নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তার জন্য অপেক্ষায় থাকা একশো বছরের পুরাতন যুবক

আসিফ্লী

দেয়ার মত অনেক কিছুই ছিল, নিলে না

আসিফ্লী › বিস্তারিত পোস্টঃ

রক্ত দান এবং দাঁতে দাঁত লাগিয়ে কিছুক্ষণ কামড় দিয়ে ঝিম মেরে পড়ে থাকা

২৬ শে জুলাই, ২০১৫ ভোর ৬:৫৩

প্রত্যেকবারই ব্লাড ডোনেট করার সময় একই রকম ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। অবশ্য এটা ভয়ের কারনেই। ব্যাপারটা হলো অতি ভয়ে দাঁতে দাঁত লাগিয়ে গায়ের জোড়ে কামড় দিয়ে ঝিম মেরে শুয়ে থাকা। আমার মনে হয় কয়েক হাজার পাউন্ড ওজন হবে এই কামড়ের। এর নিচে যদি পাথর রাখা হয় তাহলে নিমিষেই তুলোধুনো হয়ে যাবে। আর এইজন্যই ব্লাড ডোনেট করার পর আমার দাঁতে অসহ্য ব্যাথা অনুভূত হয়। সত্যিই বেজায় ব্যাথা

আর একটা ব্যাপার হল..'হয়ে যাক পৃথিবী ধ্বংস তবুও যেন কিছুতে আমার হাত না নড়ে'
.
প্রথম যেদিন ব্লাড ডোনেট করতে হসপিটালে যাই তখন একটা ঘটনা ঘটে। অনেক সাহস নিয়ে এক রিলেটিভ কে ব্লাড দিতে যাই। হসপিটালের যেখানে ব্লাড নেয়া হয় সেই রুমে ঢোকার সময় দেখলাম একটা লোক ব্লাড ডোনেট করে বের হচ্ছিলেন। তো রুমে ঢুকার আগে সেই লোকটার দিকে একটু নজর দিলাম। হালকা পাতলা করে একটা লোক। উনি প্রথমে অনেক সুস্থ ভাবেই হাঁটছিলেন। কিন্তু রিসিপশনের সামনে গিয়ে টপাক করে ফ্লোরে পড়ে গেলেন। এটা দেখেই আমি হাসপাতালের বাইরে একপ্রকার দৌড়ঝাঁপ দিয়ে চলে গেলাম। ভাবলাম এই রক্ত ফক্ত আমার দ্বারা সম্ভব না। কিন্তু বাইরে আসার পর কেন যেন মনে হলো আমার ব্লাড ডোনেট করা দরকার। আর এই মূল্যবোধ থেকেই সেই সেইদিনই প্রথম ব্লাড ডোনেট করা। একদমই কষ্ট হয় নি। জাস্ট দাঁতে দাঁত লাগিয়ে কিছুক্ষণ কামড় দিয়ে ঝিম মেরে পড়ে থাকা
.
ইউনিভার্সিটিতে থাকা অবস্থায় একবার ব্লাড ডোনেট করতে গিয়ে লজ্জায় পড়তে হয়েছিলো। ফর্ম ফিলাপ করে সিরিয়াল পাওয়ার পর ব্লাড ডোনেট করার জন্য খাটের উপর শোয়ার পরপরই চোখ বন্ধ করে দাঁতে দাঁত লাগিয়ে জোড়ে কামড় দিয়ে হাত মুঠ করে শুয়ে ছিলাম। প্রায় এক মিনিট পার হয়ে যাওয়ার পর একটু জোড় গলায় বললাম

'কি শেষ হয়ে গেছে আপু'
তখন উনি একটু হাসি দিয়ে বললেন
'আপনি চোখ খোলেন'

চোখ খুলে দেখলাম উনি মাত্র ব্লাড ব্যাগ আরেকটা প্যাকেট থেকে খুলেছেন। আমি একটু লজ্জা পেয়ে আবার সেই একই স্টাইলে ঝিম মেরে শুয়ে থাকলাম। এবারও একদমই ব্যাথা পাই নি। এমনিতেই ভয়
.
আজকে শেভরন ফ্যাসিলিটিতে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি থেকে একটা গ্রুপ আসে। খবর পেয়েই একমুহুর্ত দেরী করলাম না। গিয়েপ্পর সিরিয়াল পেয়ে গেলাম। অনেক আনন্দেই শুয়ে পরলাম। কিন্তু শুয়ে মনে মনে আবার সেই ভয় ঢুকে গেল। দেখলাম লোকটা মাত্র প্রিপারেশন নিচ্ছেন। আমাকে বললেন হাত মুঠ করে রাখতে। আমিও আমার স্টাইলে প্রিপারেশন নিলাম। সেই একই স্টাইল। দাঁতে দাঁত লাগিয়ে জোড়ছে কামড় মেয়ে ঝিম ধরে শুয়ে থাকা। শুয়ে আছি আর কামড়ের চোটে মাথা মুথা সব কাঁপা শুরু করলো। তখন লোকটি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন

'ভাইয়া আপনার কি সমস্যা'
আমি চোখ খুলে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম
'কেন ভাইয়া'
'এভাবে দাঁতে দাঁত লাগিয়ে কাঁপছেন কেন'
'ভাইয়া এটা এমনি..সমস্যা নেই..শুরু করেন'
'সরি ভাইয়া..এরকম প্রব্লেম হলে তো ব্লাড নেয়া যাবে না'

শুনে আত্না গরম হয়ে গেল। বলে কি। তখন নিজেকে কন্ট্রোল করে বললাম

'ভাইয়া আমার কোন প্রবলেম নেই..এটা জাস্ট ভয় থেকে হয়..আমি ঠিক আছি'

এরপর উনি অনেক কিছু বললেন মেডিক্যালের ভাষায়। এতো কিছু মাথায় ঢুকেনি। আমার চিন্তা ছিলো উনাকে রাজি করানো। আকুম বাকুম করে বহু পেট্রোল পুড়িয়ে উনাকে শেষ গন্তব্যে নিয়ে গেলাম। শেষপর্যন্ত উনি রাজি হলেন ব্লাড নিতে

এবারও একদমই কষ্ট হয়নি..

.. সর্বোপরি একটা মূল্যবোধের জাগ্রত রুপই আপনাকে জীবনের শেষ রক্ত দানের সুযোগও হাতছাড়া করতে দিবে না। চাই শুধুমাত্র একটু মূল্যবোধটাকে জাগানো। ব্যাস ..এর পর আর আপনাকে কষ্ট করে কিছু করতে হবে। মূল্যবোধই আপনাকে বারবার নিয়ে যাবে গন্তব্যে

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.