![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বুকিংয়ের টিকিট। যেকোন সময় হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। এই ভয়ে দুপুর বারোটায় গাড়ি ছাড়ার সময় হলেও তাড়াহুড়া করে করিমনে সকাল আটটায় মহেশপুর আসা। আসার পথে বন্ধু নাবিদের সাথে দেখা। তাই ভাড়া দেয়া থেকে কিঞ্চিৎ রেহাই পেলাম
করিমন থেকে নামতেই একটি লোকের আর্তনাদ
'কালীগঞ্জ তিরিশ, কালীগঞ্জ তিরিশ'
ভাবলাম মন্দ কিসের। তাও আবার সংবাদ পত্রের গাড়ি। হাই এস। দুই বন্ধু ভাব নিয়ে একটু সামনে বসলাম। ড্রাইভারের করুণ স্বর
'ভাই সামনের সিট বুক করা, মানুষ আছে'
কি আর করা। বুকিং সিট তো আর জবরদস্তি করে দখল করা যায় না! নিজেরটার কথা চিন্তা করেই নাবিদ কে বুঝিয়ে শুনিয়ে পিছনে করেই গেলাম কোঁটচাঁদপুর পর্যন্ত। টিকিট বুক করা এখানেই। নাবিদের গন্তব্য যশোর। তাই এবারও ভাড়া দেয়া থেকে বঞ্চিত হলাম
---
সকাল নয়টা
টিকিট কেটে গেলাম চায়ের সন্ধানে। পেলাম দোকান। দোকানদার নেই। চায়ের স্বাদ না মিটিয়েই চলে আসলাম। ঝিম্ ধরে বসে থাকলাম কাউন্টারে। মিনিট পাঁচেক পর কাউন্টারে একটা আঙ্কেল টাইপের লোকের আগমন
'কি? হইছে?'
'না পাইলাম না চাচা'
'আমি আগেই জানতাম। পারবা না'
'চেষ্টার তো কোন ত্রুটি করলাম না'
'থাক আর চেষ্টা করতে হবে না। গেলাম'
আঙ্কেল টাইপের লোকটি অন্য কাউন্টারে যাওয়ার পর কাউন্টার ম্যানেজার কে জিজ্ঞাসা করলাম
'ভাই উনি ইশারায় কি বললেন বুঝলাম না'
'ভাই সে ম্যালা কাহিনী'
'বলা যাবে'
'কি আর বলব। উনার পাশে একটা মেয়ের সিট রাখার কথা ছিল আমার। এজন্য একহাজার টাকাও দিয়েছিলেন'
'এই কাহিনী'
'হুম ভাই। আমি ইচ্ছা করেই রাখিনি। গতবার ঝামেলা হয়েছিল'
'বয়স্ক মানুষ এই কাজ কিভাবে করেন'
'ভাই! কত্তো বয়স্ক দেখলাম। সব এক'
বয়স্ক আঙ্কেলের কথা চিন্তা করতে করতে নিজের বাপের কথাও চিন্তা করলাম। যতই হোক বয়স্ক বাপতো
---
দুপুর বারোটা
বসে থাকতে থাকতে কোমড়ে ব্যাথা উঠে গেছে। ঠিক টাইমেই গাড়িটা আসলো। ঢুলতে ঢুলতে গাড়িতে উঠলাম। পাশের সিটে একটা পিচ্চি বসা। ভালোই। পাঁচ মিনিট পর গাড়ি ছাড়লো। পিচ্চি জানালার পাশে। বাইরের সৌন্দর্য অবলোকনে ব্যাস্ত। আর মুখ দিয়ে এক্সিলেন্ট, ওয়াও বলতে বলতে ফেনা তুলতেও। কিছুক্ষণ কথা বলা যাক
'তুমি কি অনেক বিজি?'
'নাহ! বলতে পারেন'
'কোথায় যাচ্ছো'
'ঢাকার গাড়িতে আবার মানুষ কোথায় যায়'
'ও! তাইতো। তোমার আব্বু আম্মু কোথায়'
'ঐ দেখেন পিছনের সিটে'
'ও আচ্ছা। উনারাই তোমার আব্বু আম্মু'
'অবশ্যই। আপনি কি অন্যকাউকে মনে করেছিলেন'
'আরে নাহ'
'মনে করাটাই স্বাভাবিক। আব্বুর মাথা টাক বলে অনেকেই ভুল করে'
'কেমন ভুল?'
'আমাকে উনার মেয়ে ভেবে'
'কারণ?'
'মানুষ মনে করে এই টাকলা ব্যাটার কিভাবে এত্তো কিউট অল্প বয়সী মেয়ে থাকে। কি অদ্ভুত! তাই না?'
'হুম। অদ্ভূত। নাম কি তোমার?'
'দিহানা'
'কিসে পড়'
'ক্লাস থ্রি। আচ্ছা তুমি কি ফেসবুক ইউজ করো'
'হুম করিতো। কেন?'
'নাহ এমনি। আমি আগে করতাম তো'
'আগে করতা মানে'
'হ্যাঁ। এক বছর আগে'
'বল কি? ক্লাস টু তে থাকতে'
'হুম'
'তো বাদ দিলা কেন'
'আর বলো না। প্রো পিক দেয়ার পর তো ফ্রেন্ড লিস্টের সবাই ইনবক্সে নক করতে করতে অতিষ্ঠ বানিয়ে ফেলছে। তাই বাদ দেয়া। প্রেশার নিতে ভাল্লাগে না'
কথাগুলো শুনে ওর দিকে হ্যাঁ করে তাকিয়ে ছিলাম। কি বলে এই পিচ্চি মেয়ে? সত্যিই কি তাই?
গল্পের মাঝে কেটে গেল অনেকটা সময়। তিন ঘন্টা পর পাটুরিয়া ফেরিঘাটে আসলাম। জ্যামের স্বিকার। প্রায় তিন চার কিলোমিটার পিছনে। মনটা খারাপ হতে লাগলো। কারণ রাত এগারো টা পঁয়তাল্লিশ এ গাবতলী থেকে ইউনিক এ আমাকে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার কথা। যেতে পারবো তো? পদ্মা সেতুটার অভাব বেশী মাত্রা অনুভূত হচ্ছিলো
---
সাত ঘন্টা পর
শুয়ে বসে দাড়িয়ে ফেরিতে উঠলাম। লঞ্চ ডুবির কারণে সবার মাঝেই ভয়ের মৃদু কাঁপন। যদি কিছু একটা হয়ে যায়। কয়েকবার মাইকিং ও করা হয়েছে ব্যাপারটা নিয়ে
ফেরি দুলছে। ভালোভাবেই। সাহস নিয়ে একটু উপরে গেলাম। বিস্কুট খেলাম। নামটা মনে নেই। গায়ে লেখা পচিঁশ টাকা নিল পঁয়ত্রিশ টাকা। দিলাম। অনেকেই দেখলাম দাম শুনে হারিয়ে গেল প্যাকেট রেখে
একদম উপরে গেলাম। যেখানটায় অনেক ফাঁকা থাকে। অনেক মানুষের ভিড়। গেলাম অনেক কষ্টে। সিড়ি দিয়ে উঠার সময় মনে হচ্ছিল এভারেস্ট জয়ের উদ্দেশ্যে মরিয়া কোন এক বালক। এত্তো খাড়া সিড়ি কেউ বানায়? বাপরে
উঠেই পরলাম বিপদে। বাতাসের গতি এতোটাই বেশী যে দাড়িয়ে থাকা দুস্কর। বড় বড় ঢেউয়ের কারণে ফেরিটা দোলনার মতো দুলতেছিল। অনেক কষ্টে নামলাম। কান ধরে আর কোনদিন উপরে না উঠার প্রতিজ্ঞা করলাম। ধুর শালা। উপরে মানুষ উঠে
মাথা ঘুরানী নিয়ে আসলাম বাসে। আবার গল্প জুড়ে দিলাম দিহানার সাথে। এটাই ব্যাটার
ফেরি পার হলাম
---
রাত নয়টা
সঙ্কেত বিহীন কেমন যেন বৃষ্টির আগমন। ভালোই উপভোগ করিতেছিলাম। দিহানা তো সেই প্রথম থেকেই উপভোগের ভাষা ওয়াও, এক্সিলেন্ট দিয়ে প্রকাশ করেই যাচ্ছে। কিন্তুু মনে মনে ভয়ই হচ্ছিলো। হাতে মাত্র দুই ঘন্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিটেরও কম। পারবো তো এগারটা পঁয়তাল্লিশ এর আগে গাবতলী পৌঁছাতে?
এগারোটা পঁয়তাল্লিশ এ গাবতলী থেকে ইউনিক পরিবহনে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার কথা। মন থেকে বিষয়টা দূর করার জন্য দিহানার সাথে কথা স্টার্ট করলাম
'তোমার কি কোন আপু ভাইয়া নেই'
'আছে তো। তবে ভাইয়া না আপুনি জানিনা'
'বুঝলাম না'
'আব্বুর কাছে জিজ্ঞেস কর'
'কেন (!) তুমি বল'
'আব্বু আমাকে বলেনি তো। আম্মুও না'
'বলেনি মানে'
'শুনলে আমার নাকি মন খারাপ হবে তাই'
'তাই নাকি'
'তাই তো বলল'
'তোমার আপুনি ভাইয়া কোথায়'
'আম্মুর দিকে তাকাও'
'হুম দেখলাম'
'কিছু বুঝলে'
'কি বুঝবো'
'না বুঝলে আর কি করা'
এই বলে ও ঘাড় ঘুরিয়ে জানালা দিয়ে আবার বৃষ্টি দেখা শুরু করলো। ওর কথার মানে বুঝার জন্য আবার দুই সিট পিছনে বসা ওর আম্মুর দিকে তাকালাম। এবার আর ভুল হলো না। বুঝলাম। আর ওর দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে এক কেজি হাসি নিয়ে বললাম
'দিহানা (!) আমি এবার বুঝেছি'
'দ্যাটস মাই বয়'
ক্লাস থ্রী তে পড়া মেয়ে এত্তো টেটন হয় আগে সত্যিই জানা ছিলো না। কিছুটা সময়ের জন্য হলেও সিলেট যাওয়ার টেনশন থেকে অনেক দূরে ছিলাম
---
এগারোটা চল্লিশ
গাড়ি গাবতলী ঢোকার ব্রিজের উপর। ডিপজল এর পর্বত সিনেমা হলের কাছাকাছি। সুপারভাইজর কে বার বার বলা সত্ত্বেও গাবতলী গাড়ি থামালেন না। কি নাকি প্রব্লেম হবে উনাদের। তবুও রিকুয়েস্ট এর কমতি রাখলাম না। এক টানে গাড়ি গিয়ে থামলো সোজা মাজার রোড। নাবিল কাউন্টারের একটু পিছনের দিকে। ঘড়িতে তখন এগারটা তেতাল্লিশ
দুই মিনিট বাকি
বাইরে মারাত্মক বৃষ্টি। সবাই কোন না কোন ছাউনির নিচে আশ্রয় নিয়েছে। ছাউনির নিচ থেকে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে। কারণ আমিই একমাত্র ব্যক্তি যে কিনা বৃষ্টিতে ভিজছে আর রাস্তায় দৌড়ঝাঁপ দিয়ে এগোচ্ছে আর শেভরনের দেয়া মরিচা পরা ঘড়িটার দিকে বার বার তাকাচ্ছে
পুরা দুই মিনিটে মাজার রোড থেকে গাবতলী আন্ডারগ্রাউন্ড পাস এর খুব কাছাকাছি সামনের দিকে পাঁচটা পিলার সম্বলিত ইউনিক কাউন্টারে হাপাতে হাপাতে হাজির হলাম
'মামা টিকেট আছে'
'কোথায় যাবেন'
'সিলেট'
'সিলেট কোথায় নামবেন'
'সৈয়দপুর'
'চারশো সত্তর টাকা দেন'
'নেন'
'ভাংতি নাই'
'নাহ। পাঁচশো টাকার নোটই সব'
'ত্রিশ টাকা সুপারভাইজর এর কাছ থেকে নিবেন'
'টিকিটের উপরে লেইখ্যা দেন'
'লেখা শেষ'
গফুর নামের একজনকে ডেকে বলল
'গফুর (!) উনারে গাড়িটা দেখায় দেওতো'
তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম
'ম্যানেজার ভাই গাড়ি কি এখনই ছাইড়া দিবেন'
'হুম। এখনই'
'দুই মিনিট সময় দেয়া যায় না'
'না না (!) সময় নাই (!) এমনিতেই আপনার জন্য পাঁচ মিনিট লেট'
'তবুও ভাই (!) একটু প্রসাব করতাম'
'ভাই প্লিজ গাড়িতে উঠেন (!) প্রসাব করার সময় অনেক পাবেন। গাড়ি ছাড়লে পাইবেন না। এইটাই লাস্ট গাড়ি'
প্রসাবের চাপে মন মরা করে গাড়িতে উঠলাম। গাড়ি টেকনিক্যাল যাওয়ার পর একটু জ্যামের মধ্যে পড়লো। তখন সুপারভাইজর এর কানের কাছাকাছি গিয়ে বললাম
'ভাই একটু প্রসাব করতাম'
'এইখানে কোথায় প্রসাব করবেন'
'রাস্তার মাঝখানে যাইয়া ঝাইরা দিমু। রাত কইরা আর কে দেখবো'
'সময় নাই ভাই। এখনই জ্যাম ছেড়ে দিবে। আপনি ভালো সামনে কোথাও গিয়ে প্রসাব করেন'
গাড়ি ওখানে আরোও পাঁচ মিনিট জ্যামে থাকলেও আমার প্রসাব করার সময় শালা সুপারভাইজর বাইঞ্চোদ দিলোনা
---
টেকনিক্যাল
প্রায় দশ মিনিটের জ্যাম। গাড়ি চলতে লাগলো জ্যাম টপকে। তখনও সুপারভাইজর এর চেহারাটা ভালো করে মনে রাখার জন্য বার বার মাথা তুলে তাকাচ্ছিলাম আর মনে মনে ভাবছিলাম 'তুই আমারে আজ প্রসাবের সুযোগ দিলি না, সময় আমার ও আসবো, তখন দেখে নিব ইনশাআল্লাহ'
শার্ট প্যান্ট সব ভিজা। প্যান্ট টা না হউক শার্ট টা চেঞ্জ করা দরকার। কিন্তুু সমস্যা একটাই। আমার পিছনের সিটের পর থেকে ছয় সিটে ছয়টি কাপল বসা। তাদের সামনে চেঞ্জ করাটা কেমন বেশরম দেখায়। আর লাইট তো পুরা ফকফকা ভিতরে। ঢাকা পার না হওয়া পর্জন্ত তো বন্ধ চিন্তা করাটাই বোকামি
এ-টু সিট হওয়া সত্ত্বেও ইঞ্জিন কভারে বসে আছি। এই চিন্তায় যে এখন যদি সিটে বসি তাহলে সারা রাস্তা ভিজা সিটে বসে যেতে হবে। চিন্তা করলাম আগে ভাগেই ব্যাগ থেকে একটা শুকনা টিশার্ট বের করে রাখি। ব্যাগ এ হাত দিতেই ফিলা লেখা একটা ব্ল্যাক টিশার্ট পেলাম। হাতে নিয়ে টিশার্ট এ নাক দিয়ে গন্ধটা টেষ্ট করে নিলাম
বাহ্দা রুণ তো। কেমন যেন একটা গন্ধ। ভালো লাগার মতো। চিন্তা করলাম আম্মু মনে হয় সালমান খানের এড টা দেখছে। ধোঁয়ায় পর কাপড় থেকে গন্ধের এড। আম্মু অনেক এগিয়ে আছে। আমার আম্মুতো
আমার পাশের সিট এ-ওয়ান খালি। তাই টিশার্ট এর সাথে আব্বুর ব্যাগ থেকে ছিনিয়ে আনা ফগ (ব্লাক) বডি স্প্রে টাও বের করে রাখলাম। বলা যায়, কপালে মেয়েও থাকতে পারে। প্রিপারেশনে কমতি না দেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ
এই কাউন্টার ঐ কাউন্টার থেমে থেমে ইউনিক পরিবহন চলছে। ঢাকা এখনও পার হয়নি। আর আমিও ভেজা শার্ট চেঞ্জ করার সুযোগের অপেক্ষায়
---
তখনও ঢাকা পার হই নি
আমি ইঞ্জিন কভারে বসে। ডি -থ্রী, ফোর এ ইয়ং কাপল। মেয়েটির সিঁথিতে অনেক সুন্দর করে লাল আল্পনা আঁকা। ইঞ্জিন কাভার থেকে দেখা না গেলেও মাঝেমধ্যেই একটু উকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করি
কিছুক্ষণ পর ছেলেটি সিট থেকেই সুপারভাইজর কে ডাক দিল। আমি আবার একটু ভয় পেয়ে গেলাম। আমার নামে কমপ্লেইন করবে না তো আবার। ভাগ্যিস সুপারভাইজর রেসপন্স করলো না
বাঁচলাম
এভাবে অনেক ডাকাডাকির পরও যখন সুপারভাইজর শুনছিলো না তখন ছেলেটি নিজেই উঠে আসলো
'সুপারভাইজর সাহেব'
'হ্যাঁ বলেন'
'আপনাকে আমি কতবার কল করেছি'
'আপনি আমার নাম্বার জানেন কিভাবে'
মোবাইল বের করে
'কই ফোন দিয়েছেন। নো মিসকল'
'আরে ভাই এই কল না। আমি আপনাকে সিট থেকে অনেকবারই ডেকেছি'
'ও তাই বলেন'
ছেলেটি বিরক্ত হয়ে চলে গেল
আবার কিছুক্ষণ পর আসলো। এবার সরাসরি ড্রাইভার এর সাথে একটু গলার স্বর নামিয়ে
'আঙ্কেল (!) একটা কথা'
'হে বলেন'
'লাইট গুলা কি একটু অফ করা যাবে'
'কেন'
'একটু ঘুমাতাম আর কি'
'ঢাকা পার না হওয়া পর্জন্ত লাইট জ্বলিয়ে রাখতে হবেই'
'কোন ভাবেই কি যায় না'
'একটু ধৈর্য্য ধরেন। এইতো পার হয়ে গেলাম বলে'
'আচ্ছা আঙ্কেল'
এই বলে ছেলেটি আবার যায়গায় চলে গেল। যাওয়ার পর ড্রাইভার আমাকে বললো
'বুঝলেন ভাই, ইয়ং পোলাপাইন তো ধৈর্য্য কম, আর আমারে আসছে ঘুমানোর ছুতা দিতে, আমি এই লাইন বহুত আগেই ছাইড়া আইছি, এহন কথা হইলো মাইয়া পাশে তো, এই কারণে এত্তো তাড়াহুড়া। বুঝলেন?'
'হুম বুঝলাম আঙ্কেল'
---
অনেক্ষণ হলো
ঢাকা পার হয়ে গেছি। লাইট বন্ধ। প্রায় সবাই ঘুমিয়ে। আমার আর ঘুম কিভাবে আসে। সেই যে প্রসাবের চাপ। এখনও। না পারতেছি সিট পুরা আনফোল্ড করে সটান হয়ে শুয়ে ঘুম দিতে না পারতেছি চুপ করে বসে থাকতে
দুর্ভাগ্যবশত নাক ডাকলেওয়ালা এক গর্ধবের পাশে সিট পরলো। এদিকে আবার পিছনের সিটে কাপলের পুতুপুতু আলাপ। মুখ চেপে হাসি। আর সুপারভাইজর তো আমাদের ভিতরে রেখে তালা মেরে ঘুম
অপেক্ষা কখন উজানভাটি হোটেল আসবো। ট্যাঙ্ক খালি করবো। আবার রিলোড করবো। এইসব আজে বাজে চিন্তা করতে কখন ঘুমিয়ে গেলাম টের ও পেলাম না
শেষপর্যন্ত সুপারভাইজর এর ডাক
'বিশ মিনিটের বিরতি, আর সবাই গাড়ির নাম্বার টা মনে রাখবেন .....'
ধুষ শালা (!) ঘুম টাই ভেঙ্গে গেল। মনে হচ্ছিলো কাচা ঘুম। জোড় করে ঘুম থেকে উঠতেই সেই চাপ। তারাতারি করে গেলাম হোটেলের ওয়াশ রুমে। বিশ্বাস কর ভাই পুরা দুই মিনিট ধইরা ঢাললাম
শান্তি
ফ্রেস হয়ে টেবিলে বসলাম। রুটি, সব্জি আর খাওয়া শেষে এক কাপ চা দেয়ার কথা বললাম। দ্রুতই চলে আসলো খাবার। চেটেপুটে খেলাম। চা ও আসলো। তাও শেষ। ওয়েটার বিল টেবিলে রেখে অন্য টেবিলে গেল। বিল হাতে নিয়ে আমি থম। এইডা কেমনে (!) ছয়শো পঞ্চান্ন টাকা। মাই গো মাই (!) মেনু লিস্ট দেখে নিশ্চিত হলাম এটা আমার না। তবুও দ্রুতগতিতে ওয়েটার কে ডাকলাম
'মাথা ঠিক আছে তোমার'
'কেন স্যার'
'অই মিয়া স্যার ডাইকো না। ভাই কও'
'সরি ভাই'
'তুমি কার বিল কার হাতে ধরাই দিছো। এইগুলা আমি খাইছি'
পেপারটা হাতে নিয়ে জিহ্বায় কামড়
'সরি স্যার। মিস্টেক'
এই কথা বলতে না বলতেই পাশের টেবিল থেকে হাসতে হাসতে ওকে ডাকতেছে
মনে হয় আমার বিল ওদের কাছে। ভাবতেছে এত্তো খাইয়া এমন বিল (!) কেমনে (!)
---
বিল পে করলাম
এদিক ওদিক তাকিয়ে হোটেল ঊজান ভাটি থেকে বের হচ্ছিলাম। দেখলাম দুই জন লোক হোটেলের দিকে পিছন ফিরে গলা পাজাপাজি করে সেলফি তুলছে। এত্তো রাতে এমন নুনু মার্কা এনার্জি কই পায় কে জানে। গে নাকি
ওদের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে সামনে তাকাতেই দেখি তিন চারটা ইউনিক পরিবহন। এনা পরিবহনও আছে। ভ্যাকাচ্যাকা খেয়ে গেলাম মাইরি। আমার গাড়ি কোনটা (!) পকেটে হাত দিলাম। যাহ্ শালা (!) টিকিট তো গাড়িতে
কপাল
এক এক করে চেক করতে হবে। একটার দিকে উঁকি না মারতেই দেখলাম পিছনের দিকে একটা ইউনিক পরিবহন ঘুরিয়ে চলে যাচ্ছে প্রায়। আরে আমার গাড়ি নাকি (!) ঐ ভাই ঐ ভাই করে হাত মারতে মারতে এক দৌড়ে গেলাম গাড়ির কাছে। আরে হেলপার তো আরেক টা। সুপারভাইজর ও সেই খাইস্টাটা না। সুপারভাইজর জিজ্ঞেস করলো
'কোথায় যাবেন'
'ভাই সিলেট'
'ভাই কত নাম্বার গাড়ি'
'মনে নাই'
'টিকিট দেখি'
'গাড়ির ভিতরে'
'কয়টার গাড়িতে আসছেন'
'এগারো টা পঁয়তাল্লিশ'
'গাবতলী থেকে'
'হুম'
'তাহলে আপনার গাড়ি এখনও এখানেই আছে'
গাড়ির নাম্বার দিল
খোঁজার জন্য সামনে আসছিলাম। আমাকে দেখে সেই খাইস্টা সুপারভাইজর বললো
'আরে ভাই আপনি কোথায় ছিলেন'
'আমিতো গাড়ি খুঁজতে গেছিলাম'
'ধুরু ভাই। আসেন উঠেন গাড়িতে'
---
গাড়িতে উঠলাম মাথা নিচু করে। কেমন একটা লজ্জার ব্যাপার ঘটে গেল। সবাই দেখি আমার দিকে তাকিয়ে। লজ্জার পরিমাণ ফুটন্ত পানির মতো টুকবুক করে বাড়তে থাকলো
কিছুক্ষণ পর লাইট অফ করে দেয়াতে এই চালানে বেঁচে গেলাম। কিন্তুু আমার পাশের নাক ডাকনেওয়ালা আমাকে কনুই দিয়ে ঠোকা দিয়ে বললো
'কি হইছিলো আপনার'
'না তো কিছু না'
'না আমি তো আপনার জন্য টেনশনে ছিলাম'
'কেন'
'না ভাবলাম আপনি হারায় গেলেন কি না'
'এমন চিন্তা করার কারন'
'নাহ্ এমনি বললাম'
'ফাও পেঁচাল না করে ঘুমান'
'রাগান্বিত মনে হচ্ছে'
'নাহ্ তা হবে কেন (!) প্লিজ ভাই ঘুমান'
'আপনার মোবাইল কই'
'মোবাইল কই মানে (!) পকেটে'
'চেক করে দেখেন তো'
'এই যে'
'আরেকটা'
অন্য পকেটে হাত দিয়ে তো ব্যাকুব। মোবাইল গেল কই (!) মোবাইলের ফ্লাশ অন করে উপরে নিচে খুঁজতে লাগলাম। উনি আবার কনুই দিয়ে ঠোকা দিয়ে বললেন
'এই নেন মোবাইল'
'আপনি কই পাইলেন'
'সিটের উপরেই ছিল'
'থ্যাঙ্কস ভাই'
'কি দরকার ছিলো। আমি ঘুমাই'
এই বলে উনি হাসি হাসি মুখে ঘুমিয়ে গেলেন। খারাপ লাগতেছিল। উনার সাথে এমন রুড বিহ্যাভ না করলেও পারতাম
---
আমার পাশের নাক ডাকনেওয়ালা লোকটি ঘুমাচ্ছেন। পুরাই ব্যাঙের মতন আওয়াজ। কেরুত কুরুত। এখন আর বিরক্ত লাগছে না। উপকৃত হয়েছি তো। আবার বাঙ্গালী বলে কথা। কদর একটু বেশীই
এসব কথা চিন্তা করতে করতে আমার হাত পা প্রায় ঘুমিয়ে গেছে। বডির নড়াচড়া ও প্রায় শিথিল। ব্রেন তো এখনও বেয়াদবি কথা বার্তা ম্যাসেঞ্জারের মতো টুরুং টারুং শব্দে ঘটনার আপডেট জানান দিচ্ছে। চোখ আর ঠোঁট গুলা অন্যদের তুলনায় একটু বেশী ই সজাগ। এখনও টুংটাং করে নড়াচড়ায় রত
গাড়ির স্পীড হান্ড্রেডে হান্ড্রেড। শুনেছি দেখেছি বৃষ্টির সময় ড্রাইভিং স্লোলি করতে হয়। কিন্তুু এই ড্রাইভারের মনে হয় বৃষ্টির দিকে কোন খেয়ালই নেই। ভাবলাম উনার মনের ভিতর মনে হয় কোন এক সালের বিরহের আগুন জ্বলছে। তাই বাইরের বৃষ্টি তেমন ইফেক্ট ফেলছে না
ঘুমিয়ে গেছি
হঠাৎ করেই ধুরুম ধারুম শব্দ। লাফ দিয়ে উঠলাম। উঠে দেখি আমার পাশের নাক ডাকনেওয়ালা লোকটি 'লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তূ মিনাজ জলেমিন' বার বার পড়ছেন
'কি হইছে ভাই'
'আপনি এখন উঠলেন'
'কেন (!) কি হইছে'
'আগে বলেন আপনি কি কোন ব্যাথা পাইছেন'
'নাহ তো'
'আরে ভাই আরেকটু হলেই গাড়ি প্রায় এক্সিডেন্ট'
'মানে (!) কিভাবে'
'অভারটেক করতে যেয়ে'
এতকিছু হয়ে গেল আমি টের ই পেলাম না
---
টের না পাওয়ার কারন চিন্তা করতে করতে ঘুমের রাজ্যে ঢুকে গেলাম । কি যেন একটা স্বপ্ন দেখতেছিলাম । হঠাৎ করেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল । একজন যাত্রী কেমন চিল্লাচিল্লি করছে । আমার পাশের নাক ডাকনেওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম উনার চিল্লাচিল্লির কারন
'একযায়গায় নামার কথা ছিলো। কিন্তু সুপারভাইজর উনাকে নামাতে ভূলে গেছে'
তখন নামতে ব্যার্থ হওয়া যাত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম
'ভাই আপনার কোথায় নামার কথা ছিল'
'কিতা খইছো বা, বুচ্ছি না'
'মানে আপনি কোথায় নামতে চেয়েছিলেন'
'আর খইন্না যেন্ বাই আউশকান্দিত লামতাম আছলাম'
'এখন আমরা কোথায়'
'মনহয় শেরপুর তন ফার অইয়া গেছিগি'
আয়হায়। আমি তো সৈয়দপুর নামবো
সাথে সাথে সুপারভাইজর কে ডাক দিলাম জোড় গলায়। মনে মনে আগের সেই প্রতিশোধের আগুন
'ঐ ব্যাটা সুপারভাইজর'
'জ্বী ভাই'
নাহ্ (!) কথা বলার ভদ্রতা আর চেহারায় অসহায়ত্বের ছাপ দেখে রাগারাগি করতে ইচ্ছা হলো না। ভালোভাবেই বললাম
'আমার কোথায় নামার কথা ছিলো'
'কোথায় যেন ভাই'
নাহ্ (!) আবার সেই অসহায়ত্ব
'আপনার সত্যিই মনে নেই'
'না ভাই'
'আমার সৈয়দপুর নামার কথা ছিলো'
'সরি ভাই'
এরপর আরেক তরফা ড্রাইভার ঝাড়লো। আমি আর কি বলবো। আমি তো তার অসহায়ত্বের ছাপে পোষ্টার হয়ে ঝুলে গেছি
আমি আর সেই আউশকান্দি মিস করা লোকটি গোয়ালা বাজার নেমে গেলাম। আমার গন্তব্য থেকে আট-নয় কিলোমিটার দুরে
---
ভোর চারটা
এখনও বাইরে অন্ধকার। আবছা আবছা। দুই একটা নষ্ট ল্যাম্পপোষ্টের আলোয় তেমন ক্লিয়ার না রাস্তাঘাট। রাস্তার পাশে দুই তিনটি কুকুর শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে মনে হয়। সাবধানে পা টিপে টিপে তাদের পাশ কাটিয়ে গেলাম। প্রায় কার্তিক মাস বলে কথা
গাড়ি থেকে নামার পরপরই সাথের লোকটি কেমন যেন হারিয়ে গেল। খোঁজার চেষ্টা করলাম না। তাদের এলাকা। সবই পরিচিত। হয়তোবা পরিচিত কারো কাছেই গেছেন
উনাকে না দেখতে পেয়ে আবার মনে মনে ভয় ই হচ্ছিলো। এই ভেবে যে আমাকে ক্ষতি করার জন্য আবার মানুষ জোগাড় করতে গেল কি না (!) যদি তাই হয় তাহলে আগে ভাগেই সবকিছু দিয়ে দেয়ার চিন্তা করছিলাম। আটকালেই ঝামেলা
ধুরু (!) খালি বাজে চিন্তা
আমি গোয়ালা বাজার একবার এসেছিলাম মাত্র। তাও আবার পাঁচ থেকে দশ মিনিটের জন্য। ডাচবাংলা ব্যাংক থেকে এটিএম কার্ড নেয়ার উদ্দেশ্যে। তবুও এই রাত্রের আবছা আলোয় সব কেমন যেন ঘোলাটে মনে হচ্ছে
অন্য রকম এক ভূতুড়ে পরিবেশ
রাস্তার ডান পাশ দিয়ে হেটে সামনের দিকে যাচ্ছিলাম নাকি পিছনের দিকে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম। আমার প্রায়ই এই ভুল টা হয়। দিক ঠিক করতে পারি না। সারাজীবন মনে হয়েছে আমাদের পশ্চিম ডানদিকে এইজন্য সব এলাকার পশ্চিমই ডানদিকে। এই জন্য সবসময়ই বিপদে পরতে হয়েছে
রাস্তা দিয়ে শোঁ শোঁ শব্দে গাড়ি গুলো পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। অনেকগুলো কে হাত মারলাম। থামলো না
অনেকদূর থেকে একটা সিএনজি মতো দেখা যাচ্ছে। সিএনজি নাকি অন্যকিছু ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। একটু দুরত্ব কমতেই বুঝলাম সিএনজি
কিছুটা হলেও একটু সস্তি ফিরে পেলাম
---
সিএনজি সমনে এসে দাড়ালো
'বাই তুমি খই জাইতা'
'সৈয়দ পুর যাবো ভাই'
'এখলা নি বা'
'জ্বি (!) আমি একাই। কত নিবেন'
'আফনে খত দিবেন'
'না আপনি যাবেন আপনি বলেন'
'ফাশশো টেকা দিবা'
টাকার কথা শুনে মাথায় হাত। শালা মানুষ না ডাকাত। বেশী হইলে তিনশো চাইতে পারে। তাই বলে পাঁচশো
'আড়াইশো দিব যাবেন'
'না (!) যাইতাম নায়'
হাজার প্যাচাল করেও যেতে পারলাম না। উনি চলে গেলেন। কিন্তুু যাওয়ার আগে বলে গেলেন সামনের দিকে গেলে একটা চায়ের দোকান আছে। ওখানে সিএনজি পাওয়া যাবে
হাটতে হাটতে দেখানো যায়গায় গেলাম। চায়ের দোকান পেলাম। দোকানের পিছনের বেঞ্চের সারিতে সেই হারিয়ে যাওয়া লোকটি আর তার সাথে ছয় সাত জনের মতো একটা গ্রুপ। একটু কাছে যেতেই দেখলাম একজন মহিলাও আছেন। ভয়ের পরিমাণ একটু কমলো
ওখানে গিয়ে বুঝলাম উনারাই সিএনজি ড্রাইভার। চায়ের দোকানদার ডেকে বললেন
'বউকা বাই চা খাউক্কা'
চা দিলেন। শেষ করলাম। পাশে বসে থাকা একজন বললেন
'খই জাইতারে বা'
'সৈয়দপুর'
'সিএনজি দিয়া যাইবানি বা'
'যাবো না কেন (!) কত নিবেন'
'সারে চারশো দিয়া লাইয়ো বা'
'তিনশো দিব (!) যাবেন'
'ওইলো নারে বা। যাওয়া আসার বারা দেওয়া লাগবো রে বা'
'তাই বইলা এত্তো'
'কিতা খরমু রে বা'
'আমার ও তো একটা বাজেট আছে ভাই'
'সখাল আটটার আগে লাইনোর গারি ফাইতায় নারে বা'
'একটু কম করে নেন'
'আমার পোশায় নারে বা (!) ওয়াক্কা, পঞ্চাশ টেকা কম দিয়ো বা'
রাজি হলাম। একশো টাকা কমাতে পারলাম। এটাই বা কম কিসের। কিন্তুু সন্দেহ অন্য যায়গায়। আমার পকেটে এতো টাকা আছে তো। মানিব্যাগ বের করে পুরাই টাস্কি। তিনটা একশো টাকার নোট আর খুচরা কয়েক টাকা
এটিএম বুথের কথা মনে হলো। সিএনজি নিয়ে একটু সামনের দিকে গেলাম। একটা বুথ দেখলাম। গেলাম। বুথ লক করা
তখন সিএনজি ওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম আর কোথায় বুথ আছে কিনা। উনি কিছুই জানে না। পড়লামনি বিপদে। সিএনজি নিয়ে সামনে এগোতে লাগলাম। কিছুদূর যেতেই সেই ডাচবাংলা ব্যাংক যেখান থেকে আমার এটিএম কার্ড তুলেছিলাম তার নিচে এটিএম বুথের সামনে সিএনজি থামালাম
'মামা (!) একটু দাড়ান আমি আসছি'
'আইচ্চা যাও রে বা'
টাকা তুলে খুশী মনে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম
©somewhere in net ltd.