নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প:মন তার যাযাবর পাখি

২২ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:০৬

পর্ব-২
ওদিকে নন্দিনীর ব্যাকুলতা বাড়ে। যদিও সে একটি ডাকও দেয় না হাশেমকে। বাবা গৌরিশঙ্কর দাসের কথা মনে পড়ে তার। এমন জোছনারাতে কখনো কখনো গৌরিশঙ্কর তার তিন মেয়েকে ভূতের গল্প শোনাতেন । হাশেম কি এই শরৎ-নিশিতে ভূতের ভয়ও করে না! এই কথা ভাবামাত্রই নন্দিনীর সামনে ঠিক ভূতের মতোই অন্ধকার ছায়া ভেদ করে শাপলাগুচ্ছ হাতে সামনে এসে দাঁড়ায় হাশেম। নন্দিনীকে বলে , কাল সকালে বাজার থেকে আনবো কিছু ...। নন্দিনী বলে , বোয়াল মাছ আনবা ? টাকা পাইবা কই ? হাশেম ধীর-স্থির থাকে। চুপ করে শুনে। সিদ্ধান্ত নেয় , নন্দিনীর কোনো কথারই জবাব দেবে না। এটা কি তার সংসার নাকি ভূতের অদ্ভূত কান্ডকারখানা , বুঝতে কষ্ট হয়। পশ্চিম আকাশে চাঁদ হেলে পড়ে। ক্রমে ক্রমে হাশেমের বিচ্ছিন্ন বাড়িটা ভূতুরেবাড়িতে পরিণত হয়। খানিকবাদে বিছানায় শুয়ে হাশেম নন্দিনীকে বলে , নন্দিনী , আমাদের বাড়ির পশ্চিমদিকে যে তিনটি তালগাছ আছে , ওখানে কখনো যাবে না তুমি। কারণ তাহারা , মানে মামারা , মানে ঐ ..
. রাতের বেলা ঐ তিন তালগাছ দিয়েই আমাদের এলাকায় নামে। হাশেমের কথা শেষ না হতেই ঘরের পেছনের দিকে পাঁচ-সাতটি কোড়াপাখি একসঙ্গে ডেকে ওঠে। নন্দিনী ভয়ে ঝাঁপ দিয়ে হাশেমকে বুকে আঁকড়ে ধরে।
সমাজ-সংসারে এ জীবনে কোনো সহানুভূতিই পায়নি তেমন হাশেম। শৈশবে পিতামাতার মৃত্যুর পর নানীর কাছেই বড় হয়েছে সে। এখন সেই নানীও নেই। নানীর মৃত্যুর পর দুঃখে অনাহারে অনিশ্চয়তায় তাঁর স্বাস্থ্য যে ভেঙ্গে পড়েছিল , তা আজও আর ফিরে পায়নি সে। নানীকে সে মায়ের মতো করেই পেয়েছিল । মায়ের স্মৃতি অতটা মাথায় নেই। একমাত্র সন্তান হাশেমের জন্ম হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই হাশেমের মায়ের অসুখে মৃত্যু হয়।
কিন্তু পরদিন থেকেও পাখি শিকার বন্ধ হয়নি হাশেমের। সে বলে , বড় বড় সাপেরাও যদি পাখির ডিম ও পাখির ডিম খেতে পারে , তাহলে আমি ধরলে সমস্যাটা কী ! কারো বারণই শুনে না সে। বুঝে না সে এটা কোনো সংসারী পুরুষের স্থায়ী কাজ হতে পারে না। তাছাড়া হাশেমের শৈশবকালের একটি ঘটনা এখনো তাঁর মনে গেঁথে আছে। মামারবাড়ির পাশের বাড়ির রবিউল মামারও এমন পাখি ধরার নেশা ছিল। কিন্তু কিভাবে যে পুলিশ খবর পেল , তিনজন পুলিশ এসে বাজার থেকে পাখি বিক্রির সময় রবিউল মামাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করার পর কেউ আর ভয়ে পুলিশের সঙ্গে দেখা করতে যায়নি। কেউ বলেছে , পুলিশ নিয়ে রবিউল মামাকে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দিয়েছে। আর ওখান থেকে সোজা জেল। আর কতো মার যে খেয়েছে , তারপর সেই মামা তার বাপের জন্মে আর পাখি ধরেননি। এমনকি জেল থেকে ছাড়া পেয়েও লজ্জায় আর নিজের গ্রামে না এসে শহরে এক আত্মীয়ের কাছে চলে গিয়েছিলেন। কয়েকমাস পর শহর থেকে গ্রামে আসেন রবিউল মামা। এসব ঘটনা হাশেমকে ভাবায়। তারপরও সে মনে করে রবিউল মামার জীবনের বাতাসই তার জীবনে লেগে গিয়েছে। কারণ সেতো ছিল দর্জি। হঠাৎ কেন তার এমন মতিভ্রম হলো! কিন্তু হাশেমদের ডিঙডিঙা বিলে এত কালিবক আর কোঁচবক এখনো রয়েছে যে , ওগুলোর কথা মনে হলে আর বিল থেকে মন ফেরাতে পারে না। বাজারের মোবাইল কোর্টকে লোকে বলে ‘মবিল কোর্ট। এই ‘মবিল কোট’ কী , তা সে এতদিন জানতো না। পুলিশের ও.সি বড় , নাকি ‘মবিলকোটে’র ম্যাজিষ্ট্রেট , এমন প্রশ্ন করে সে বারবার অনেক লোকের হাসির কারণ হয়েছে। তারপরও সেদিন রহমান চাচার কাছ থেকে সে এসবের ব্যাখ্যা বুঝে নিয়েছে। ব্যাখ্যা বুঝে হাশেম মনে মনে বলেছে , আমার বালও ছিঁড়তে পারবে না মবিল কোটের ম্যাজিষ্ট্রেট।
অক্টোবর ২০০২, কুমিল্লা।


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.