নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তার জন্য অপেক্ষায় থাকা একশো বছরের পুরাতন যুবক

আসিফ্লী

দেয়ার মত অনেক কিছুই ছিল, নিলে না

আসিফ্লী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্রেকিং নিউজ

১১ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:১০

নীরব আজ সকালে তড়িঘড়ি করে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো। তবে রেডি হওয়ার কার্যকলাপ খুবই নিঃশব্দে। কিছুতেই যেন রুমকি ঘুম থেকে না উঠে পড়ে। ঘুমাক ব্যাচারি কিছুক্ষণ। সারারাত অনেক ধকল গেছে। সেই কালকে সকাল নয়টায় রওনা দিয়েছে যশোর থেকে আর শ্যামলী আসতে সময় লেগেছে রাত তিনটা। কই সকাল নয়টা আর কই রাত তিনটা। চিন্তা করা যায়..!!

পাটুরিয়া ফেরিঘাটে অনেক জ্যাম ছিলো। প্রায় তিন চারশো গাড়ি পিছনে ঠেলতে ঠেলতে শেষমেষ গাড়ি পদ্মার এপারে আসে। পদ্মার এপার থেকে গাবতলী পৌছাতে কম ধকল পোহাতে হয় নি। যায়গায় যায়গায় শুধু ব্রেক। তবুও যে রাত তিনটায় গাবতলী থেকে সিএনজি করে বাসায় পৌছাতে পেরেছে এটাও কম ভাগ্যের না। তাও আবার নতুন বউ নিয়ে
-

নীরব ম্যানিব্যাগটা ব্যাক পকেটে ঢুকানোর সময় ফ্লোরে পড়ে যায়। সেই শব্দে হাজার কষ্টে ঘুম পাড়িয়ে রাখা রুমকির ঘুম উড়ে যায়

'তুমি কোথায় যাচ্ছো'
'অফিসে..সরি তোমাকে জাগিয়ে দেয়ার জন্য'
'আমাকে তুমি না বলেই চলে যেতে অফিসে'
'না মানে তা না..মনে করলাম তুমি ঘুমাচ্ছো'
'তাতে কি..কিছু না খেয়েই অফিসে যাবে'
'তুমি কি কিছু বানাবে'
'কিচেন কোন দিকে'
'কিচেন আছে..কিন্তু রান্না করার কিছু নেই'
'তাহলে'
'আমি আজকে বাসায় আসার সময় বাজার করে নিয়ে আসার চিন্তা করছিলাম'
'আমি কি না খেয়ে থাকবো'
'না আমি যাওয়ার সময় দারোয়ান কে কিছু টাকা দিয়ে যেতাম তোমাকে নাস্তা এনে দিতে'
'আচ্ছা তুমি অফিস থেকে ফিরবে কখন'
'ফিরতে রাত হয়ে যাবে'
'কতো রাত'
'আটটা নয়টা'
'তাহলে কি আমি দুপুরেও না খেয়ে থাকবো'
'তাওতো কথা'
'আচ্ছা এক কাজ করো তোমার দারোয়ান কে বাজারের টাকা দিয়ে যাও..আর তুমি দশ মিনিট দাড়াও আমি বাজারের একটা লিস্ট করে দেই'
-

লিস্ট দেখে নীরবের মাথায় হাত। এত্তো আইটেমের শুটকি

'তুমি শুটকি খাও'
'না তো'
'তাহলে এতো রকম শুটকি কেন'
'তোমার জন্য..তুমি নাকি শুটকি পছন্দ করো'
'তোমাকে কে বলছে'
'তুমিই তো প্রথম রাতে আমাকে গল্প শুনিয়েছিলে শুটকির..অনেক মজা করে নাকি শুটকি খেয়েছিলে কোন হোটেলে যেন'
'হা হা..তোমার মনে আছে'
'পাঁচ দিন আগের কথা মনে থাকবে না'
'আচ্ছা আমি যাই..দারোয়ান কে দিয়ে যাচ্ছি লিস্ট আর টাকা..বেল বাজালে নাম জিজ্ঞেস করে খুলবে দরজা..দারোয়ানের নাম করিম'
'আচ্ছা'
'তাহলে থাকো..বাই'
'ঠান্ডা পড়ছে..গলায় কিছু পেঁচিয়ে গেলে না'
'মাফলার টা মনে হয় ভূলে রেখে আসছি'
'আমিতো আমার লাগেজের ভিতরে রেখেছি'
'ও আচ্ছা'
'দাঁড়াও আমি দিচ্ছি'

মাফলার পেঁচিয়ে নীরব রুমকির কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো
-

দুই ঘন্টা পর কলিং বেল বাজার পর রুমকি নাম জিজ্ঞেস করে দরজা খুলে দারোয়ানের কাছ থেকে বাজার এবং সকালের নাস্তা বুঝে নিয়ে দারোয়ানকে বেঁচে যাওয়া দুইশো ষাট টাকার ভিতরে একশো টাকা হাতে গুঁজে দিয়ে হাসি মুখে ছোট্ট করে একটা ধন্যবাদ দিয়ে দরজা আটকিয়ে দিলো। সকালের নাস্তা শেষ করে ঘর পরিস্কার পরিছন্ন করার কাজে নেমে পড়ে। টানা দুইঘণ্টা অক্লান্ত পরিশ্রমে পরিস্কার পরিছন্নতার অভিযান সফল করে খাটে শুয়ে বালিশে মাথা দিতেই অবেচেতন মনে ঘুমিয়ে পড়ে

ঘুম ভাঙ্গার পর ফোনের দিকে তাকিয়ে তো মাথা গরম। পনেরো টা মিসকল আর দশটা ম্যাসেজ। সবগুলোই নীরবের। সাথে সাথে ফোন দিল রুমকি

'এতোক্ষণ কল রিসিভ করো নাই কেন'
'ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম'
'ঘুম ভাংলো তাহলে'
'হুম'
'আচ্ছা অফিসে..পরে কথা বলি'
'ওকে'

ফোন রেখে রুমকি ঘড়িতে তাকিয়ে আরেকবার মাথা হ্যাং হয়ে গেল। পাঁচটা। তাড়াহুড়ো করে কিচেনে গিয়ে রান্নার কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরে। যে করেই হোক নীরব আসার আগেই শেষ করতে হবে
-

আটটার আগেই রুমকির রান্না শেষ। পাঁচ রকমের শুটকি রান্না করেছে। ভর্তা থেকে শুরু করে তরকারি মিলিয়ে শুটকির পনেরো রকম আইটেম। আর সাদা ভাত। আর কিছু না। রান্না করার সময় রুমকি প্রায় বিশ বারের মতন দারোয়ান আঙ্কেল কে রুমে ডেকে এনেছেন। শুধুমাত্র তরকারি, ভর্তায় লবনের স্বাদ পরিক্ষা করার জন্য। রুমকির ইচ্ছে ছিলো এই ভর্তা তরকারি নীরবের আগে মুখে দিবে না। দুজন একসাথে বসে নীরবের মুখে তুলে দিয়ে তারপর নিজের মুখে নিবে

সবকিছু গুছিয়ে সুন্দর ভাবে রেখে নীরবের জন্য অপেক্ষা করতে করতে একপর্যায়ে বোর হয়ে নীরব কে ফোন দিল রুমকি

'এইতো আমি অফিস থেকে বের হলাম'
'এতোক্ষনে'
'গত পনেরো দিনের কাজ আজকে শেষ করতে হলো'
'এখন নয়টা বাজে'
'এইতো আর চল্লিশ মিনিট'
'তাড়াতাড়ি এসো'
'ওকে'
-

নয়টা দশ। রুমকি এখনও নীরবের অপেক্ষায়। অনবরত কল করেই যাচ্ছে। মোবাইল বন্ধ। সাহস করে দারোয়ান আঙ্কেল কে একবার ডেকে জিজ্ঞেস করলেন। এখনও আসেনি। মোবাইল হাতে এখনও রুমকি নীরবের নাম্বারে ট্রাই করেই যাচ্ছে

বাসায় ফোন দিবে সে সাহস ও করতে পারছে না। আজ পনেরো দিন হলো নীরবের সাথে রুমকি নিরুদ্দেশ। কেউ কোন খবর জানে না। এমনকি কেউ জানে না রুমকি নীরবের সাথে নিরুদ্দেশ। ফেসবুকে তিন মাসের পরিচয়। এই তিন মাসে তাদের ভিতরে এক আত্নিক সম্পর্ক গড়ে উঠে দুইজন দুজনকে না দেখার পরেও

দুই সপ্তাহ আগে রুমকির বাসা থেকে বিয়ের জন্য জোরাজুরি করার পর নীরবকে জানায়। নীরব রুমকিকে তার কাছে ঢাকায় চলে আসতে বলে। কিন্তু রুমকির সেই সাহস হয়নি একা একা ঢাকায় আসবে। তাই নীরবকে বাধ্য হয়ে রাজশাহী যেতে হয়। রাজশাহী থেকে রুমকিকে নিয়ে যশোর নীরবের ফ্রেন্ডের বাসায় থাকে কিছুদিন। তার পর গতকাল যশোর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয় দুজন। আর আজকে এই অবস্থা
-

রাত এগারোটা। ফোন দিতে দিতে রুমকি প্রায় ঘুম ঘুম অবস্থা। সোফায় হেলান দিয়ে রুমকি লাউডস্পিকার অন করে ফোনে ট্রাই করেই যাচ্ছে। এবারের কলে রিং বাঁজার পর রুমকি তড়িঘড়ি করে শোয়া থেকে লাফ দিয়ে উঠলো। ফোনের ওপাশ থেকে একটি আওয়াজ

'হ্যালো..হ্যালো..হ্যালো..'নীরব'
'আপনি উনার কি হোন'
'আপনি কে'
'আমি থানা থেকে ওসি ফয়েজ বলছিলাম'
'নীরব কোথায়'
'আপনি নীরবের কি হোন'
'আমি নীরবের স্ত্রী'
'আপনাকে এখনই একটু উত্তরা আসতে হবে'
'কেন..আমার নীরব কোথায়'
'উনি রাত নয়টার দিকে উত্তরায় দুর্বৃত্তদের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান..উনি এখন আমাদের হেফাজতে আছেন..আপনাকে আসতে হবে'

রুমকি ফোন কেঁটে সাথে সাথে টিভির রিমোট টিপে চ্যানেল পাল্টিয়ে লাল অক্ষরের ব্রেকিং নিউজে চোখ রাখে

'উত্তরায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নীরব নামের একজনের মৃত্যু'

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.