নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তার জন্য অপেক্ষায় থাকা একশো বছরের পুরাতন যুবক

আসিফ্লী

দেয়ার মত অনেক কিছুই ছিল, নিলে না

আসিফ্লী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেকসুর খালাস

২৯ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:৩৮

নীলিমা কেমন যেন থমকে গেছে। আগের মতন এখন আর সাপলুডু খেলার দিকে মন নেই। লিপস্টিক দিয়ে ঠোঁট ভরে রাখতেও দেখা যায় না। রাত্রে ঘুমানোর আগে মার কাছে চুলে বেনী করার বায়নাও করে না ইদানিং। ক্লাস ফাইভে পড়া মেয়ের এতটা নিস্তব্ধতা কারোরই কাম্য না। আর তার চাচাতো বোন শাহানার তো কোন ভাবেই না

অনেকদিন জানতে চেয়েও উত্তর পায়নি শাহানা। শাহানা নাচতে পারে। অনেক ভাবেই নাচের লোভ দেখিয়েও কাজ হয় নি। কোন ভাবেই কথা বের করতে পারে নি নীলিমার মুখ থেকে

আজ জোরেশোরে ধরলো শাহানা নীলিমাকে। একপর্যায়ে শাহানা কে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই দিল। খুলে বলল সব ঘটানা। খুলে বলল স্কুলের হেডমাষ্টার মিজানুর মাষ্টার দ্বারা ধর্ষণের সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন দিনের কথা

শাহানা কোন ভাবেই মেনে নেয়ার মেয়ে না। সে নীলিমাকে অনেক বেশী ভাবেই ঝারলো। এতদিন চুপ করে থাকার কারণে। শাহানা নীলিমার আব্বু আম্মু কে সাথে সাথে কে বিষয় টা জানালো। তারা নীলিমার সাথে কথা বলে ক্লিয়ার হওয়ার পর এলাকার চেয়ারম্যান, এমপিকে জানালো

শুক্রবার বিকেলে বিচার। বিচারে চেয়ারম্যান, এমপি মহোদয়ের সাথে টিএনও নার্গিস আপার উপস্থিত থাকার কথা। মিজানুর মাষ্টার কোন একভাবে কথাটা জানার পর বিচারের আগের দিন নীলিমার বাসায় এসেছিল মাফ চাওয়ার জন্য। কিন্তুু মেয়ের বিচার বাবা সাইফুল ব্যাপারি, মা বিলকিস খাতুন এভাবে শেষ করার না। তারা ন্যাজ্য বিচার চায়
---

বিচারের দিন..

আসেপাশের চৌদ্দ পনেরো গ্রামের মানুষের আগমন। এমপি মহোদয় চেয়ারম্যান সবাই উপস্থিত। টিএনও আপার আসতে দেরী হবে। টিএনও আপার কাছে পার্মিশন নিয়ে বিচার শুরু করল। মিজানুর মাষ্টার প্রথমে সব কথা অস্বীকার করলেও মানুষের তোপের মুখে একপর্যায়ে স্বীকার করে

জিজ্ঞাসাবাদের পর বিচারের রায় আসল এক লাখ টাকা জরিমানা আর অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্কুল থেকে বহিষ্কার। নীলিমার পরিবার এমপি মহোদয়ের মিমাংসার রায় মাথা পেতে নিলেও মিজানুর মাষ্টার মানতে নারাজ

কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে এলাকার মানুষ যখন উত্তাল ঠিক সে মূহুর্তে টিএনও আপার দুই গাড়ি পুলিশ নিয়ে উপস্থিতি। ঠিক সেই মূহুর্তে মিজানুর মাষ্টার অজ্ঞান। মুখে পানির ছিঁটায় জ্ঞান ফেরানোর পর মিজানুর মাষ্টার কে অনেক বাজে ভাবে শাসানো হলো। তবুও রায় মানতে নারাজ। শেষপর্যন্ত পুলিশের হেফাজতে

নারী নির্যাতনের মামলা..

কেস কোর্ট পর্জন্ত যেয়েই নীলিমার কপালপোড়া গল্পের জন্ম নিল। নীলিমার বাবা মার হয়তো জানাই ছিল না বাস্তব জীবনে এমন মিথ্যা সাক্ষীর কথা। বাংলা সিনেমায় অনেকবারই টাকার বিনিময়ে মিথ্যা সাক্ষীর কারণে মানুষকে অনেক হয়রানির স্বীকার হতে দেখে নিজের অজান্তেই কেঁদেছেন। আজ তাদের সাথেই এমনটি ঘটবে কোন দিন কল্পনায় ও আনেননি

মিথ্যা সাক্ষী আর দলের বড় বড় মাথা কিনে নেয়ার করুন পরিনতির স্বীকার হতে হলো নীলিমা কে। বেকসুর খালাস পেল মিজানুর মাষ্টার
---

চারমাস পর..

মিজানুর মাষ্টার সেই আগের স্কুলেই। হেডমাষ্টার। মটরসাইকেল নিয়ে বুক ফুলিয়ে চলছে। কলঙ্কের একটু ছাপও তার চোখে মুখে নেই। আমাদের সমাজ ব্যাবস্থাই তাকে বুক ফুলিয়ে চলার অধিকার দিয়ে দিয়েছে। সে না চলেই বা কি করবে

বিচারের কিছুদিন পরেই নীলিমার আত্নহত্যা। এই ছোট্ট মেয়েটি আত্নহত্যারই বা কি বুঝে? অবাক হচ্ছেন? কিভাবে করলো! তাই না? তেমন কিছুই না। সামান্য গলায় ফাঁস। এতেই বেচারি খালাস। ঠিক মিজানুর মাষ্টাররে মতনই। বেকসুর খালাস। বেঁচে থেকেই বা কি করতো মেয়েটি। সমাজের কু -নজরের চাইতে মরে যাওয়াটাই উত্তম পন্থা

এতদিন পরেও নীলিমার বাবা মা আল্লাহ্ 'র কাছে বিচার চেয়ে প্রতিদিন বুক ভাসান। এ ছাড়া তাদের কি ই বা করার আছে?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.