নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তার জন্য অপেক্ষায় থাকা একশো বছরের পুরাতন যুবক

আসিফ্লী

দেয়ার মত অনেক কিছুই ছিল, নিলে না

আসিফ্লী › বিস্তারিত পোস্টঃ

শফিক সাহেব এখনও বাবা ডাকের অপেক্ষায় ...

১২ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৯:৪৯

'মা তুমি আরেকবার চিন্তা করো'
'বাবা আমার চিন্তা করা শেষ'
'ছেলেটির নামে দুইটা কেস আছে'
'আমি ভেবেচিন্তে ডিসিশন নিয়েছি বাবা'
'তোর এই বাবার কথা একবারও ভাবলি না'
'তুমি আমার কথা কখন ভাবলে'

মেয়ের মুখে এই কথাটা শোনার পর শফিক সাহেব নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। যে মেয়েকে সারাজীবন আগলে রাখার জন্য দ্বিতীয় বিয়ে করলেন না। মেয়ের আদরের ঘাটতি হবে বলে দূরের চাকরি ছেড়ে কাছের একটি ছোট খাটো চাকরি নিলেন আজ সেই মেয়ের মুখে শুনতে হলো মেয়েকে অবহেলার কথা
.

শফিক সাহেবের স্ত্রী রোকেয়া বেগম যখন মারা যান তখন তার মেয়ে মালিহার বয়স ছিলো তিন বছর। চল্লিশ দিন পার হওয়ার পর শফিক সাহেবের বাবা মা তাকে না জানিয়েই মেয়ে দেখেছিলেন তাকে দ্বিতীয় বিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু সবকিছু ঠিক হওয়ার পরেও আঠাশ বছরের সেই যুবক শফিক সাহেব বিয়েতে না করে দেন শুধুমাত্র মালিহার কথা ভেবে
.

মালিহার বয়স তখন তেরো। মালিহা পাশের বাসার তার সমবয়সী দিহানার বাবা দিহানাকে মটরসাইকেলে করে প্রতিদিন স্কুলে দিয়ে আসতেন। শুধুমাত্র মালিহা মুখ ফুটে একবার বলেছিলো

'বাবা দিহানার বাবা না দিহানাকে প্রতিদিন মটরসাইকেলে করে স্কুলে নিয়ে যায়'

কথাটা বলার সময় মেয়ের মুখে একটা আকাংখা দেখতে পেয়েছিলেন শফিক সাহেব। নিজের কিডনিতে পাথর অপারেশন করা বাবদ জমানো টাকা দিয়ে সেইদিনই হিরোহুন্ডা কিনে নিয়ে আসেন। বাইক দেখার পর মালিহার মুখের হাসিটাই তার প্রতিরাতে বুকে ব্যাথার কারনে না ঘুমানোর কষ্ট মলিন করে দেয়। শফিক সাহেব সেদিনই প্রথম তার প্রয়াত স্ত্রী রোকেয়া বেগমের কথা অনেক বেশী মনে করছিলেন। তার মা মেয়ের এই হাসি মাখা মুখটা দেখলে অনেক বেশী অনন্দ পেতেন। আকাশের দিকে তাকিয়ে শফিক সাহেব অনেক কষ্ট নিয়ে বলেছিলেন

'তুমি না গেলে কি হতো না'
.

আজ এই পঁয়তাল্লিশের কোটায় দাড়িয়ে একুশ বছরের মেয়ের মুখের দিকে বারান্দায় দাড়িয়ে জানালার ফাক দিয়ে তাকিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে শফিক সাহেব ভাবছেন মালিহা মনে হয় বাবার উপর রাগ করে এমন কথা বলেছে। মালিহা কিছুক্ষণ পরেই বাবা মটরসাইকেলে করে স্কুল থেকে না আনার পরেও নিজে নিজে রিক্সায় করে বাসায় এসে সেই দশ বছরের মালিহার মতো বাবা বাবা করে অস্থির করে দিবে। তখন শফিক সাহেব মেয়েকে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে মাথায় কপালে চুমু খেতে খেতে বলবেন

'আজ স্কুলে কি চকলেট খেয়েছিলে মা, আমি তোমাকে আজ মটরসাইকেলে আনতে যাইনি বলে রাগ করেছো, রাগ করে না তোমার বাবা আজ একটু ব্যাস্ত ছিলো তো তাই যায়নি, কালকে একদমই ভুল হবে না'

এই আদর মাখা কথা শুনতে শুনতে মালিহা সব রাগ ভুলে বাবাকে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে বাবার কোলেই ঘুমিয়ে যাবে
.

এখনও শফিক সাহেব বারান্দায় দাড়িয়ে চোখ মুছতে মুছতে মেয়ের একটি বাবা ডাকের অপেক্ষায়...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.