নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

দিনলিপি: তোয়াব খান আমার মতো চুনোপুঁটির সঙ্গে কেন দেখা করবেন?

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৮

ডিসেম্বর, ২০০০ খ্রিস্টাব্দ
সংরাইশ, কুমিল্লা।
===========
দৈনিক জনকন্ঠের কুমিল্লা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার বিষয়ে কথা বলতে ঢাকায় গিয়েছিলাম। কুমিল্লা থেকে আরও চেষ্টা করে আমার সাংবাদিক বন্ধু আবুল কাশেম হৃদয়। অনেকে বললো, প্রতিযোগিতার এ বিশ্বে বন্ধুত্বের কিংবা আত্মীয়তার স্থান নেই। অথচ একসময় হৃদয় আমার অনেক উপকারও করেছে।
দৈনিক জনকন্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খানকে দেখলাম। কিন্তু তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারলাম না। তিনি আমার মতো চুনোপুঁটির সঙ্গে কেন দেখা করবেন?
মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে নিয়মিত প্রচারিত হতো তোয়াব খানের ‘পিন্ডির প্রলাপ’। জন্ম ও বেড়ে ওঠা তাঁর সাতক্ষীরার রসুলপুরে। পড়েছেন সাতক্ষীরার ঐতিহ্যবাহী প্রাণনাথ স্কুলে। তারপর ঢাকা কলেজে। ভাষা আন্দোলন করেছেন। সেই সূত্রে আমার পত্রিকার সম্পাদক ভাষাসৈনিক মোহাম্মদ উল্লাহর মতোই বিপ্লবী লোক।
তোয়াব খান তিপ্পান্ন সালে কেজি মুস্তফার সঙ্গে বের করেন সাপ্তাহিক জনতা। এর মধ্য দিয়েই হাতেখড়িও হয়ে যায় তাঁর সাংবাদিকতা জীবনের। ১৯৫৫ সালে যোগ দেন সংবাদে। ১৯৬১ সালে সংবাদের বার্তা সম্পাদক। এ পদে ১৯৬৪ পর্যন্ত থেকে যোগ দেন দৈনিক পাকিস্তানে। বার্তা সম্পাদক হিসেবেই।
১৯৭২ সালে দৈনিক বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্পাদক হন। ‘সত্যবাক’ নামে দৈনিক বাংলায় শুরু করেন ‘সত্যমিথ্যা, মিথ্যাসত্য’ শিরোনামে বিশেষ কলাম। বাংলাদেশের সংবাদপত্রে প্রথম চাররঙা সংবাদপত্র বের হয়েছে তাঁরই নেতৃত্বে। ১৯৭৩-৭৫- এ তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর প্রেস সচিব। আর ১৯৮৭ থেকে ’৯১ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের প্রেস সচিব। ১৯৮০-৮৭-তে তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা। পালন করেছেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকের দায়িত্বও। কিন্তু এমন প্রগতিশীল সংবাদ ব্যক্তিত্ব, কেন কিংবা কিভাবে স্বৈরাচারী এরশাদের প্রেস সচিবের কাজ করলেন, তাঁর ব্যাখ্যা আমার জানা নেই।
দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক আতিকউল্লাহ খান মাসুদ বলে দিয়েছেন আমার সঙ্গে দেখা করবেন না। অবশেষে মফস্বল সম্পাদক দিলীপ দেবনাথের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বললাম।
দিলীপ দেবনাথের জন্ম ১৯৪০ সালের ১১ মার্চ। তিনি বড় হয়েছেন নরসিংদী জেলার পলাশ থানার পাইক্সা গ্রামে। এক সময় জড়িত ছিলেন বাম রাজনীতির সঙ্গে। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা ছিল বলে সাংবাদিকতায় আসার আগে তিনি বেশ কিছুদিন কাজ করেছেন ঢাকা আণবিক শক্তি কেন্দ্রে। কাজ করেছেন টেক্সটাইল মিলেও। সাংবাদিকতায় তাঁর হাতেখড়ি বর্তমানে লুপ্ত দৈনিক বাংলায়। এই পত্রিকায় তাঁর সাড়া জাগানো সিরিজ রিপোর্ট ছিল ‘ভুলে ভরা বোর্ডের বই’। ফিচার লিখেছেন অজস্র। তিনি আমাকে স্থানীয় পত্রিকাগুলোর চাকুরি ছেড়ে ‘দৈনিক জনকন্ঠে’ এসে ঝুঁকি নিতে বারণ করলেন।
২৪/এ, নিউ ইস্কাটন রোডের জনকন্ঠ ভবনে গিয়ে অবাক হয়েছি। এতো টাকা তাঁদের। আগে অবশ্য তাঁদের মতিঝিল অফিসেও গিয়েছিলাম। কিন্তু এবার বুঝতে পারলাম গ্লোব প্রিন্টার্স লিমিটেড ও জনকন্ঠ শিল্প পরিবারের কতো টাকা। গ্লোব প্রিন্টার্স লিমিটেড ও জনকন্ঠ লিমিটেড... এসব ভাবাও যায় না। একদা দৈনিক সংবাদ পত্রিকাতেও কুমিল্লা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবো ভেবেছিলাম। তখন আমার সাংবাদিক বন্ধু মাহাবুব আলম বাবু চেষ্টা করবেন বললেন। আর চেষ্টা করলাম না। বাবু সে জন্য আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
এদিকে আমার স্ত্রী ঈশিতার মায়ের বিষয়ে খুব সাবধান করেছেন কুমিল্লার ‘সাপ্তাহিক নিরীক্ষণ’ সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ। তিনি এ জন্য আমার বিয়ের দিনই বিয়ে বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন। আমি বারণ শুনিনি। পরে অবশ্য তিনি বিয়েতে গিয়েছিলেন ঈশিতাদের বাড়ি। মোহাম্মদ উল্লাহ ‘দৈনিক জনকন্ঠে’র বিষয়ে আমাকে সহযোগিতা করতে পারতেন। তাঁর অনেক বন্ধু দৈনিক জনকন্ঠের সিনিয়র সাংবাদিক। সহ-সম্পাদক শুভ রহমান কিংবা জনকন্ঠের নির্বাহী সম্পাদক বোরহান আহমেদ তাঁর নিকটজন। এদিকে কুমিল্লার ফটো সাংবাদিক ওমর ফারুকী তাপস মোহাম্মদ উল্লার অনেকদিনের সংবাদ-কর্মী। তাপসের সঙ্গে আরও ভালো সর্ম্পক আবুল কাশেম হৃদয়ের। তাপস নাকি মোহাম্মদ উল্লাহকে হৃদয়ের জন্য চেষ্টা করতে বলেছেন। এটা আমাকে বললেন, মোহাম্মদ উল্লাহর স্ত্রী কাজী ফাতেমা বেগম খালাম্মা।
ঈশিতাকে তাঁর মায়ের কাছে ময়মনসিংহে নিয়ে গিয়েছিলাম তাঁর কান্নাকাটি সহ্য করতে না পেরে। বিষয়টা মোহাম্মদ উল্লাহকে প্রথমে গোপন করেছিলাম। পরে এ কথা শুনে মোহাম্মদ উল্লাহ কপাল থাপড়ে বললেন, শেষ... তোমার সংসার শেষ। কারণও কিছু ব্যাখ্যা করলেন। কিছু প্রমাণ আমিও পেলাম। ঈশিতাকে পেয়েই ঈশিতার মা বারবার আফসোস করলেন তাঁর কাছে টাকা নেই বলে। তিনি বললেন, আমার হাত রাজার হাত। টাকা থাকলে এক্ষুণি তোকে হানিমুন করতে দেশে নয়, বিদেশে পাঠিয়ে দিতাম। এই ধর, দার্জিলিং, কাঠমান্ডু, আগ্রা, বানারস...ইস ২০,০০০/=(বিশ হাজার) টাকা হলেও হয়ে যেত। কিন্তু কতো খারাপ সময়ে তুই এলি! আমি মনে মনে ভাবলাম, সন্তানের জন্য এতোই যদি আপনার টান, ৩-৪ টি সংসার কেন করতে গেলেন আপনি? কিংবা কেন ৩ মাসের শিশু কন্যা হিসেবে ঈশিতাকে তাঁর বাপের সংসারে রেখে গিয়েছিলেন।
ভদ্র মহিলা ব্রহ্মপুত্র নদের সামনে দাঁড়িয়ে বারবার আমার ‘কামাই’ নিয়ে প্রশ্ন করে যাচ্ছিলেন। আমার অন্য কোনো গুণাগুণ তাঁর কৌতূহল মেটাতে পারেনি। অথচ এই দেশে এখনও গুণি মানুষের মূল্য কিছু রয়েছে।
গত ২৬ মার্চ লেখক-চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদ সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনশনে যাবেন ঘোষণা দিতেই সারা দেশের মানুষ তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছিল। সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা অনেক লাঞ্ছিত হয়েছিলেন। তাঁদের মাথায় পিস্তল ধরা হয়েছে। তাঁদের বাড়ি বাড়ি কাফনের কাপড় পাঠানো হয়েছে। তাই লেখক হুমায়ূন পরিবার এ অনশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

আমার শ্বাশুড়ি শেলী রহমান খুবই বদ একজন মহিলা। ঈশিতার রুচি অবশ্য ভিন্ন। আমাদের টু- ইন-ওয়ানের সুরে সে মুগ্ধ হয়। আলাদা করা স্পীকারগুলো মুছে রাখে। সকল ক্যাসেট ভাগে ভাগে রাখে। শুনে মেহেদী হাসান কিংবা জগজিৎ-চিত্রা সিংয়ের অথবা গুলাম আলীর গজল। নুশরাত ফতেহ আলীও তাঁর প্রিয়। কিন্তু শরীরে তো তাঁর মায়েরই রক্ত। মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, রক্তকে অতিক্রম করতে পারে খুবই অল্প কিছু মানুষ।
ঈশিতার মায়ের ভাবখানা এমন, যেন তিনি দার্জিলিংয়ের নিজের বাগানের স্বাদগন্ধ ভরা চা ছাড়া বাজারের আর কোনো চা পান করেন না। আমাকে বলেন, তোমার ক্যামেরা আছে? আমি বলি, না। মোটর সাইকেল আছে? না। আমি বললাম, আমি চিতার চেয়েও ক্ষিপ্র। মোটর সাইকেল কিংবা পেট্রল আমার দরকার নেই। তুমি কত বেতন পাও? এ প্রশ্নের কতোবার যে উত্তর দিলাম। সৎ মা বড় করেছে নিজের সন্তানকে। এতদিনে এসেছেন মাতৃত্ব দেখাতে। ঈশিতাকে বলেছি আমি, স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকি আমি। ঢাকা ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু উপেক্ষা আমার যম। যে আমাকে উপেক্ষা করে, তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক রাখি না। যে মহিলা শান্তিনিকেতনের কলাভবনের আর্ট গ্যালারি দেখেনি, কোনো প্রকার শিল্পচর্চা করে না, শিল্পগুরু নন্দলালকে চিনে না, শ্রীনিকেতনের শিল্পসদনে যাননি, তাঁর এত কিসের অহংকার? যদি কোনো প্রকার দুর্ঘটনায় না পড়ি, তাহলে আমিও তো জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারি। ঈশিতার সঙ্গে আমার যত ঝগড়া হচ্ছে, তাঁর ৯৫% তাঁর মাকে নিয়েই। অভাব নিয়ে তাঁর এখনও মাথাব্যথা নেই। কিন্তু মাকে কিছুই বলা যাবে না। মা যেন সচিব। যেসব মহিলার ছবি কোনো মিউজিয়ামে থাকে, দূতাবাস কিনে নেয়, তারাও এমন অহংকার নিয়ে কথা বলেন না। এই মহিলা বলেন, তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা নাকি আন্ডার গ্রাজুয়েট। মোহাম্মদ উল্লাহ বলেছেন, আন্ডার মেট্রিক।

কে আমাকে পাগল বলে, এ নিয়ে আমার মাথা খারাপ করার সময় নেই। চাকরি যদি না হয়, স্বাধীনভাবে শিল্পচর্চাই করবো এবং শিল্পকর্ম বিক্রি করেই বাঁচবো। মানুষের পা ধরে তো বাচঁতে পারবো না।দৈনিক জনকন্ঠের কুমিল্লা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার বিষয়ে কথা বলতে ঢাকায় গিয়েছিলাম। কুমিল্লা থেকে আরও চেষ্টা করে আমার সাংবাদিক বন্ধু আবুল কাশেম হৃদয়। অনেকে বললো, প্রতিযোগিতার এ বিশ্বে বন্ধুত্বের কিংবা আত্মীয়তার স্থান নেই। অথচ একসময় হৃদয় আমার অনেক উপকারও করেছে।
দৈনিক জনকন্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খানকে দেখলাম। কিন্তু তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারলাম না। তিনি আমার মতো চুনোপুঁটির সঙ্গে কেন দেখা করবেন?
মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে নিয়মিত প্রচারিত হতো তোয়াব খানের ‘পিন্ডির প্রলাপ’। জন্ম ও বেড়ে ওঠা তাঁর সাতক্ষীরার রসুলপুরে। পড়েছেন সাতক্ষীরার ঐতিহ্যবাহী প্রাণনাথ স্কুলে। তারপর ঢাকা কলেজে। ভাষা আন্দোলন করেছেন। সেই সূত্রে আমার পত্রিকার সম্পাদক ভাষাসৈনিক মোহাম্মদ উল্লাহর মতোই বিপ্লবী লোক।
তোয়াব খান তিপ্পান্ন সালে কেজি মুস্তফার সঙ্গে বের করেন সাপ্তাহিক জনতা। এর মধ্য দিয়েই হাতেখড়িও হয়ে যায় তাঁর সাংবাদিকতা জীবনের। ১৯৫৫ সালে যোগ দেন সংবাদে। ১৯৬১ সালে সংবাদের বার্তা সম্পাদক। এ পদে ১৯৬৪ পর্যন্ত থেকে যোগ দেন দৈনিক পাকিস্তানে। বার্তা সম্পাদক হিসেবেই।
১৯৭২ সালে দৈনিক বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্পাদক হন। ‘সত্যবাক’ নামে দৈনিক বাংলায় শুরু করেন ‘সত্যমিথ্যা, মিথ্যাসত্য’ শিরোনামে বিশেষ কলাম। বাংলাদেশের সংবাদপত্রে প্রথম চাররঙা সংবাদপত্র বের হয়েছে তাঁরই নেতৃত্বে। ১৯৭৩-৭৫- এ তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর প্রেস সচিব। আর ১৯৮৭ থেকে ’৯১ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের প্রেস সচিব। ১৯৮০-৮৭-তে তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা। পালন করেছেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকের দায়িত্বও। কিন্তু এমন প্রগতিশীল সংবাদ ব্যক্তিত্ব, কেন কিংবা কিভাবে স্বৈরাচারী এরশাদের প্রেস সচিবের কাজ করলেন, তাঁর ব্যাখ্যা আমার জানা নেই।
দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক আতিকউল্লাহ খান মাসুদ বলে দিয়েছেন আমার সঙ্গে দেখা করবেন না। অবশেষে মফস্বল সম্পাদক দিলীপ দেবনাথের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বললাম।
দিলীপ দেবনাথের জন্ম ১৯৪০ সালের ১১ মার্চ। তিনি বড় হয়েছেন নরসিংদী জেলার পলাশ থানার পাইক্সা গ্রামে। এক সময় জড়িত ছিলেন বাম রাজনীতির সঙ্গে। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা ছিল বলে সাংবাদিকতায় আসার আগে তিনি বেশ কিছুদিন কাজ করেছেন ঢাকা আণবিক শক্তি কেন্দ্রে। কাজ করেছেন টেক্সটাইল মিলেও। সাংবাদিকতায় তাঁর হাতেখড়ি বর্তমানে লুপ্ত দৈনিক বাংলায়। এই পত্রিকায় তাঁর সাড়া জাগানো সিরিজ রিপোর্ট ছিল ‘ভুলে ভরা বোর্ডের বই’। ফিচার লিখেছেন অজস্র। তিনি আমাকে স্থানীয় পত্রিকাগুলোর চাকুরি ছেড়ে ‘দৈনিক জনকন্ঠে’ এসে ঝুঁকি নিতে বারণ করলেন।
২৪/এ, নিউ ইস্কাটন রোডের জনকন্ঠ ভবনে গিয়ে অবাক হয়েছি। এতো টাকা তাঁদের। আগে অবশ্য তাঁদের মতিঝিল অফিসেও গিয়েছিলাম। কিন্তু এবার বুঝতে পারলাম গ্লোব প্রিন্টার্স লিমিটেড ও জনকন্ঠ শিল্প পরিবারের কতো টাকা। গ্লোব প্রিন্টার্স লিমিটেড ও জনকন্ঠ লিমিটেড... এসব ভাবাও যায় না। একদা দৈনিক সংবাদ পত্রিকাতেও কুমিল্লা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবো ভেবেছিলাম। তখন আমার সাংবাদিক বন্ধু মাহাবুব আলম বাবু চেষ্টা করবেন বললেন। আর চেষ্টা করলাম না। বাবু সে জন্য আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
এদিকে আমার স্ত্রী ঈশিতার মায়ের বিষয়ে খুব সাবধান করেছেন কুমিল্লার ‘সাপ্তাহিক নিরীক্ষণ’ সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ। তিনি এ জন্য আমার বিয়ের দিনই বিয়ে বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন। আমি বারণ শুনিনি। পরে অবশ্য তিনি বিয়েতে গিয়েছিলেন ঈশিতাদের বাড়ি। মোহাম্মদ উল্লাহ ‘দৈনিক জনকন্ঠে’র বিষয়ে আমাকে সহযোগিতা করতে পারতেন। তাঁর অনেক বন্ধু দৈনিক জনকন্ঠের সিনিয়র সাংবাদিক। সহ-সম্পাদক শুভ রহমান কিংবা জনকন্ঠের নির্বাহী সম্পাদক বোরহান আহমেদ তাঁর নিকটজন। এদিকে কুমিল্লার ফটো সাংবাদিক ওমর ফারুকী তাপস মোহাম্মদ উল্লার অনেকদিনের সংবাদ-কর্মী। তাপসের সঙ্গে আরও ভালো সর্ম্পক আবুল কাশেম হৃদয়ের। তাপস নাকি মোহাম্মদ উল্লাহকে হৃদয়ের জন্য চেষ্টা করতে বলেছেন। এটা আমাকে বললেন, মোহাম্মদ উল্লাহর স্ত্রী কাজী ফাতেমা বেগম খালাম্মা।
ঈশিতাকে তাঁর মায়ের কাছে ময়মনসিংহে নিয়ে গিয়েছিলাম তাঁর কান্নাকাটি সহ্য করতে না পেরে। বিষয়টা মোহাম্মদ উল্লাহকে প্রথমে গোপন করেছিলাম। পরে এ কথা শুনে মোহাম্মদ উল্লাহ কপাল থাপড়ে বললেন, শেষ... তোমার সংসার শেষ। কারণও কিছু ব্যাখ্যা করলেন। কিছু প্রমাণ আমিও পেলাম। ঈশিতাকে পেয়েই ঈশিতার মা বারবার আফসোস করলেন তাঁর কাছে টাকা নেই বলে। তিনি বললেন, আমার হাত রাজার হাত। টাকা থাকলে এক্ষুণি তোকে হানিমুন করতে দেশে নয়, বিদেশে পাঠিয়ে দিতাম। এই ধর, দার্জিলিং, কাঠমান্ডু, আগ্রা, বানারস...ইস ২০,০০০/=(বিশ হাজার) টাকা হলেও হয়ে যেত। কিন্তু কতো খারাপ সময়ে তুই এলি! আমি মনে মনে ভাবলাম, সন্তানের জন্য এতোই যদি আপনার টান, ৩-৪ টি সংসার কেন করতে গেলেন আপনি? কিংবা কেন ৩ মাসের শিশু কন্যা হিসেবে ঈশিতাকে তাঁর বাপের সংসারে রেখে গিয়েছিলেন।
ভদ্র মহিলা ব্রহ্মপুত্র নদের সামনে দাঁড়িয়ে বারবার আমার ‘কামাই’ নিয়ে প্রশ্ন করে যাচ্ছিলেন। আমার অন্য কোনো গুণাগুণ তাঁর কৌতূহল মেটাতে পারেনি। অথচ এই দেশে এখনও গুণি মানুষের মূল্য কিছু রয়েছে।
গত ২৬ মার্চ লেখক-চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদ সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনশনে যাবেন ঘোষণা দিতেই সারা দেশের মানুষ তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছিল। সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা অনেক লাঞ্ছিত হয়েছিলেন। তাঁদের মাথায় পিস্তল ধরা হয়েছে। তাঁদের বাড়ি বাড়ি কাফনের কাপড় পাঠানো হয়েছে। তাই লেখক হুমায়ূন পরিবার এ অনশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

আমার শ্বাশুড়ি শেলী রহমান খুবই বদ একজন মহিলা। ঈশিতার রুচি অবশ্য ভিন্ন। আমাদের টু- ইন-ওয়ানের সুরে সে মুগ্ধ হয়। আলাদা করা স্পীকারগুলো মুছে রাখে। সকল ক্যাসেট ভাগে ভাগে রাখে। শুনে মেহেদী হাসান কিংবা জগজিৎ-চিত্রা সিংয়ের অথবা গুলাম আলীর গজল। নুশরাত ফতেহ আলীও তাঁর প্রিয়। কিন্তু শরীরে তো তাঁর মায়েরই রক্ত। মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, রক্তকে অতিক্রম করতে পারে খুবই অল্প কিছু মানুষ।
ঈশিতার মায়ের ভাবখানা এমন, যেন তিনি দার্জিলিংয়ের নিজের বাগানের স্বাদগন্ধ ভরা চা ছাড়া বাজারের আর কোনো চা পান করেন না। আমাকে বলেন, তোমার ক্যামেরা আছে? আমি বলি, না। মোটর সাইকেল আছে? না। আমি বললাম, আমি চিতার চেয়েও ক্ষিপ্র। মোটর সাইকেল কিংবা পেট্রল আমার দরকার নেই। তুমি কত বেতন পাও? এ প্রশ্নের কতোবার যে উত্তর দিলাম। সৎ মা বড় করেছে নিজের সন্তানকে। এতদিনে এসেছেন মাতৃত্ব দেখাতে। ঈশিতাকে বলেছি আমি, স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকি আমি। ঢাকা ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু উপেক্ষা আমার যম। যে আমাকে উপেক্ষা করে, তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক রাখি না। যে মহিলা শান্তিনিকেতনের কলাভবনের আর্ট গ্যালারি দেখেনি, কোনো প্রকার শিল্পচর্চা করে না, শিল্পগুরু নন্দলালকে চিনে না, শ্রীনিকেতনের শিল্পসদনে যাননি, তাঁর এত কিসের অহংকার? যদি কোনো প্রকার দুর্ঘটনায় না পড়ি, তাহলে আমিও তো জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারি। ঈশিতার সঙ্গে আমার যত ঝগড়া হচ্ছে, তাঁর ৯৫% তাঁর মাকে নিয়েই। অভাব নিয়ে তাঁর এখনও মাথাব্যথা নেই। কিন্তু মাকে কিছুই বলা যাবে না। মা যেন সচিব। যেসব মহিলার ছবি কোনো মিউজিয়ামে থাকে, দূতাবাস কিনে নেয়, তারাও এমন অহংকার নিয়ে কথা বলেন না। এই মহিলা বলেন, তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা নাকি আন্ডার গ্রাজুয়েট। মোহাম্মদ উল্লাহ বলেছেন, আন্ডার মেট্রিক।

কে আমাকে পাগল বলে, এ নিয়ে আমার মাথা খারাপ করার সময় নেই। চাকরি যদি না হয়, স্বাধীনভাবে শিল্পচর্চাই করবো এবং শিল্পকর্ম বিক্রি করেই বাঁচবো। মানুষের পা ধরে তো বাচঁতে পারবো না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.