![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সজীব চাকরি পাওয়ার পর প্রথম আমার এলাকায় আসলো । শিশির কে ফোন দিলাম বাসা থেকে নামার জন্য । এর ভিতরে সজীব মাগরিবের নামাজ পরতে গেলো । কিছুক্ষণের মধ্যে শিশির আসলো । নামাজ শেষে সজীব যখন আসলো তখন শিশির সজীবকে বলল
শিশিরঃ দোস্ত চাকরি পাইছস । কিছুই খাওয়ালি না । কেমনে কি !!
সজীবঃ কি খাবি বল ??
শিশিরঃ চল কাচা লংকায় যাই
এই কথা বলে শিশির চায়ের কাপ টা মামার দোকানে রাখতে গেলো
আমিঃ চল কাজিন খাইয়া আসি কাচা লংকায়
সজীবঃ চল
যেমন কথা তেমন কাজ । আমরা রিক্সাতে করে গেলাম কাচা লংকায় । ফালুদা খেয়ে আমরা আবার চলে আসলাম পানির ট্যাঙ্কির মোড়ে । রিক্সা থেকে নামার পর সজীব আর শিশির কথা বলতে বলতে সামনে চলে গেলো । আমি যখন রিক্সা ভাড়াটা দিতে গেলাম তখন দেখলাম যে একটা বয়স্ক ( ৬৫-৭০ ) লোক শিশিরকে ডাক দিতে যেয়েও দিল না । তার হাতে ছিল কমোড এবং ইউরিন পাচের জন্য একটা পট টাইপের । আমি এই জিনিসটা খেয়াল করে লোকটার কাছে যেয়ে জিজ্ঞাসা করলাম
আমিঃ চাচা আপনার কি কোন সমস্যা হইছে ??
কিন্তু চাচা কোন কথা বলল না । ২য় বার জিজ্ঞাসা করার পর চাচা বলল
চাচাঃ হ বাবা
আমিঃ কি হইছে আপনার ??
তখন পাঁশে একটা রিক্সাওয়ালা মামা বলল
রিক্সা মামাঃ আরে কইয়েন না মামা । উনি কইতে পারতেছেন না কই থাইকা আসছেন । মনে হয় হারায় গেছেন । অনেক কইরা কইলাম কই যাইবেন কইতে পারল না । গ্রাম থাইকা মনে হয় নতুন ঢাকায় আসছে
আমিঃ চাচা কই যাইবেন আপনি ? কই থাইকা আসছেন ?
চাচাঃ আমি যাব হসপিটালে । কিন্তু রাস্তা হারায় ফেলছি
আমিঃ চাচা চিন্তা কইরেন না । আগে কন আপনি কন হসপিটাল থাইকা আসছেন ?
চাচাঃ আমার তো হসপিটালের নাম মনে নেই
এই কথা বলতে বলতে শিশির আর সজীব আসলো
শিশিরঃ কি হইছেরে ?
আমিঃ আরে কইস না চাচা রাস্তা হারায় ফেলছে । কইতে পারতেছে না কোন হসপিটাল
শিশিরঃ খারা দেখতাছি । ঐ, সজীব নাকি যাইবোগা
সজীবঃ হ কাজিন জাইগা । আরেক দিন আসুমনে । তুই আর শিশির আমাগো এলাকায় জাইস । যাবি কিন্তু
আমিঃ আচ্ছা যা । আসিস আবার
শিশিরঃ যা তাইলে
এই বলে সজীব চলে গেলো । তখন শিশির চাচাকে জিজ্ঞাসা করলো-
শিশিরঃ চাচা কই থাইকা আসছেন ?
চাচাঃ আমি তো এসেছি চাঁদপুর থেকে । আর এখানে এসেছি একটা রোগীকে নিয়ে হসপিটালে
শিশিরঃ চাচা আপনার কি মনে নাই আপনি কোন হসপিটাল থাইকা আসছেন ?
চাচাঃ মনে নেই
আমিঃ চাচা আপনার সাথে কি কেও আসে নাই ?
চাচাঃ আসছে আরও দুই জন
আমিঃ তারা কই ?
চাচাঃ একজন হসপিটালে রোগীর সাথে, আরেক জন কোথায় যেন গেছে জানি না
আমিঃ তাহলে আপনি তাদের কাছে ফোন দেন । তারা হসপিটালের নাম কইলে আপনি রিক্সা দিয়া চইলা যাইয়েন হসপিটালে । এই রিক্সাওয়ালা মামা আপনারে নিয়া যাইব
চাচাকে দেখে মনে হইতেছিল, চাচা মনে হয় আমাদের সাথে এই সম্পর্কে কথা বলতে একটু দ্বিধাবোধ করতেছিল । তবুও চাচা বলল
চাচাঃ একজনের নাম্বার আছে কিন্তু আমি তার নাম্বার টা চিনি না । আমাকে সে সকালে ফোন দিয়েছিল । আর আরেকজন যে রোগীর সাথে আছে তার কাছে মোবাইল নেই ।
আমিঃ তাইলে ফোনটা দেন আমি নাম্বারটা বাইর কইরা দিতাছি । আপনি সকালের সময়টা বলেন আমি দেখি ঐসময় আপনারে কে ফোন দিছে ।
এই সময় হৃদয় আসলো
হৃদয়ঃ কি হইছে রে । তোরা লোকটারে নিয়া এমন করতাছস কেন ? চাচা ওরা কি আপনারে জালাইতাছে ?
আমি ওকে সবকিছু খুলে বললাম । তখন ও বলল
হৃদয়ঃ চাচা আপনি আপনার পরিচিত কাওকে ফোন দেন । তারা হসপিটালের নামটা বলুক আপনারে আমারা ঐ খানে দিয়া আসমু
চাচাঃ কেও জানে না হসপিটালের নাম
তখন চাচা তার পরিচিত একজনকে ফোন দিল এবং তার সাথে হসপিটালে আসা লোকটার মোবাইল নাম্বারের লাস্টের ২ ডিজিট বলতে বলল । তখন লোকটা চাচকে বলল ২৫ । তখন চাচা আমাকে বলল
চাচাঃ আমার মোবাইল থেকে যেই নাম্বারের শেষে ২৫ আছে ঐ নাম্বারটা বের করো । এই নাম্বারটা আমার সাথে হসপিটালে আসা লোকটার নাম্বার
তখন আমি সাথে সাথে নাম্বারটা মোবাইলে খোঁজলাম এবং পাইয়া ফোন দিলাম । কিন্তু নাম্বারটা বন্ধ দেখাইতেছিল । অনেক বার ট্রাই করার পরও কোন কাজ হল না । নেটওয়ার্কের প্রবলেমের কারনে এই রকম হইতেছিল
আমিঃ চাচা আপনি এইগুলা ( চাচার হাতে থাকা কমোড এবং ইউরিন পাচের পট ) কইথাইকা কিনছেন ?
চাচাঃ নাম বলতে পারবো না । জানি না কোথা থেকে কিনেছি
আমিঃ আপনি যেই জায়গা থাইকা কিনছেন ঐ জায়গা থাইকা কত মিনিট হাইটা গেছেন কিনতে ?
চাচাঃ ২০-৩০ মিনিটের মতো হবে
হৃদয়ঃ আপনি হাটতেছেন কত মিনিট ধইরা ?
চাচাঃ ১ ঘণ্টার কাছাকাছি
আমিঃ তাহলে তো অনেকক্ষণ
শিশিরঃ চাচা আপনার কি কিছুই মনে নাই ? কইথাইকা কিনছেন ?
চাচাঃ আমি রাস্তা পার হয়ে পশ্চিম পাঁশে যেয়ে কিনেছি
হৃদয়ঃ চাচা আপনি যেই হসপিটালে সেইটা দেখতে কেমন ? তার সামনের গেট কি গ্লাস দেওয়া
চাচাঃ গ্লাস দেওয়া নাই কাচ দেওয়া । আর হসপিটালের পাঁশে একটা বড় বাজার আছে
এভাবে অনেক প্রশ্ন করলাম হসপিটালের ইমেজ টা মনের ভিতরে তৈরি করার জন্য । কিন্তু পারলাম না । চাচা কোন উত্তর ঠিকমত দিতে পারল না । চাচা জানেই না কিছু । কিভাবে বলবে
আমিঃ চাচা এভাবে তো কিছু বোঝা যায় না । আপনি যারে নিয়া আসছেন উনার কি হইছে ?
এই কথা জিজ্ঞাসা করার পর চাচা অনেক কষ্টদায়ক একটা কথা বললেন মুখটা মলিন করে
চাচাঃ ওর পা ভেঙ্গে গেছে । মোটরসাইকেলের সাথে এক্সিডেন্ট করেছে । ওর বাবা মা কেও নেই । এতিম । আমরা ওর কিছু হই না । প্রতিবেশী হই । ছেলেটা কথাও বলতে পারে না । বোবা । এক কথায় প্রতিবন্দি । একছিডেন্টের কারনে ওর এক পা কেটে বাদ দিতে হয় । মোটরসাইকেল একছিডেন্টের পর মোটরসাইকেলওয়ালার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নেওয়া হয় চিকিৎসার জন্য । কিন্তু ওর এই পর্যন্ত খরচ হয়ে গেছে ৮০ হাজার টাকার উপরে ।
তখন হৃদয় চাচাকে বলল
হৃদয়ঃ চাচা আপনি কি পঙ্গু হাসপাতালের কথা কইতাছেন
চাচাঃ না । পঙ্গু হাসপাতালে ওকে ভর্তি করেনি । আমরা ওকে আরেকটা হাসপাতালে নিয়ে গেছি ।
আমিঃ চাচা প্রাইভেট হাসপাতালে ?
চাচাঃ মানে ?
আমিঃ মানে ক্লিনিকে ?
চাচাঃ হ হ ক্লিনিকে ।
হৃদয়ঃ চাচা আপনার কি মনে আছে ক্লিনিক কয় তলা ?
চাচাঃ আমি গুনি নাই বাবা । তবে মনে হয় চার তলা
আমিঃ চাচা আপনার কি একটু নামও মনে নাই ক্লিনিকের ?
চাচাঃ না
শিশিরঃ চাচা আমরা কয়ডা ক্লিনিকের নাম কই দেহেন তো এইগুলার ভিতরে আছে নাকি ? ট্রমা হাসপাতাল , পপুলার হসপিটাল ( শ্যামলীর ভিতরে )
চাচাঃ ক্লিনিক আবার কয়টা হয় । ক্লিনিক তো ক্লিনিকই । একটা মানুষের আবার কয়টা নাম হয় । একটাইতো
চাচা মনে করেছিল মানুষের যেমন একটা নাম তেমন ক্লিনিকও একটা নাম । তখন আমি চাচাকে বলাম
আমিঃ চাচা ক্লিনিক কারো নাম না । মনে করেন আমারা মানুষ । সব মানুষের তো একটা নাম না । আমার নাম আলাদা আপনার নাম আলাদা । এইরকম ক্লিনিকের নামও আলাদা আলাদা হয়
আমি চাচারে বুঝাইতে যাইয়া নিজেই বেকুব হয়ে গেলাম । তবুও চাচা তখন কিভাবে যেন বুঝেছে
চাচাঃ না বাবা এর ভিতরে মনে হয় সেই হসপিটাল নেই
হৃদয়ঃ চাচা আপনি চিন্তা কইরেন না । আপনারে দরকার হইলে আমরা সব হসপিটালে নিয়া ঘুরমু যতক্ষণ না হসপিটাল পাই ।
আমিঃ আপনি চিন্তা কইরেন না চাচা । আপনার সাথের ঐ লোকের ফোনে কল ঢুকলে আমারা কথা বলে আপনাকে ঐখানে নিয়ে যাব । আপনি চিন্তা কইরেন না । আজ আপনাকে আমরা সাহায্য করতেছি আরেক দিন যদি আমাদের বাবা মা এইরকম বিপদে পরে তাহলে অন্য জন সাহায্য করবে ।।
শিশিরও একই কথা বলল । কিছুক্ষণের ভিতরে হৃদয় চলে যায় ওর টিউশনিতে । ওর ছাত্রীর কাল পরীক্ষা । তাই ওকে আটকাইলাম না । কিন্তু যাওয়ার আগে ও বলে গিয়েছিলো ২০ মিনিটের মধ্যে ছাত্রীকে কিছু সাজেশন দিয়ে চলে আসবে । এর কিছুক্ষণ পরে শিশির চলে গেলো বাসায় । বাসা থেকে ওকে ফোন করছে বাসায় যাওয়ার জন্য
তখন আমি আর চাচা বসে ছিলাম একটা বেঞ্চে । আসেপাসের মানুষ দেখতেছিল আমাদের এই কাহিনী । আমি চাচার সাথে হসপিটালে আসা লোকটাকে আবারও ফোন দিলাম কিন্তু লাইন পেলাম না । অনেক ট্রাই করার পর একবার পেলাম কিন্তু তার কথা নেটওয়ার্কের প্রবলেমের কারনে কিছু বুঝতে পারিনি । চাচাও উনার মোবাইল দিয়ে অনেক বার ট্রাই করলেন কিন্তু কোন কাজ হল না । তখন আমি চাচাকে বললাম-
আমিঃ চাচা ওনার অইখানে নেটওয়ার্কের সমস্যা হইতেছে এই কারনে কথা শোনা যাইতেছে না । তাই কাইটা যাইতাছে ।
চাচাঃ তাহলে আমরা এইখান থেকে সরে বসি । তা হলে নেটওয়ার্কের সমস্যা হবে না ।
আমিঃ চাচা আমরা সইরা বসলে তো উনার নেটওয়ার্কের সমস্যা যাইব না
চাচাঃ আমি তো এইগুলা জানি না বাবা
তখন চাচার সাথে আমার কিছু কথা হল । চাচাকে কিছু আমি কিছু বলি নাই । চুপ করে বসে ছিলাম । আমারও কষ্ট হচ্ছিল চাচার জন্য । তার সরলতা দেখে । কিন্তু চাচা নিরবাওতা ভেঙ্গে কেমন যেন একটা কষ্ট নিয়ে আনমনে আমাকে অনেককিছু বলতে লাগলো
চাচাঃ তোমারা যখন বাবা মায়ের কথা বললা তখন একটা কথা মনে পরে গেলো । একবার আমার ছেলে বাসা থেকে রাগ করে চলে যায় । প্রায় ৬ মাসের মতো বাসায় আসে নি । কোন যোগাযোগ হয়নি তার সাথে । ৬ মাস পর একজনের কাছে খবর পেলাম ও নাকি চাদপুরে আছে । কিন্তু জানি না চাঁদপুরের কোন যায়গায় আছে । চাঁদপুর তো আর ছোট জায়গা না । আমি ওকে খুজতে বের হলাম পকেটে ২৮০ টাকা নিয়ে । চাঁদপুর বাস থামে যেখানে ঐখানে নামলাম । কিন্তু আমি জানি না এখন ওকে খুজতে কোথায় যাব । আমি কোন ঠিকানা জানি না ওর । তাই বেশিদুর যেতে পারলাম না । আসেপাসেই খুজলাম । পাইলাম না । বিকাল হয়ে গেছে । কিছু খাইনি । এভাবে খোঁজাখুঁজি করতে দেখে একটা বাসের ড্রাইভার আমাকে বলল ‘ চাচা কোথায় যাবেন , এভাবে সারাদিন কি খুজতেছেন ’ । আমি সবকিছু খুলে বললাম । তখন সে বলল ‘ চাচা কিছু খাইছেন’ ।. আমি তখন মাথা নিচু করে বললাম না । তখন সে তার হেল্পারকে ডেকে আমার সাথে হোটেলে খাবার খেল । আমরা ৩জন প্রায় ৫০০-৫৫০ টাকার মতন খেলাম । কিন্তু আমার পকেটে ছিল মাত্র কয়েক টাকা । আমি তাঁদেরকে বুঝতে দেইনি আমার পকেটে এত অল্প টাকা আছে । আমি তবুও বললাম আমার বিলটা আমি দেব । কিন্তু তারা আমাকে দিতে দিল না । তারা সব টাকা দিল । রাত হয়ে গেছে বলে তারা আমাকে যেতে দিল না কোন যায়গায় । তারা তাদের সাথে আমাকে রেখে দিল । তখন একটু একটু শীত ছিল । তারা আমকে বাসের ভিতরে, তারা যে যায়গায় ঘুমায় আমাকে সেই জাইগায় ঘুমাতে দিল । তাদের কম্বল , মশারি টাঙিয়ে দিয়ে আমাকে বলল শুয়ে থাকতে । তাদের গায়ে দেওয়ার মতন তেমন কিছু ছিল না । তারা শীতের কিছু জামা পড়া ছিল । তখন তারা আমর সাথে সারারাত গল্প করলো । আমার সম্পর্কে জানল । আমিও তাদের সম্পর্কে জানলাম । পরের দিন সকালে তারা তাদের গাড়ি নিয়ে তাদের দিকে চলে গেলো । আমি আমার দিকে আসলাম । কিন্তু সেই এক দিনের উপকারের কথা আমি কোনদিন ভুলবো না । তারা যদি সেদিন আমাকে সাহায্য না করত তাহলে আমার যাওয়ার কোন জায়গা ছিল না । আমি যদি আমার গায়ের চামড়া কেটে তাদের জুতা বানিয়ে দেই হয়তোবা সেই রাতের ঋণ কোনদিন শোধ হবে না । আমি যদি কোনদিন তাদের খুজে পেতাম অনেক ভালো হত ।
চাচা এইকথা বলতে বলতে মুখটা মলিন করে ফেলল । চেহারার ভিতর কষ্টের একটা ছাপ । এই কথাগুল শুনে চাচার প্রতি কেমন যেন একটা মায়া জন্মায় গেলো । তখন চিন্তা করলাম মানুষ কিভাবে এমন করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারে । তখনই আরও কঠিনভাবে প্রতিজ্ঞা করলাম চাচাকে আমি হসপিটালে দিয়ে তার পর অন্য কাজ করবো । হোক না অনেক রাত । এইসব কথা চিন্তা করতে করতে শিশির চলে আসলো । তখন আমরা চাচাকে বললাম চা খেতে । শিশির চাচাকে বলল
শিশিরঃ চাচা চা খাবেন ?
চাচাঃ না বাবা ( হাসি দিয়ে )
আমিঃ আপনি কি সিগারেট খান চাচা ?
অনেক জোরাজুরির পর চাচা বলল
চাচাঃ খাই । শেখ হোয়াইট
শিশির শেখ হোয়াইট না পেয়ে স্টার লাইট নিয়ে আসলো এবং চাচাকে দিল । কিন্তু চাচা বারবার কেমন জানি ছটফট করতে ছিল । চেহারার ভিতর মাঝে মাঝে কেমন জানি একটা রাগের ছাপ । তখন চাচাকে জিজ্ঞাসা করার পর চাচা বলল
চাচাঃ আমি নিজের জন্য এমন করতেছি না । আমি জাকে নেয়া এসেছি তার কেও নেই । আবার সে কথাও বলতে পারে না । কোনকিছু চেয়ে নিতে পারে না । আবার তার একটা পা এখন নেই । সব কিছু বিছানায় করতে হয় । যখন প্রসাব লাগে ঠিক মত বলতে পারেন না । ইসারা করে বলে । তার কষ্ট দুর করার জন্য এইগুলা কিনে নিয়ে যাচ্ছি । তাকে যেন কষ্ট করে কোথাও না যেয়ে বিছানায় সো কিছু করতে পারে । কিন্তু আমি এখন নিজেই হারায় গেছি । এখন জানি না ও কি করতেছে । ওর সাথে একজন আছে । কিন্তু ও সবকিছু সামাল দিতে পারবে না ।
এই বলে চাচা হাতের জিনিসগুলা মাটিতে আছাড় মেরে ফেলে দিল । মনে হচ্ছিল তার নিজের প্রতি অনেক রাগ । সে নিজেকে অনেক অপরাধী মনে করতেছে হারিয়ে যাওয়ার কারনে । কিছুক্ষণ পর চাচার সাথে আসা লোকটিকে ফোনে পাওয়া গেলো । তখন তার সাথে কথা বললাম । কিন্তু সেও জানে না হসপিটালের নাম । অনেক কষ্ট করে সে যেই জায়গায় হসপিটালটা আছে তার নাম বলল । জায়গাটার নাম ছিল বিএনপি বাজার । তখন পাঁশে থাকা রিক্সাওয়ালা বলল ‘ বিএনপি বাজারের পাঁশে একটা হসপিটাল আছে ’ । তখন আমি আর শিশির ঐ রিক্সাওয়ালাকে নিয়ে ঐ হসপিটালে গেলাম । তখন চাচাকে বললাম দেখেনতো চাচা এইটা সেই জায়গা কি না । তখন চাচা বলল হ , এটাই সেই হসপিটাল
রিক্সা থেকে নামার পর শিশির বলল ‘ চল লোকটার সাথে দেখা করে যাই ’ । আমিও বললাম চল । একছিডেন্ট করেছে ঐ লোকটাকে দেখার জন্য হসপিটালে ঢুকলাম । তার সাথে দেখা করলাম । দেখে অনেক কষ্ট লাগলো । তার এক পা কাটা । কথা বলতে পারে না । যখন চাচা রুমে ঢুকল তখন সেই লোকটা কেমন জানি একটা আবেগে চাচাকে জরিয়ে ধরে কাদতে লাগলো । তখন বুঝলাম চাচা কেন এরকম ছটফট করতেছিল তার কাছে আসার জন্য । চাচাকে অনেক দরকার ঐ লোকটার
তো আসার সময় চাচার নাম্বার টা নিয়ে আসলাম এবং আমার নাম্বার টা দিয়ে আসলাম । নাম্বারটা সেভ করার সময় জানতে পারলাম চাচার নাম টা । চাচার নাম ‘ মস্তফা ব্যাপারী ’ । আমার নাম্বার সেভ করে দিয়ে আসলাম ‘ ঢাকা – আসিফ ’ নামে । চাচা এই নামেই সেভ করতে বলেছিল । এক পর্যায় চাচার কাছে এক্সিডেন্ট করা লোকটার নাম জানতে চাইলাম । চাচা তখন বলল ‘রফিক’ । শিশির রফিক ভাইয়ের দুইটা ছবি তুইলা নিয়া আসে
এর কিছুক্ষণ পরেই আমরা চাচাকে বিদায় জানিয়ে চলে আসি । চাচা আমাদের বাবার মতো করে জরিয়ে ধরে মাথায় আদর করে দিলেন । চাচা বলেছিলেন আমাদের চা খেতে । আমি বলেছি আরেক দিন এসে খাব
আসার সময় দেখে আসলাম সেই রহস্যময় হসপিটালের নামটা - মরিয়ম অর্থপেডিক অ্যান্ড জেনারেল হসপিটাল -
( মস্তফা চাচার দেশের বাসা ছিল চাঁদপুরের মাইজদি । সে আমাদের সাথে সেই ভাষায় কথা বলেছে । কিন্তু সে ভাষা আমি মনে না রাখতে পারার কারনে বা না জানার কারনে চাচার কথাগুলো এই ভাষায় লিখেছি । চাচা আপনার সাথে কথা বলার সময় আমরা অনেক রকম হাসাহাসি করেছি আপনার সরলতা দেখে , আপনার ভাষা শুনে । তার জন্য দুঃখিত মস্তফা চাচা । আপনি সত্যি একজন ভালো মানুষের উদাহরন )
©somewhere in net ltd.