![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নীলাঞ্জনা বেগম তার দেবরের বিয়েতে সবাইকে সারপ্রাইজ দেয়ার চিন্তা থেকে মাথায় আসলো সে তার এই দুই কেজি বাতাসের ওজনে উড়ে যাওয়া শরীরটাকে একটু মোটা তাজা করে উপস্থাপন করবে
সময় মাত্র একমাস...
হাজার পুষ্টিগুনে ভরপুর পুষ্টিকর খাবার উপর নিচ মাথা ছাতা দিয়ে ঢুকালেও মোটা তাজা হওয়ার স্বপ্ন পূরন এই এক মাসে সম্ভব না উনি তা এই জীবনের সবটুকু সময় পুষ্টিকর খাবার খেয়েই টের পেয়েছেন
তাই উনি উনার পাশের বাসার ভাবির কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে মোটা তাজাকরণের শর্টকাট উপায় হিসেবে বেঁছে নিলেন ইন্ডিয়ান গরু মোটা তাজাকরণ ট্যাবলেট। যে ট্যাবলেট টা বেশী ইউজ হয় গরু কুরবানীর হাঁটে উঠানোর আগে
ঔষধের একশনের সময় থাকে মাত্র দুই মাস। এই দুই মাস আপনাকে সত্যি সত্যিই আকর্ষণীয় দেখাবে। সবাই হা করে তাকিয়ে থাকবে আপনার দিকে মানে আপনার শরীরের দিকে
বিশ্বাস না হলে চেষ্টা করে দেখতে পারেন...
কিন্তু দুই মাস পর শুরু হয় রিয়াকশন। এই রিয়াকশন মৃত্যু থেকে শুরু করে অঙ্গের যেকোন ক্ষতি সাধনে সদা প্রস্তুত
ক্ষতি হবেই...
এইসব জানা সত্বেও এই কথাগুলো মাথায় নিলেন না। কথাগুলো থাপ্পড় দিয়ে কুমিল্লার কাউয়ার চরে পাঠিয়ে দিলেন। যা হবার হবে। আগে চাই আকর্ষণীয় শরীর। সবাইকে ইমপ্রেস করা। এক কথা মাথায় দুই টন ওজনের ভূত চেপে বসেছে পাছায় অনেকখানি আঠা মেখেই
যথারীতি উনি উনার পরিচিত ছাগল গরুর ডাক্তার যে কিনা তার আদরের ছাগল যাকে মিনি বলে ডাকেন তাকে বেশিরভাগ সময় চিকিৎসা করে ডাক্তারি জীবন পার করলেন তার সরণাপন্ন হয়ে এক সপ্তাহের কোর্স স্বরুপ সাত সাতটি ডিমের সাইজের চাইতে কিছুটা ছোট ট্যাবলেট নিলেন
প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে খেতে হবে...
উনি তাই করলেন। গোপনে সাতদিনের কোর্স শেষ করলেন। সাতদিন পর থেকে শুরু হলো তার মুখ ফোলা। আস্তেধীরে সমস্ত শরীর
উফ্ !!! মারাত্মক আকর্ষণীয়...
পনেরো দিনের মধ্যেই সমস্ত শরীর। বিশ দিনের মধ্যেই সবার নজরে আসলেন। সবাই হা করে তাকিয়ে থাকতেন আর টেক্সি টাইপের কমেন্ট ও করতেন। উনি এখন অনেক হ্যাপী
রুবেলের হ্যাপীর চাইতেও হ্যাপী...
বিয়ের দিন উনি খালেদা জিয়ার পছন্দের গোলাপী কালারের পাতলা ফিনফিনে শাড়িটাই পছন্দ করলেন। অনেক আকর্ষণীয় ভাবেই নিজেকে উপস্থাপন করলেন। বিয়ের দিন সবাই উনার দিকে ঠিক সেভাবেই তাকিয়ে ছিল ঠিক যেভাবে উনি চেয়েছিলেন গরুর ট্যাবলেট খাওয়ার আগে। ক্যামেরাম্যান তার দিকে বারেবার ক্যামেরা তাক করে রাখেন
ক্যামেরা তাক করেই ক্ষ্যান্ত হননি ক্যামেরা ম্যান। মডেলিং কায়দায় একেকবার একেক ঢং ডিরেকশন দেয়ার গুরুদায়িত্ব ও পালন করলেন। এবং কানে কানে এসে বলে গেলেন
'আপনাকে এই শট গুলা গোপনে পেনড্রাইভে করে সাপ্লাই করা হবে'
এটা শোনার পর নীলাঞ্জনা বেগম থেঙ্কু থেঙ্কু বলতে বলতে কল্পনার নর্দমায় হাবুডুবু খেতে খেতে খাবারের টেবিলে বসে খেতেই ভুলে গেছিলেন। শেষমেষ না খেয়েই ক্যামেরা ম্যানের দেয়া এক গ্লাস গুলাপী শরবত খেয়ে বিয়ে বাড়ি ত্যাগ করেন। তবুও উনি অন্নেক হ্যাপী
আজ উনি স্বার্থক...
কিন্তু উনার এই হাসি মাখা মুখ এক সময়ের প্লাস্টিক মার্কা হাসিতে রূপ নেয়। দুই মাস পরেই শুরু হয় গরুর ট্যাবলেটের রিয়াকশনের। দুই মাস দশ দিনের মাথায় ই তার শরীর ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে সেই আগের অবস্থানে ফিরে যায়। বলতে গেলে আগের চাইতে অনেক বেশী মাত্রায় খারাপ অবস্থায়
এখন শরীরের এমন অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে আগে তো উড়ে যাওয়ার জন্য দুই কেজি বাতাসের প্রয়োজন পড়তো এখন আধা কেজি ই যথেষ্ট
তাতে কি হইছে.. এবারও সবাই সেই আগের মতোই উনাকে হা করে তাকিয়ে দেখতে লাগলেন। উদ্দেশ্য একই। তার শরীর। তবে মনের খোরাকীর দিকে ভিন্নতা
...অনেক বছর পর
আজ নিলাঞ্জনা বেগমের জন্মদিন। প্রতি জন্মদিনেই উনি চেয়ারের এক কোনে গুটিসুটি হয়ে সেই সেইদিনের ক্যামেরা ম্যানের দেয়া ভিডিওচিত্র গুলা মনোযোগ দিয়ে দেখেন। আর হাসেন। প্রান খুলে। দেখেন আর হাসেন। হাসেন আর দেখেন। হাসতে হাসতে দেখতে দেখতে উনি একটা গান ই গুন গুন করে গান
'আগে কি সুন্দর তাজা ছিলাম রে...'
©somewhere in net ltd.