নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রবন্ধ: মুক্তবাজার অর্থনীতির পুতুল

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৬


অলংকরণ: জসীম অসীম।
মাথা আমাদের সর্বোচ্চ মূল্যবান অঙ্গ। কিন্তু সারা আকাশ থেকে যদি বোমাবর্ষিত হয়, তবে কি আর ছাতা মাথায় আত্মরক্ষা বা মাথা রক্ষা সম্ভব?
জগতে যত মাধ্যমে আত্মপ্রতিষ্ঠা ও জনসেবা করা যায়, তার সেরা মাধ্যম নাকি রাজনীতি। অথচ সেই রাজনীতি নিয়ে প্রায়ই বলা হয়, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।
এই একটি কথা প্রায়ই শোনা যায়। এমনকি অনেক ঘটনায় প্রায়ই এই কথার অনেক মিলও পাওয়া যায়।
রাজনীতির ভাবখানা এমন যে, ‘তুই খুব ভালো তুই আয়, না এলে তোকে জোর করে আনবো। আবার সময়ে স্বার্থ কেটে গেলে বলা হলো তুই ভালো না, তুই যা। না গেলে তোকে ঠেলে, প্রয়োজনে লাথ্থি দিয়েই বিদায় করবো।’ এই কথা কি সর্বক্ষেত্রে বা সবার বেলায়ই প্রযোজ্য? জাতীয়ভাবে শুধু আমাদের ‘শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়া’ই নন, গোটা বিশ্বেই এখন এমন নীতি তীব্র। অতীতেও এমন রীতিনীতি ছিল, তবে এতোটা তীব্রতর ছিল না।
সারাদেশের মানুষের কাছে তাই প্রায়ই নানা প্রশ্ন উঠে আমাদের জাতীয় রাজনীতির প্রাণশক্তি ‘হাসিনা-খালেদা’কে নিয়েও। মানুষের মনে প্রশ্ন ঘুরে সাদ্দাম, গাদ্দাফি ও লাদেনকে নিয়েও। আর গোটা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তো এখন একক মোড়ল ওই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই।
যুক্তরাষ্ট্র ভালো না খারাপ, এ নিয়েও কম আলোচনা হয় না। অনেকে বলেন, এ প্রশ্নের উত্তর খুবই আপেক্ষিক। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এর উত্তর, যুক্তরাষ্ট্র একটি নব্য সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র। নতুন নতুন বাজারের সন্ধানে সারা পৃথিবীকে ক্রমাগত গিলে খাওয়াই তার একমাত্র লক্ষ্য।
তার তৈরি বাজারের প্রভাব লেগেছে বিশ্বের সর্বত্রই। আঞ্চলিকভাবে বা স্থানীয়ভাবে একটি জেলার যে সাংবাদিক রসমালাই, খাদি পাঞ্জাবি বা অন্যান্য বস্ত্রাদি দিয়ে ঢাকায় তার গণমাধ্যম অফিসের ‘বসে’র মন রক্ষা করেন, যদি ওই জেলা প্রতিনিধিকে খারাপই বলি, তবে ঢাকার সেই কর্তৃত্বশীল সাংবাদিককেও খারাপ বলতে হবে, যার জেলা প্রতিনিধির খদ্দর বস্ত্র আর রসমালাই না পেলে মাথাই ঠিক থাকে না।
এমনটি শুধু একটি জেলার বা ঢাকার সাংবাদিকতার কিছু ক্ষেত্রেই নয়, বরং সমাজের সর্বক্ষেত্রেই যেন বিদ্যমান। এসব ঘটনার নেপথ্য পাত্রপাত্রীদের আমরা সবসময় হয়তো সরাসরি চোখে দেখি না। কারণ এর নেপথ্য অনেক গভীর।
গভীর এ জন্য যে, এসবের মূল কথা হলো বাজার। বাজার দখল। এই বাজার দখলের লড়াইয়ে সারা দুনিয়াই এখন উন্মত্ত। সেখানে একটি অঞ্চল আর সেই অঞ্চলের পাত্রপাত্রীরা তো ব্যতিক্রম নয়। সারা আকাশ থেকে যদি বোমাবর্ষিত হয়, তবে কি আর ছাতামাথায় আত্মরক্ষা সম্ভব? মধ্যযুগের বাঙালি কবি বলেছেন, ‘নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায় ?’
গত শতকে আমাদের এই পৃথিবী নামক গ্রহে দুই দুইটি বিশ্বযুদ্ধ হয়ে গেল মূলত এই বাজার সন্ধান-অনুসন্ধান এবং মুনাফার লোভেই। আজকের ওই মুনাফার লোভ বা দৌড়ের চরিত্র আরও জটিল চরিত্র ধারণ করেছে।
আসলে আজকের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে, আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদার কাছে তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতির পাত্রপাত্রীগণসহ আমরা সব্বাই একেবারেই পুতুলইমাত্র। আর সেই পুতুলখেলার সুতোও অনেক উপরে। ঐ সুতোওয়ালার কাছে সকলেই আমরা জিম্মি। আর ঐ সুতোওয়ালা হলো পুঁজি অথবা পুঁজিপতি বা পুঁজিবাদী রাষ্ট্রসমূহ। তাদের ওই ছলাকলার নাম কোথাও হয় বিশ্বব্যাংক, কোথাও বা ‘আই.এম.এফ’ কিংবা কোথাও আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই অধিষ্ঠিত সেই বিশ্বমোড়লের আসনে।
তাই বলা যায়, বড় বেশিই জটিল সময় এখন। এই সময়ই সব কিছুর নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছে। এই সময়ই তৈরি করেছে বিশ্বব্যাংক, আই.এম.এফ কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অথবা সরাসরি বললে বলতে হয় মুক্তবাজারকে।
এই বাজার এখন চতুর্দিকে নয়, দশদিকে কিংবা সবদিকে ‘হা’ করে আছে। অবশ্য এ বাজারে শেষ পর্যন্ত কেউই জয়ী হবে না। যেমন যে কোনো যুদ্ধের শেষ বিচারে আসলে কেউই জেতে না এবং উভয়েই হারে।
অথচ জয়ী হওয়ার আশায়, লাভের লোভে সবাই সামনে দৌঁড়াবে। অথচ মানবজীবনের প্রকৃতই যে লাভ, তা কেউ খুঁজেও পাবে না। বিভিন্ন দলে, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনে, প্রেসক্লাবে কেউ স্থির থাকতে পারবে না। চড়া বাজারের গতির কাছে, লাথির কাছে টিকতেই পারবে না কেউ। কেবল আসবে আর যাবে। পাবে না কিছুই। মাঝখানে হারাবে ব্যক্তিত্বসহ আরও অনেক মূল্যবান মূল্যবোধ।
বিশব্যাপী এই মুক্তবাজার অর্থনীতিরকালে প্রকৃত গণিত হলো ‘ক’-এর পেছনে থাকেন আরও অনেক ‘খ’, ‘চ’-এর পেছনে আছেন আরও আরও ‘ছ’। সোনামিয়ার পেছনেও রয়েছেন আরও অনেক অনেক কালামিয়া। তাই এখানে সর্বোচ্চ পেছনের লোকদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সামনের কোনো ব্যক্তিই স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না কিংবা হয়তো নেনও না।
যদু মিয়া মানে এখানে যদু মিয়া নন। যদু মিয়ার সিদ্ধান্ত মানেই সব সময় যদু মিয়ার সিদ্ধান্ত নয়। মধু মিয়ার বা কর্তৃত্বশীল অনেকের সিদ্ধান্তের সম্মিলিত সিদ্ধান্তই যদু মিয়ার সিদ্ধান্ত হয়ে আমাদের সামনে বা গণমাধ্যমে আসে।
তাই যে লোক বুলডোজার নিয়ে বস্তি উচ্ছেদ করতে এলো, তাকে দেখলেই হবে না। তার পেছনে ধাপে ধাপে যে প্রতিষ্ঠান আছে, সেসবও দেখতে হবে। সব শেষে আবার রয়েছে আমাদের ‘তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্র’ নামক প্রতিষ্ঠান। আর এসব রাষ্ট্রের পেছনে থাকে বিশ্বব্যাংক। ওই বিশ্বব্যাংকের সুদের ফাঁস মানেই তো সেই আবার মুক্তবাজারই।
বিশ্বব্যাংক আমার সঙ্গে আপনার, ছাগলের সঙ্গে গরুর, আলুর সঙ্গে পটলের, ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের বিরোধ থাকলে তার ব্যবসা ভালো করতে পারে। কারণ তার আরও আরও বাজার, আরও আরও কলোনী বা আরও আরও মুনাফা দরকার।
এই যে জটিলতা, এর সমাধান কী? সমাধান খুব সহজসাধ্য নয়। তাই খুবই বেশি দুঃসময় এখন। শুধু আমার-আপনারই নয়, শুধু যদু-মধুরই নয়, শুধু বাংলাদেশেরই নয়, সারা বিশ্বেরই।
এমনই এক নষ্ট সময় এখন, যখন নষ্ট না হয়ে বাঁচাই কঠিন। অনেকেই সৎভাবে মরার মতো বেঁচে আছেন। অনেকে আবার অর্ধেক নষ্ট হচ্ছেন। কেউ কেউ নষ্ট হয়েও শেষ বাঁচাটাও বাঁচতে পারছেন না। এমনই জটিলতর সময় সমাগত এখন।
এমনই জটিল সময়ের ছোবলে একদিন সংসারের স্বপ্ন দেখেও বাংলাদেশের বিখ্যাত অভিনেত্রী ডলি ইব্রাহিম শেষ পর্যন্ত তিন তিনটি বিয়ে করেন এবং শেষ পর্যন্ত একটি বিয়েও তার টেকেনি এবং শেষে আত্মহত্যা করেই মুক্তির চেষ্টা করেন তিনি। সে জন্য আবার অনেকে ডলিকেই দোষ দেন। কিন্তু সব দোষ ডলির একার নয়। সময় এবং সার্বিক পরিস্থিতিও এখানে বিশাল ফ্যাক্টর।
সময় আপনাকে বলবে, গাধা খুব উপকারী। তাই গাধাকে টেনে সঙ্গে রাখো। আবার এই সময়ই আবার আপনাকে বলবে গাধাকে ঠেলো। গাধাকে না তাড়ালে তুমিও বাঁচবে না।
সময় বলছে ইন্ডিয়া খারাপ, পাকিস্তান গড়ো। আবার এই সময়ই বলছে পাকিস্তান ভালো নয়, একে ভাঙ্গো। একই কথা আমাদের দেশের রাজনীতির প্রধান চরিত্র শেখ হাসিনা-খালেদা জিয়ার বেলাও বলছে। আর আজকে এই সময়কে, পৃথিবীর তাবৎ অর্থনীতিকে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণ করে স্বয়ং নব্য সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সে এই পৃথিবীতে এখন রীতিমত প্রভু হয়েই বসেছে। আচরণে, আগ্রাসনে অনেক সময় অন্যের দেশকে সে নিজের দেশের মতোই মনে করে।
কিন্তু আমরা আমাদের লালিত মূল্যবোধ থেকেই জানি যে, নিজের বউকে অন্যের করে দেয়া এবং অন্যের বউকে নিজের বউ মনে করার রীতিনীতি কখনোই কোনো সুস্থ রীতিনীতি হতে পারে না। সেটা অন্যের রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হওয়া উচিত। অথচ পৃথিবী ক্রমাগত উল্টো দিকেই হেঁটে যাচ্ছে যেন।
1991 সালের আমার একটি ব্যক্তিগত ঘটনা। ডলি ইব্রাহিম, যাকে চিনতাম ডলি আনোয়ার হিসেবেই। একদিন ঢাকার শাহবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি। লোকজন বলাবলি করছে যে ডলি আনোয়ার আত্মহত্যা করেছেন। খবরটি শুনে খুব দ্রুতই গেলাম পত্রিকার স্টলগুলোর দিকে। সংবাদপত্র দেখলাম। ঘটনা সত্য।
ডলি আনোয়ারের মঞ্চ অথবা বেতারের কাজ আমি কখনোই দেখিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রে তিনি অমর থাকবেন এতে আমি নিশ্চিত। অথচ তাকে এই পৃথিবী বাঁচতেই দিলো না!
তার একদার স্বামী আনোয়ার হোসেন বিখ্যাত আলোকচিত্রশিল্পী। আনোয়ার হোসেনের আলোকচিত্রশিল্প প্রদর্শনী ঢাকায় আমি দেখেছি। ডলি নিজেও ছবি তুলতেন। আনোয়ার হোসেনের সঙ্গেও ডলির ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছিল।
ডলি শেষ জীবনে নিজের পরিচয় দিতেন ডলি ইব্রাহিম নামে। জীবদ্দশায় তিনি বিয়ে করেছিলেন তিনবার। কোনো সংসারই টেকেনি। কারোর কাছেই শান্তি পাননি ডলি। খুব বেশি স্বাধীন হলে মৃত্যু ছাড়া পথ কী আর আছে? কিংবা মুক্তবাজার অর্থনীতিতে মানুষের স্বাধীনতাই বা কোথায়? লিও টলস্টয়ের ‘আনা কারেনিনা’ উপন্যাসের নায়িকা ‘আনা’ দ্বিতীয় সংসারেও যখন দেখলো সুখ নেই, তখন রেলের চাকার নিচে মাথা দিয়েই সুখ খুঁজে নেয়।
প্রথম যখন আমি চলচ্চিত্র বা সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা করি, লেখালেখি করি অথবা প্রশিক্ষণ নেই, তখনও আমার একটা কমিটমেন্ট ছিল। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছে, ততই যেন সার্বিক কমিটমেন্ট থেকে ক্রমাগতই দূরে সরে যাচ্ছি। না সরেও উপায় নেই। বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছি। সবাই বদলে যাচ্ছে। কেউ যেন আর দেশের কথা ভাবে না, কেবল নিজের চিন্তা। এখন দেখছি শুধুমাত্র প্রাণে বেঁচে থাকাটাই যেন সব থেকে বড় কমিটমেন্ট। বিশ্ব বাজারের অথবা মুক্তবাজারের এমনই চাপ এবং তাপ অথবা পাপ।
ব্যক্তিগতভাবেও আমাদের পারিবারিক, সাংগঠনিক বিশ্বাসগুলোও ভেঙ্গে তছনছ হয়ে যাচ্ছে। আমরা নিজেকে বিক্রিও করতে পারছি না, আবার বাজারের কাছে আত্মসমর্পণও করতে পারছি না। এমনকি কোনোক্রমেই দেশের কাজেও আসছি না। এমনই দুঃসময় এখন।
এই দুঃসময়ে কলম আর ক্যামেরাকে সর্বোচ্চ নৈতিক অস্ত্র যারা করেছেন, তাদের শেষ পরিণতির অনেক উদাহরণ বা চিত্র তো আমাদের চোখের সামনে রয়েছে।
জীবন ক্রমাগতই আরও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাচ্ছে। অনেক আগেই এ বাতাস শুরু হয়েছে। জীবনের শুরুতে রবীন্দ্রনাথ কি কখনো ভেবেছিলেন শেষ জীবনে তার সঙ্গে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর একটি বিশেষ সম্পর্ক গড়ে উঠবে? তার বৌদি কাদম্বরীর আত্মহত্যার কারণ নিয়ে গবেষকগণ আজ এতো মাথাব্যথা করবেন। অথবা কবি কাজী নজরুল ইসলাম এভাবে মাত্র তেতাল্লিশ বছর বয়সেই এমন নির্বাক হয়ে যাবেন ?
1972 সালে ‘নন্দিত নরকে’ উপন্যাসের মাধ্যমে সাহিত্যাঙ্গনে প্রবেশ করে যে হুমায়ুন আহমেদ জনপ্রিয়তায় বিপ্লব আনলেন, তিনি পরে ‘ফিল্ম মেকার’ও হলেন। তার ‘আগুনের পরশমণি’-‘শ্রাবণ মেঘের দিন’-‘দুই দুয়ারী’সহ আরও ছবি আমি দেখেছি। ভালো লেগেছে।
তিনি বাজারী বইও বিস্তর লিখেছেন। তবু রেহাই পাননি। তিনি কি তাঁর জীবনের পূর্বক্ষণে কখনো ভেবেছিলেন স্ত্রী গুলতেকিনের বদলে শাওনকে স্ত্রী করবেন? আর কোনো একদিন নিজেরই জন্মদিনের কেক কাটবেন আগের সন্তানদের থেকে একেবারেই নিজেকে আলাদা করে শুধুমাত্র নব্য স্ত্রী শাওনকে নিয়েই?
নিয়ন্ত্রণ আসলে থাকছেই না। কোনোভাবেই না।
1952 সালে ভাষা আন্দোলন করে আমরা এদেশ থেকে উর্দুকে বিদায় করেছি। কিন্তু ইংরেজি ভাষার কি কোনো আগ্রাসন নেই? অথবা হিন্দীর।
নোবেল পাওয়া অনেক লেখক ইংরেজির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। কেনিয়ার লেখক ন্গুগি উয়া থিয়োংও এক সময় জেমস ন্গুগি নামে লিখতেন। পরে লিখেন কেনীয় মাতৃভাষায়। ইংরেজিতে আর লিখেননি। লিখবেন না প্রতিজ্ঞা করেছিলেন।
নগুগি বলেন, ইংরেজি ভাষা আর উপনিবেশিক শাসন একই। ইংরেজিতে না লেখা আর উপনিবেশী অধীনতার বিরুদ্ধে লড়াই করা তার কাছে একই কথা ছিল। তবে কেন উর্দু নিয়ে আমাদের এত মাথাব্যথা হয়েছিল? আর ইংরেজি নিয়ে নয়? ভারতে কিন্তু হিন্দি আর ইংরেজির আধিপত্য বেড়েই গেল। অনেক কারণ রয়েছে এর নেপথ্যে।
বর্তমান প্রতিযোগিতার এ বাজারে ইংরেজি ছাড়া বাঁচা যায় না। ইংরেজি হলো অক্সিজেন। সারাবিশ্ব ভ্রমণের পাসপোর্ট। জাতীয়তার স্বার্থে কে এমন লাভের সুযোগ ছাড়ে? বলা হচ্ছে গ্লোবালাইজেশন। বলা হচ্ছে খোলা বাজার। এ বাজারে নিজেকে বিক্রি না করে বাঁচার দিন আপাততঃ শেষ। ভবিষ্যতে কী হয়, তা ভবিষ্যৎই বলবে।
এ খোলা বাজার নিজেকে বিক্রি করতে না পেরে আমিও ব্যক্তিগতভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। সংসারও ভেঙ্গেছে একবার আমার মূলত এই বাজারেরই চাপে। সুতরাং আপনি বিক্রি হবেন না, তো ভিক্ষুক হয়েও মুক্তি পাবেন না। আর যদি বিক্রি হোন, তাহলেও প্রকৃত যে বাঁচা, সেই বাঁচা বাঁচবেন না। সময় এখন এ রকমই। কিচ্ছু করার নেই।
কমিউনিস্ট নিয়ন্ত্রিত চায়নার বাজার যখন থেকে অন্যদের জন্য খুলে দেয়া হয়, তখন থেকেই কষ্ট আরও বেড়ে গেছে। ঐ খোলা বাজারই গিলে খেয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়নকে। গিলে খাচ্ছে এখনো আফগানিস্তান-ইরাক-সিরিয়া বা লিবিয়াকে। আরও খাবে। ডাইনোসরের মতোই খাবে। তারপর যখন আর কিছুই থাকবে না খাওয়ার জন্য, তখনই মরবে ওই ডাইনোসোরটা। কিন্তু সেদিন আরও অনেক দূরে। এতো সহজেই সে মরবে না। এই ডাইনোসোর একসময় ছিল বৃটেন। হিটলারের জার্মানী হতে চেয়েছিলো। সোভিয়েত হয়েছিলো। পরে ভেঙ্গে গেছে। তাই এখন এই ডাইনোসর এখন এককভাবেই হয়েছে আমেরিকা তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
একবার এক সংবাদে পড়েছিলাম: বিয়ের বয়স পার হয়ে গেছে ভারতের কতো লক্ষ যুবতীর। টাকার অভাবে বাবা-মা তাঁদের বিয়ে দিতেও পারছেন না। অন্যদিকে বলিউড ফিল্ম একট্রেস শিল্পা শেঠী ঠিক তখনই একটি ই-মেইল এড্রেস খোলার মাত্র ৫ দিনের মাথায় এক হাজার বিয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন। ব্যাপারটা কী? খোলাবাজার। যাকে আমরা ভদ্র ভাষায় ‘মুক্তবাজার’ বলি।
অভদ্রভাবে এই বাজারের নাম খোলাবাজার। আরও অভদ্রভাবে বললে ‘ল্যাংটা’ বাজার। সকলকে ‘ল্যাংটা’ বা নগ্ন না করা পর্যন্ত তার কোনো নিস্তারই নেই। আজ সে মুনাফালোভী সিনেমার নায়িকাদের ‘ল্যাংটা‘ করছে, আমরা দেখছি। আগামীকাল আপনার আমার মা-বোনকেই ‘ল্যাংটা’ করাবে। আজ আলমগীর কবির, ডলি ইব্রাহিম, তসলিমা নাসরিন অথবা নায়ক আলমগীরের সংসার ভেঙ্গে গেছে। আগামীকাল হয়তো অন্য অনেকের সংসারও ভেঙ্গে যেতে পারে। নিস্তার নেই। জাল যথানিয়মে যথাস্থানে পাতাই রয়েছে। ওই জালে নিরীহ মানুষকে ধরা পড়তেই হবে।
কারণ আপনি ইংরেজি না শিখে পারবেন না। সিনেমা-ইন্টারনেট-মোবাইল-কম্পিউটার ব্যবহার না করে জীবিকা অর্জন করতে পারবেন না। ব্যস হলো। ঐ পর্যন্ত গেলে বা এলেই হলো। তারপর সময় বা বাজারই পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে জায়গা মতো। তারপর তথ্যের যে নিয়ন্ত্রণহীন অবাধ প্রবাহ, তা যে বিষের অধিক মারণাস্ত্র, তা সময় হলেই টের পাওয়া যাবে। আজ এলিজাবেথ টেলরকে দেখছেন 10 বিয়ে করেছে। আগামীকাল দেখবেন আপনি সাধারণ মানুষ হয়েও 3/5 বিয়ে করছেন। দুঃখে তখন অনেক মানুষ লিভ টুগেদার শুরু করবে। বিয়ে করবে কম। কিন্তু তাতেও শান্তি হবে না। জায়গামতো কনডম ব্যবহার না করে মুখের মধ্যে কনডম নিয়ে চুইংগামের মতো চিবুনো যেই কথা, আজকের পৃথিবীর সকল কিশোর-কিশোরীদের নিয়ন্ত্রণহীন তথ্যের শিকার হওয়াও ঐ একই কথা। নিয়ন্ত্রণহীন তথ্য অথবা মাদক: কোনোটার চেয়ে কোনোটাই কম ক্ষতিকর নয়।

খোলা বাজারে চলচ্চিত্র খোলা। ছবির নায়িকার শরীর খোলা। সংস্কৃতি খোলা। পরিবেশ খোলা। শুধু খোলা আর খোলা। খোলার এক অদৃশ্য কারাগার। আমরা ভাবছি খোলা অথবা মুক্ত। আসলে কিন্তু বন্দী। দেশ বন্দী, মানুষ বন্দী, শরীর বন্দী, মানুষের গঠন বন্দী, চরিত্র বন্দী, বয়স বন্দী, চাহিদা বন্দী, সব বন্দী ঐ বাজারেরই কাছে।
সাময়িক মুক্তির পথ হলো বাজারের কাছে আত্মসমর্পণ করা। কিন্তু তাতেও মুক্তি নেই। পাকিস্তান এ থেকে বাঁচতে খুব চেষ্টা করেছে। চীন পারেনি। পাকিস্তান পারবে? পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্যাম্পাসে-ডাইনিং হলে ছেলেমেয়ের একসঙ্গে বসে খেতে পারে না। এ ব্যবস্থা উঠে যাবে। ওখানে বোরকাও থাকবে না। থাকলেও অপব্যবহার হবে। পতিতারাও অনেক জায়গায় বোরকা পরে। 1992 সাল থেকে পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ। এ অবস্থাও থাকবে না বেশিদিন।
1989 সাল। একদিন সকালে পত্রিকা খুলে দেখি গণতন্ত্রের দাবিতে চীনে বিশাল ছাত্র আন্দোলনের সংবাদ। খোলাবাজার চীনে গণতন্ত্র হয়ে ঢুকেছে তখন। চীন সমাজতন্ত্রের দেশ। সমাজতান্ত্রিক বা কমিউনিস্টরা ডিক্টেটর। সুতরাং গণতন্ত্রের দাবি মানতে রাজি নয়।
গণতন্ত্রের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে লক্ষ্যে লাখ লাখ ছাত্র সমবেত হয় রাজধানী বেইজিং এর তিয়েন আনমেন স্কোয়ারে। সরকারের কোনো হুশিয়ারীই কানে নেয়নি ছাত্ররা। দাবিতে অটল। শেষে আন্দোলন দমনে সেনাবাহিনীর গুলি আর ট্যাংকের নিচে পিষ্ট হয়ে প্রায় পাঁচ হাজার ছাত্র নিহত হয়। অনেক ছাত্রকে গ্রেফতার করে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। তারপরও খোলাবাজারকে কি চীন ঠেকাতে পেরেছে? পারলেও কতোদিন পারবে? চীনের ক্ষেত্রে এমন হলে আমরাতো কোনো উদাহরণেই পড়ি না।
সময়ই এখন নষ্ট। আপনিও নষ্ট না হয়ে বাঁচবেন না। অধিকাংশ সিনেমাও নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু সিনেমাই নয়, আমরা সব্বাই এই সময়ের পুতুলই মাত্র। মুক্তবাজার অর্থনীতির পুতুল। আর আমরা কে কতোটা গণমুখী, কতোটা নই, সেটা তো আরও অনেক পরের বিষয়।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৬

সনেট কবি বলেছেন: কিছুটা পড়লাম।

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৪৫

জসীম অসীম বলেছেন: কিছুটা পড়াই স্বাভাবিক। লেখাটির দৈর্ঘ অধৈর্য এনে দেবে নিশ্চিত। কিন্তু আমি দক্ষ সনেট কবির মতো অল্প কথায় ভাবপ্রকাশে পারঙ্গম নই। শুভ কামনা।

২| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৪

তারেক ফাহিম বলেছেন: প্রথমাংশে কিছুটা পড়লাম।

একটু বড় মনে হল

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৫১

জসীম অসীম বলেছেন: আসলেই লেখাটি বেশ বড় হয়ে গেছে। সবটা পড়ার ধৈর্য অধিকাংশ পাঠকেরই থাকবে না। ধন্যবাদ।

৩| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:১৪

বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন ---স হ ম ত

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৫২

জসীম অসীম বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা নিরন্তর।

৪| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৪৩

উদাসী স্বপ্ন বলেছেন: প্রবন্ধের আগা শুরু হলো ঘোড়ার মাথা থেকে মাঝখানে আসলো হাতির গান, তারপর সেই পুরানা ক্যাওম্যাও, শেষে এসে প্রথম ঘোড়াটা কিছু একটা করার চেস্টা করলো কিন্তু সবাইকে অবাক করে একটা ডিম পেড়ে দিলো।

এসব লিখেও ব্লগ করে মানুষ দেখে অবাক হই

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৫৭

জসীম অসীম বলেছেন: ব্লগে লেখার নির্দেশনাকেদ্রিক একটি মতামত দিন। উপকৃত হবো। পরামর্শ পেলে অবস্থার উত্তরণও অসম্ভব নয়। কারণ আমি জানি সেই কবিতাটি: ‘‘ঘোড়া ভালো, ডিম ভালো, ভালো না ঘোড়ার ডিম।’’

৫| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৪৯

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেছেন: আমি সবটাই পড়েছি। এই প্রথম আমি আমার মনের সাথে মিল আছে এমন মানুষ পেলাম।। তাই সবটাই পড়েছি।।
আমিও এই কথা মানি। যে ধনতন্ত্র যা দিয়েছে তার চেয়ে কেড়ে নিয়েছে। মুক্ত বাজার মানুষকে কাগজের পুতুল বা পাপেট শো এর
মতো নাচিয়ে চলেছে। আমরা যে স্বাধীনতা ভাবি। ভাবি নায়িকারা খুব স্বাধীন বা উমুক তুমুক
আসলে তারা মুক্ত বাজারের পণ্য মাত্র। আর কিছুই না।।।


এই যে মডেল বিশ্বসুনন্দরি একই হাল।।



আর আমাদের রাজনীতি তে

বাহিরের দেশের প্রভাব সব কিছু
বাজার দখলের চাল কাঠি।। আর কিছু না।

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:০৩

জসীম অসীম বলেছেন: আপনার মতামতে নিজেকে ধন্য মনে করছি। এক ভাই ঠিক এই লেখাটিকেই ঘোড়ার ডিম সদৃশ কল্পনা করেছেন। আসলে দেখার ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কারণেও অনেক সময় মূল্যায়নের মাপকাঠিতে পরিবর্তন আসে। শুভেচ্ছা অব্যাহত রইলো।

৬| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:০৩

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেছেন: প্রাচীন যুগে রাজারা দেশ দখল করতো। এখন রাষ্ট্রনেতা গন বাজার দখল করে।
আর অস্ত্র হাতিয়ারের ব্যবসা করে।।। আমেরিকা রাশিয়া, ভারত সবাই চীন।

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:০৭

জসীম অসীম বলেছেন: আপনার এ বক্তব্যের পরে আর কি আমার কিছু লেখা সম্ভব? সবটা লেখার সার সংক্ষেপ তুলে ধরেছেন দুই লাইনে। ধন্যবাদ।

৭| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: ইতালি ভাষার উচ্চারণ খুব বেশী বানানভিত্তক । আর ফরাসি ভাষার উচ্চারণ খুব কম বানানভিত্তিক । যদিও দুটো ভাষার উৎস এক ।

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:৪৬

জসীম অসীম বলেছেন: এমন কঠিন করে রূপক দিয়ে বললে আমরা কিভাবে বুঝবো? আমাদের পাকস্থলী তো শক্ত নয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.