![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিকেল থেকেই রিয়াদ সাহেবকে ফাতেমা বেগম অনবরত কল করেই যাচ্ছে
'আজকা তারাতারি বাইত আইবেন'
'আইচ্ছা'
'কেক আনতে বুলেন না কিন্তু'
'আইচ্ছা মনে থাকবো'
'তারাতারি আইবেন'
'আইচ্ছা'
অফিস আওয়ার শেষেই বনফুল থেকে এক পাউন্ডের একটা কেন কিনেই আট নাম্বার লোকাল বাসে করে শ্যামলী থেকে গাবতলীর উদ্দেশ্যে রওনা হোন। প্রতিদিনই হেঁটে যান সম্পূর্ণ পথটি। আজকে হেঁটে গেলে হবে না। আজ তাদের একমাত্র মেয়ে ডালিয়ার জন্মদিন
মাজার রোডে নেমে বাম পাশের চায়ের দোকান ঘেষে চিকন পথটি ধরে গোদের টেকের পাশে যে নতুন বস্তিটি গড়ে উঠেছে সেখানে পাকা তিনতলা বিল্ডিংয়ের নিচে কয়েক ফিট দূরেই টিনশেডের একরুম দুই হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে থাকেন রিয়াদ সাহেব
বাসায় গিয়েই কেকটা ফাতেমা বেগমের হাতে তুলে দেন। কেক দেখে ফাতেমা বেগম খুশী নন
'সাদা আনছেন কেন'
'বালা কইরা দেক'
'আন্নে দেহেন'
'আয়হায় বেডায় সাদা দিয়া দিছে'
'আমি না কইলাম কালা আনতে'
'খারা পাল্ডায় আনি'
রিয়াদ সাহেব আবার রওনা হলেন শ্যামলীর উদ্দেশ্য। দোকানে ঢোকার পরেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। পাল্টিয়ে দিবেন না। আরেকটি কিনতে হবে
'স্যার আমার মাইয়ার জন্মদিন আইজক্যা'
'জন্মদিন ছাড়া কেউ বার্থডে কেক কিনে'
'স্যার সাদাডা পাল্টাইয়া কালাডা দেন'
'নিয়ম নেই..আরেকটি কিনতে হবে'
অনেক অনুনয় বিনয় করেও কাজ হয়নি। রিয়াদ সাহেবের পকেটে আরেকটি কেক কেনার মতো টাকাও নেই। এই টাকাটাই কিছুদিন ধরে গুছিয়ে কেকটা কেনেন। এটিএম বুথের সিকুরিটি গার্ডের বেতন দিয়ে ঘর ভাড়া মিটাবেন নাকি সংসারের চাকা সচল রাখবেন নাকি মায়ের চিকিৎসা বাবদ গ্রামের বাড়িতে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা পাঠাবেন নাকি মেয়ের জন্য বার্থডে কেক কিনবেন
দুই মাস আগে এগারো বছরের মেয়ে ডালিয়া তাদের কাছে বায়না ধরে এবার জন্মদিনে কালা কেক খাবে। ডালিয়া নাকি পাশের বাসার মীমকে দেখেছে কালা কেক তার জন্মদিনে খেতে। সেইদিন থেকেই রিয়াদ সাহেব মেয়ের জন্য কেকের টাকা জোগাড় করা শুরু করেন। আর আজকেই সেই কেক কাটার দিন। কিন্তু ভুল কেক। মেয়ে চেয়েছিল কালা কেক আর উনি এনেছেন সাদা কেক। রিয়াদ সাহেব মুখ গোমড়া করেই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেন
বাসায় পৌঁছে ফাতেমা বেগম কে ঘটনা খুলে বলেন
'থাক আন্নে চিন্তা কইরেন না'
'বেডায় পাল্টায় দিলো না'
'আন্নে গর্তত একটা ডুব দিয়া আইয়েন'
'তুই কিছু মনে করিস না'
'আন্নে যান তো আমি কিছু মনে করি নাই'
রিয়াদ সাহেব গোসল শেষে বাসায় এসে দেখেন ফাতেমা বেগম কেকের উপরে পাঁচ টাকার একটা মোমবাতি পুঁতে তার উপর আগুন ধরিয়ে পাটির উপর কেকটা রেখে সামনে বসে আছেন। রিয়াদ সাহেব ও লুঙ্গি পরে তার পাশে বসলেন
'ডালিয়ার বয়স কতো জানেন'
'বারো হইবো'
'আপনের দেহি মনে আছে'
'তুই কি যে কস না'
'আইচ্ছা ওর লগের যে তিন জন আছিলো ওগোর বয়স কতো আছিলো'
'জানি না'
'বাসের ডাইবার রে নাকি দরছে'
'তাই তো হুনলাম'
'বেডারে কি ফাঁসি দিবো'
'জানি না'
'থাক বেডারে ছাইরা দেউক'
'কেন'
'হেরো তো পোলা মাইয়া আছে'
'তুই তোর মাইয়া মাইরা লাইছে যেই বেডায় হের বিচার চাচ না'
'হেরো তো আমাগো ডালিয়ার মতন পোলা মাইয়া আছে। হেগো কি অইবো'
ফাতেমা বেগমের কথার জবাব রিয়াদ সাহেব আর দেন নি। চুপ করে বসে চোখের পানি ছেড়ে সাদা কেকটার দিকে তাকিয়ে আছেন। তার মেয়ে বেঁচে থাকলে তাদের দুজনের মাঝখানে মেয়েকে বসিয়ে কেকের গল্প করতেন। তবুও আজ ফাতেমা বেগম আর রিয়াদ সাহেবের মাঝখানে একটু ফাঁকা রেখে বসেছেন। সাদা কেকটা সামনে রেখে
রাত দশটা। বারোটা বাজার অপেক্ষা...
©somewhere in net ltd.