![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পথ হারিয়ে ফেলেছি। দিগন্তের ওপারে কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। তবে আমার ধূসর স্বপ্নগুলোকে রেখে এসেছি। একদিন হয়তো স্বপ্নগুলো রঙীন হবে অন্যকারো মাধ্যমে, যে পথ হারাবে না।
কিছু কিছু মুহুর্ত আসে যা সম্পূর্ণ অপরিচিত। কিছু কিছু অনুভূতি সম্পূর্ণ নতুন, যেগুলো পুরোন হয় না। মনের একটি অংশ সেগুলো চিরকাল দখল করে থাকে। প্রয়োজনীয় প্রভাবকের সংস্পর্ষে মানসপটে তা হয়ে ওঠে জ্যান্ত। সে রকম কিছু অনুভূতির কথাই আজকে বলব।
* প্রথমে বলি আমার এক ভাইয়ের কথা। আমার চাচাত ভাই। আমরা কাজিনরা ছিলাম বন্ধুরমত সবাই। আমি যার কথা বলছি তিনি আমার চেয়ে অবশ্য বছর দুয়েকের বড় ছিলেন। তবে আমাদের মাঝে তুই তুই সম্পর্ক ছিল। ভাইয়া আমাদের ছেড়ে চলে যান চার বছরের বেশি হয়ে গেছে। তিনি "আত্মহত্যা' করেছিলেন কোন কারনে। এই শব্দটা ব্যবহার করতে আমার কষ্ট হয়, কারন তিনি আমার ভাই, আমি চাইনা শব্দটা তাকে মৃত্যুর পরও কলুষিত করুক। তার সম্পর্কে আরেকদিন বলব। আজকে বরং আমি স্বার্থপরের মত আমার নিজের অনুভুতির কথা বলি। আমি ছেলে হিসেবে খুবই শক্ত, অনেকটা আবেগশূণ্য। সেদিন সকালবেলা আমার কলেজ ইয়ার ফাইনাল পরিক্ষা ছিল। তাই সকালে আব্বা যখন খবরটা পান তিনি আমাকে বলতে চাচ্ছিলেন না। তিনি স্বার্থপরেরমত ব্যাপারটা লুকিয়ে যান। কিন্তু আমি অনেকটা আন্দাজ করতে পারি। আমার মনে ঝড় চলছিল, ভাইয়া হয়তো গুরুতর অসুস্থ, তাই হসপিটালে। আমাকে সেরকমই বলা হয়েছিল। আমি পরিক্ষা দিতে চলে গেলাম। দুপুরে ফিরে আসলাম। আমি ভয়ে আম্মাকে কিছু জিজ্ঞাস করছিলাম না। আম্মা একসময় নিরবতা ভাঙল। তিনি বললেন, ভাইকে নিয়ে আসা হচ্ছে। আমার মনে আশা জেগে উঠল। আমি তবুও চুপ। যদি আশা নিরাশা হয়। এরপর আম্মা বলল, পোস্টমোর্টেম নিয়ে একটু ঝামেলা হচ্ছে। ...... আমার মনের থেকে সব উত্তেজনা কেটে গেল, যা এক মস্ত বোঁঝা হয়ে চেপে ছিল। তখন আমি জানি, আমি হেরে গেছি। আমি চুপ করে থাকলাম। আম্মা আমার ব্যবহারে বেশ অবাক হচ্ছিল। আমি ছিলাম প্রতিক্রিয়াহীন। তিনি বললেন, ইশতিয়াক (আমার আরেক কাজিন) তো গড়াগড়ি করে কান্না করতেছে। আমি তাও কিছু বললাম না। বিকেলবেলা আম্মাসহ গেলাম চাচার বাসায়। কফিন নিয়ে আসা হয়েছে। সবাই জড়াজড়ি করে কান্নাকাটি করছে। ভাইয়ার বন্ধু-বান্ধবই ছিল বিশ-পঁচিশজন। সবাই কাপড়ের ফাঁকা দিয়ে ভাইয়ার মুখ দেখছে, যে চব্বিশঘন্টা আগেও ছিল সস্পূর্ণ স্বাভাবিক। আমি দেখলাম না। আমার তখনও কোন প্রতিক্রিয়া নাই। ভিতরের রুমে ঢুকলাম। দেখলাম ইশতিয়াক অন্যদিকে মুখ করে কাঁদতেছে। এইবার আমি আর পারলাম না। আমার কাঠিন্য চোখের জলে ভেসে গেল। আমি কাঁদলাম, যা আমার চরিত্রের বিপরীত। এরকিছু পর জানাজা হল। নামাজ পরা শেষে আমার এক চাচা বলল, ভাইয়াকে দেখব কিনা। আমি দূর হতে দেখলাম। তার মাথার এক কোণে রক্ত। মুখটা বাচ্চাদের মতই নিস্পাপ দেখাচ্ছিল। এখন আমার মনে হয় তাকে না দেখাই ভাল ছিল। এখন আমাকে মৃতভাইয়ের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। একসাথে কাটানো সুখস্মৃতিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। যা হোক, জানাজা শেষে তাকে দাফন করতে নেয়া হল। বাবার কাঁধে ছেলের লাশ। দৃশ্যটি দেখতে আমার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছিল।
কিছুদিন ঘোরের মধ্যে কেটে গেল। ভাইয়ের কথা মনে এলেই আমার শ্বাসকষ্ট হত। কাউকে বলতাম না। আগরবাতির গন্ধ সহ্য করতে পারতাম না। আস্তে আস্তে আবার সব স্বাভাবিক হয়ে এল। মানুষ সময়ের গতির কাছে পরাজিত। আমার আব্বাও এটা নিয়ে তেমন কথা বলেন না। ভুলে যাওয়ার মিথ্যা প্রয়াস। আব্বার সাথে একদিন একজায়গায় যাচ্ছিলাম। তেমন কথা হচ্ছিল না। হঠাৎ তিনি তার মোবাইলটা দিয়ে বলেন, ওর নাম্বারটা ডিলিট করতো। আরতো লাগবে না। আমি মোবাইলটা নিলাম। আমার হাত কাঁপছিল কোন কারনে। আমি জানি আব্বা নিজেও ডিলেট করতে পারেন। তবুও তিনি কাজটা আমাকে দিয়ে করান। যেন পাপের বোঝাটা আমার উপর চাপাতে চাইছেন। আমি জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালাম। আকাশে অনেক মেঘ। একটু পরেই বৃষ্টি নামবে। দমবন্ধ করা আবহাওয়া কেটে যাবে। ভাবতে ভাবতে আমি মনের অজান্তেই নাম্বারটা ডিলেট করে ফেললাম।
২৫ শে জুন, ২০০৮ রাত ১১:১০
আশিকুর রহমান বলেছেন: ভাল বলেছেন।
২| ২৬ শে জুন, ২০০৮ রাত ১২:৩৯
নাহিন বলেছেন: কাঁদতে পারাটা যে কি শান্তির।
হিংসে হচ্ছে, আমিও যদি কাঁদতে পারতাম।
২৬ শে জুন, ২০০৮ সকাল ১০:২৭
আশিকুর রহমান বলেছেন: কাঁদতে কি লজ্জা লাগে? অনেকের লাগে। আমারও লাগে।
৩| ২৬ শে জুন, ২০০৮ রাত ১২:৪৫
নিলা বলেছেন: ভালো থাকুক ভাইয়া সেই দূর দেশে....ভালো থাকুক উনার আপনজনরা।
২৬ শে জুন, ২০০৮ সকাল ১০:২৯
আশিকুর রহমান বলেছেন: ভাল থাকুক যে ভাল থাকার ভাল প্রার্থনা করে।
৪| ২৬ শে জুন, ২০০৮ সকাল ১০:৫১
আশিকুর রহমান বলেছেন: অনেকে বেঁচে থাকে মরার প্রতীক্ষায়
অনেকে মরে গিয়ে বেঁচে যেতে চায়.....
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে জুন, ২০০৮ রাত ১০:৫৭
নাফে মোহাম্মদ এনাম বলেছেন: গদ্য লেখক পছন্দ করি। আপনার লেখা ভাল হয়েছে।