্ড, যদি সে না তওবা করে)। আমাদের তো মাক্কী, মাদানী দুই জীবনের ওপরই আমল করা লাগে, তাই না?
ভেবে আফসোস হয়, আমাদের কর্তৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, আমাদের আইন আদালতের কাছে মানুষের বিশ্বাসে আঘাত দেওয়ার কোনো বিচার নেই, শুধু শরীরে আঘাত দেওয়ারই বিচার আছে । তাইতো কিছু লোক বেপরোয়া হয়ে নিজেদের বিচার নিজেরাই করে নেয়।
সব মিলিয়ে চমৎকার একটি লেখা । ধন্যবাদ লেখককে ।
৪| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:৫১
রাতুলবিডি৪ বলেছেন: মুক্তমনা দাবিদাররা চরম উগ্র ধর্মবিদ্বেষিতার পরিচয় প্রদান করছে
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:০৭
চাঁদগাজী বলেছেন:
সবাই অন্ধ, শুধু আপনার চোখ আছে?