![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময়টি বর্ষা কাল
জহির চাচা। মাঝ পাড়ায় বাড়ি। ভালো নাম ডাক। পশ্চিম পাড়া, পূর্ব পাড়া, মাঝ পাড়ার সম্মানের পাত্র। সারা গ্রাম খুজেঁ তাকে অপছন্দ করার মতো একটি মানুষ ও পাওয়া টাফ - বয়োবৃদ্ধ বোরহান উদ্দিনের ভাষ্যমতে। কারণ একটাই, এলাকার উন্নয়নের সিংহভাগই তার হাত ধরে এসেছে
শুক্রবার রাত। বাইরে অনেক চিল্লাচিল্লি শুনে ঘুম থেকে উঠলাম। জহির চাচা ধরা খাইছে, জহির চাচা ধরা খাইছে - পশ্চিম পাড়া থেকে একদল চ্যাংড়া পোলাপাইনের মিছিল। অবাক হয়ে রুম থেকে বের হলাম। অনেকেই জিজ্ঞাসা করলাম। উত্তর মিললো না
আরেকটি মিছিল পূর্ব পাড়ার দিক থেকে সেই পশ্চিম পাড়ার চ্যাংড়া পোলাপাইনের। তবে এবার স্লোগানে ভিন্নতা। জহির লুচ্চা ধরা খাইছে, জহির লুচ্চা। বিশ্বাস হচ্ছিল না। এক দৌড়ে গেলাম জহির চাচার বাসায়। সব রুমের দরজা আটকানো। নিরব একটি বাসা
গ্রামের সবাই রাস্তায় থাকলেও উনাদের বাসায় এর একটু ও ছাপ পড়েনি। টুটুল, সাদ্দাম, সুমন, সজিব, ফারুক, মুঞ্জু কে নিয়ে ঠোকাঠুকি করলাম চাচার রুমের দরজায়। ঘুম ঘুম চোখে হাই তুলতে তুলতে চাচা বলল
'কিরে তোরা এখানে। কিছু হইছে'
'চাচা আপনি রুমে'
'হ্যাঁ। কেন?'
'না! বাইরে আপনাকে নিয়ে বাজে মিছিল করতেছে পশ্চিম পাড়ায় কালন,শরিফুল ওরা'
'সমস্যা না। তোরা বাসায় যা। কাল রীনার বাসা থেকে এসে বিকেলে বিচারে তোদের সাথে দেখা হবে'
'বিচার?'
'হ্যাঁ বিচার। পশ্চিম পাড়ার বোরহান উদ্দিন, কালন, শরিফুল, মিলন, রাজু আমার নামে কাল বিচার ডাকবে'
কথাগুলো বলে চাচা আমাদের বিদায় করে দিল। সারারাত রাস্তায় কাটালাম অনেক প্রশ্ন মাথায় নিয়ে। ঘুম আর হল না। সকাল থেকে পশ্চিম পাড়ার কালন, শরিফুল, রাজু, মিলন সবাই বিচারের মাইকিং করতেছিল। তাদের ভাষ্যমতে "জহির চাচা নাকি অনেক দিন ধরে তার ভাইস্তার বউয়ের সাথে ইটিস পিটিস চালিয়ে যাচ্ছেন, কাল রাতে পাটখড়ি গাঁদার পাশে তাদের দুজন কে হাতে নাতে ধরেছে, তাদের কাছে প্রমাণ আছে"
--
বিকেল চারটা
বিচার বসেছে মসজিদের পাশেই। সবাই জহির চাচার জন্য অপেক্ষায়। সারে চারটার দিকে সাইকেল নিয়ে জহির চাচার উপস্থিতি। চাচাকে দেখে সবাই একে অপরের সাথে কানাকানি করতেছিল। প্রধান বিচারকের সিট দখল করে আছেন পশ্চিম পাড়ার সেই বোরহান উদ্দিন
বিচারের আগেই অনেকেরই মধ্যে অনেক কথা কাটাকাটি হচ্ছিল। কারণ গ্রুপ এখানে তিনটি। পূর্ব, পশ্চিম আর মাঝ পাড়া। পূর্ব পাড়া আর মাঝ পাড়া জহির চাচার পক্ষে। আর পশ্চিম পাড়া বোরহান উদ্দিনের পক্ষে। জহির চাচা চুপচাপ বসে আছে বিচারের মধ্যে। বিচার শুরু হল। প্রথমে সেই ভাতিজার বউয়ের সাক্ষ্য নেয়ার পালা। ভাতিজার বউ সাক্ষ্য দিল-ঘটনা সত্যি। তাকে নষ্ট করেছে তার স্বামীর চাচা
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে আরো অনেক কিছুই বলল। মেয়ের ন্যাকামী কান্না দেখে অনেকেই বিশ্বাস করল। আবার অনেকেই করল না। সবাই প্রমাণ চাইলো। একজন মানুষকে তো আর প্রমাণ ছাড়া এভাবে দোষারোপ করা যায় না। প্রমাণ দেখালো তার সদ্য ছেড়া কাপড়। এটাই নাকি কাল রাত জহির চাচা তাকে পাটখড়ি গাঁদার পাশে জোর করে নষ্ট করার সময় টানাটানি করে ছিঁড়ে ফেলেছে
তখন পাশ থেকে কালনের কন্ঠ 'আমার কাছেও ভিডিও আছে এই কাহিনীর'
ভিডিওর কথা শুনে সবাই নড়েচড়ে বসলো। আমরাও। বোরহান উদ্দিনের কথামতো একটি চায়না মোবাইলে প্রদর্শিত হল। ভিডিও দেখিয়ে মানুষের সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ কালন। কারণ কালো স্ক্রিনে ভিডিওর মধ্যে শুধুমাত্র একটু খড়মড় আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই বোধগম্য না
কালনের ভাষ্যমতে 'আমি যখন পাটখড়ি গাঁদার পাশ দিয়ে আসছিলাম তখন জোরাজুরির আওয়াজ শুনে চুপ করে দাড়াই। একটু উকি দিয়ে দেখি জহির চাচা আর শানু ভাবি। তখন সাথে সাথে আমার মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও করে রাখি এই ভেবে যে এখন জদি আমি দাবড়ানি দেই তাহলে পালিয়ে গেলে আমার কাছে কোন প্রমাণ থাকবে না। রাত্রে বলে ভিডিও টা কালো দেখাচ্ছে। তবে শব্দটি কিন্তু অই জোরাজুরির শব্দ ই। ভিডিও করার পর আমি শরিফুল আর রাজু কে ডেকে আনি ধরার জন্য। কারণ আমি একলা পারতাম না। কিন্তু এসে দেখি কেও নেই। তখন আমরা শানু ভাবির কাছে জাই। আমদের ভিডিও দেখাই। তাকে ন্যাজ্য বিচার পাওয়ার কথা দেই। তখন শানু ভবি রাজি হয় সাক্ষী দিতে'
এটাই শেষ না। আরো অনেকেই অনেক রকম সাক্ষী দিল। কিন্তু কেউ প্রমাণ দেখাতে পারলো না। আর এই প্রমানের অভাবে বিচার ও শেষ হলো কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই
--
কিছুদিন পর
বোরহান উদ্দিন জহির চাচার কাছে ক্ষমা চাইলেন। কালন, শরিফুল। তাকে ফাঁসানোর জন্য এটা একটি চাল ছিল সেটা সবার অকপটে স্বিকার করলেন। সেইদিনের পর থেকে শানু ভাবির খবর কারোরই জানা নেই। তার স্বামীর ও না
একদিন সকালে
চাচার সাথে দেখা। চাচা আমার কাধে হাত দিয়ে হাটতে হাটতে বলতে লাগলেন
'জানিস মানুষ কখন চেনা যায়, যখন তুই বিপদে পরবি তখন কে তোর আসল শুভাকাংখী আর কে সুযোগ সন্ধানী তাদের আচরণই টের পাবি। অই দিনের ঘটনায় আর কাউকে না হউক বোরহান উদ্দিন কে আমি ভালো ভাবেই চিন্তে পেরেছি। যে কিনা আমার অনেক বড় শুভাকাংখী হিসেবে পরিচয় দিত.....
©somewhere in net ltd.