![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(১)
: তোর বাবা তিনদিন পর আসছে বাংলাদেশে
• সত্যি
: হ্যাঁ..একটু আগেই কথা হলো
• কতদিন থাকবে
: একবারে আসবে
কথাটা শোনার পর রাব্বি তার আপুকে ফোন দিয়ে জানাতে গিয়ে নিজেই লজ্জা পেল
'তোর আগেই আমি জানি। তুইই মনে হয় লাস্ট ব্যাক্তি। আব্বু অনেক আগেই আমাকে বলেছে এবারের কুরবানী ঈদ বাংলাদেশে করবে। তুই আর কিভাবে জানবি। তুইতো আব্বুর সাথে কথাই বলিস না'
রাব্বি ফোনটা রেখে ফ্রেস হয়ে বারান্দায় দাড়িয়ে চিন্তা করার চেষ্টা করলো আব্বু দেখেতে কেমন। আব্বুর ভয়েজ টা শুনতে কেমন। কিছুই মাথায় মাথায় আসছে না। তবে রাব্বি জানে আব্বু দেখতে ঠিক তার মতোই। সবাই তাই বলে
রাব্বির ব্যাগের তলানিতে আব্বুর একটা ছবি তার আম্মু জুলেখা বেগম ঢাকায় ভার্সিটি এডমিশন কোচিং করতে আসার সময় লুকিয়ে দিয়ে দেয়। ঢাকায় পৌছানোর পর ওর আম্মু নিজে থেকেই আগেভাগেই বলে দেয় ছবির কথা। নয়তো ও নিজে টের পাওয়ার পর ব্যাপক ঝামেলা পাকাবে। রাব্বি জানার পর তেমন কিছুই বলে নি। একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলেছিলো 'থাক সমস্যা নেই আম্মু'। কিন্তু রাব্বি ভুলেও ব্যাগের তলানিতে কোনদিন যায় নি
রাব্বি যখন সাত মাস পেটে তখন ওর আব্বু শরীফ ব্যাপারি জীবিকার টানে সৌদিতে চলে যান। রাব্বির বয়স এখন উনিশ বছর। আর এই উনিশ বছর ধরে তার আব্বু সৌদি থাকে। এর ভিতরে একবারও আসেন নি। রাব্বি যখন অনেক ছোট ছিলো তখন থেকেই ওর আব্বুর সাথে কথা বলে না। ওর আব্বুর ছবিও দেখেনি কোন দিন
ওর আম্মু তাইই বলে। রাব্বি ছোট বেলা একবার ওর আব্বুকে দেখার বায়না ধরে। প্রতিবারের মতোই ওর আম্মু ওকে আশ্বাস দেয় শুক্রবার আসবে। রাব্বি ও অপেক্ষায় থাকে শুক্রবারের। কিন্তু সেই শুক্রবার আর আসে না। অপেক্ষা করতে করতে একপর্যায়ে রাব্বি কিভাবে যেন ওর আব্বুর কথা ভুলে যায়। ওর আব্বু যখন ফোনে ওকে খুঁজতো তখন ওর আম্মু রাব্বিকে ফোন দেয়ার অনেক বৃথা চেষ্টা করেছেন। কিছুতেই কাজ হয়নি। যখন রাব্বি কিছু বুঝতে শিখলো তখন এই ব্যাপারটা অনেক বাজে মাত্রায় পরিলক্ষিত হলো। ব্যাপারটা এক প্রকার জিদে পরিনত হলো। রাব্বি জিদ করলো ওর আব্বু বাসায় না আসা পর্যন্ত কথা বলবে না। এমনকি উনার কোন ছবিও দেখবে না। তাই হলো। রাব্বির আজ কিছুই মনে নেই। ওর আব্বুর ভয়েজ ও না
(২)
তিনদিন পর...
আজ রাব্বির আব্বুর আসার কথা। রাব্বি গোছগাছ করে ওর আব্বুকে রিসিভ করার জন্য শ্যামলী থেকে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রুপকথা পরিবহনে রওনা দেয়। মহাখালী পার হওয়ার পর আম্মুকে ফোন দেয়ার জন্য পকেটে হাত দেয়ার পর থমকে যায়। মোবাইল নেই। কাকে জিজ্ঞেস করবে ভেবে পাচ্ছে না। শেষপর্যন্ত কাউকেই কিছু বলতে পারলো না। এয়ারপোর্ট আসার পর নিরবে বাস থেকে নেমে গেল
ওর আব্বু ল্যান্ড করার পর ওর নাম্বারে ফোন দিবে। রাব্বির আম্মু তাই বলেছিলো রাব্বিকে। রাব্বি না চিনলেও ওর আব্বু ওকে চিনে। রাব্বির বড় আপু মোহিনী ওর ছবি আব্বুকে এমএমএস করে পাঠিয়েছিলো। সেই সুবাদেই চেনা। কিন্তু রাব্বির ফোন তো নেই। এই চিন্তায় রাব্বি অসহায়ের মতন দাড়িয়ে আছে। এখন কিছুই করার নেই। ওর আম্মুকে ও ফোন দিতে পারছে না। নাম্বার মুখস্থ না। কারোর নাম্বার ই মুখস্থ না
ও একাই এখানে এসেছে ওর আব্বুকে রিসিভ করার জন্য। আজকে রাতেই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার কথা ওর আব্বুকে নিয়ে। কিন্তু তা আর হলো না। শরীফ ব্যাপারি কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করার পরেও ছেলের দেখা পেলেন না। বারবার করে উনি স্ক্রিনে ভেসে থাকা ছেলের ছবিটার দিকে তাকাচ্ছিলেন আর আসেপাশের মানুষ গুলো দেখছিলেন। কেউ এই চেহারার নেই। এভাবে কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করার পর ভাবলেন ছেলে হয়তোবা আজও তার উপর রাগ করে আছে। এই কারনেই হয়তোবা রিসিভ করতে আসে নি। ফোন বন্ধ করে রেখেছে। উনি জুলেখা বেগম কে ফোন দিয়ে উনার একানকার অবস্থা বললে। তখন রাব্বির আম্মুও বললো উনিও ছেলের নাম্বারে কল ঢুকাতে পারছেন না। শেষমেষ শরীফ ব্যাপারি গাবতলীর উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন
এদিকে রাব্বি তার আব্বুর জন্য এখনও পথ চেয়ে রয়েছে। তার মোবাইল হারানোর ব্যাপারটা কিছুতেই মানতে পারছে না। আজ রাব্বির বুক ফেঁটে কান্না পাচ্ছে এই চিন্তা করে যে ব্যাগে থাকা আব্বুর ছবি দেখলে এমন কি ক্ষতি হতো (?) যদি দেখতো তাহলে হয়তোবা এমন বিপদের সম্মুখীন হতে হতে না। রাব্বি সারাদিন সারারাত এমনকি সকাল হওয়া পর্যন্ত এয়ারপোর্টে বসে ছিলো তার আব্বুর জন্য
(৩)
ঐদিন বিকেলেই শরীফ ব্যাপারি বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। রাত দশটায় বাড়িতে এসে পৌছান। বাড়িতে এলাকার মানুষের ভিড়। উনিশ বছর পর আসলেন। ভিড় হওয়ার ই কথা। সবাই অনেক খুশী। কিন্তু শরীফ ব্যাপারির মনটা তার ছেলের দিকে গিয়ে রয়েছে। ছেলেটার কি হলো এই চিন্তায়। বাপের উপর মানুষ এত্তো রাগ করে থাকে (?)
এদিকে বাড়িতে বিরাট আয়োজন। শরীফ ব্যাপারি ফ্রেশ হয়ে খাওয়ার টেবিলে যাওয়ার পরেও ছেলের কথা মনে করছিলেন আর বারবার মোবাইল টিপে নাম্বারটিতে ট্রাই করছিলেন। খাওয়াদাওয়া শেষে সবাই সবার মতো শুতে চলে গেলেন। শরীফ ব্যাপারি এখনও ছেলের নাম্বারে ট্রাই করেই যাচ্ছেন। এই অবস্থা দেখে জুলেখা বেগম রাগ হয়ে বললেন
- এই ছেলেকে নিয়ে তোমাকে চিন্তা না করলেও চলবে। বাপের প্রতি একটু দায়িত্ব জ্ঞান নেই (?)
তখন শরীফ ব্যাপারি একটু হেসে বললেন
- বাচ্চা ছেলে। এতকিছু বুঝে (?)
এভবে দুইজন ঝগড়া করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে যান
(৪)
রাব্বি সকালে ঘুম ঘুম চোখে এয়ারপোর্ট থেকে সোজা গাবতলীর এসে সকালের গাড়িতেই ব্যাগ ট্যাগ না নিয়েই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। দুপুর বারোটার দিকে এসে বাজারে নামে। বাজারে কোন মানুষ নেই। নিস্তব্ধ। রাব্বি ভালো করে তাকিয়ে দেখছিলো এটাই কি তাদের সেই বাজার কি না। নাহ ঠিকই তো আছে। ওইতো বিকাশের সেলুন ঘর। হেটে হেটেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল। রাস্তায় কিছু মানুষের সাথে দেখা হলো। সবাই ওর দিকে কেমন করে যেন তাকাচ্ছে। পনেরো মিনিট হাঁটার পর বাড়ির পাসে এসে রাব্বি তো তাজ্জব। আরে সব মানুষ তো এখানে। এই জন্যই তো বাজারে কোন মানুষ নেই। রাব্বি ভাবলো উনার আব্বু এত্তো বছর পর এসেছে বলে মনে হয় তাকে দেখার জন্য মানুষের এতো ভিড়
ভিড় ঠেলে যাওয়ার সময় রাব্বি কেমন গোলাপ জলের গন্ধ পাচ্ছিলো। আর পরিচিত কিছু মানুষের কান্নার আওয়াজ অনেক স্পষ্ট হচ্ছিলো। রাব্বি আপু মোহিনী রাব্বি দেখার পর 'ও ভাইরে তুই আব্বুর কথা শুনতে পারলি না রে ভাই' বলে রাব্বি কে জড়িয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠলেন
রাব্বি সামনে তাকাতেই দেখে সাদা কাপড়ে মোড়ানো একটা লাশ। রাব্বি এক পা দু পা করে আগাতে আগাতে লাশটার কাছে গেল। পাশে থাকা একজন লাশের মুখের পাশের কাপড় টা উঠিয়ে দিল। রাব্বি মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পলকহীন লাশ ব্যাক্তিটিকে দেখছিলো। একদম তার মতো চেহারার একজন মানুষ। রাব্বি লাশের কানের পাশে গিয়ে ফিসফিস করে বললো 'আব্বু আমি তোমার কথা কোনদিনই কি আর শুনতে পারবো না। আমার সাথে কি তুমি কোনদিনই আর কথা বলবে না। আব্বু ..আব্বু..কথা বলো আব্বু ...আমি তোমার রাব্বি আব্বু...কথা বলবে না...
(শরীফ ব্যাপারি রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় স্ট্রোক করেন)
০৯ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:৪২
আসিফ্লী বলেছেন: বাস্তবতা আরো অনেক শোকার্ত
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:২০
কাবিল বলেছেন: ভাল। শেষটা শোকার্ত।
ব্লগে স্বাগতম।