![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
উপজাতি দের শায়তশাসন দাবী করার কারন
উপজাতিরা এমনি এমনি এত ক্ষুদ্ধ হয়নি। এর অনেক কারন রয়েছে। তাঁদের উপর অতীতে অনেক অন্যায়-অবিচার করা হয়েছে। ১৮৬০ সালের দিকেই মূলত অশান্তির বীজ বোপিত হয় ইংরেজদের দ্বারা। তাঁরা সেখানে যথারীতি ‘ভাগ কর এবং শাসন কর’ নীতি আরোপ করে পুরো ভারতবর্ষের মত এখানেও হিংসার বীজ বুনে দেয়। ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ম্যানুয়েল অ্যাক্ট’ করা হয় ১৯০০ সালে। এই বিধিমালা প্রণয়নের আরেকটি কারন হচ্ছে, এতে করে উপনিবেশগুলোকে শাসন করতে সুবিধা হত। সে সময় পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘অনিয়ন্ত্রিত এলাকা’ (নন রেগুলেটেড এরিয়া) ঘোষনা করা হয়। এ আইনের মাধ্যমে বহিরাগতদের আগমন ও স্থায়ী বসবাস বন্ধ করে পারস্পরিক ঘৃণার বীজ ছড়িয়ে পার্বত্য এলাকাকে তিনটি সার্কেলে বিভক্ত করে রাজা,হেডম্যান ও কারবারীদের সাহায্যে এক সামন্তবাদী সমাজ ব্যাবস্থা চালু করা হয়। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, পাহাড়ীরা এখনও সেই হিংসার নীতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ দাবী করেন। অথচ, এই বিধিমালা পাকিস্তান আমলেও বাতিল করা হয়েছিল একবার। পাহাড়ি নেতাদের দাবীর কথা শুনে মনে হয়, ইংরেজদের এই বিধিমালা বাতিল করার ক্ষমতা স্বাধীন সরকারেরও নেই!
একটি জাতির নেতাদের ভুল বা লোভ কীভাবে সেই জাতির দুর্দশার কারন হয়ে দাঁড়ায়,তার উদাহরন চাকমা ও মারমারা। ১৯৪৭ সালে ইংরেজরা চলে যাবার সময় অশান্তির বীজ পুরো ভারতবর্ষে রোপন করে দিয়ে যায়। তাঁরা পার্বত্য চট্টগ্রামকে রাখে পাকিস্তানের পক্ষে। এই বিভাজনের দায়িত্বটা দেয়া হয়েছিল রেডক্লিফ কমিশনকে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানের ভাগে অর্পণ করার ক্ষেত্রে কমিশনের একটি অকাট্য যুক্তিও ছিল। সেটি হচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম অরথনৈতিকভাবে সম্পূর্ণরূপে পূরব পাকিস্তানের উপর নিরভরশীল। কিন্তু উপজাতিরা চেয়েছিল ভারতের পক্ষে থাকতে। তৎকালীন নেতারা এমনকি ভারতীয় কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন এবং কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের কাছে তাঁদের আকাঙ্খা তুলে ধরেন। কিন্তু সেটি বিভিন্ন কারনে গৃহীত হয়নি। '৪৭-এ দেশভাগের পর চাকমারা রাঙ্গামাটিতে ভারতের পতাকা, মারমারা বান্দরবানে ব্রহ্মদেশের পতাকা উড়ায়। এই ভুলের মাসুল তাঁদের অনেক দুর্ভোগের মাধ্যমে দিতে হয়েছিল। কারন, পাকিস্তানি বেলুচ বাহিনী অনতিবিলম্বে দমন করে সেই বিদ্রোহ।
ইংরেজদের মত পাকিস্তানী সামরিক জান্তাও পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের সাথে পাহাড়ীদের বিরোধ রচনা করা শুরু করে। তাঁরা বাঙালিদের উপর জুলুম করেও ক্ষ্রান্ত হয়নি, বৃটিশদের মত একটি কাজ তারাও করেছে, যাতে পাহাড়িদের সাথে বাঙালিদের সংঘাত বজায় থাকে। সেটি হচ্ছে, তারাও অনানুষ্ঠানিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘ভাগ কর এবং শাসন কর’ নীতি গ্রহন করেছিল। যার মাধ্যমে সাম্প্রদায়ীকতা উস্কে দেয়া হয়েছিল। তার উদাহরন হচ্ছে কাপ্তাই বাঁধ ও কর্ণফুলী পেপার মিল। পূর্ব বাংলার মানুষের জন্য কিছু না করলেও, এই দুইটি স্থাপনা গড়ে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ভাব ধরেছিল যে, তাঁরা বাঙালিদের জন্য কিছু করেছে। কিন্তু নির্মম সত্য হচ্ছে, এর মাধ্যমে সহস্রাধিক চাকমা ও মারমা জনগোষ্ঠীর বাড়ি-ঘর বিলীন করে দিয়ে, সুকৌশলে তাঁদেরকে উপহার দেয় বাঙালি-বিদ্বেষ ও ক্ষোভ। এর মধ্যে কাপ্তাই বাঁধের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ ১৮০০ পরিবারকে বিঘা প্রতি ৫ টাকা করে প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা থাকলেও, ছাড় দেয়া হয় মাত্র দেড় কোটি টাকা, যার অধিকাংশই আবার যায় রাজনীতিবিদ ও আমলাদের পকেটে। এসব অনেক কিছুই ক্ষুদ্ধ করেছে পাহাড়িদের। পাকিস্তানি সামরিক শাসনে এই ক্ষোভ প্রকাশিত না হলেও, তাঁরা ভুলেনি সেই দুঃসহ স্মৃতি। ১৯৭৬ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সেখানে পরিদর্শনে গেলে তাঁর কাছেও মনের ক্ষোভ প্রকাশে উচ্চকিত হয় তাঁরা। (সূত্রঃ এম কামরুজ্জামান-১৯৮৬, হুমায়ুন আজাদ-১৯৯৭, মোঃ নুরুল আমিন-১৯৯২)
এসব কারনেই পরবর্তীতে শান্তি বাহিনী গঠিত হলে পাহাড়ি জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন প্রদান করে এবং নিজেদের সাধ্যের সব কিছু দিয়ে তাঁদের সাহায্য করে।
♦♦চলবে>>
©somewhere in net ltd.