নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তার জন্য অপেক্ষায় থাকা একশো বছরের পুরাতন যুবক

আসিফ্লী

দেয়ার মত অনেক কিছুই ছিল, নিলে না

আসিফ্লী › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিলীমা, জিকো এবং একজন ঠকবাজের গল্প

০২ রা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:১৪

বেশকিছুদিন আগের কথা

দুইতলার একটি বিল্ডিংয়ের উপরের তলায় আমি আর জিকো ভাড়া থাকতাম। গ্রাউন্ড ফ্লোরে থাকতো একটি মনিপুরী কাপল। আমাদের আসার আগ থেকেই তাদের এখানে অবস্থান। হাজব্যান্ড পুলিশের এস আই। আর মেয়েটি বাসায়ই থাকে

আমাদের সাথে হাজব্যান্ড এর দেখা হতো না। প্রতিদিন সকালে অফিসে যেতেন আর ফিরতেন রাত্রে। দারোয়ানের সাথে কথা বলে এতটুকুই জানলাম। তবে আমাদের দেখা হতো মেয়েটির সাথেই। প্রতিদিন দুপুরে যখন গোসলের পর ছাদের উপর কাপড় নিংড়াতে যেতেন। শুধুমাত্র তখনই। এর পর আর দেখতাম না বাইরে। অনেক উঁকিঝূঁকি মেরেও কাজ হতো না

একই বিল্ডিংয়ের নিচে আজ আমরা সাত মাস। এখনও পর্জন্ত কেও কারো সাথে একটি বাক্য ও বিনিময় হয়নি। একদিন দুপুরে আমি ছাদের উপরে যাচ্ছিলাম। সিঁড়ি তে মেয়েটির সাথে দেখা। তার দিকে তাকিয়ে ভদ্রতার সহিত একটু মৃদু হাসি দিলাম। মেয়েটি ও রেসপন্স করলো একটু হাসি দিয়ে। এই প্রথম। আনন্দে রুমে দৌড়ে গিয়ে জিকোর কাছে শেয়ার করলাম। জিকো একটু আনন্দের সহিত বলল

'মামা তোমারে দিয়াই হবে'। আমিও একটু লজ্জা পেলাম আর কি

এভাবে অনেকদিন ই হাসাহাসির পর্ব চলতেছিল। প্রায় একবছর। কেউ কারো সাথে কোন কথা না
---

শুক্রবার নামাজের পর বাসায় এসে আমি আর জিকো ছাদের উপরে যাচ্ছিলাম। মেয়েটির সাথে দেখা। আজকেও হাসি দিলাম। মেয়েটিও। কিন্তুু জিকো হঠাৎ করে

জিকোঃ আপু! কেমন আছেন
মেয়েটিঃ ভালো। আপনারা কেমন আছেন
জিকোঃ জি ভালো। আমরা দুজনই ভালো
মেয়েটিঃ (একটি হাসি দিল)
জিকোঃ আপু আমি জিকো আর ও আসিফ
মেয়েটিঃ আমি নিলীমা
জিকোঃ তাহলে আপু আজকে এই পর্জন্ত ই। ভালো থেকেন
নিলীমাঃ আপনারা ও ভালো থেকেন

এই বলে নিলীমার প্রস্থান। আমি তো অবাক। জিকো এটা কি করলো

আমিঃ তুই এটা না করলেও পারতিস
জিকোঃ না করার কি হলো
আমিঃ এখন মেয়েটি আমাদের কি মনে করবে
জিকোঃ আরে এটা কিছুই না। জাস্ট হ্যায় হ্যালো। আরে এটা তো তোর জন্যই করলাম
আমিঃ তবুও! মনে হয় ঠিক হয় নাই কাজ টা

এভাবেই প্রায় প্রতিদিন ই আমাদের কথা হতো নিলীমার সাথে। তবে তেমন বেশী কিছুই না। সেই চিরাচরিত হ্যায় হ্যালো
---

একদিন বিকেল বেলা ছাদে আমি আর জিকো টাইম পাস করেতেছিলাম। নিলীমার আগমন

নিলীমাঃ আপনারা বিকেলে ছাদে উঠেন
জিকোঃ হ্যাঁ আপু। আমরা তো বেশিরভাগ সময় ছাদেই কাটাই
নিলিমাঃ আমার বিকেলে ছাদে আসা হয় না তেমন। তাই হয়তোবা জানি না
জিকোঃ সমস্যা নেই আপু। আজকে তো জানলেন। মন খারাপ থাকলে এসেন, আড্ডা দেয়া যাবে
নিলীমাঃ আচ্ছা দেখা যাবে। আচ্ছা আসিফ আপনি কথা বলেন না কেন
জিকোঃ ও শুধু হাসি দেয়, কথা বলে না
নিলীমাঃ তাই নাকি
আমিঃ আসলে তেমন কিছুই না। আমি আপনাদের কথা শুনছিলাম
জিকোঃ তাহলে তুই বল, আমি চুপ থাকি
আমিঃ এটাই ব্যাটার
নিলীমাঃ আপনারা কে কি করেন
আমিঃ তেমন কিছু না। জাস্ট ঘুরি ফিরি খাই দাই
নিলীমাঃ কিছু করা হয় না কেন
আমিঃ এম্নিতেই। আপনার হাজব্যান্ড তো এস আই, তাই না?
নিলীমাঃ হুম। আপনারা কিভাবে জানলেন
আমিঃ এতো বছর ধরে একসাথে থাকি আর এটা জানবো না
নিলীমাঃ তাই তো
জিকোঃ আচ্ছা আপু আপনাদের বিয়ে হইছে কত ইয়ার্স
নিলীমাঃ সিক্স ইয়ার্স
জিকোঃ বাচ্চাকাচ্চা তো দেখি না

কথাটা শুনে নিলীমার মুখটা হঠাৎ করে মলিন হয়ে গেল। তখন আমি জিকো কে এইগুলা না জিজ্ঞেস করার জন্য ইশারা দিলাম। কারণ আমি আগে থেকেই জানতাম উনাদের একটু প্রব্লেম আছে। দারোয়ান মামার কাছ থেকে শুনেছি

নিলীমাঃ আমাদের কোন বেবী নেই
জিকোঃ কারণ টা বলা যাবে আপু

নিলীমা অনেক ইতস্তত বোধ করতেছিল। আমি বার বার ঠোকা দিয়ে জিকো কে না করার পরেও জিকো নাছোড়বান্দা

জিকোঃ থাক আপু। শেয়ার না করতে মন চাইলে না করতে পারেন
নিলীমাঃ না সমস্যা নেই। শেয়ার করা যাবে। আসলে আমাদের কোন সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও কেন এমন হচ্ছে আমরা জানি না
জিকোঃ ডাক্তার দেখান নাই
নিলীমাঃ হুম দেখিয়েছি। এখনও দেখাচ্ছি
জিকোঃ ডাক্তার কি বলে? কার সমস্যা?
নিলীমাঃ আমাদের কারোরই সমস্যা নেই। সব ঠিক আছে। তবুও ...
জিকোঃ আরে আপু এই নিয়ে কোন টেনশন ই করেন না। আপনার সামনে জলজ্যান্ত একজন ডাক্তার থাকতে আপনি এতো টেনশন করতেছেন
নিলীমাঃ কোথায়
জিকোঃ কেন! আমদের আসিফ। ওর হাতে কত রোগ মুক্তি পেল মানুষ। আর এটাতো কোন ব্যাপার ই না

আমিতো অবাক। আরে জিকো কি পাগল হয়ে গেল নাকি। আমি চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। তখন নিলীমা কাদোঁ কাদোঁ স্বরে আমার হাত জড়িয়ে ধরে বলল

নিলীমাঃ ভাই আপনি যদি আমার এই উপকার টা করেন তাহলে আমি সারাজীবন আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো
আমিঃ আপু আপনি চিন্তা করেন না। ইনশাআল্লাহ কিছু একটা হবেই

নিলীমার কান্না দেখে আমি এই কথাটা ছড়া কিছু বলতে পারলাম না। কারণ তখন নিলীমার চোখে মুখে সন্তানহীন বেদনার ছাপ স্পষ্ট
রুমে এসে জিকো কে ইচ্ছামতো ঝাড়লাম

আমিঃ সব জিনিস নিয়ে ইয়ার্কি হলেও তুই এটা নিয়ে কিভাবে করতে পারলি
জিকোঃ আরে এত্তো সিরিয়াস হওয়ার তো কারণ দেখতেছিনা। তুই ঔষধ দিলে যে কাজ হতেই হবে এমন তো কোন কথা নাই
আমিঃ আরে আমি তো ডাক্তার না। আর আমি আন্দাজে কি ঔষধ দিব
জিকোঃ আরে যা পারিস্ দিস
আমিঃ তুই যাই বলিস, মেয়েটির সাথে এতো বড় বেইমানি না করলেও পারতিস
---

কি আর করার। নিলীমার মুখের দিকে চেয়ে হলেও ঔষধ দেয়া লাগবেই। গেলাম হোমিওপ্যাথির দোকানে

আমিঃ আঙ্কেল! আপনার কাছে এমন কি কোন ঔষধ আছে কোন কাজের না
আঙ্কেলঃ ঠিক বুজলাম না
আমিঃ মানে আমার এমন একজাতীয় ঔষধ দরকার যার কোন সাইডএফেক্ট নাই
আঙ্কেলঃ বাবা এমন তো কোন ঔষধ নেই। তবে একজাতীয় ট্যাবলেট আছে যায় সাথে মেডিসিন মেশানোর পর কার্জদক্ষতা বাড়ে। না মিশালে কোন কাজের না
আমিঃ তাহলে আমাকে পঁয়তাল্লিশ টা ট্যাবলেট দেন

ট্যাবলেট নিয়ে বাসায় আসলাম। সুন্দর করে একটা কাগজে পেঁচালাম। তারপর বিকেলে নিলীমার বাসায় গেলাম। কলিংবেল চাপলাম

নিলীমাঃ ভিতরে আসেন
আমিঃ সমস্যা নেই। আমি বাইরেই দাড়াই। আমি আসলাম আপনার ঔষধ দিতে। প্রতিদিন তিন বেলা একটা করে খাবেন। পঁয়তাল্লিশ টা পনেরো দিন

নিলীমা হাত পেতে নিল। অনেক্ষন দুজন নিরবে দাড়িয়ে ছিলাম

আমিঃ আচ্ছা। তাহলে আমি যাই
নিলীমাঃ বসবেন না
আমিঃ নাহ! আরেকদিন। ভালো থেকেন

এটাই নিলীমার সাথে আমার লাস্ট দেখা। জিকোর সাথে এই বিষয়টি নিয়ে আমার কিছুটা কথা কাটাকাটি হয়। আমি বাসা ছেড়ে দেই। জিকো ওখানেই থাকতো শিমুল নামের একটা ফ্রেন্ড কে নিয়ে
---

প্রায় দেড়মাস পর জিকোর ফোন

জিকোঃ মামা কাজ হইয়া গেছে
আমিঃ কি কাজ
জিকোঃ নিলীমা তো এখন প্রেগন্যান্ট
আমিঃ কস কি? সিউর
জিকোঃ কসম মামা। নিলীমা আমারে কালকে বলল। টেস্টে নাকি ধরা খাইছে
আমিঃ কেমনে কি
জিকোঃ মামা! আমিও তো কই কেমনে কি। কি খাওয়াইলাম আর কি হইলো। নিলীমার বিশ্বাস তোর ঐ ঔষধ খাওয়ার পরেই নাকি কাজ হইছে

তখনও বিশ্বাস হচ্ছিলো না। এখনও না। নিলীমা আমার নাম্বারে অনেকদিন কল দিয়েছিল। কেন জানি রিসিভ করা হয়নি। নিজেকে অনেক বেশী মাত্রায় ঠকবাজ মনে হতো, এখনও

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:৩০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
একেই বলে কো ইনসিডেন্স!!
অথবা
ঝড়ে বগ মরে, ফকিরের
কেরামতি বাড়ে !!

০২ রা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:৩৩

আসিফ্লী বলেছেন: আমি এতে খুশী না / কারন আমি জানি আমি ঠকবাজ

২| ০২ রা আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:০৩

সাদিকনাফ বলেছেন: ভাই, জিকোরে কিন্তু আমার বিয়াপক সন্দেহ হইতে আছে....

০২ রা আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:০৭

আসিফ্লী বলেছেন: সন্দেহের বাইরে কেউ ই না / তবে জিকো মুখে ফটর ফটর / কাজে না ;)

৩| ০২ রা আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:১৭

জামান শেখ বলেছেন: জিকো কোর্স কমপ্লিট করেছে।

০২ রা আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:২০

আসিফ্লী বলেছেন: আজকের দিন পর্যন্ত এটা আমার মাথায় আসে নাই / আজকে কেন যেন আপনাদের কথা শুনে সন্দেহ হচ্ছে :/

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.