নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তার জন্য অপেক্ষায় থাকা একশো বছরের পুরাতন যুবক

আসিফ্লী

দেয়ার মত অনেক কিছুই ছিল, নিলে না

আসিফ্লী › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রমিজ

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:০৫

কথাটা ভেবেছিলাম কোনদিন কাউকে বলবো না। তেমনি কথা ছিলো মীমের সাথে। ও যখন আমাকে কোন কিছু বলতো তখন প্রমিজ করিয়ে নিত আমি যেন কাউকে না বলি। বলার শেষে আমার নিরবতা দেখে হাসি দিয়ে বলতো

'আচ্ছা বাবা..আপনি যাকে ইচ্ছে বলবেন..একটা শর্ত..আমি যাওয়ার পর বলবেন'

আমি আরো বেশী মন খারাপ করে বলতাম

: যাওয়ার পরে বলে কি লাভ
: সবসময় লাভ লসের হিসেবে বসতে হয় না
: আপনি কি সত্যি চলে যাবে
: আপনি কি আমার আগে যেতে চান
: নাহ্..আমি মরতে ভায় পাই
: আপনি একটা ভিতুর ডিম
: আপনি ডিম পারেন
: আপনি তো অনেক পচা

এভাবেই খুটিনাটি ঝগড়ার ছলে জানা হতো ওর সম্পর্কে। আমিও বলতাম। আমরা দুজন দুজনকে আপনি করে বলতাম। ওর নাকি আপনিতেই মজা। মাঝেমধ্যে আমাকে ও মটকু ডাকতো। আর আমি ওকে চিকনী
.

মীমের সাথে আমার দেখা হয় রাজশাহীতে যাওয়ার সময়। তখন রাজশাহীতে আমার গার্লফ্রেন্ড ছিল। ওর সাথে সেমিস্টার শেষ হওয়ার পর সেমিস্টারের রেজাল্টের উপর ওয়েভারের টাকা নিয়ে দেখা করতে যেতাম। হানিফ বাসে উঠে সিটে বসতে গিয়ে দেখি মেয়েটি বসা। আমি ভালো করে টিকিট চেক করলাম। নাহ ঠিকই তো আছে

সিটে বসে চুপ করে বসে থাকলাম। গাড়ি ছাড়লো। মেয়েটি চুপ আমিও। আমার বারবার ফোন আসছিলো আর আমি আমার অবস্থান গার্লফ্রেন্ড কে জানাচ্ছিলাম। আমি এখন এখানে, আমি এখন ওখানে। এভাবে বার বার গার্লফ্রেন্ডকে বাবু বলা দেখে মেয়েটি আমাকে জিজ্ঞেস করলো

: গার্লফ্রেন্ডের কাছে যাচ্ছেন
: কিভাবে বুঝলেন
: আসিফ ও আমাকে বাবু বলে ডাকতো
: আসফি কে
: আমার বয়ফ্রেন্ড ছিলো
: এখন কোথায়
: চলে গেছে
: কোথায়
: অনেক দূরে
: মারা গেছে
: নাহ্
: ব্রেকাপ
: জানিনা..জাস্ট চলে গেছে
: ব্রেকাপ করলো কেন
: প্রমিজ করেন কাউকে বলবেন না
: প্রমিজ ট্রমিজ করতে পারবো না
: তাহলে বলবো না
: ওকে প্রমিজ
: আমার ক্যান্সার তাই
: ক্যান্সার মানে
: ব্লাড ক্যান্সার..শুধুমাত্র আসিফ, আপনি আর আমার একটা ফ্রেন্ড সুমি জানে। সুমিকে আমি কোরআন শরীফ হাতে রেখে কসম কাটিয়েছি। তাই ব্যাচারি কাউকে বলতে পারছে না। জানেন সুমি আমার দিকে প্রতিদিন তাকিয়ে তাকিয়ে কাঁদে। আমি ওকে অনেক স্বান্তনা দেই কিন্তু ও কোন কিছু শুনতে নারাজ। প্লিজ কাউকে বলবেন না। আচ্ছা আপনার নাম কি (?)
.

আমি মেয়েটির দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে শুধু তাকিয়ে ছিলাম। কি বলে এই মেয়ে। ক্যান্সার। পরে কথা বলে জানতে পারলাম মেয়েটির কয়েকদিন শরীর অসুস্থ থাকার কারণে আসিফ আর ও ডাক্তারের কাছে যায়। ডাক্তার কয়েকটি টেস্ট দেয়। টেস্টে ধরা পড়ে ব্লাড ক্যান্সার। তারপর থেকে আসিফ আর মীমের সাথে যোগাযোগ করেনি। মীম ও আর ট্রাই করেনি। মীম জানতো আসিফ আর ফেরার নয়

ও যখন আমার নাম জিজ্ঞেস করেছিলো তখন আমি আমার আসল নাম বলি নি। ভেবেছিলাম যদি জানে আমার নাম আসিফ তাহলে সারা রাস্তা আমার সাথে কথা বলবে না। তাই ওর নামের সাথে মিল রেখে বলেছিলাম মিমুর

সেদিন ও নাটোর এসে নেমে যায়। আমার নাম্বার নিয়ে গিয়েছিল। আমি যখন রাজশাহী থেকে ফিরে ঢাকায় আসি তখন মীম আমাকে কল দেয়। এভাবে আমাদের কথা চলতে থাকে। দিনের পর দিন। কিভাবে যেন আস্তে আস্তে রাজশাহীতে থাকা মেয়েটার সাথে কথা বলা কমতে থাকে। কথা কমতে কময়ে কোন এক অজানা কারনে আমাদের একসময় কথা একদমই বন্ধ হয়ে যায়
.

মীমের সেই সুমি নামে ফ্রেন্ড আমাদের দুজনার কথা সম্পর্কে জানতো। সুমির সাথেও আমার মাঝেমধ্যে কথা হতো। আমার সাথে অনেক কান্নাকাটি করতো সুমি। বলতো

'ভালো মানুষের কেন আল্লাহ্ এরকম খারাপ রোগ দেয় বলতে পারেন ভাইয়া'

আমি এই প্রশ্নের জবাব একদিন ও দিতে পারিনি সুমি কে। শুধু চোখের বাপ পাশ দিয়ে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়তো অজানার বেদনায়

মীম তার রোগের কথা তার আব্বু আম্মুকে ও জানায় নি। নিজের ভিতরেই চেপে রেখেছিল। কারণ মীম জানতো তার আব্বু আম্মু কোনদিনই এটা সহ্য করতে পারবে না। আর তার আব্বু আম্মুর এতো টাকাও নেই যে তাকে উন্নত চিকিৎসা দিতে পারবে। আমার সাথে মীম প্রায়ই এই কথাটা বলতো

'আমি চাইনা আমার আব্বু আম্মু আমার কারণে কষ্ট করুক..যদি এমন হতো কষ্ট করলে সুফল পাওয়া যাবে তাহলে সেটা বলা যায় ..কিন্তু আমি জানি আমার মৃত্যু অনিবার্য..আমি চাই না আমার আব্বুর যতটুকু টাকা আছে আমার পিছনে বৃথা খরচ করতে..আর আমার ছোট আমার দুটো বোন আছে..তাদেরকে ও তো আব্বুর সামলাতে হবে..তাই আমি আল্লাহর কাছে মুনাজাতে একটা দোয়াই কর আমাকে যেন খুব তাড়াতাড়ি নিয়ে নেয়..আমার আব্বু আম্মু না জানার আগে যেতে পারলে আমার শান্তি'

হয়তোবা আল্লাহ্ মীমের সেই দোয়াটাই কবুল করেছেন। মীমের আব্বু আম্মু জানার আগেই দুই মাস আগে মীম তার সারাজীবনের চাওয়া না ফেরার দেশে চলে গেছে...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.