নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

জ্যোৎস্না কিংবা রোদ্দুর

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:৪২


এপ্রিল ১৯৯৭, পশ্চিম চানপুর.
গয়ামবাগিচা রোড, কুমিল্লা
=================
‘অমলকান্তি’ কবিতাটি আমাদের বাসার সবাই পছন্দ করে। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী-র কবিতা। আসলে এই কবিতাটিতে করুণ এক গল্প রয়েছে। এই কারণেই এ কবিতার প্রতি ভালো লাগা।
অমলকান্তির বন্ধু চমৎকার করে বলে এ গল্প। ইস্কুলে ‘অমলকান্তি’ রোজ দেরি করে ক্লাসে আসতো, পড়া পারত না, শব্দরূপ জিজ্ঞেস করলে এমন অবাক হয়ে জানলার দিকে তাকিয়ে থাকতো যে, দেখে ভারী কষ্ট হত।
কিন্তু অামার ছোট ভাই পিয়াস খুব ভালো ছাত্র হয়েও এবং রোজ দেরি করে ক্লাসে না গিয়েও অবাক হয়ে জানলার দিকে তাকিয়ে থাকে। সেটা কি অমলকান্তির কথা মনে করে!
অমলকান্তির বন্ধুরা কেউ মাষ্টার হতে চেয়েছিল, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল। কিন্তু পিয়াস কী হতে চায়! কেন তার এ উদাসীনতা! অবাক হয়ে কেন সে জানলার দিকে তাকিয়ে থাকে!
অমলকান্তি মাষ্টার-ডাক্তার-উকিল হতে চায়নি। সে রোদ্দুর হতে চেয়েছিল! পিয়াসও কি তবে তেমন ভরা পূর্ণিমার জ্যোৎস্না হতে চায়! কেন সে মাকে ফাঁকি দিয়ে এমন দূরে হারিয়ে যায়! কেন সে মায়ের চোখের জল এভাবে ঝরায়! পিয়াস কি তবে ছবিই আঁকবে শেষে! মাষ্টার-ডাক্তার-উকিল কিছুই হতে পারবে না!
অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি। সেই দুঃখে পিয়াসের বড় কিন্তু আমার ছোট ভাই দামালও ভীষণই ভারাক্রান্ত হয়।
অমলকান্তি শেষে অন্ধকার একটা ছাপাখানায় কাজ করে। মাঝে মধ্যে আমারও মনে হয়, অমলকান্তির মতো ছাপাখানায় কাজ করেই পিয়াস তার জীবনটা পার করে দেবে। তা না হলে স্কুলে পড়া কোনো বালক গোমতি নদীকে এত ভালোবাসে! প্রায়ই সে গোমতি নদীর সঙ্গে দেখা করতে যায়। তারপর আবারও মায়ের কাছে ফিরে। সে কি তাহলে অমলকান্তিই হবে!
অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি। সেই অমলকান্তি রোদ্দুরের কথা ভাবতে-ভাবতে ভাবতে-ভাবতে যে একদিন রোদ্দুর হতে চেয়েছিল। পিয়াসও কি শেষ পর্যন্ত জ্যোৎস্না হতে পারবে! নাকি রক্তখেকো ভয়ংকর সব রাক্ষসীরা তার জ্যোৎস্না খেয়ে ফেলবে! নাকি একদিন হঠাৎ করে সবাইকে অবাক করে দিয়ে সে জ্যোৎস্না ধরে মায়ের কাছে ফিরবে! আমি শৈশবে মামার বাড়ির তেতুলগাছে উঠে ভূত দেখিনি কোনোদিনও। তবে রোদ্দুর আর জ্যোৎস্না দেখেছিলাম। সেই থেকে আজ অবধি শেষ রাতের ট্রেনে করে ঢাকা থেকে কুমিল্লায় ফেরার পথে আমি অন্ধকার রাতেও জ্যোৎস্না দেখতে পাই। এমনকি আমি কঙ্কালের ভিতরও জ্যোৎস্না দেখতে পাই। রাত হলেই তাই আমি ট্রেনষ্টেশনে চলে যাই বটগাছের চূড়ায় জ্যোৎস্না দেখবো বলে। কিন্তু আমিও পারিনি জ্যোৎস্না ছুঁতে কখনো।
অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি। আমিও পারিনি জ্যোৎস্না ছুঁতে। চাঁদ থেকে জ্যোৎস্না তো অনেক আগেই খসে গেছে। সেই অমলকান্তিও রোদ্দুরের কথা ভাবতে-ভাবতে ভাবতে-ভাবতে যে একদিন রোদ্দুর হতে চেয়েছিল। পিয়াসও কি শেষ পর্যন্ত জ্যোৎস্না হতে পারবে! পিয়াসও কি শেষে জ্যোৎস্নার কথা ভাবতে-ভাবতে ভাবতে-ভাবতে যে এখন জ্যোৎস্না হতে চায়!
আমিও যেমন জ্যোৎস্নার কথা ভাবতে-ভাবতে ভাবতে-ভাবতে যে আমি জ্যোৎস্না হতে চেয়েছিলাম। তারপরও কেন রাত হলেই আমি গোমতি নদীর পারে কিংবা ট্রেনষ্টেশনে চলে যাই বটগাছের চূড়ায় জ্যোৎস্না দেখবো বলে? ট্রেনষ্টেশনের টিকিট কাউন্টারে কি জ্যোৎস্নার টিকেট পাওয়া যায়! যে আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখিনা, যে আমি শৈশবে চাঁদকেই ঈশ্বর ভেবে বড় হয়েছি, সে আমি কেন এখনও ঈশ্বরের বদলে জ্যোৎস্না খুঁজে মরি! কারণ শৈশবে চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকারের মাঝেও জ্যোৎস্নার দেখা পেতাম। ছিলো ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। আমার বাড়ি বরিশাল জেলার কীর্তনখোলা নদীর পাশেও যদি হতো, আমি তবু এই গোমতি নদীর কাছেই চলে আসতাম জ্যোৎস্নার খোঁজ করে করে। ছোটবেলা থেকেই আমি এমনই ছিলাম।
কিন্তু কথা তো ছিলো আমাদের পরিবারে শুধু একজনই অমলকান্তি হবে। পিয়াস কেন আবার অমলকান্তি হতে চায় এখন! সে কেন এমন নদী ভালোবাসে! সে কেন জ্যোৎস্না হতে চায়!
সন্ধ্যার পর গোমতি নদীর পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে আগেও একটু-আধটু জ্যোৎস্নার দেখা পাওয়া যেত। কিন্তু এখন আর জ্যোৎস্নার দেখা পাওয়া যায় না। আমিও পারিনি জ্যোৎস্না ছুঁতে তাই। কারণ চাঁদ থেকে জ্যোৎস্না তো অনেক আগেই খসে গেছে। আর নৌকায় বসে যে জ্যোৎস্না দেখে, সে কি আর মাস্টার-ডাক্তার-উকিল হতে পারে! তাই আমি পারিনি। আমার বাবাও গিয়েছিলেন কতো কিছু করতে। পারেননি।
অমলকান্তি শেষে অন্ধকার একটা ছাপাখানায় কাজ করে। আমি মনে হয় একটি ছাপাখানায়ও কাজ করতে পারবো না। মাঝে মধ্যে আমারও মনে হয়, অমলকান্তির মতো ছাপাখানায় কাজ করেও পিয়াস তার জীবনটা পার করতে পারবে না। যেমন পারছি না আমি। কারণ ছাপাখানার কাজও এত সহজ নয়।
স্কুল জীবনেই আমি এই গোমতি নদীকে ভালোবেসেছিলাম। স্কুলে পড়া কোনো বালক গোমতি নদীকে যদি এত ভালোবাসে, তা হলে আর এই দেশে এই ছেলে কোনো কাজেই লাগে না। এমনকি ‘অমলকান্তি’ও হতে পারে না। পিয়াস প্রায়ই গোমতি নদীর সঙ্গে দেখা করতে যায়। মাকে খুব একা করে না বলেও যায়। আর তার গোমতি নদী দেখে বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায়ই খুব সন্ধ্যা হয়ে যায়। ফেরার সময় সে হনহন করে হাঁটে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী বর্বর সৈনিকদের মারবে বলে যেমন করে মুক্তিযোদ্ধারাও কখনো কখনো হনহন করে হাঁটতো। কোনো কোনো ছাতিম অথবা হিজল গাছের পাশ দিয়ে। ইস্কুলে ‘অমলকান্তি’ রোজ দেরি করে ক্লাসে আসতো, পড়া পারত না, শব্দরূপ জিজ্ঞেস করলে এমন অবাক হয়ে জানলার দিকে তাকিয়ে থাকতো যে, দেখে তার কবি বন্ধু নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ভারী কষ্ট হত। কিন্তু পিয়াস খুব ভালো ছাত্র হয়েও এবং রোজ দেরি করে ক্লাসে না গিয়েও অবাক হয়ে জানলার দিকে তাকিয়ে থাকে। সেটা কি অমলকান্তির কথা মনে করে!
অমলকান্তির বন্ধুরা কেউ মাষ্টার হতে চেয়েছিল, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল। কিন্তু পিয়াস কী হতে চায়! কেন তার এ উদাসীনতা! নাকি সে নদী হতে চায়! অবাক হয়ে কেন সে জানলার দিকে এমন তাকিয়ে থাকে!
অমলকান্তি মাষ্টার-ডাক্তার-উকিল হতে চায়নি। সে রোদ্দুর হতে চেয়েছিল! পিয়াসও কি তবে তেমন ভরা পূর্ণিমার জ্যোৎস্না হতে চায়! কেন সে মাকে ফাঁকি দিয়ে এমন দূরে হারিয়ে যায়! কেন সে মায়ের চোখের জল এভাবে ঝরায়! পিয়াস কি তবে ছবিই আঁকবে শেষে! মাষ্টার-ডাক্তার-উকিল কিছুই হতে পারবে না! অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি। সেই দুঃখে পিয়াসের বড় কিন্তু আমার ছোট ভাই দামাল এখনও ভীষণ ভারাক্রান্ত হয়। অমলকান্তি শেষে অন্ধকার একটা ছাপাখানায় কাজ করে। কিন্তু আমরা কি শেষে কোনো ছাপাখানায়ও স্থির হয়ে কাজ করতে পারবো শেষে! নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর অমলকান্তির মতো! স্কুলে পড়া কোনো বালক গোমতি নদীকে কিংবা জ্যোৎস্নাকে যদি এত ভালোবাসে, তা হলে এই দেশে এই ছেলেরা আর কোনো কাজেই লাগে না। এমনকি ‘অমলকান্তি’ও হতে পারে না। রাত হলেই তারা হয়তো ট্রেনষ্টেশনে যায় বটগাছের চূড়ায় জ্যোৎস্না দেখবে বলে। কিন্তু তারা পারে না জ্যোৎস্না ছুঁতে কখনোই। অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি। আমি এবং পিয়াসও পারিনি জ্যোৎস্না ছুঁতে। তাই। চাঁদ থেকে জ্যোৎস্না তো অনেক আগেই খসে গেছে। সেই অমলকান্তিও রোদ্দুরের কথা ভাবতে-ভাবতে ভাবতে-ভাবতে যে একদিন রোদ্দুর হতে চেয়েছিল।
পিয়াসও কি শেষে জ্যোৎস্নার কথা ভাবতে-ভাবতে ভাবতে-ভাবতে...যে এখনও জ্যোৎস্না হতে চায়! আমিও যেমন জ্যোৎস্নার কথা ভাবতে-ভাবতে ভাবতে-ভাবতে...যে আমি জ্যোৎস্না হতে চেয়েছিলাম। তারপরও কেন রাত হলেই আমি এখনও গোমতি নদীর পারে কিংবা ট্রেনষ্টেশনে চলে যাই বটগাছের চূড়ায় জ্যোৎস্না দেখবো বলে? ট্রেনষ্টেশনের টিকিট কাউন্টারে কি জ্যোৎস্নার টিকেট পাওয়া যায়! নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘অমলকান্তি’ শেষে ছাপাখানার কাজটা কোনোরকমে করতে পেরেছিলো। রবীন্দ্রনাথ বিলাত গিয়েও ব্যারিষ্টার হতে পারেননি। অবহেলায়-অনাদরে-অবজ্ঞায় বেঁচে থাকা রবীন্দ্রনাথ শেষ জীবনে জ্যোৎস্না অথবা রোদ্দুরের দেখা একটু পেয়েছিলেন। তাই রক্ষা পেলেন।
কিন্তু আমি অথবা পিয়াস কিংবা নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘অমলকান্তি’...আমরা কখনোই হতে পারবো না জ্যোৎস্না কিংবা রোদ্দুর।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৭:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট।

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:০২

জসীম অসীম বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা নিরন্তর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.