নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধূসর ক্যানভাসে সবুজের গল্প

আসফি আজাদ

আমি খুঁজিতেছি নিজ লোকালয়

আসফি আজাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: কুক্কুট

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:১৯

সলিমের মেজাজ কয়দিন হয় বেশ বিগড়াইয়া রইছে। বোধগম্য কারণেই বিগড়াইয়া রইছে। বউ তারে পাত্তা দিতেছে না। রাত্রিকালে একটু আদর সোহাগের সুযোগ দিতেছে না। হ্যাতে ঘুমাইল তো কাদা। কাদা না, তার চেয়াও তরল কিছু কিম্ভূতকিমাকার।



সলিম ঠাওর কইরা উঠতে পারে না। কাজ-কাম সেও করে বৈকি! মাঠের কাজ কি শ্বশুর বাড়ী বেড়ানো নাকি? রক্ত পানি কইরাই তবে প্রতিদিন বাড়ী ফিরতে হয়; তবেই না পেটে ভাত ওঠে। কই তার শরীর তো ঘুমে কাদা হয় না? বরং কাজ যত বেশী, শরীর তত সজাগ; নগদে পাওনা বুইঝা নিতে চায়।



ভোর হয়া আসতেছে। কুঁকর‍্যাগুলা ডাকাডাকি শুরু কইরা দিছে। সলিম পাশ ফিরা শোয়। আঙ্গুরী বিছানায় নাই। কখন উইঠা গেছে সলিম টেরও পায় নাই। শরীরের হিসাবের চিন্তায় তার সব গড়বড় হয়া যায়। সে বিছানায় থাইকাই বুঝতে পারে আঙ্গুরী খোপ খুইল্যা দিল। আরে বাবা তোর আরেকটু বিছনায় থাকলি কি হত? না হয় বেশী হলি নরম শরীরটা নিজের শরীরের সাথে পিষতি পাইরত। এই টুকি তো! না, তেনার কুঁকর‍্যার খোপ খোলার হিরিক লাগিছে। সলিম শুয়ে শুয়েই রাগে গজ গজ করতে থাকে।



বেলা আরেকটু বাড়লে সলিমকে বিছানা থিকা উঠেতিই হয়। মাঠে মেলা কাম পইরা রইছে। শুয়্যা শুয়্যা অঙ্গুরীর চিন্তা করলি পেটে ভাত উঠবি ন্যানে। সলিম দাঁত ঘষতে কল পাড়ে যায়। ছাইড়া দেওয়া কুঁকর‍্যাগুলা কল পাড়ের আশে পাশেই চইড়া বেড়াইতেছে। সলিম কোন কারণ ছাড়াই মনে মনে গাইল পাড়ে। হাত-মুখ ধুয়্যা ঘরের দিকে যাইতেই বড় মোরগটা লাল মুরগীটাকে ধাওয়া কইরা সলিমের ঘরের দাওয়ার উপরেই টুঁটি চাইপা ধরে। কি চিন্তা কইরা সে ঘরে না যায়া রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ায়।



না, রান্না ঘরেও আঙ্গুরী নাই! কাজের মাইয়াডারে ডাইকা ভাত বাড়তে বলে সে। তড়িঘড়ি কয়টা মুখে গুঁইজা গরু নিয়া ক্ষেতের দিকে চইলা যায় সলিম। হাটতে হাটতে বাড়ীর পাশের পুকুরটার দিকে তাকায়। না কেউ নাই পুকুর পাড়ে। পুকুরের পানি শান্ত-স্থির; যেন্‌ কেউ কোন কালে সেইখানে নামে নাই।



ক্ষেতে পৌঁছায়াই গরুগুলারে পাশের মাঠে ছাইড়া দেয় সলিম। মাঠে ঘাস আর বেশী নাই। কয়দিন বাদেই ঘাস কিনতে হইব। লাল-সাদা গরুটারেও পাল দেওয়া দরকার। সময় কইরা তাড়াতাড়ি নিয়া যাইতে হইব। পাওয়ার টিলারের শব্দে সংম্বিত ফেরে সলিমের। লাল আগেই ক্ষেতে আইসা কাজ শুরু কইরা দিছে। সেও তাড়াতাড়ি কাজে নাইমা পড়ে। ক্ষেতের মাটি চষতে তার ভালোই লাগে। একটা সুখ পাওয়া যায়। কিন্তু কয়দিন তার কাজে মন বসতিছে না। একটু দূরেই কাশেম তার ক্ষেতে কাজ করতিছে। সলিম লক্ষ্য করে কাশেম রাস্তা দিয়া আগায়া আসা আদুরীরে গোগ্রাসে গিলতেছে। দীঘির পাড়ার মাইয়া আদুরী। দেখতে শুনতে ভালোই। কাছাকাছি আসতিই কাশেম আদুরীরে ঈঙ্গিতপূর্ণ কথা কয়। কাশেমের ঈঙ্গিতে তার শরীরটা আবার জাইগা ওঠে। মাটির সাথে সম্পর্কটা গভীর হইতেছে না। বার বার তার কাইটা যাইতেছে।



ক্ষেত থেকে উইঠা সলিম এক পাশে আইসা বসে। লালকেও ডাকে। দুইজনে মিল্যা বিড়ি ধরায়। লম্বা একটা টান দিয়া লাল জিজ্ঞাস করে, কছে তোমার হইছেডা কি? কেমন উড়ু উড়ু ভাব ধরিছ্যাও। শইল ঠিক আছে তো? সলিম এক গাল ধোঁয়া ছাইড়া কয়, সব ঠিকই আছে; তয় কাজে মন দিবের পারতিছি ন্যা। বুইঝতেছি ন্যা। সলিমের কথা শেষ হয় না, তার আগেই দুইজনের সামনে দিয়া জোড়া ফড়িং উইড়া যায়।



সলিমের বিড়ির স্বাদটা তিতা লাগে। তাড়াতাড়ি বিড়িটা শেষ কইরা আবার তারা কাজে নাইমা পড়ে। সে কিছুই ঠাঁই পায় না। হলোডা কি তার? পোলাপানের লাহান সে এগুলান কি চিন্তা কইরতেছে। কোনভাবেই সে কাজে মন বসাইতে পারে না। শুধুই তার সামনে দিয়্যা জোড়া ফড়িং উইড়্যা যায়। শেষ পর্যন্ত সে লালকে তার শরীরটা ভালো লাগতেছে না বইলা বাড়ী পিলি রওনা দেয়।



সলিম আস্তে ধীরে আগাইতে থাকে। এখনি তার বাড়ী যাওনের ইচ্ছা নাই। রোদ পড়তে শুরু করছে। সে বাজার পিলি হাটা ধরে। পথে খলিল ডাক্তারের ডিস্পেন্সারিতে সে কিছুক্ষণ বইসা হালকা আড্ডা মারে। হাসাপাতালের পাশের বড় পুকুরটাতে কয়েকজন গোছল করতেছে। পানিতে শরীরের সাথে লেপ্টে থাকা শাড়ীর দৃশ্য তার চোখে আটকায়া থাকে।



সলিম বাড়ী ফিরে সাঁঝবেলা পার কইরা। সোজা কল পাড়ে যায়া গোছল সাইরা তবেই ঘরে ঢোকে। আঙ্গুরী ঘরেই আছে। সলিম দেইখাও না দেখার ভান করে বিছানায় গাটা এলায়া দেয়। আঙ্গুরীই নিরবতা ভঙ্গ করে। জিজ্ঞাস করে, কই গেছিল্যা? লাল কলো সেই কুন সম নাকি তুমি বাড়ী আসবার কথা কয়া ক্ষেত থিকা চইল্যা আসছো! সলিম গা করে না; সে উত্তর দেবার প্রয়োজন অনুভব করে না। আঙ্গুরী আবার কয়, কি হলো? কথা নাই ক্যা? কামরু কলো তুমি নাকি খলিল ডাক্তারের ওনেও গেছিল্যা! কি ব্যাপার, শরীর খারাপ নাকি? সলিমের উত্তর দিতিই হয়। পাশ ফির‍্যা শুইতে শুইতে কয়, না কিছু হয় নাই। এম্মি গেছিল্যাম। আঙ্গুরী বুঝতে পারে না সলিমের সমস্যাডা কি। তবে গা ছাড়া ভাবটা তার নজর এড়ায় না। আবার জিজ্ঞেস করে দুপুরে কনে খাইছ্যাও, বাইত আইসা খায়াও তো যেনে যাওয়ার স্যানে যাইবের পাইরত্যা। সলিমের হঠাৎই রাগ হয়। কয়, ক্যা বাইত আইসা খাওয়া লাগবি ক্যা? খাওয়া কি আর কোনে পাওয়া যায় না?



আঙ্গুরী সলিমের আঁচটা আন্দাজ করতে পারে। সে কাছে আগায় আইসা সলিমের গা ঘেইষা বইস্যা শাড়ীটা আলগা কইরা দেয়। অন্য সময় হলি সলিম আঙ্গুরীকে এই অবস্থায় বুকে পীষ্যা ফেলত। কিন্তু আঙ্গুরীর শরীরের উষ্ণতা তার শরীরে এখন কোনই অনুভূতি জাগাইতে পুরাপুরি ব্যর্থ হয়। তার শরীরের বেবাকটি তাপ যেন্‌ আঙ্গুরীর মইধ্যে ঢুইক্যা পুরা ঠান্ডা মাইরা গ্যাছে।



খোপের মধ্যে মোরগটা আবার কোন মুরগীর ওপর চড়াও হইছে। বেশ কিছুক্ষণ খোপের ভেতর থিকা কক কক শব্দ আসে। সলিম স্পষ্টতঃই মোরগটার ওপর বিরক্ত হয়।



সে সহসাই তার ইদানিং মাটির সাথের অগভীর সম্পর্কের সূত্র টের পায়। মাটি চষার সঠিক তাল-লয়টা সে নতুন কইরা বিছানায় শুয়্যা শুয়্যাই আবিষ্কার করে। ভাবে আগামীকাইল লাঙ্গল-জোয়াল নিয়াই নাইমা পড়বে মাটিতে, জমিক গাইথা ফেলবে লাঙ্গলের ফলায়। আঙ্গুরী আরও কাছে আসে। কিন্তু সলিমের সেই দিকে মনোযোগ নাই।



জোড়া ফড়িঙ্গেরা সব মাঠের দিকে রওয়া দিছে। সলিমের এখন অন্য কিছু চিন্তার সময় নাই। মাটির সাথের সম্পর্কডারে অন্য গভীরতায় নেওয়া লাগবে। আগামীকালের লাইগ্যা মেলা কাম জমা হয়া রইছে। খোপ থিকা আবার শোরগোল ভাইসা আছে। মোরগটা মুরগীগুলারে বেশ জ্বালাইতেছে!

মন্তব্য ১৯ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৪০

২৪ বলেছেন: valo laglo.

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:১৮

আসফি আজাদ বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:০১

মাথাল বলেছেন: (Y)

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:১৯

আসফি আজাদ বলেছেন: ??

৩| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৩৩

রেজিস্টার বলেছেন: তারপর কি হইল?

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:২০

আসফি আজাদ বলেছেন: সেইটা সলিম জানে।
ধন্যবাদ।

৪| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:১৫

অনির্বান বলেছেন: গত ভাল লাগছে।

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:২০

আসফি আজাদ বলেছেন: ধন্যবাদ।

৫| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:২৯

রক্তভীতু ভ্যাম্পায়ার বলেছেন: :| :| :| :| :| :|

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:২১

আসফি আজাদ বলেছেন: :| :| :|

৬| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:৩৮

াগলা শান্তু বলেছেন: (y)

৭| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:৩৯

াগলা শান্তু বলেছেন: :-B :#)

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:২২

আসফি আজাদ বলেছেন: এতো খুশি ক্যান? :)
ধন্যবাদ।

৮| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৩৯

এম . এম ওবায়দুর রহমান বলেছেন: ভালো লিখেন। চলুক

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:২৩

আসফি আজাদ বলেছেন: ঠিক আছে, চলুক তবে।
ধন্যবাদ।

৯| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:২৩

সায়েম মুন বলেছেন: ভাল লাগছে কুক্কুট গল্প। সুন্দর লিখেছেন।

কোন এলাকার ভাষা এটা?

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৩০

আসফি আজাদ বলেছেন: পাবনা/সিরাজগঞ্জের ভাষা।
ধন্যবাদ।

১০| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৩১

ইনকগনিটো বলেছেন: মিনিংফুল।


ভালো লাগলো। শুভকামনা।

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:০৩

আসফি আজাদ বলেছেন: চেষ্টা করেছি। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.