![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জব লোকেশনের ফ্রেন্ডশীপ গুলা কেমন যেন অদ্ভুত হয়। এই বস এরকম..ওই বস সেরকম.. শায়লা কিন্তু হেব্বী মা**..সিকুরিটি মাইয়া অফিসার টা কিন্তু দেখার মতন..ইরা যখন হাটে ওর প্রত্যেকটি স্টেপে আমার হার্টবিট তালে তালে নাচে। আরো হাজারো কমেন্ট অন্যান্যদের নিয়ে
বাপ্পী এর ব্যাতিক্রম ছিল না। তবে অতোটা ব্যাপক মাত্রায় না। শুধুমাত্র আমার সাথেই বলতো। আমরা যখন স্মোকিং জোনে যেতাম তখনই। ও সিগারেট ফুঁকতো আর মুখ ব্যাকা করে কথা গুলো বলতো আর আমি হাঁ করে ওর মুখ থেকে নির্গত ধোঁয়া খেতাম আর শুনতাম
আমি যখন বাপ্পী কে বলতাম
'তোর আর আমার ভিতরে এতে মিল কেনরে'
'আরে তুইও একা আমিও একা এই কারণে'
'তুই আবার একা কই..তোর তো ওয়াইফ আছে..দুইটা বাচ্চা আছে'
'আরে ওই একা না..আমি আমার বাবা মার একমাত্র সন্তান..তুইও তাই..এই কারণে এতো মিল'
আমি ওর কথা শুনে হাসতাম। আমরা দুইজন প্রায় সেইম এইজ। কিন্তু ও বিবাহিত। উনিশ বছর বয়েসেই পালিয়ে বিয়ে করেছে। পরবর্তীতে বাবা মা মেনে নেয়। সাত বছরের সংসারে ওদের দুই বছরের একটা ছেলে তপু আর তিন মাসের একটা মেয়ে উর্মি। সুখের সংসার
এখানে বলতে গেলে ও ই ছিলো আমার। একসাথে খেতাম, একসাথেই ঘুরতাম, কম্পানী আলাদা হওয়ার কারণে আমরাও আলাদা ঘুমাতাম। তবে ফোনে স্কাইপে চলতো ব্যাপক আড্ডা। সারা রাত। পার্ফেক্ট লাইফ ছিলো
তিনদিন আগে ও জব লোকেশনে আসার পর অনেক বমি করে। অবস্থা অনেক খারাপ মাত্রায় পৌছানোর পর ওকে এম্বুলেন্সে করে সিলেট থেকে ঢাকা পিজি তে নিয়ে যাওয়া হয়। নিয়ে যাওয়ার পর পুরা সুস্থ। সিলেট থেকে রওনা দেয়ার সময়ই ওর ফ্যমিলিকে জানানো হয়। ফরিদুর থেকে ওর ফ্যামিলি ও পিজিতে পৌছানোর আগেই চলে আসে
হাস্পাতালের বেডে বসে বাপ্পী ওর আব্বুকে বারবার করে বলছিলো
'আব্বু চলো বাসায় যাই..আমিতো পুরা সুস্থ'
'ডাক্তার বলছে কয়েকটা টেস্ট করাতে হবে'
'টেস্ট ফেস্টের দরকার নেই আব্বু..তুমি চল'
'দেখি আগে ডাক্তার কি বলে'
তখন বাপ্পী ওর আব্বুর সাথে রাগ করে কথা না বলে পিছন ফিরে শুয়ে থাকে। বিকেলের দিকে ডাক্তাররা অনেকগুলো টেস্ট করেন। টেস্ট করার পর বাপ্পী রুমে এসে আমাকে ফোন দেয়
'কিরে বাপ্পী এখন তোর কি অবস্থা'
'আরে আমিতো সুস্থ..শুধুশুধু আটকায় রাখছে'
'সমস্যা নাই..কালকেই বাসায় চলে যাবি'
'দোস্ত দোয়া করিস'
'শালা আর সিগারেট খাইস না সুস্থ হওয়ার পর'
'তুই ফোন রাখ বেঈমান..আমার শত্রু'
'আচ্ছা খাইস'
'আচ্ছা রাখ..ডাক্তার আসছে'
এই বলে বাপ্পী ফোন রেখে দেয়। এটাই আমার সাথে বাপ্পী র শেষ কথা। তার পরের দিন আমি ওকে ফোন দেই। ফোন বন্ধ। মনে করলাম হয়তোবা বাসায় আছে তাই ফোন বন্ধ। তাই আর ট্রাই করলাম না
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি বাপ্পীর নাম্বার থেকে রাত দুইটার দিকে তিনবার কল। ফোন দিলাম। নাম্বার অফ। আজকে জব লোকেশনে এসে ওদের অফিসের একটা কলিগের কাছে শুনতে পাই বাপ্পী কাল রাত তিনটার দিকে হাস্পাতালে মারা গেছে
ওর ব্লাড টেস্ট করার পর ব্লাড ক্যান্সার ধরা পরে। বাপ্পী কে জানানো হয়নি। ওর আব্বুকে জানানো হয়েছিলো। সেদিন রাতেই ওকে প্রাইমারী ট্রিটমেন্টের জন্য ডাক্তাররা প্রিপারেশন নিচ্ছিলেন। এর ভিতরেই বাপ্পী একবার স্ট্রোক করে। আবার টেস্ট। টেস্টে ধরা পরে হার্টে তিন তিনটা ব্লক। কয়েক ঘন্টার ব্যাবধানে ওর শরীরের এক সাইড প্যারালাইজড। এরমধ্যে কাল রাতে আরেকবার স্ট্রোক এবং শেষ ফলাফল মৃত্যু
...বাপ্পী সবসময় বলতো 'তোকে একটা কথা বলবো'। কিন্তু আমি যখন বলতে বলতাম তখনই ও টপিক চেঞ্জ করে বলতো 'আজকে না আরেকদিন'। বাপ্পীর নাম্বার থেকে কাল কল আসার পরেও আমি কলটা রিসিভ করতে পারলাম না। বাপ্পী সেই বলবো বলবো করে না বলা কথাটা হয়তোবা বলার জন্য ফোন দিয়েছিলো বা কাউকে দিয়ে দেয়ানো হয়েছিলো কিন্তু আমার আর শোনা হলো না
ভালো থাকিস বাপ্পী। হয়তোবা একদিন সবার মতোই আমিও তোকে ভুলে যাবো। নতুন করে কারো সাথে বন্ধুত্ব হবে। আবার সেই হাসি গান আড্ডা দিয়ে সময় পার হবে। কিন্তু তোর বাবা মা তোকে কি কখনও ভুলতে পারবে? তোর ওয়াইফ তপু উর্মি পারবে তোকে ভুলে থাকতে? পারবে না। তুই সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলি। না গেলে কি হতোনা?
যদি এমন হতো কারো জন্য কেউ যদি দশ বছর একটানা কাঁদলে তার প্রিয় মানুষটাকে ফিরে পাবে তাহলে আমি জানি না কেউ কাঁদবে কিনা কারো জন্য কিন্তু আমি তোর জন্য কাঁদতাম। তোকে আমার অনেক প্রয়োজন বন্ধু সত্যি অনেক প্রয়োজন ...
©somewhere in net ltd.