নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প:মন তার যাযাবর পাখি

২৪ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:২৫

পর্ব-৩
আমি কি আর বন্দুক দিয়ে পাখি মারি? এমন মনে মনে ভাবার পরই আবার হাশেমের মনে একটি বন্দুকের স্বপ্ন জেগে ওঠে-‘ইস ! আমার যদি একটি বন্দুক থাকতো, তাহলে কি আর এভাবে মাছে-ধানে-চালে বিষ মেখে পাখি মারার চেষ্টা করতে হতো! আসলে টাকা না থাকলে কিছুই হতে চায় না। না পাখি শিকার, না বন্দুক কেনা, না সংসার। এসব জানার পরও টাকার সন্ধান পায় না কোনোভাবেই হাশেম। বউ নন্দিনী কোনোভাবেই জাল বানাতে পারে না। আর পারলেও সে পাখি ধরারর জন্য হাশেমকে একটি কারেন্ট জাল বানিয়ে দেবে না। কারেন্ট জাল রূপগঞ্জ বাজারে বিক্রি হয়। কিন্তু কেনার পয়সা তো তার নেই। ও-পাড়ার মোখলেস কারেন্ট জালে মাছ-পাখি সবই ধরে। কিন্তু হাশেমের সেই ভাগ্যের জোর নেই। তবে সে কিনবে। পাখি বিক্রির টাকা দিয়েই পাখি ধরার কারেন্ট জাল কিনবে। এমন স্বপ্নই হাশেমকে এগিয়ে নেয়।
ডিঙডিঙা বিলের যেখানে যেখানে ঠাসা ঘাস রয়েছে, ওসব জায়গায় বড় পাখিদের বাসাও রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো সাপ। ওদের বিচরণও ভয়ানক। দাঁড়াস সাপকে ভীষণ ভয় পায় হাশেম। ঘাসবনেও ওরা থাকে। আর একটি তালের ঢোঙাও চাই। ডিঙডিঙা বিলের সঙ্গে আর পারে না হাশেম। হোগলা বন পার হয়ে, কচুরিপানা ঠেলে ঠেলে, পাটক্ষেতের মাঠ শেষে হরিবিলের পাশ থেকে অল্পের জন্য একটি তালের ঢোঙা চুরি করতে পারে না হাশেম। কিনতে যখন পারছে না, আপাতত: চুরি ছাড়া পথও নেই তার-মনে করে হাশেম। কিন্তু বউ জানলে ? বলবে পাখি বিক্রি করে কিনেছি। বউ যদি বলে, এত পাখি কবে ধরে কবে বিক্রি করে এত টাকা পেলে ? ধ্যাৎ। যখনের কর্ম, তখন এসব ভাবা যাবে। এত আগে এত সব ভেবে কাজ নেই। যেই পরিমান রাজহাঁসের দেখা মিলে ডিঙডিঙা বিলে, একটি বন্দুক আর একটি তালের ঢোঙা তার যে কোনোভাবেই হোক চাই। এ দুটি জিনিস ছাড়া তার চলবে না। কোথায় এক ফায়ারেই পাখি ফেলে দেবে জলে, সেখানে কী না এত রকম কষ্ট ! নৌকা নিয়ে অনেকেই এ বিলে মাছ ধরতে নামে। অনেক পাখি তখন আকাশে উড়ে। জলজ এসব পাখি দেখতে হাশেমের দারুণ ভালো লাগে। বালিহাঁস দেখলে হাশেমের মাথাটা ঠিক খারাপ হয়ে যায়। ‘ইস ! ধরা যদি যেত !’ ভাবে হাশেম। কিছু পাখি আছে, ওরা জোড়া ফেলে উড়ে না। স্বামী-স্ত্রী। ওদেরকে দেখলেই হাশেমের নন্দিনীর কথা মনে পড়ে। তবে হাশেমের কাছে অবাক লাগে একটি বিষয়, যত পাখি বিলে দেখে, তত পাখির বাসা খুঁজে পায় না কোথাও। তাহলে ওরা থাকে কোথায় ? দূর পাহাড়ে ?
ছইওয়ালা একটি নৌকায় করে এক যুবক তার বউকে নিয়ে ডিঙডিঙা বিল পার হচ্ছিল। বউটি তার এতই সুন্দরী যে, ঠিক যেন আকাশের পরী। যুবকটি সম্ভবত শহরে চাকুরি করে। বাড়িতে যাচ্ছে। মাঝি ব্যাটা না থাকলে যুবকটিকে ঠ্যালা মেরে বিলের গভীর জলে ফেলে দিতো হাশেম, মনে মনে ভাবে। এই মুহূর্তে তার নন্দিনীর কথা একটুও মনে পড়ে না। বিলের বুকে একটুখানি চড়ায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবে হাশেম। এই কাগচড়ায় একদা শত শত কচ্ছপ উঠে বসে থাকতো। আজকাল আর তেমন দেখা যায় না। বিলের এদিকটা বেশ নির্জনও এবং জলও আশঙ্কাজনক গভীর। তাই হাশেমের মাথায় সুন্দরী পরীর বদচিন্তাটি বারবার ঘুরপাক খায়। কিন্তু সহসাই এ চিন্তায় তার ফাটল ধরে পাখির ডাকে। কিছু কোড়ার ডাক কানে আসে আসে হাশেমের। মাথা ঘুরিয়ে দেখে। দুই-তিনটি পানকৌড়ি চোখে পড়ে। কিন্তু কোড়াদের চোখে পড়ে না। ওইদিকে ছইওয়ালা নৌকাটি দূরে যেতে যেতে পাখির বাচ্চার মতো ছোট হতে থাকে। ওইদিকেই স্থির তাকিয়ে থাকে হাশেম। অন্যদিকে তাকিয়ে দেখে ঝাঁক বেঁধেও উড়ছে অনেক পাখি। মগ্ন হয়ে তাকিয়ে থাকে সে। ওদের কিছুই করতে পারে না।
ডিঙডিঙা বিলে আরও অনেকে হাশেমের মতো পাখি ধরে খায় কিংবা বিক্রি করে। কিন্তু তাদেও সঙ্গে হাশেমের কোনো সম্পর্ক নেই। হাশেম একা একাই তার কাজ করে যায়। রক্তশাপলার সংখ্যা যত বিলে , তার চেয়েও অনেক বেশি পাখি। হাশেম একদা শুনেছিল, এগুলো শীতের দেশের পাখি। শীত সহ্য করতে না পেরে কিংবা খাদ্যের অভাবেই ওরা চলে আসে এই দেশে। এসব কথা একদা তাকে তার রবিউল মামাই বলেছিলেন। হাশেমের নিজের কাছেই নিজের প্রশ্ন শীতের দেশের পাখি হলে, শীত সহ্য না হলে আবার এসে ওরা ফেরত যায় কেন ? রবিউল মামা আরও বলেছিলেন, আগে নাকি কোটি কোটি পাখি ছিল। সেই তুলনায় নেই আর এখন তেমন। কী কারণে পাখিরা হারিয়ে যায় কিংবা কমে যায়, তা জানে না হাশেম। তবে তার ল্যও পাখি ধরে খাওয়া কিংবা বিক্রি করে দেওয়া। হঠাৎ বিশাল এক ফোসফোসফোস শব্দে চিন্তার রেশ কাটে হাশেমের। মাথা ঘুরিয়ে আকাশের দিকে দেখে, চার-পাঁচ ঝাঁক বুনোপাখি উড়ে যাচ্ছে দূরে। নিচে দাঁড়িয়ে হাশেম আফসোস করে, ইস! যদি থাকতো একটা বন্দুক ! ...। অক্টোবর ২০০২, কুমিল্লা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.