নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

1997 সালে ঢাকার বন্ধু আবিদ হোসেন অলককে লেখা আমার একটি চিঠি:

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৩


২৮.১০.১৯৯৭, কুমিল্লা।
আবিদ/ অলক,
প্রীতি ও শুভেচ্ছা।
তোমার চিঠি পেলাম গতদিন বিকেলে। ফরম পূরণ সংক্রান্ত সব খবরাখবর জানানোর জন্য ধন্যবাদ।
অলক, পরীক্ষা আমি দেবো না। এ সিদ্ধান্ত আমার চূড়ান্ত। এ কথা শুনে তুমি দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ো না। বড়- ভাই যে আমাদের সঙ্গে আর একসঙ্গে বাসায় থাকে না, তা তো তুমি জানোই। বাবার পেনশনের টাকা নাকি সংসারিক খরচ এবং মায়ের কিডনির চিকিৎসায় প্রায় শেষ। বাসা ভাড়া বাবদ আমাকে মাসে দিতে হয় ২০০০/=(দুই হাজার) টাকা। এছাড়া মাকে প্রায়ই রক্ত দিতে হয়। আজ অনেকদিন হলো রক্তও দেয়া যাচ্ছে না। এরই মধ্যে ইদানীং আবার বাবার শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না। তাঁর চোখের অপারেশন করানো প্রয়োজন। তাও সম্ভব হচ্ছে না। বোনদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাঁরা আরও অসুস্থ হচ্ছেন। ছোট ভাই ‘পিয়াস’ ও ছোট বোন ‘কথা’ এবার এস.এস.সি পরীক্ষা দেবে। ‘দামাল’ ও ‘মনি’কেও আবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়াতে হবে। ওদের ফরম পূরণের ডাক আসবে খুবই নিকটবর্তী সময়ে। ‘মনি’ ও ‘কথা’ বলেছে বড় ভাই আলী আশ্রাফ নাকি কী কারণে বাবার ১০,০০০/=(দশ হাজার) টাকা আটকে রেখেছেন। ভাইয়ের ওই টাকাটা পেলেও এ সময়ে সামান্য ব্যবসা করতে পারতাম। কিন্তু পাবো কি-না সন্দেহ। এই অবস্থায় আমি এখানকার পত্রিকায় যেই সামান্য কাজ ও টিউশনি করি, আমি নিজে এম. এ চূড়ান্ত পরীক্ষা দিতে গেলে এসব কাজকর্মও ছেড়ে দিতে হবে। যদিও এসব কাজ আসলে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো কাজই নয়।তবু সময়ের এবং স্থানের প্রয়োজনে এসব কাজই এখন করি।
তবে শোষণ ব্যাপারটা বুকেও হয়েছে এক সমস্যা। তা না হলে একেবারেই কোনো মানুষের বা প্রতিষ্ঠানের দাস হয়ে যেতে পারতাম। অন্যদিকে টাকার কাছে বিবেককেও পারি না বিক্রি করে দিতে। তারপরও মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিতাম। পরীক্ষা দেবো বলেই তো ভর্তিও হয়েছিলাম। কিন্তু এতো ঝামেলায় এখন আর পরীক্ষাই আমি দেবো না। তবে তা শুধু অর্থের কারণেই নয়। তোমাদের মতো বন্ধু থাকতে অর্থাভাবে পরীক্ষা বন্ধও থাকতো না, সেও আমি জানি। বিশেষ করে তোমার ভূমিকার কথা আর কী লিখবো? আমাকে নিয়ে না ভাবলে, বিগত অনার্স পরীক্ষায় তুমি আরও ভালো করতে। তাছাড়া পাঠ্য পড়াশোনার মনও নেই আজকাল। তাই আমার চিন্তা না করে তুমি এবার তোমার জন্যে ভালো করে প্রস্তুতি নাও। এ মাসে ঘরে প্রায় ২৫০০/- টাকা দিয়েছি। তা দিয়ে সংসারের কতোটুকু হয়? তবে সামনে আমাদের সংসারটা নিয়ে ভাববো আমি। সংসারের আয় উন্নতির নিম্নগতি আমাকে রোধ করতেই হবে। ব্যক্তিগত স্বার্থটাই বড় কথা নয়। সমাজতান্ত্রিক নীতির তো এখানেই সাফল্য। জীবিকার সন্ধান করতে হবে আমাকে। ছোট ভাইদের মেধাদীপ্ত অগ্রসর চিন্তাগুলোকে বাঁচতে দিতে হবে। সুগম করে দিতে হবে ওদের যাবতীয় চর্চার পথ। আমার এ প্রতিশ্রুতিতে যেন আমি সৎ থাকতে পারি। সুখী জীবনের স্বপ্ন কে না দেখতে চায়। কে না চায় জীবনের শোভনতা রক্ষা করতে? কিন্তু কালো টাকার মালিকদের এবং এ দুনিয়ার অর্থ পিশাচদের দখল করা এ পৃথিবীতে, শরীরে মাংস না থাকা মানুষের সংখ্যা যখন বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন, তখন জীবন তো এ রকম হবেই। অর্থ পিশাচদের বদৌলতে নিজ দেশে, নিজ গ্রহেই গণজীবন আজ নির্বাসিত। আমরাও তার ব্যতিক্রম নই। জীবনটা আসলে স্বপ্নপুরি নয়, জীবনটা আসলে জীবনই। তবু জীবনে স্বপ্ন থাকতে হয়। স্বপ্নের মৃত্যু হলে বেঁচে থাকবে কেমন করে মানুষ? আজ এ দেশে সমাজতন্ত্রও স্বপ্ন। এ স্বপ্নকে অর্জন করবে মানুষ…এটাও আরেক স্বপ্ন। স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে থাকুক মানুষ। এ আমার আবেগই নয়, এ আমার বিবেক পরিচালিত যুক্তিত্ত। একা তুমি উৎসাহ দিয়ে পারবে কেন? সামগ্রিক পরিস্থিতিই যখন নিরুৎসাহের পক্ষে? তবে শেষ পর্যন্ত আমি হতাশ নই। আমার অবস্থান আমার ভাগ্যকে আমি, বিদ্রোহে বিপ্লবে শ্রমের বিনিময়ে করবোই বিনির্মাণ।
শুভেচ্ছাসহ তোমার বন্ধু অসীম।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৪

বলেছেন: বিদ্রোহে বিপ্লবে শ্রমের বিনিময়ে করবোই বিনির্মাণ--- দারুণ +++

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:০৬

জসীম অসীম বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আগে তো আমার অনেক বাক্যই এমনই কারুকার্যখচিত ছিলো।

২| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: একদম সত্য চিঠি। কোনো ভনিতা নেই।

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:১৯

জসীম অসীম বলেছেন: আমার প্রতিভার অধিকাংশই ক্ষয় হয়েছে চিঠি এবং দিনলিপি লেখার কাজে। তবে তা প্রকাশ করলে আজকাল অনেকেই এর প্রতিবাদ করে। কারণ চিঠিতে কাল্পনিক ঘটনার বদলে তথ্যই বেশি থাকে। অনেকটাই সংবাদধর্মী। সাহিত্যধর্মী চিঠিতে অবশ্য ঝুঁকি থাকে অল্প। নতুন মতামতের জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.